Ajker Patrika

ক্রিকেট-ভূরাজনীতিতে বিভক্ত বাংলাদেশ-ভারত একমত হলো যে বিষয়ে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪: ২৬
ক্রিকেট-ভূরাজনীতিতে বিভক্ত বাংলাদেশ-ভারত একমত হলো যে বিষয়ে

ভারত ও বাংলাদেশ প্রায়ই ক্রিকেট ম্যাচ, সীমান্ত সমস্যা এবং ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগের কারণে বিভক্ত থাকে। তবে দেশর দুটির অবস্থান চলতি সপ্তাহে এক বিরল মুহূর্তে একবিন্দু এসে মিলিত হয়েছে। কারণ, ঢাকা ও নয়া দিল্লি মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনকে ‘বিভ্রান্তিকর’ এবং ‘তথ্যগত ভুল’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ গত সোমবার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধের প্রতিবাদ করেছে। এতে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থার পুনরুত্থান হচ্ছে। ‘অ্যাজ বাংলাদেশ রিইনভেন্টস ইটসেলফ, ইসলামিস্ট হার্ড-লাইনার্স সি অ্যান ওপেনিং’ (As Bangladesh reinvents itself, Islamist hard-liners see an opening)—শীর্ষক প্রতিবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর কট্টরপন্থী শক্তিগুলো ক্ষমতা লাভ করছে বলে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেসসচিব শফিকুল আলম এই চিত্রায়নকে ‘একপেশে’ বলে সমালোচনা করেছেন এবং নিউইয়র্ক টাইমসকে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতাকে সরলীকরণের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই বর্ণনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতাকে অতিসরলীকৃতভাবে দেখছে এবং ১৮ কোটি মানুষের সমগ্র জাতিকে অন্যায়ভাবে কলঙ্কিত করার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি এবং বাস্তব পরিস্থিতির জটিলতাকে স্বীকার করা হোক, শুধু বাছাইকৃত কিছু ঘটনা তুলে ধরে ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানোর পরিবর্তে।’

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কর্তৃত্ববাদী নেতা (শেখ হাসিনা) উৎখাতের পর সৃষ্ট শূন্যতায় একটি শহরে কট্টরপন্থীরা ঘোষণা করেছে যে, অল্পবয়স্ক মেয়েরা আর ফুটবল খেলতে পারবে না। প্রতিবেদনে আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে কট্টরপন্থীরা পুলিশকে একজন ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে বাধ্য করে যিনি প্রকাশ্যে চুল না ঢাকার জন্য একজন নারীকে হয়রানি করেছিলেন।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘রাজধানী ঢাকায় এক সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা হুঁশিয়ারি দেয় যে, সরকার যদি ইসলাম অবমাননাকারী কাউকে মৃত্যুদণ্ড না দেয় তবে তারা নিজেরাই ফাঁসি কার্যকর করবে। কয়েক দিন পর, নিষিদ্ধ একটি গোষ্ঠী ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে মিছিল বের করে।’ তবে শফিকুল আলম এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘কট্টরপন্থা সব সময়ই থাকবে, তবে তাদের ক্রোধের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ না করাই আমাদের দায়িত্ব।’

এদিকে ভারত ৩১ মার্চ নিউইয়র্ক টাইমসের আরেকটি প্রতিবেদনের বিরোধিতা করেছে। যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে, হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে রাশিয়ার কাছে সংবেদনশীল প্রযুক্তি হস্তান্তর করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এইচআর স্মিথ গ্রুপ নামে একটি ব্রিটিশ সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্সকে নিষিদ্ধ প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে, যা পরে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি সংস্থা রোসোবোরোনেক্সপোর্টের কাছে চলে গেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায়, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছে, প্রতিবেদনটি ‘তথ্যগতভাবে ভুল এবং বিভ্রান্তিকর’ এবং দিল্লি নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক ন্যারেটিভের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য তথ্য বিকৃত করার অভিযোগ তুলেছে।

সূত্রটি বলেছে, ‘প্রতিবেদনে উল্লিখিত ভারতীয় সংস্থা (হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড) কৌশলগত বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং শেষ ব্যবহারকারীর প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত তার সমস্ত আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি যে প্রখ্যাত গণমাধ্যমগুলো এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের আগে প্রাথমিক গবেষণা করবে, যা স্পষ্টতই এ ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হয়েছে।’

ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক। সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে বিমান, হেলিকপ্টার, ইঞ্জিন এবং এভায়োনিক্সের সরবরাহকারী। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে যে, এইচআর স্মিথের পণ্য সরাসরি রাশিয়ায় পৌঁছেছে তার কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত