Ajker Patrika

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

নিরঙ্কুশ জয়ে ফিরলেন ট্রাম্প

জাহীদ রেজা নূর, নিউইয়র্ক থেকে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরই সমর্থকদের সামনে হাজির হন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প, মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প, রানিংমেট জে ডি ভ্যান্সসহ ঘনিষ্ঠরা। গতকাল ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচ কনভেনশন সেন্টারে। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরই সমর্থকদের সামনে হাজির হন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প, মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প, রানিংমেট জে ডি ভ্যান্সসহ ঘনিষ্ঠরা। গতকাল ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচ কনভেনশন সেন্টারে। ছবি: এএফপি

অনেকেই বলছিলেন এবার কয়েক দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল জানতে। এত দ্রুত ফল বের হবে, কে তা ভাবতে পেরেছিল? সব হিসাব-নিকাশ আর শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফিরলেন হোয়াইট হাউসে। আইনসভার দুই কক্ষ সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদও গেল ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের হাতে। ফলে রিপাবলিকান পার্টি বলতে গেলে এবার নিজেদের মতো করে দেশ শাসন করতে পারবে। কংগ্রেসে বিল পাস করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না ট্রাম্পের।

সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৭৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করে ফেলেছেন। কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৩টি ইলেকটোরাল ভোট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোটের প্রয়োজন। ট্রাম্পের ঝুলিতে পড়েছে ৭ কোটি ১৭ লাখের বেশি ভোট। আর কমলা পেয়েছেন ৬ কোটি ৬৬ লাখের বেশি ভোট। যদিও গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা পর্যন্ত অ্যারিজোনা, নেভাডা, আলাস্কা, মিশিগান ও মেইন অঙ্গরাজ্যের ফলাফল ঘোষণা বাকি ছিল। অবশ্য মেইন বাদে বাকি অঙ্গরাজ্যগুলোয় ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন।

এদিকে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটেও রিপাবলিকানদের জয়জয়কার। সেখানে ৫২টি আসন রিপাবলিকানদের দখলে গেছে। ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছেন ৪২টি আসন। ফল ঘোষণা বাকি ছয়টির। সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে অন্তত ৫০টি আসন প্রয়োজন।

প্রতিনিধি পরিষদও রিপাবলিকানদের দখলে যাবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রিপাবলিকানরা ২০৪টি আসনে জয় পেয়েছে। আর ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ১৮২টি। ৪৩৫ আসনের প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যা-গরিষ্ঠতা পেতে একটি দলকে অন্তত ২১৮টি আসন পেতে হয়।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের পেছনে রয়েছে বাইডেন আমলে জীবনযাত্রার চড়া ব্যয়, নারীদের ভোট প্রত্যাশার চেয়ে কম পাওয়া, গাজা যুদ্ধের জন্য অনেক মুসলিম ভোট হারানো ইত্যাদি কারণ। ব্যয়ভার বেড়ে যাওয়ায় অনেক মার্কিন নাগরিকই বড় বড় শহর ছেড়ে অপেক্ষাকৃত ছোট শহরের দিকে চলে যাচ্ছেন। জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাওয়া মার্কিন নাগরিকদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ক্ষমতার পরিবর্তন চাইছিলেন। পাশাপাশি কেউ কেউ এমনও মনে করছেন, ১৯২০ সালে জাতীয় নির্বাচনে মেয়েদের ভোটাধিকার অনুমোদন করা যুক্তরাষ্ট্র এখনো হয়তো নারী প্রেসিডেন্টের জন্য তৈরি নয়।

নির্বাচনের ফল আসতে শুরুর কিছুক্ষণ পরই কমলা হ্যারিসের পরাজয় স্পষ্ট হতে থাকে। এ সময় ভেঙে পড়েন তাঁর অনেক সমর্থক। গত মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে। ছবি: এএফপি
নির্বাচনের ফল আসতে শুরুর কিছুক্ষণ পরই কমলা হ্যারিসের পরাজয় স্পষ্ট হতে থাকে। এ সময় ভেঙে পড়েন তাঁর অনেক সমর্থক। গত মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে। ছবি: এএফপি

ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘গার্ডিয়ান’ এর মূল্যায়ন–ট্রাম্পের খামখেয়ালি ধরনের নেতৃত্বের কৌশল এবং রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার কিম জং-উনের মতো কর্তৃত্ববাদী নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন রাজধানীতে সতর্কতার ঘণ্টা বাজাবে। মার্কিন দেশের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতে এবার সত্যিই কতটা বা কী ধরনের পরিবর্তন আসে, সেদিকেই সবার নজর থাকবে।

গতকাল বুধবারই জার্মান গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা বলেছেন, সাধারণ মানুষ স্বল্পমেয়াদি সমস্যার কথা ভেবে ভোট দেয়, তাতে দীর্ঘমেয়াদি গুরুত্বপূর্ণ সংকটের অবসান হয় না। ট্রাম্পকে ভোট দিলে তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই পরিবর্তন আনবে না, ইউরোপের জন্যও তা সংকট সৃষ্টি করবে।

জয় অনেকটাই নিশ্চিত হওয়ার পর ট্রাম্প ফ্লোরিডায় উৎফুল্ল সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমেরিকা আমাদের পক্ষে নজিরবিহীন ও জোরদার রায় দিয়েছে।... এটি হবে আমেরিকার স্বর্ণযুগ।’

৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প হতে যাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি বয়সে নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর আগে জো বাইডেন ৭৭ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। আবার ফৌজদারি অপরাধে আদালতে দোষী সাব্যস্ত প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা এখন যুদ্ধহীন দেশ দেখতে চায়। ট্রাম্পের গত মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র কোনো যুদ্ধে জড়ায়নি। যুদ্ধ মানেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার অপচয়, আর নিহত সেনার কফিনের সারি। এটা বোঝে মার্কিনরা। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে ব্যাপক সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া এবং হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান বিষয়ে অনেক মার্কিন নাগরিক নাখোশ ছিলেন।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বিজয় এক চমকপ্রদ রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনেরই নজির। কংগ্রেস ভবনে নিজের সমর্থকদের হামলার কলঙ্কের কালো ছায়ার মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউস ছেড়েছিলেন তিনি। সেই বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে চার বছর পর মার্কিন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু সেই হোয়াইট হাউসে ফিরছেন তিনি।

ভোটের রাতে কমলা প্রথাগত ভাষণ দেবেন না—এই ঘোষণা থেকেই বোঝা গিয়েছিল ডেমোক্র্যাটদের মনোভাব। ট্রাম্পের জয়ের আভাস ক্রমেই বেশি করে স্পষ্ট হতে থাকলে নির্বাচনী কার্যালয় ছেড়ে যেতে শুরু করেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা-কর্মীরা।

ভোটের দিনের ছবি
৫ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে যখন নিউইয়র্কের রাস্তায় বের হয়েছিলাম, তখন রাস্তাঘাট ছিল বেশ সুনসান। কুইন্স ভিলেজ এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, ভোটাররা আসছেই না। লাইনে কেউ দাঁড়িয়ে নেই। তবে কিছুক্ষণ ভোটকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই দেখতে পেলাম, ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছেন ভোটাররা। নানা বর্ণের নানা বয়সের মানুষ তারা।

এরপর গেলাম ব্রাইটন বিচে। বহুদূরের পথ। আটলান্টিক পারের ব্রাইটন বিচ এলাকাটি মূলত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসা অভিবাসী মানুষের বসতি। অনেক জরিপেই জানা গেছে, এই এলাকায় ট্রাম্পের পক্ষেই বেশি ভোট পড়বে। আর যাঁরা ইউক্রেন থেকে এসেছেন, তাঁরা ভোট দেবেন কমলা হ্যারিসকে।

বিশ্বনেতাদের অভিনন্দন
ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই তাঁকে অভিনন্দন জানানো শুরু করেছেন বিশ্বনেতারা। এরই মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা অভিনন্দন জানিয়েছেন। চীন সরকার অভিনন্দন জানালেও দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সরাসরি কিছু বলেননি। আর রাশিয়া বলেছে, ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন জানানোর পরিকল্পনা তাদের আপাতত নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘মান বাঁচাতে’ ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে ইইউ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহার না করে ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহার না করে ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে আগামী ২ বছরের জন্য বড় অঙ্কের সুদহীন ঋণ দিতে রাজি হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। ইইউ কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা আজ শুক্রবার ভোরের দিকে এই ঘোষণা দেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত চলা বৈঠকে নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ আপাতত ব্যবহার না করে বরং পুঁজিবাজার থেকে অর্থ ধার করে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা তহবিলের জোগান দেওয়া হবে। কূটনীতিকদের ভাষ্যমতে, বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নানা আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতা কাটানোর চেষ্টা চলেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্তোনিও কস্তা লিখেছেন, ‘চুক্তি হয়ে গেছে। ২০২৬-২৭ সালের জন্য ইউক্রেনকে প্রায় ১০৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হলো। আমরা কথা দিয়েছিলাম, আমরা তা রেখেছি।’

তহবিলের উৎস নিয়ে কস্তা বিস্তারিত কিছু না জানালেও রয়টার্সের কাছে আসা এক খসড়া নথি বলছে, এই অর্থ আসবে সরাসরি পুঁজিবাজার থেকে এবং এর নিশ্চয়তা থাকবে ইইউ বাজেটের ওপর। রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহারের যে বিতর্কিত পরিকল্পনা নিয়ে আগে আলোচনা হচ্ছিল, তা থেকে আপাতত সরে আসা হয়েছে। তবে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদকে ভিত্তি করে কোনো ঋণ দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও সরকারগুলোর মধ্যে আলোচনা চলবে।

এই চুক্তিতে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের ওপর কোনো আর্থিক দায় চাপানো হয়নি। কারণ দেশগুলো এই অর্থায়নে অংশ নিতে রাজি ছিল না। শর্ত অনুযায়ী, ইউক্রেন এই ঋণ তখনই শোধ করবে যখন তারা মস্কোর কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বা ‘ওয়ার রিপারেশন’ পাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়ার সম্পদগুলো অচল অবস্থায় পড়ে থাকবে। তবে প্রয়োজনে সেই সম্পদ থেকে ঋণ শোধ করার অধিকারও ইইউ নিজের হাতে রেখেছে।

এক ইইউ কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, ‘ইউক্রেনের জন্য অন্তত আগামী দুই বছরের অর্থের সংস্থান নিশ্চিত হওয়াটা একটা ইতিবাচক দিক।’ তবে অন্য একজন কূটনীতিকের মন্তব্য ছিল খানিকটা তির্যক। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ইউক্রেনকে বাঁচানোর চেয়ে বরং নিজেদের মান বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’

রাশিয়ার টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বেলজিয়াম। রাশিয়ার জব্দ করা ২১০ বিলিয়ন ইউরোর মধ্যে ১৮৫ বিলিয়ন ইউরোই আছে বেলজিয়ামের ইউরোক্লিয়ার নামক প্রতিষ্ঠানে। মস্কোর আইনি ও আর্থিক পাল্টা আঘাতের ভয়ে বেলজিয়াম সরকার বেশ আতঙ্কিত ছিল। ক্রেমলিন আগেই জানিয়ে রেখেছে, তাদের সম্পদ ধরা হলে তারা আদালতে যাবে এবং রাশিয়ায় থাকা বিদেশি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করবে।

এই বৈঠকের আগে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎস সতর্ক করে বলেছিলেন, চুক্তির সম্ভাবনা ছিল ‘ফিফটি-ফিফটি।’ বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডি ওয়েভারও আইনি ও আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন অন্য ইইউ দেশগুলো যেন সম্ভাব্য সব ক্ষতির দায়ভার নিতে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়।

শুক্রবার সকালে অবশ্য ডি ওয়েভার বেশ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার থেকে ঋণ নেওয়ার এই সিদ্ধান্তের ফলে ইইউ দেশগুলোর মধ্যে অন্তত বড় কোনো ‘বিশৃঙ্খলা বা বিভাজন’ তৈরি হয়নি।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই সম্পদ ব্যবহারের যেকোনো চেষ্টা হলে তারা ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করবে। বিশ্লেষক ক্রিস উইফার মনে করেন, মস্কো বিষয়টিকে একটি ‘আর্থিক যুদ্ধ’ হিসেবে দেখবে এবং কড়া প্রতিশোধ নেবে। তিনি বলেন, অনেক ইইউ রাষ্ট্রই এখন সরাসরি ইউক্রেনকে অর্থ দিতে হিমশিম খাচ্ছে, তাই তারা মরিয়া হয়ে বিকল্প কোনো উৎসের সন্ধান করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৮
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ–৩৫ ক্রয় নিষ্কণ্টক করতেই রাশিয়াকে এস–৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফেরত নিতে অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক। ছবি: সংগৃহীত
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ–৩৫ ক্রয় নিষ্কণ্টক করতেই রাশিয়াকে এস–৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফেরত নিতে অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের পথ সুগম করতে তুরস্ক রাশিয়ার কাছে তাদের সরবরাহ করা এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।

গত বুধবার ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গত সপ্তাহে তুর্কমেনিস্তান এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এই অনুরোধ করেন। রুশ ও তুর্কি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনার পর এই শীর্ষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বিষয়টি এমন এক সময়ে প্রকাশ্যে এল, যার কয়েক দিন আগে তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম বারাক জানান, আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটন পুনরায় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান উৎপাদন ব্যবস্থায় তুরস্কের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। বারাক এক পোস্টে লেখেন, ‘তুরস্কের এফ-৩৫ প্রোগ্রামে পুনরায় যোগদানের ইচ্ছা এবং তাদের কাছে থাকা রুশ নির্মিত এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।’

তুরস্ক কখনোই এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নিজ বিমানবহরে যুক্ত করেনি, তবে ২০১৯ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কেনার পর এই যুদ্ধবিমানের যৌথ উৎপাদন কর্মসূচি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল দেশটিকে। সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযান এবং গ্রিসের আকাশসীমা লঙ্ঘনের কারণে মার্কিন কংগ্রেস আগে থেকেই তুরস্কের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল এবং এই ক্রয়ের ফলে আঙ্কারার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

২০২০ সালে এক প্রতিরক্ষা বিলে সংশোধনীর মাধ্যমে তুরস্ককে এফ-৩৫ দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি নিশ্চিত করেন যে তুরস্কের কাছে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নেই, তাহলে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কিন ও তুর্কি প্রতিরক্ষা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতাও স্থবির হয়ে পড়ে।

রাশিয়ার কাছে এস-৪০০ ফেরত নেওয়ার অনুরোধ এরদোয়ানের আগের অবস্থান থেকে এক বড় ধরনের প্যারাডাইম শিফট। আগে তুরস্ক চেয়েছিল এস-৪০০ নিজের কাছেই রাখতে (হয়তো অকেজো অবস্থায়) এবং সেই সঙ্গে এফ-৩৫ ক্রয় করতে। বিশ্লেষকদের মতে, একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে তুরস্ক এস-৪০০ কোনো গুদামে রাখবে এবং এটি ব্যবহার করবে না, যা ন্যাটো পরিদর্শকেরা নিয়মিত যাচাই করবেন। এর আগে তুরস্ক এই ব্যবস্থা অন্য কোনো দেশে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ট্রাম্প সিরিয়ার ইস্যুতে এবং গাজায় হামাসকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে তুরস্কের প্রভাবের ওপর নির্ভর করছেন। মার্কিন থিংকট্যাংক ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট অ্যারন স্টেইন এর আগে বলেছিলেন, ট্রাম্প তুরস্কের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘এফ-৩৫-এর প্রধান গ্রাহক হলো তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব। ট্রাম্প তুরস্কের কাছে এফ-৩৫ বিক্রি করতে অত্যন্ত আগ্রহী। আমার ধারণা, তিনি প্রয়োজনে ইসরায়েলিদের আপত্তির বিরুদ্ধেও যেতে পারেন। ৪০টি জেটের অর্ডার অনেক বড় একটি বিষয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সমুদ্র উপকূলে পাওয়া গ্যাস বিক্রি করে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র–আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের সমুদ্র উপকূল। ছবি: এএফপি
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের সমুদ্র উপকূল। ছবি: এএফপি

গাজার সমুদ্রতীরবর্তী গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ ব্যবহার করে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই উপত্যকার পুনর্গঠন কাজে ব্যয় করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত আলোচনা করেছে। সাবেক এক পশ্চিমা কর্মকর্তা এবং বর্তমানে কর্মরত এক পশ্চিমা ও এক আরব কর্মকর্তা লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই আলোচনা বিভিন্ন আঙ্গিকে হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রস্তাব হলো—আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডনক) গাজার এখনো ব্যবহৃত হয়নি এমন গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিকানায় অংশ নেবে এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ গাজার পুনর্গঠনে ব্যয় করা হবে।

আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের আগেই যুক্তরাষ্ট্র গাজার যুদ্ধোত্তর যে পরিকল্পনা শুরু করেছিল, তার অধিকাংশের মতোই এখানেও কোনো চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। তবে সাবেক ওই পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, ডিসেম্বরে গাজার গ্যাস থেকে অর্থ উপার্জনের ধারণাটি পুনরায় আলোচনায় আসে।

২০০০ সালে গাজার সামুদ্রিক এলাকায় গ্যাস আবিষ্কৃত হয়। এই গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের অধিকার দুটি প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে: ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সার্বভৌম তহবিল প্যালেস্টাইন ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম এবং কনসোলিডেটেড কন্ট্রাক্টরস কোম্পানি। এটি একটি নির্মাণ ও জ্বালানি গোষ্ঠী, যার মালিক গ্রিসভিত্তিক এক প্রবাসী ফিলিস্তিনি পরিবার।

এই প্রকল্পের প্রায় ৪৫ শতাংশ মালিকানা একজন আন্তর্জাতিক অংশীদারের জন্য সংরক্ষিত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলা এবং পরবর্তী যুদ্ধের আগে মিসর এই মালিকানায় অংশ নিতে আগ্রহী ছিল। জাতিসংঘ বর্তমান এই যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় গ্যাস বিশেষজ্ঞ এবং দ্য গাজা মেরিন স্টোরি বইয়ের লেখক মাইকেল ব্যারন বলেন, ‘প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক।’

ব্যারন যখন ১৫ বছর আগে এই প্রকল্পে কাজ করেছিলেন, তখন গ্যাসক্ষেত্রটি উন্নয়নের খরচ ধরা হয়েছিল ৭৫ কোটি ডলার। এটি থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার আয় হওয়ার কথা ছিল, যার মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ১৫ বছর ধরে বছরে ১০ কোটি ডলার করে লভ্যাংশ পেত। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এটি ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। এর উন্নয়ন পুনর্গঠন কাজে বড় অবদান রাখতে পারে।’

জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, গাজার পূর্ণ পুনর্গঠন খরচ অনেক বেশি—প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল এই উপত্যকাকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্নির্মাণের ধারেকাছেও নেই। বরং ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের ঘনিষ্ঠ একদল মার্কিন প্রতিনিধি ইসরায়েল-অধিকৃত গাজার অর্ধাংশে অস্থায়ী আবাসন নির্মাণের একটি ছোট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।

সাবেক পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, তিনি মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর উচ্চপদস্থ কূটনীতিকদের সাথে কথা বলেছেন। তারা সবাই গাজাকে বিভক্ত রাখার এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনাটিও থমকে আছে, কারণ আরব ও মুসলিম দেশগুলো হামাস এবং ইসরায়েলি সেনাদের মাঝখানে পড়ে যাওয়ার ভয়ে সেনা পাঠাতে ইচ্ছুক নয়।

কাতার এবং সৌদি আরব গাজার পুনর্গঠনে অর্থায়ন করার ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানি জানিয়েছেন, অন্যরা যা ধ্বংস করেছে তা পুনর্নির্মাণের জন্য তারা চেক লিখবেন না। অন্যদিকে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে কোনো তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেননি।

এই পরিস্থিতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রধান উপসাগরীয় অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আবুধাবি বর্তমানে গাজায় বৃহত্তম মানবিক ত্রাণ দাতা।

ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং রুয়ান্ডা-কঙ্গো শান্তি চুক্তিকে যেভাবে ব্যবসায়িক লেনদেনের সাথে যুক্ত করেছে, গাজার ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক সম্পদ (গ্যাস) ব্যবহারের মাধ্যমে তারা একই পথে হাঁটতে চাইছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগে বিভিন্ন দেশ থেকে ৩২ হাজারের বেশি পাকিস্তানি বহিষ্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০০
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সংগঠিত ভিক্ষাবৃত্তি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত পাকিস্তানি নাগরিকদের ওপর নজরদারি জোরদার করেছে। শুধু তা-ই নয়, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩২ হাজারের বেশি পাকিস্তানিকে ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগে বিভিন্ন দেশ বহিষ্কার করেছে। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের মতে, এই প্রবণতা দেশটির আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

চলতি বছর ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগে সৌদি আরব ২৪ হাজার পাকিস্তানিকে বহিষ্কার করেছে। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত অধিকাংশ পাকিস্তানি নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। দেশটির দাবি, অনেকে সে দেশে পৌঁছানোর পর ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এফআইএ) বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, ২০২৫ সালে সংগঠিত ভিক্ষুক সিন্ডিকেট নির্মূল এবং অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরগুলোতে ৬৬ হাজার ১৫৪ জন যাত্রীকে নামিয়ে দিয়েছে (অফলোড করেছে)।

এফআইএর মহাপরিচালক রিফাত মুখতার বলেন, এই নেটওয়ার্কগুলো পাকিস্তানের সুনাম নষ্ট করছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রবণতা শুধু উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আফ্রিকা ও ইউরোপ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা শনাক্ত হয়েছে এবং কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশে পর্যটন ভিসার অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মুখতারের তথ্য অনুযায়ী, ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগে সৌদি আরব এ বছর ২৪ হাজার পাকিস্তানিকে ফেরত পাঠিয়েছে। দুবাই প্রায় ৬ হাজার ব্যক্তিকে এবং আজারবাইজান প্রায় আড়াই হাজার পাকিস্তানি ভিক্ষুককে বহিষ্কার করেছে। অর্থ্যাৎ ৩২ হাজারের বেশি পাকিস্তানিকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিষয়টি গত বছরই সৌদি কর্তৃপক্ষের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০২৪ সালে রিয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানকে অনুরোধ করেছিল, যেন ভিক্ষুকেরা মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ ভিসার অপব্যবহার করে ভিক্ষা করতে না পারে। সৌদি আরবের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় তখন সতর্ক করে দিয়েছিল যে এই চর্চা বন্ধে ব্যর্থ হলে তা পাকিস্তানের ওমরাহ ও হজযাত্রীদের জন্য বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

পাকিস্তানের আইন বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করেছেন। গত বছর দ্য ডন পত্রিকায় অ্যাটর্নি রাফিয়া জাকারিয়া ভিক্ষাবৃত্তিকে নিছক অভাবের তাড়না নয়, বরং একটি সুসংগঠিত উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি লিখেছিলেন, ‘পাকিস্তানের একটি শিল্প, যা অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং এর সদস্যদের কাজ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বেশ সফল, তা হলো ভিক্ষাবৃত্তি। এটি এখন এতই সফল একটি উদ্যোগ যে এটি অন্য দেশে রপ্তানি এবং সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘অনেক পাকিস্তানি হয়তো হজের সময় নিজের চোখে দেখেছেন, এই ভিক্ষুকেরা মক্কা ও মদিনার পবিত্র স্থানগুলোর বাইরে আস্তানা গড়ে তোলে। তারা সেখানে বিদেশি হজযাত্রীদের টাকার জন্য সেভাবেই হয়রানি করে, যেভাবে পাকিস্তানের বাজারগুলোতে ক্রেতাদের করে থাকে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত