অস্ট্রেলিয়ার রাজ্যে অপরাধ করলে ১০ বছরের শিশুরাও বড়দের সমান শাস্তি পাবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ২৯
নতুন নীতির বিরোধিতা করেছে অধিকার কর্মীরা। ছবি: বিবিসি

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্য এমন একটি আইন পাস করেছে, যেখানে ১০ বছর বয়সী শিশুরাও যদি হত্যা, গুরুতর আঘাত বা বাড়িতে চুরির মতো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়, তবে তারা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো কঠোর শাস্তি পাবে।

রাজ্য সরকার বলছে, কিশোর অপরাধীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের কারণে জনগণের ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এসেছে কঠোর এই শাস্তির নীতি। এটি অপরাধের প্রবণতা কমাবে।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, কঠোর শাস্তি যুব অপরাধ কমানোর পরিবর্তে তা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। জাতিসংঘ এই সংস্কারের সমালোচনা করেছে এবং বলেছে, এটি শিশুদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

বৃহস্পতিবার বিবিসি জানিয়েছে, কুইন্সল্যান্ডের লিবারেল ন্যাশনাল পার্টি গত অক্টোবরের নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। তারা নির্বাচনী প্রচারণায় এই নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল এবং বলেছিল—এটি অপরাধীদের অধিকারের চেয়ে ভুক্তভোগীদের অধিকারের পক্ষে।

রাজ্যের পার্লামেন্টে বিলটি পাস হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্রিসাফুলি বলেন, ‘এই আইনটি কুইন্সল্যান্ডের প্রতিটি বাসিন্দার জন্য, যারা কখনো যুব অপরাধের শিকার হয়েছেন এবং নিজেদের অরক্ষিত মনে করেছেন।’

তবে অস্ট্রেলিয়ার পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত ১৪ বছরে কুইন্সল্যান্ডে যুব অপরাধ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০২২ সালে এটি রেকর্ডকৃত ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায় এবং তখন থেকে স্থিতিশীল রয়েছে।

‘অ্যাডাল্ট ক্রাইম, অ্যাডাল্ট টাইম’ নামে পরিচিত নতুন আইন অনুযায়ী, শিশুদের দ্বারা সংঘটিত ১৩টি অপরাধের জন্য এখন আরও কঠোর শাস্তি প্রযোজ্য হবে। যেখানে হত্যার জন্য আজীবন কারাদণ্ড বা ন্যূনতম শাস্তি কার্যকর হবে।

কুইন্সল্যান্ড পুলিশ ইউনিয়ন এই পরিবর্তনকে সঠিক দিকের একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসা করেছে। নতুন অ্যাটর্নি-জেনারেল ডেব ফ্রেকলিংটন বলেছেন—এটি আদালতকে অপরাধের প্যাটার্ন বিশ্লেষণের সুযোগ দেবে এবং অপরাধীদের দায়বদ্ধ করবে।

তবে ফ্রেকলিংটন স্বীকার করেছেন, এই পরিবর্তন আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং আদিবাসী শিশুরা এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অস্ট্রেলিয়ার শিশু কমিশনার অ্যান হলন্ডস এই পরিবর্তনকে আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা প্রমাণিত যে, কম বয়সে বিচার ব্যবস্থার সংস্পর্শে আসা কোনো শিশু ভবিষ্যতে আরও গুরুতর অপরাধ করতে পারে।’

হলন্ডস আরও বলেন, ‘এই আইন আমাদের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের লক্ষ্য করছে, যা মানবাধিকারের প্রতি অবহেলার চরম উদাহরণ।’

আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, কঠোর শাস্তির কারণে শিশুদের দোষ স্বীকার করার প্রবণতা কমে যেতে পারে। এর ফলে আরও বেশি বিচার প্রক্রিয়া এবং আদালতের বিলম্ব দেখা দেবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত