ইসরায়েলিদের সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসীদের বংশধর মনে করতেন রানি এলিজাবেথ

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
ব্রিটেনের প্রয়াত রানি এলিজাবেথ। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের সাবেক প্রেসিডেন্ট রুভেন রিভলিন দাবি করেছেন, প্রয়াত ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথ মনে করতেন—প্রত্যেক ইসরায়েলিই হয় সন্ত্রাসী নয়তো সন্ত্রাসীদের বংশধর। গত রোববার লন্ডনে ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয় টেকনিওন-ইসরায়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ১০০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

রিভলিন বলেন, ‘রানি এলিজাবেথের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বরাবরই কিছুটা জটিল ছিল। তিনি মনে করতেন যে, আমরা ইসরায়েলিরা প্রত্যেকেই হয় সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসীর বংশধর। এটি তাঁর ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এবং এ কারণে আমাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কখনো সহজ ছিল না।

এই মতামতের প্রেক্ষিতে রিভলিন বলেন, রানি কখনোই আন্তর্জাতিক আনুষ্ঠানিক কোনো অনুষ্ঠানের বাইরে কোনো ইসরায়েলি কর্মকর্তাকে তাঁর প্রাসাদে প্রবেশ করতে দেননি। অন্যদিকে, রিভলিন বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসকে একেবারেই বিপরীত ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরেন এবং তাঁকে অত্যন্ত ‘বন্ধুত্বপূর্ণ এবং আন্তরিক’ বলে আখ্যা দেন।

রিভলিন জানান, রাজা তৃতীয় চার্লস অনানুষ্ঠানিকভাবে দুবার ইসরায়েল সফর করেছেন। প্রথমবার শিমন পেরেজ এবং দ্বিতীয়বার আইজ্যাক রবিনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে। এ ছাড়া, ২০২০ সালে তিনি আনুষ্ঠানিক সফরে ইসরায়েল গিয়েছিলেন। তবে রানি এলিজাবেথ তাঁর দীর্ঘ ৭০ বছরের শাসনামলে কখনো ইসরায়েল সফর করেননি।

গালায় উপস্থিত ৩০০ জন অতিথির সামনে বক্তব্য দিতে গিয়ে রিভলিন বলেন, ‘আমি আশা করি যে, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন যুগের সূচনা করবেন। আমরা, ইসরায়েলিরা এবং আরব ও আরব জাতিগুলো একসঙ্গে বসবাস করতে বাধ্য নই। তবে আমাদের নিয়তি একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করা। এটি অনিবার্য। তারা আমাদের এ অঞ্চল থেকে তাড়িয়ে দিতে পারবে না, কারণ আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। তাই, আসুন আমরা সবাই মিলে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করি।’

গালার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে, রুভেন রিভলিনকে ২০২৪ সালের চার্চিল অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করা হয়। এ পুরস্কার তাঁর হাতে তুলে দেন এর পূর্ববর্তী বিজয়ী ব্যারোনেস রুথ ডিচ। ইসরায়েলি শিক্ষা ও গবেষণায় টেকনিওন-ইসরায়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিশেষ অবদানের কথা উল্লেখ করে রিভলিন বলেন, ‘টেকনিওন ইসরায়েলের জন্য একটি গর্বের প্রতিষ্ঠান।’

উল্লেখ্য, ইসরায়েল এ পর্যন্ত পাঁচটি একাডেমিক নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছে, যার মধ্যে চারটির সঙ্গেই টেকনিওনের সম্পর্ক আছে। ইনস্টিটিউটের বর্তমান প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক উরি সিভান জানান, ‘এটি টেকনিওনের জন্য একটি কঠিন বছর ছিল। যুদ্ধ এবং এর পরবর্তী প্রভাব আমাদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। আমরা আমাদের কাজ অব্যাহত রেখেছি, কিন্তু এর জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, টেকনিওন–ইসরায়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি একটি সরকারি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ইসরায়েলের বন্দরনগরী হাইফায় অবস্থিত। এটি ১৯১২ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সেখানকার ইহুদিরা প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এটি দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান ও প্রকৌশলসহ স্থাপত্য, চিকিৎসা, শিল্প ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষা বিষয়ক ডিগ্রি প্রদান করে। এখানে ১৯টি একাডেমিক বিভাগ, ৬০টি গবেষণা কেন্দ্র এবং ১২টি অনুমোদিত শিক্ষণ হাসপাতাল রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি ১ লাখ ২৩ হাজার শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করেছে এবং এর স্নাতকদের ইসরায়েল রাষ্ট্রের সৃষ্টিতে ও সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রশংসিত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত