Ajker Patrika

ক্ষতিপূরণসহ মুক্তি পাচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় থাকা বন্দী

অনলাইন ডেস্ক
১৯৬৮ সালে হাকামাতার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিলেন জাপানের একটি আদালত। ছবি: বিবিসি
১৯৬৮ সালে হাকামাতার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিলেন জাপানের একটি আদালত। ছবি: বিবিসি

প্রায় ৫০ বছর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন জাপানি এক ব্যক্তি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এবার তাঁকে ক্ষতিপূরণ সহ মুক্তি দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার বিবিসি জানিয়েছে, বর্তমানে ৮৯ বছর বয়সী ইওয়া হাকামাতাকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি ২১ কোটি ৭০ লাখ ইয়েন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই ক্ষতিপূরণ প্রায় ১৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকারও বেশি।

হাকামাতার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, জাপানের ইতিহাসে কোনো ফৌজদারি মামলার জন্য এটাই সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ।

১৯৬৮ সালে হাকামাতা তাঁর বস, বসের স্ত্রী ও তাঁদের দুই সন্তানের হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তবে গত বছর নতুন করে মামলাটি পর্যালোচনা করা হলে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।

হাকামাতার আইনজীবীরা সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের দাবি করেছিলেন। তাঁরা যুক্তি দিয়েছিলেন, ৪৭ বছর কারাগারে থাকার ফলে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এ অবস্থায় বিচারক কুনি কোশি গতকাল সোমবার ওই ক্ষতিপূরণের আদেশ দেন এবং স্বীকার করেন যে, হাকামাতা অত্যন্ত গুরুতর মানসিক ও শারীরিক কষ্ট ভোগ করেছেন।

হাকামাতাকে ক্ষতিপূরণের এই অর্থ প্রদান করবে জাপান সরকার। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো এটিকে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্ষতিপূরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

হাকামাতার মামলা জাপানের দীর্ঘতম ও অন্যতম আলোচিত বিচারিক ঘটনা। ২০১৪ সালে তাঁর মামলাটি পুনঃ বিচারের অনুমতি দেওয়া হয় এবং তখনই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। প্রায় অর্ধশত বছর আগে এই মামলাটি যারা তদন্ত করেছিলেন, তাঁরাই হাকামাতাকে মিথ্যা প্রমাণ দিয়ে ফাঁসিয়েছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়।

এ অবস্থায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাপানের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর শিজুওকার একটি আদালতে বিচারক হাকামাতাকে খালাস দিলে, সেখানে উপস্থিত শত শত মানুষ ‘বানজাই’ (হুররে) বলে উল্লাস প্রকাশ করেন। তবে মানসিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেদিনের সেই শুনানিতে উপস্থিত থাকতে পারেননি হাকামাতা।

২০১৪ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে হাকামাতা তাঁর ৯১ বছর বয়সী বোন হিদেকোর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। বছরের পর বছর ধরে এই হিদেকোই তাঁর ভাইয়ের মুক্তির জন্য লড়াই করে গেছেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, হাকামাতা একটি মিসো (জাপানি খাবার) প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতেন। ১৯৬৬ সালে শিজুওকার একটি বাড়িতে আগুন লাগার পর তাঁর বস, বসের স্ত্রী এবং তাঁদের দুই সন্তানের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁদের প্রত্যেককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছিল।

তদন্তকারীরা হাকামাতাকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করেন এবং দাবি করেন, চারজনকে হত্যার পর তিনি ওই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন এবং ২ লাখ ইয়েন চুরি করেন। শুরুতে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু পরে ১২ ঘণ্টা ধরে নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হন। এ অবস্থায় ১৯৬৮ সালে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

বছরের পর বছর ধরে হাকামাতার আইনজীবীরা যুক্তি দিয়ে এসেছেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পোশাকে পাওয়া ডিএনএ তাঁর সঙ্গে মেলেনি এবং পুলিশের দেখানো প্রমাণ সন্দেহজনক ছিল।

২০১৪ সালে মামলাটি পুনঃ বিচারের অনুমতি পেলেও দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার কারণে এটি শুরু হতে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

এই মামলা জাপানের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে পুনঃ বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির অভিযোগের বিষয়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিয়াবাড়ীতে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জিএমের রক্তাক্ত মরদেহ

ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি এক নয়: জারাকে সারজিসের জবাব

কিছুদিন আগে মানিব্যাগও ছিল না, এখন বিশাল শোডাউন কীভাবে—সারজিসকে ডা. তাসনিম

চীনের আগে ভারত সফরে যেতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস: দ্য হিন্দুকে প্রেস সচিব

বাংলাদেশের বিপক্ষে ড্রয়ে ক্ষুব্ধ ভারতের কোচ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত