Ajker Patrika

ওয়াশিংটনে হেলিকপ্টার-উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ডেমোক্রেট প্রশাসনকে দুষলেন ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২: ৩৮
দুর্ঘটনায় পড়া ৬৭ জনের কেউ বেঁচে নেই। ছবি: এএফপি
দুর্ঘটনায় পড়া ৬৭ জনের কেউ বেঁচে নেই। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সামরিক হেলিকপ্টার ও যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের সংঘর্ষের ঘটনার পেছনে সাবেক বাইডেন ও ওবামা সরকারের দায় রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলছেন, জো বাইডেন এবং বারাক ওবামার প্রশাসনের সময় ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফএএ) এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার নিয়োগের ক্ষেত্রে মানদণ্ড কমিয়ে আনার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এই দুর্ঘটনাকে এফএএতে বৈচিত্র্যময় কর্মী নিয়োগের প্রচেষ্টার ফল হিসেবে মনে করছেন তিনি।

গতকাল রাতে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার রাতের দুর্ঘটনার বিষয়ে জানানোর সময় ট্রাম্প এসব কথা বলেন। বাইডেন ও ওবামা সরকারের সমর্থিত ‘ডাইভার্সিটি হায়ারস’ নীতিকে এই দুর্ঘটনার জন্য দায় দিলেন।

যদিও বিমান দুর্ঘটনার কারণ এখনো স্পষ্ট জানা যায়নি। এমন কোনো প্রমাণও নেই যে ফেডারেল কর্মীবাহিনীকে আরও বৈচিত্র্যময় করার প্রচেষ্টা বিমান নিরাপত্তাকে ব্যাহত করেছে। তবুও, ট্রাম্প এ নিয়ে বাণিজ্যিক মার্কিন বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) সমালোচনা করেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘এফএএর বৈচিত্র্য বৃদ্ধির প্রচেষ্টার মধ্যে গুরুতর বুদ্ধিবৃত্তিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন লোকদের নিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এটি অবিশ্বাস্য। গুরুতর প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের, যারা কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে কম প্রতিনিধিত্বশীল, তাদের অন্তর্ভুক্ত করার ফল দেখা যাচ্ছে।’

যখন ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এখনো দুর্ঘটনার কারণ জানা যায়নি। এর আগেই তিনি কীভাবে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক (ডিইআই) নিয়োগকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করতে পারেন। তখন ট্রাম্প উত্তর দেন, ‘কারণ আমার সাধারণ জ্ঞান আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দক্ষ হতে হবে।’

ট্রাম্পের দাবির বিষয়ে মন্তব্য জানাতে অনুরোধ করা হলেও এফএএ কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী এবং ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা তাঁর সমালোচনা করেছেন।

ডিইআই কর্মসূচির সমর্থকেরা ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈষম্য ও কাঠামোগত বর্ণবাদের মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয়।

বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ব্রিকহাউস বলেন, ‘বৈচিত্র্য আনার প্রচেষ্টার সঙ্গে নিরাপত্তা মানের কোনো সম্পর্ক নেই। নিরাপত্তা বলতে বোঝায়, দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করা এবং আরও ভালো করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা। এটি রাজনীতি করার সময় নয়, এটি কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়ার সময় নয়।’

ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিবহন সচিব পিট বুটিজেজের সমালোচনা করেন। ট্রাম্পের এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায়, বুটিজেজ এক্সে লেখেন, ‘যখন পরিবারগুলো শোকে মুহ্যমান, তখন ট্রাম্পের উচিত নেতৃত্ব দেওয়া, মিথ্যা বলা নয়।’

গতকাল বৃহস্পতিবার মাঝ আকাশে মুখোমুখি সংঘর্ষের পর ৩ সেনা নিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও ৬৪ জন আরোহী নিয়ে উড়োজাহাজ ওয়াশিংটন ডিসির পটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় কেউ বেঁচে নেই বলে উদ্ধারকর্মীরা ধারণা করছেন। এই দুর্ঘটনাকে গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ মার্কিন বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর নতুন প্রশাসনের একটি প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বৈচিত্র্যকে সমর্থনকারী যেকোনো নীতি বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি তার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ, যার মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারকে সংকুচিত, পুনর্গঠিত এবং তাঁর রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে চান।

পরে বৃহস্পতিবার, ট্রাম্প একটি নির্বাহী স্মারক জারি করেন, যেখানে তার প্রশাসনকে বিমান নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভূমিকায় বৈচিত্র্য বিষয়ক উদ্যোগগুলো মূল্যায়ন ও বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে, ট্রাম্প একটি আদেশে সই করেন, যেখানে সরকারি বৈচিত্র্য কর্মসূচি বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সব ফেডারেল দপ্তর ও চাকরির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি (ডিইআই) সংক্রান্ত পদ বিলুপ্ত করা এবং এই দপ্তরের কর্মীদের বেতনসহ ছুটিতে পাঠানো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, কারণ তাদের অফিসগুলো বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত