Ajker Patrika

বাসা ভাড়ার টাকা নেই, অফিসের টয়লেটেই থাকছেন চীনা তরুণী

আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৩: ৫৯
টয়লেটে ইয়াংয়ের আবাস। ছবি: সংগৃহীত
টয়লেটে ইয়াংয়ের আবাস। ছবি: সংগৃহীত

চীনের এক তরুণী আকাশছোঁয়া বাসা ভাড়ার কারণে বাধ্য হয়ে অফিসের টয়লেটে বসবাস করছেন। মাসে মাত্র ৫০ ইউয়ান (প্রায় ৭ মার্কিন ডলার) ভাড়ায় তিনি এই ৬ বর্গমিটারের অস্বাস্থ্যকর স্থানটিতে দিন কাটাচ্ছেন। এমনই মর্মস্পর্শী এক গল্প উঠে এসেছে হংকং ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন থেকে।

ইয়াং নামের ওই তরুণী চীনের দক্ষিণাঞ্চলের হুবেই প্রদেশের একটি গ্রামীণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিয়াওশিয়াং মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হুনান প্রদেশের ঝুজৌ শহরে একটি আসবাবপত্রের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন ইয়াং। তাঁর মাসিক বেতন মাত্র ২ হাজার ৭০০ ইউয়ান বা ৩৭০ মার্কিন ডলার। অথচ এই শহরের গড় বেতন ৭ হাজার ৫০০ ইউয়ান বা মার্কিন ডলারে ১ হাজার।

শহরটিতে বাসা ভাড়ার গড় হার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ ইউয়ানের মধ্যে। তাই নিজের সামান্য আয়ে আলাদা ঘর ভাড়া নেওয়া তাঁর পক্ষে দুঃসাধ্য। নিরুপায় হয়ে ইয়াং তাঁর নারী বসের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী, মাসে মাত্র ৫০ ইউয়ানের বিনিময়ে তিনি অফিসের টয়লেটে থাকার অনুমতি পান।

ছোট্ট ওই টয়লেটটিতে দুটি লো-কমোড ও একটি সিঙ্ক রয়েছে। এগুলোর ছাড়া টয়লেটটিতে যেটুকু জায়গা বেঁচে থাকে সেখানেই একটি ভাঁজ করা খাট, ছোট রান্নার পাত্র, পর্দা ও কাপড়ের হ্যাঙ্গার স্থাপন করে গত এক মাস ধরে বসবাস করছেন ইয়াং। দিনের বেলায় অন্যান্য কর্মীরা টয়লেট ব্যবহার করলেও রাতে তিনি সেখানে নুডলস রান্না করেন এবং ঘুমান।

ইয়াং জানান, নিয়মিত পরিষ্কার করার কারণে টয়লেটটি দুর্গন্ধমুক্ত থাকে এবং কর্মস্থলে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি থাকায় তিনি নিজেকে নিরাপদ মনে করেন। এমনকি তিনি কখনো দরজা বন্ধ করেন না এবং তাঁর কোনো জিনিস চুরিও হয়নি বলে জানান।

ইয়াংয়ের বস জু তরুণ প্রজন্মের এই নারীর কঠিন জীবনসংগ্রামের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি ইয়াংকে কিছুদিন তাঁর বাড়িতেও থাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জু জানান, ইয়াং প্রথমে অফিসের অব্যবহৃত জায়গা এবং মাসে ৪০০ ইউয়ানের একটি ঘর ভাড়া নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তা ও কর্মস্থলের কাছে থাকার সুবিধার জন্য শেষ পর্যন্ত টয়লেটেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

তবে, খুব শিগগিরই জু ইয়াংকে নবনির্মিত একটি অফিস কক্ষে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা করেছেন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের এই ব্যতিক্রমী জীবনযাত্রার কথা শেয়ার করলে ইয়াং রাতারাতি পরিচিতি লাভ করেন এবং ১৫ হাজারের বেশি ফলোয়ার পান।

যদিও অনেকে তাঁর এই পরিস্থিতিকে সাজানো বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তবে ইয়াং এটিকে নিতান্তই আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন এবং তাঁর বসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

ছোটবেলা থেকেই কঠিন জীবন পার করেছেন ইয়াং। মাত্র এক বছর বয়সে তাঁর বাবা-মা তাঁকে রেখে কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকে তিনি তাঁর দাদা-দাদির কাছে বড় হয়েছেন। পরিবারে তাঁর চেয়ে দশ বছরের ছোট ভাইয়ের প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়া হতো এবং প্রায়শই তাঁকে দাদার বকুনি সহ্য করার পাশাপাশি কঠিন কাজ করতে হতো। তিনি জানান, পরিবারের সব ভালোবাসা তাঁর ভাইয়ের জন্যই ছিল।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে নিজের শহর ছেড়ে এসে ইয়াং নিজের খরচ নিজেই বহন করতে শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রম করা সত্ত্বেও, তাঁর বাবা-মা প্রায়শই তাঁর ভাইয়ের শিক্ষার খরচ জোগানোর জন্য তার বেতনের টাকা চেয়ে নিতেন। ইয়াং জানান, প্রতি মাসে তাঁর ৩০০ থেকে ৪০০ ইউয়ান খরচ হয় এবং বাকি টাকা তিনি একটি বাড়ি ও গাড়ি কেনার জন্য জমাচ্ছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই ইয়াংয়ের কঠোর পরিশ্রম ও জীবনসংগ্রামের প্রশংসা করেছেন। এক নেটিজেন লিখেছেন, ‘তাঁর মতো একটি মেয়ে যা কিছু করবে তাতেই সফল হবে।’ তবে অনেকেই তাঁর অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘গরম বাড়লে টয়লেট আরও স্যাঁতসেঁতে হয়ে উঠবে, যা তাঁর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আশা করি তিনি শিগগিরই অন্য কোথাও থাকতে পারবেন।’ তৃতীয় আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘আমি আশা করি, চীনের সব পরিবার তাদের ছেলে ও মেয়েদের সমান চোখে দেখবে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

পরিবারের সামনে পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা-কর্মী আটক

নয়াদিল্লি হাসিনা আমলের দৃষ্টিভঙ্গিই ধরে রেখেছে: ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি বৈঠক হচ্ছে

গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা, বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মী আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত