Ajker Patrika

তুরস্কে বিরোধীদের এবার ‘বাণিজ্য বয়কটের’ ডাক

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৫, ২২: ১১
ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর বিরোধী দলগুলো ‘বাণিজ্য বয়কটের’ ডাক দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর বিরোধী দলগুলো ‘বাণিজ্য বয়কটের’ ডাক দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর বিরোধী দলগুলো তুরস্কের সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য ও সেবা বয়কটের ডাক দিয়েছে। উত্তাল তুরস্কে গত এক দশকের মধ্যে এত বড় বিক্ষোভ আগে কেউ কখনো দেখেনি। সরকারি নিষেধাজ্ঞা-গ্রেপ্তারের হুমকি উপেক্ষা করে দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে জমায়েত হয়েছেন ইমামোগলুর সমর্থকেরা। তবে বিরোধী দলগুলোর ‘বাণিজ্য বয়কটের’ নিন্দা করেছে তুরস্কের সরকার।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিরোধী দলগুলোর বাণিজ্য বয়কটের আহ্বানকে অর্থনীতির বিরুদ্ধে ‘ধ্বংসযজ্ঞের চেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এরদোয়ানের সরকার।

দুই সপ্তাহ আগে (১৯ মার্চ) মেয়র ইমামোগলুকে আটক করার পর প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোম্পানিগুলোর পণ্য ও সেবা বয়কটের ডাক দেয়। আজ বুধবার এই বিক্ষোভ আরও বিস্তৃত হয়ে এক দিনের জন্য সব ধরনের কেনাকাটা বন্ধের ঘোষণায় রূপ নেয়। এর ফলে কিছু দোকানি মেয়র ইমামোগলুর সমর্থকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তাঁদের দোকান বন্ধ রাখেন।

মেয়র ইমামোগলু এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও ভবিষ্যতের যেকোনো নির্বাচনে সিএইচপির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ইমামোগলুর গ্রেপ্তার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী। তাঁর সমর্থকদের মতে, এই গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্য তাঁকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া।

উল্লেখ্য, গ্রেপ্তারের এক দিন আগে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় ইমামোগলুর ডিগ্রিও বাতিল করেছে। ডিগ্রি না থাকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, সাইপ্রাসের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থানান্তরিত হওয়ার পর তাঁর ডিপ্লোমায় অনিয়ম পাওয়া গেছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী ওমের বোলাত দাবি করেছেন, বয়কটের আহ্বান অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি এবং এর পেছনে থাকা ব্যক্তিরা সরকারকে দুর্বল করতে চান। তিনি বলেন, ‘এটি দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা এবং এতে অসৎ বাণিজ্য ও প্রতিযোগিতার উপাদান রয়েছে। আমরা এটিকে এমন কিছু মহলের বৃথা প্রয়াস হিসেবে দেখি, যারা নিজেদের এই দেশের মালিক মনে করে।’

উপরাষ্ট্রপতি সেভদেত ইয়িলমাজ বলেছেন, ‘‘‘কেনাকাটা বন্ধের’’ আহ্বান সামাজিক সম্প্রীতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি এবং যেভাবেই হোক, আমরা এটি ‘‘প্রতিহত করব’’।’ মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য ও সরকারপন্থী সেলিব্রিটি, যাঁদের মধ্যে জার্মানি ও রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক ফুটবলার মেসুত ওজিলও রয়েছেন। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘#BoykotDegilMilliZarar’ বা ‘বয়কট নয়, জাতীয় ক্ষতি’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে তাঁদের অবস্থান জোরালো করেছেন।

সিএইচপির চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেল এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের মধ্যে ৩২টিতে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি গত এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এরদোয়ান এই বিক্ষোভকে দেশের জন্য ‘ক্ষতিকর’ বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন, এই বিক্ষোভ বেশি দিন স্থায়ী হবে না।

তুরস্কে গত কয়েক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপক বেড়েছে। দেশটির মুদ্রার মান কমে গেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি এখনো ৩৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

তুরস্কের সরকারি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার থেকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির প্রসিকিউটররা। ইস্তাম্বুলের প্রধান প্রসিকিউটরের কার্যালয় জানিয়েছে, দেশের জনগণের একটি অংশকে অর্থনৈতিক কার্যকলাপে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা ঘৃণাত্মক বক্তব্য ও জনগণের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ৫৩ বছর বয়সী একরেম ইমামোগলু ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি। তিনি সিএইচপির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৮ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে নানামুখী অস্থিরতায় আগাম নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত