Ajker Patrika

মিয়ানমার-থাইল্যান্ডে শক্তিশালী ভূমিকম্পের কারণ কী, এত ক্ষয়ক্ষতি কেন হলো

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৫, ২০: ৪০
ভূমিকম্পে মিয়ানমারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ভূমিকম্পে মিয়ানমারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

মিয়ানমারের মান্দালয় শহরের কাছে সাগাইং অঞ্চলে ঘটে যাওয়া ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি কীভাবে এতটা ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠল, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল শুক্রবারের এই ভূমিকম্পে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার আজ শনিবার জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ২ জনে পৌঁছেছে। প্রতিবেশী থাইল্যান্ডে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, এই সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

মিয়ানমারের এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণ

সাধারণত টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়ার ফলে ভূমিকম্প হয়। প্লেটগুলোর নড়াচড়ার ফলে এর সীমানা বরাবর বা তার কাছাকাছি অঞ্চলে চাপ সৃষ্টি হয় এবং এর থেকে ভূমিকম্প হয়। মিয়ানমার দুটি টেকটোনিক প্লেটের সীমানায় অবস্থিত, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলোর একটি করে তুলেছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ প্রফেসর জোয়ানা ফিউর ওয়াকার ব্যাখ্যা করে বলেন, ভারত ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সীমানা মিয়ানমারের মধ্যভাগ দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। এই প্লেটগুলো পার্শ্বীয়ভাবে একে অপরের পাশ দিয়ে চলাচল করে। তাই প্লেটগুলোর সামান্য নড়াচড়া হলেও ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।

ভূমিকম্পের ধ্বংসাত্মক প্রভাবের কারণ

ইউসিএলের আরেক বিশেষজ্ঞ বিল ম্যাকগুয়্যার বলেন, এই ভূমিকম্প সম্ভবত গত ৭৫ বছরে মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানা ‘সবচেয়ে বড়’ ভূমিকম্প। ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের রজার মুসন রয়টার্সকে বলেন, ভূমিকম্পের অগভীর কেন্দ্রস্থল (মাত্র ১০ কিমি গভীরতা) ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, অগভীর ভূমিকম্পে শকওয়েভ (কম্পন) ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগে বিক্ষিপ্ত হয় না, ফলে ভবনগুলো পুরোপুরি কেঁপে ওঠে এবং ধসে পড়ে।

মুসন আরও বলেন, ১৯৫৬ সালের পর সাগাইং অঞ্চলে এত বড় ভূমিকম্প হয়নি। ফলে সেখানকার স্থাপনাগুলো এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প প্রতিরোধের জন্য তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, মিয়ানমারের বেশির ভাগ ভূমিকম্প পশ্চিমাঞ্চলে হয়, কিন্তু এটি দেশের কেন্দ্রভাগে আঘাত করেছে। আর জনবহুল মান্দালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেড়েছে।

ইউএসজিএসের তথ্যমতে, এই ভূমিকম্পে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। দেশটির অর্থনৈতিক ক্ষতি মিয়ানমারের জিডিপির ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। রজার মুসন জানান, এই তথ্যগুলো মিয়ানমারের ভূমিকম্প প্রস্তুতি, অবস্থান ও অতীতের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা।

২০১২ সালে সাগাইং অঞ্চলে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এই অঞ্চলে ভূমিকম্প প্রতিরোধী অবকাঠামোর অভাব বর্তমান ক্ষয়ক্ষতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। তাই ভবিষ্যতে অবশ্যই ভূমিকম্প প্রতিরোধী অবকাঠামোর দিকে নজর দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত