অনলাইন ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের ওপর আজ থেকে সাত বছর আগে ভয়াবহ ‘জাতিগত নিধন’ চালিয়েছে ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনী। সেই জান্তাই এবার বিদ্রোহ দমনে রোহিঙ্গাদের সহায়তা চাইছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রাখাইনের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জেনেছে, এরই মধ্যে জান্তা বাহিনী অন্তত ১০০ রোহিঙ্গাকে বাহিনীতে ভর্তি করেছে। তাঁদের একজন মোহাম্মদ (নিরাপত্তার স্বার্থে প্রকৃত নাম প্রকাশ করা হয়নি)। তিনি জানান, জান্তা বাহিনীকে তিনি সব সময়ই ভয় করেছেন। কিন্তু তারপরও যেতে হয়েছে। কারণ, মোহাম্মদ যদি সেনাবাহিনী ভর্তি না হন, তবে তাঁর পরিবারের ক্ষতি করা হবে।
মোহাম্মদের মতো আরও শতাধিক তরুণ-যুবাকে জোর করে জান্তা বাহিনীতে ভর্তি করানো হয়েছে ভয়ভীতি দেখিয়ে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আরও একাধিক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ের কাছের যে আশ্রয় শিবিরে তাঁরা থাকেন, সেখানে প্রায় প্রতিদিন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা এসে বাহিনীতে ভর্তি হওয়ার জন্য ভয় দেখিয়ে যায়।
চরম পরিহাসের বিষয় হলো—যে রোহিঙ্গাদের জোর করে জান্তা বাহিনীতে ঢোকানো হচ্ছে, মিয়ানমারের সংবিধানে তাঁরা স্থানীয় নৃগোষ্ঠী হিসেবেই বিবেচিত না। তাদের নাগরিকত্বই অস্বীকার করা হয় এখনো দেশটিতে। এমনকি, দেশের ভেতরেও তাদের চলাচল সীমাবদ্ধ, যেতে দেওয়া হয় না দেশের বাইরেও।
রোহিঙ্গাদের ওপর এই নির্যাতন নতুন কোনো ঘটনা নয়। ২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের জোর করে বিভিন্ন নোংরা ক্যাম্পে থাকতে বাধ্য করে। পাঁচ বছর পর, ২০১৭ সালে জান্তা বাহিনীর ‘জাতিগত নিধন অভিযানের’ কারণে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সে সময় রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ব্যাপক আকারে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মিয়ানমারে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার কার্যক্রম চলছে।
যে জান্তা বাহিনী একসময় রোহিঙ্গাদের জোর করে নিজ বাসভূমি ছাড়তে বাধ্য করেছে, সেই জান্তাই এবার তাদের আবার জোর করে সেনাসদস্য হিসেবে ভর্তি করছে। বিশেষ করে, স্থানীয় নৃগোষ্ঠী বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির কাছে ব্যাপক মার খাওয়ার পর এই প্রক্রিয়ার গতি বেড়েছে গেছে।
আরাকান আর্মিসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছে ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণও হারাচ্ছে। একই সঙ্গে হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ সেনাও। হতাহত হওয়ার পাশাপাশি অনেক সেনাই আত্মসমর্পণ করছে অথবা পালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এদের বিকল্প কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, কেউই জনবিচ্ছিন্ন ও অজনপ্রিয় জান্তা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারতে চাইছেন না।
এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের লক্ষ্যবস্তু করার কারণ একটাই, তাদের আরও এক দফায় কামানের গোলার মুখে ঠেলে দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা। এর প্রমাণ পাওয়া যায় মোহাম্মদের কথা থেকে। তিনি জানান, মাত্র দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দিয়েই তাদের রণক্ষেত্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার কোনো ধারণাই নেই যে আমি কেন যুদ্ধ করছি। কিন্তু তারা আমাকে রাখাইনেরই গ্রামে মানুষের ওপর গুলি চালাতে বলেছে।’
আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে টানা ১১ দিন যুদ্ধের পর মোহাম্মদদের দলে খাবারের সংকট দেখা দেয়। একপর্যায়ে তাঁদের ঘাঁটিতে আরাকান আর্মির গোলা এসে পড়লে মোহাম্মদের সামনেই অনেকেই নিহত হন। তিনি নিজেও আহত হন। পরে তাঁকে সিতওয়েতে নেওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে মোহাম্মদ আবারও তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে যান ক্যাম্পে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ফিরে আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে অনেক কেঁদেছি।’
মোহাম্মদের মতো আরও অনেকেই জান্তা বাহিনীতে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছেন। তবে বাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল জাও মিন তুন রোহিঙ্গাদের সেনা হিসেবে সম্মুখ সমরে পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। তাই আমরা কেবল তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষার কাছে সাহায্য করতে বলেছি।’
কিন্তু বিবিসিকে অন্তত সাক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, তাঁরা অন্তত ১০০ জনকে চেনেন, যাঁদের জান্তা বাহিনী জোর করে ভর্তি করেছে এবং যুদ্ধ করতে পাঠিয়েছে। তাঁরা বলেছেন, জান্তা বাহিনী ও স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা গত ফেব্রুয়ারিতে আশ্রয় ক্যাম্পে এসে ঘোষণা করে, অল্পবয়সী রোহিঙ্গা পুরুষদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। এ সময় তারা রোহিঙ্গাদের খাবার, বেতন ও স্থায়ী নাগরিকত্ব দেওয়ার লোভ দেখিয়েছিল।
আরাকান আর্মি তীব্র আক্রমণের মুখে রাখাইনের আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে খাবার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক সরবরাহ লাইন ব্যবস্থা ধসে পড়ায় এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এর বাইরে, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার লোভ আরও বড় একটি ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়ার পেছনে। কিন্তু বাস্তবতা হলো রোহিঙ্গা পুরুষদের সেনাবাহিনীতে ভর্তি করার পর নাগরিকত্ব দেওয়ার স্বপ্ন কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
নাগরিকত্ব না দিলেও জান্তা বাহিনী ক্রমান্বয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে অনবরত। তাই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতারা বাধ্য হয়ে তুলনামূলক গরিবদের উদ্বুদ্ধ করছেন সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে। মূলত, তাদের ভয়—তরুণেরা ভর্তি না হলে তাদের বর্তমান যে আশ্রয় সেটাও কেড়ে নেওয়া হবে।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দিয়ে জান্তা বাহিনীতে ভর্তি করার বিষয়টিকে বেআইনি বলে আখ্যায়িত করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটসের কর্মী ম্যাথু স্মিথ বলেন, ‘এই নিয়োগ বেআইনি ও জোরপূর্বক শ্রমের সঙ্গে তুলনীয়।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের জান্তা বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে বর্তমান রেজিম মিয়ানমারে আবারও জাতিগত সহিংসতা উসকে দেওয়ার রাস্তা খুলে দিয়েছে। বিশেষ করে, রাখাইনে যে বৌদ্ধরা আছে, তারা দীর্ঘদিন ধরেই জান্তার সমর্থক। ২০১৭ সালে জান্তা বাহিনী যখন রোহিঙ্গা নিধনে নেমেছিল তখন রাখাইন বৌদ্ধরা তাদের সহায়তা করেছে। সেই থেকে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত উত্তেজনা চলমান।
যা-ই হোক, আরাকান আর্মি রাখাইনে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত জয়ের কাছাকাছি আছে। গোষ্ঠীটি রাখাইন রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন থেকেই। আরাকান আর্মি এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, রাজ্যটিতে যারা দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে তাদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এমনকি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও তারা বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে।
কিন্তু জান্তা বাহিনীতে রোহিঙ্গা সদস্য ভর্তির বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি আরাকান আর্মি। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র খিয়াং থুখা বিবিসিকে বলেছেন, যারা জান্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সবচেয়ে ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
জান্তা বাহিনীও বিষয়টিকে বেশ জোরেশোরেই প্রচার করছে। তবে স্থানীয় রোহিঙ্গারা বলছেন, জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বিদ্রোহী হিসেবে তুলে ধরে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে। রোহিঙ্গারা এখন এমন এক সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করতে বাধ্য হয়েছে, যারা মিয়ানমারে তাদের বসবাসের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় না। যার ফলে রোহিঙ্গারা জাতিগত বিদ্রোহীদের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে—যারা শিগগিরই রাখাইনের বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছে।
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের ওপর আজ থেকে সাত বছর আগে ভয়াবহ ‘জাতিগত নিধন’ চালিয়েছে ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনী। সেই জান্তাই এবার বিদ্রোহ দমনে রোহিঙ্গাদের সহায়তা চাইছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রাখাইনের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জেনেছে, এরই মধ্যে জান্তা বাহিনী অন্তত ১০০ রোহিঙ্গাকে বাহিনীতে ভর্তি করেছে। তাঁদের একজন মোহাম্মদ (নিরাপত্তার স্বার্থে প্রকৃত নাম প্রকাশ করা হয়নি)। তিনি জানান, জান্তা বাহিনীকে তিনি সব সময়ই ভয় করেছেন। কিন্তু তারপরও যেতে হয়েছে। কারণ, মোহাম্মদ যদি সেনাবাহিনী ভর্তি না হন, তবে তাঁর পরিবারের ক্ষতি করা হবে।
মোহাম্মদের মতো আরও শতাধিক তরুণ-যুবাকে জোর করে জান্তা বাহিনীতে ভর্তি করানো হয়েছে ভয়ভীতি দেখিয়ে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আরও একাধিক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ের কাছের যে আশ্রয় শিবিরে তাঁরা থাকেন, সেখানে প্রায় প্রতিদিন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা এসে বাহিনীতে ভর্তি হওয়ার জন্য ভয় দেখিয়ে যায়।
চরম পরিহাসের বিষয় হলো—যে রোহিঙ্গাদের জোর করে জান্তা বাহিনীতে ঢোকানো হচ্ছে, মিয়ানমারের সংবিধানে তাঁরা স্থানীয় নৃগোষ্ঠী হিসেবেই বিবেচিত না। তাদের নাগরিকত্বই অস্বীকার করা হয় এখনো দেশটিতে। এমনকি, দেশের ভেতরেও তাদের চলাচল সীমাবদ্ধ, যেতে দেওয়া হয় না দেশের বাইরেও।
রোহিঙ্গাদের ওপর এই নির্যাতন নতুন কোনো ঘটনা নয়। ২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের জোর করে বিভিন্ন নোংরা ক্যাম্পে থাকতে বাধ্য করে। পাঁচ বছর পর, ২০১৭ সালে জান্তা বাহিনীর ‘জাতিগত নিধন অভিযানের’ কারণে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সে সময় রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ব্যাপক আকারে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মিয়ানমারে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার কার্যক্রম চলছে।
যে জান্তা বাহিনী একসময় রোহিঙ্গাদের জোর করে নিজ বাসভূমি ছাড়তে বাধ্য করেছে, সেই জান্তাই এবার তাদের আবার জোর করে সেনাসদস্য হিসেবে ভর্তি করছে। বিশেষ করে, স্থানীয় নৃগোষ্ঠী বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির কাছে ব্যাপক মার খাওয়ার পর এই প্রক্রিয়ার গতি বেড়েছে গেছে।
আরাকান আর্মিসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছে ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণও হারাচ্ছে। একই সঙ্গে হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ সেনাও। হতাহত হওয়ার পাশাপাশি অনেক সেনাই আত্মসমর্পণ করছে অথবা পালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এদের বিকল্প কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, কেউই জনবিচ্ছিন্ন ও অজনপ্রিয় জান্তা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারতে চাইছেন না।
এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের লক্ষ্যবস্তু করার কারণ একটাই, তাদের আরও এক দফায় কামানের গোলার মুখে ঠেলে দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা। এর প্রমাণ পাওয়া যায় মোহাম্মদের কথা থেকে। তিনি জানান, মাত্র দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দিয়েই তাদের রণক্ষেত্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার কোনো ধারণাই নেই যে আমি কেন যুদ্ধ করছি। কিন্তু তারা আমাকে রাখাইনেরই গ্রামে মানুষের ওপর গুলি চালাতে বলেছে।’
আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে টানা ১১ দিন যুদ্ধের পর মোহাম্মদদের দলে খাবারের সংকট দেখা দেয়। একপর্যায়ে তাঁদের ঘাঁটিতে আরাকান আর্মির গোলা এসে পড়লে মোহাম্মদের সামনেই অনেকেই নিহত হন। তিনি নিজেও আহত হন। পরে তাঁকে সিতওয়েতে নেওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে মোহাম্মদ আবারও তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে যান ক্যাম্পে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ফিরে আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে অনেক কেঁদেছি।’
মোহাম্মদের মতো আরও অনেকেই জান্তা বাহিনীতে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছেন। তবে বাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল জাও মিন তুন রোহিঙ্গাদের সেনা হিসেবে সম্মুখ সমরে পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। তাই আমরা কেবল তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষার কাছে সাহায্য করতে বলেছি।’
কিন্তু বিবিসিকে অন্তত সাক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, তাঁরা অন্তত ১০০ জনকে চেনেন, যাঁদের জান্তা বাহিনী জোর করে ভর্তি করেছে এবং যুদ্ধ করতে পাঠিয়েছে। তাঁরা বলেছেন, জান্তা বাহিনী ও স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা গত ফেব্রুয়ারিতে আশ্রয় ক্যাম্পে এসে ঘোষণা করে, অল্পবয়সী রোহিঙ্গা পুরুষদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। এ সময় তারা রোহিঙ্গাদের খাবার, বেতন ও স্থায়ী নাগরিকত্ব দেওয়ার লোভ দেখিয়েছিল।
আরাকান আর্মি তীব্র আক্রমণের মুখে রাখাইনের আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে খাবার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক সরবরাহ লাইন ব্যবস্থা ধসে পড়ায় এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এর বাইরে, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার লোভ আরও বড় একটি ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়ার পেছনে। কিন্তু বাস্তবতা হলো রোহিঙ্গা পুরুষদের সেনাবাহিনীতে ভর্তি করার পর নাগরিকত্ব দেওয়ার স্বপ্ন কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
নাগরিকত্ব না দিলেও জান্তা বাহিনী ক্রমান্বয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে অনবরত। তাই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতারা বাধ্য হয়ে তুলনামূলক গরিবদের উদ্বুদ্ধ করছেন সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে। মূলত, তাদের ভয়—তরুণেরা ভর্তি না হলে তাদের বর্তমান যে আশ্রয় সেটাও কেড়ে নেওয়া হবে।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দিয়ে জান্তা বাহিনীতে ভর্তি করার বিষয়টিকে বেআইনি বলে আখ্যায়িত করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটসের কর্মী ম্যাথু স্মিথ বলেন, ‘এই নিয়োগ বেআইনি ও জোরপূর্বক শ্রমের সঙ্গে তুলনীয়।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের জান্তা বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে বর্তমান রেজিম মিয়ানমারে আবারও জাতিগত সহিংসতা উসকে দেওয়ার রাস্তা খুলে দিয়েছে। বিশেষ করে, রাখাইনে যে বৌদ্ধরা আছে, তারা দীর্ঘদিন ধরেই জান্তার সমর্থক। ২০১৭ সালে জান্তা বাহিনী যখন রোহিঙ্গা নিধনে নেমেছিল তখন রাখাইন বৌদ্ধরা তাদের সহায়তা করেছে। সেই থেকে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত উত্তেজনা চলমান।
যা-ই হোক, আরাকান আর্মি রাখাইনে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত জয়ের কাছাকাছি আছে। গোষ্ঠীটি রাখাইন রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন থেকেই। আরাকান আর্মি এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, রাজ্যটিতে যারা দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে তাদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এমনকি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও তারা বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে।
কিন্তু জান্তা বাহিনীতে রোহিঙ্গা সদস্য ভর্তির বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি আরাকান আর্মি। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র খিয়াং থুখা বিবিসিকে বলেছেন, যারা জান্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সবচেয়ে ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
জান্তা বাহিনীও বিষয়টিকে বেশ জোরেশোরেই প্রচার করছে। তবে স্থানীয় রোহিঙ্গারা বলছেন, জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বিদ্রোহী হিসেবে তুলে ধরে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে। রোহিঙ্গারা এখন এমন এক সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করতে বাধ্য হয়েছে, যারা মিয়ানমারে তাদের বসবাসের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় না। যার ফলে রোহিঙ্গারা জাতিগত বিদ্রোহীদের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে—যারা শিগগিরই রাখাইনের বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছে।
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
কলকাতার মেট্রোরেলে এক নারী যাত্রীকে বাংলা বাদ দিয়ে হিন্দিতে কথা বলতে জোরাজুরি করেছেন আরেক নারী। এই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওতে হিন্দিতে কথা বলতে না পারা নারীকে ‘বাংলাদেশি’ বলেও তাচ্ছিল্য করা হয়েছে।
২৭ মিনিট আগেভারতের বিশেষ করে তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ভারতীয় পরিবারগুলোর সন্তান দেখাশোনার কাজ বেছে নিচ্ছেন। প্রতি ঘণ্টা ১৩ থেকে ১৮ ডলার পান তাঁরা। তবে এই সম্মানী এলাকা ও প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে। অনেক পরিবার বেবি সিটারদের থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে।
১ ঘণ্টা আগেইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়াতে হামলা চালানোর পর যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। এর মধ্যে রাশিয়া জানাল, পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের দালনে গ্রাম দখলে নিয়েছে তাদের সেনারা। অবশ্য রাশিয়ার গ্রাম দখলের বিষয়টি স্বীকার করেনি ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ।
১ ঘণ্টা আগেট্রাম্প প্রশাসনের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে মনোনীত হওয়ার পরপরই যৌন কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগে সরে দাঁড়াতে হলো ম্যাট গেটজকে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে পুরোনো মিত্র পাম বন্ডিকে বেছে নিলেন ট্রাম্প।
২ ঘণ্টা আগে