Ajker Patrika

স্বজনদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় তাইওয়ান-সিঙ্গাপুরের মিয়ানমারপ্রবাসীরা

অনলাইন ডেস্ক
মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার এক দিন পর ভিক্ষুদের একটি দল দান সংগ্রহ করছেন তাইওয়ানের ‘লিটল মিয়ানমারে’। ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার এক দিন পর ভিক্ষুদের একটি দল দান সংগ্রহ করছেন তাইওয়ানের ‘লিটল মিয়ানমারে’। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর প্রবাসী বার্মিজদের মধ্যে উৎকণ্ঠা চরমে। তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরে বসবাসরত বার্মিজদের অনেকে এখনো স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবরের খোঁজ করছেন, কেউবা ব্যাকুল হয়ে দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। ভূমিকম্পের পাশাপাশি চলমান সংঘাত ও অবকাঠামোগত সংকটের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে।

তাইওয়ানে প্রায় ৫০ হাজার চীনা-বর্মি বসবাস করেন। তাঁদের একজন উইন উইন। মিয়ানমারের মান্দালয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর থেকে পরিবারের খবরের জন্য ব্যাকুল হয়ে আছেন তিনি। তাইওয়ানের এক রেস্তোরাঁয় কাজের ফাঁকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রেখে জানার চেষ্টা করছেন—স্বজনেরা নিরাপদ আছেন কি না।

আজ শনিবার তাইপের পাশের নিউ তাইপেতে এই চীনা-বর্মি নাগরিক রয়টার্সকে বলেন, ‘গত রাতে কথা হয়েছিল, কিন্তু আজ আর যোগাযোগ করতে পারছি না। খুব ভয় লাগছে।’

৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছেই মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়। সেখানে বসবাসরত বড় একটি চীনা সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাইওয়ানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তবে উদ্ধারকারী দল পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও এখনো কোনো সাড়া পায়নি তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নিউ তাইপের ‘লিটল মিয়ানমারের’ এক দোকানে বসে মিয়ানমারের সর্বশেষ খবরে চোখ রেখেছিলেন ইয়ে ইউ নাই। তাঁর বোন মান্দালয়ে থাকেন। তিনি রয়টার্সকে বলেন, বাড়িটা নতুন বানানো, তাই ঠিক আছে, কিন্তু রাস্তাঘাট মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তাইওয়ানের মিয়ানমারপ্রবাসীদের ইতিহাস বহু পুরোনো। ১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধে পরাজিত সেনারা বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার) আশ্রয় নেন এবং পরে তাইওয়ানে পাড়ি জমান। তাঁরা চীনা-বর্মি নামে পরিচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অনেকে দমন-পীড়ন ও চীনবিরোধী মনোভাব থেকে পালিয়ে এসেছেন।

লিটল মিয়ানমারের আরেক বাসিন্দা হুয়াং (ছদ্মনাম) নিজ দেশের (মিয়ানমার) চলমান অস্থিরতা নিয়ে রয়টার্সের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মান্দালয়ের আত্মীয়দের নিয়ে তিনি বলেন, ‘ওদের সঙ্গে আর দেখা হবে না—এটাই সবচেয়ে কষ্টের।’

গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার পর পরিবারের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাইওয়ানে বসবাসরত চীনা-বর্মি বাসিন্দা ইয়ে ইউ নাই। ছবি: সংগৃহীত
গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার পর পরিবারের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাইওয়ানে বসবাসরত চীনা-বর্মি বাসিন্দা ইয়ে ইউ নাই। ছবি: সংগৃহীত

সিঙ্গাপুরেও উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তা

সিঙ্গাপুরের পেনিনসুলা প্লাজায় সপ্তাহের শেষদিনে একত্র হন বার্মিজেরা। সেখানকার এক লজিস্টিক কোম্পানির কর্মী সু লাফ (৪১) বলেন, ‘ভূমিকম্পের আগে স্বজনেরা সংঘাত আর বন্যার মধ্যে ছিল। আমরা আগেই অনেককে হারিয়েছি।’

সিঙ্গাপুরে প্রায় ২ লাখ বার্মিজ থাকেন। যাঁদের বেশির ভাগ গৃহকর্মী বা নির্মাণশ্রমিক। আজ সিঙ্গাপুর ৮০ সদস্যের চিকিৎসক, প্যারামেডিক ও উদ্ধার বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠিয়েছে।

পেনিনসুলা প্লাজার দোকানি মিন কুন (৩৫) আজ সকালে প্রথমবারের মতো বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘একটা দেয়াল আত্মীয়ের ওপর পড়েছে, কিন্তু কোনো চিকিৎসা মিলছে না। ওর অবস্থা কেমন, তা–ও ঠিকমতো জানি না।’

এদিকে আগামীকাল রোববার স্ত্রী-সন্তানদের কাছে ফেরার জন্য দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে অং মিয়ো থান্টকে (৪১)। মান্দালয়ে তাঁর তিনতলা বাড়ি ধসে পড়েছে, তবে পরিবার অক্ষত আছে।

সিঙ্গাপুরে রঙমিস্ত্রির কাজ করা থান্ট বলেন, ‘নিজেকে সামলাতে পারছি না...আমি যেন পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার জীবন, আমার পরিবারের জীবন শেষ হয়ে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত