Ajker Patrika

কোকাকোলা থেকে কোলগেট, মার্কিন পণ্য বর্জনের ডাক উঠেছে ইউরোপজুড়ে

অনলাইনে ডেস্ক
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১: ০৩
ছবি: দ্য ইনডিপেনডেন্ট
ছবি: দ্য ইনডিপেনডেন্ট

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলোর ক্ষুব্ধ ভোক্তারা কোকাকোলা থেকে শুরু করে কোলগেট টুথপেস্ট পর্যন্ত মার্কিন সব পণ্য বর্জন করছেন। পণ্য বর্জনের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর এটাই তাঁদের একমাত্র উপায়।

মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর গুগল ট্রেন্ডসে এখন ‘বয়কট ইউএসএ’ ও ‘বয়কট আমেরিকা’ শব্দগুলোর সার্চ বেড়ে গেছে। এই শব্দগুলোর শীর্ষ অনুসন্ধানকারী দেশগুলোর মধ্যে ডেনমার্ক, কানাডা ও ফ্রান্স রয়েছে।

ডেনমার্কের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ইভান হ্যানসেন এখন সুপারমার্কেটে গেলে প্রতিটি পণ্য সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখেন, যাতে কোনো মার্কিন পণ্য না কেনা হয়। অতীতে তিনি কোকাকোলা, ক্যালিফোর্নিয়ার জিনফ্যান্ডেল ওয়াইন এবং বাদামের নিয়মিত ক্রেতা হলেও এখন তিনি এগুলো তাঁর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন।

৬৭ বছর বয়সী হ্যানসেন জানান, ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ড দখল করে নিতে ট্রাম্প যে হুমকি দিয়েছেন, তাতে তিনি ক্ষুব্ধ। তবে শুধু এটাই নয়, পানামা খাল ও গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি এবং ইলন মাস্কের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কও তাঁর বিরক্তির কারণ। কট্টর ডানপন্থীদের সঙ্গে মাস্কের সংযোগ ছাড়াও তাঁর কিছু আচরণকে নাৎসি স্যালুটের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন অনেকে।

হ্যানসেন আরও জানান, সম্প্রতি কেনাকাটার সময় তিনি ইরানি খেজুর কিনে এনেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন—তাঁর দৃষ্টিতে ইরানের চেয়েও বড় হুমকি এখন যুক্তরাষ্ট্র।

বয়কট আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে ইউরোপজুড়ে

ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন পণ্য এড়ানোর উপায় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন হাজার হাজার ইউরোপীয় ও কানাডিয়ান আলোচনা করছেন। বিশেষ করে নর্ডিক অঞ্চলে এই অনুভূতি তীব্র এবং ডেনমার্কে এটি সবচেয়ে প্রবল বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ইলন মাস্কের টেসলা গাড়ির প্রতি বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়াও বাড়ছে। ফলে ইউরোপ ও কানাডায় এই গাড়ির বিক্রি কমে গেছে। জার্মানিতে চারটি টেসলা গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

ডেনমার্কের ফুনেন দ্বীপের বাসিন্দা অ্যালসেবেথ পেডেরসেন সম্প্রতি একটি নতুন গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু গাড়ি কিনতে গিয়ে মার্কিন ব্র্যান্ডগুলোর দিকে তিনি ঘুণাক্ষরেও তাকাননি। অন্যদিকে ফরাসি উদ্যোক্তা রোমান রোয় তাঁর সৌর প্যানেল কোম্পানির জন্য ২০২১ সাল থেকেই প্রতি বছর নতুন টেসলা কিনতেন। কিন্তু এবার তিনি অন্তত ১৫টি টেসলা গাড়ির অর্ডার বাতিল করে দিয়েছেন। ইউরোপীয় মডেল কিনতে তাঁকে দেড় লাখ ইউরো বেশি খরচ করতে হবে। তারপরও তিনি মার্কিন ব্র্যান্ডের গাড়ি পরিহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ডেনদের ভাইকিং রক্তে উত্তেজনা

ডেনমার্কের একটি স্কুলের প্রধান ৫৭ বছর বয়সী বো অ্যালবার্টাস বলেন, ‘ট্রাম্প যখন ডেনমার্কের একটি অংশ রাজনৈতিক বা সামরিক শক্তি দিয়ে দখলের ঘোষণা দিলেন, তখন সেটি আমার কাছে অসহনীয় মনে হয়েছিল।’

অ্যালবার্টাস তাই পেপসি, কোলগেট, হেইঞ্জ কেচাপ এবং ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়াইন ছেড়ে ইউরোপীয় পণ্য গ্রহণ করেছেন। শুধু তাই নয়, বর্তমানে তিনি ‘মার্কিন পণ্য বর্জন’ শিরোনামে একটি ডেনিশ ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন। এই গ্রুপে এখন ৮০ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছেন।

ইলেকট্রিশিয়ান ইয়েন্স অলসেন মনে করেন, ট্রাম্পের নীতিগুলো ডেনিশদের ভাইকিং রক্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় তিনিও যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পরিবর্তনের কথা ভাবছেন। খরচ বেড়ে গেলেও তিনি এটা করবেন।

ফ্রান্সেও বয়কটের ঢেউ

‘বয়কট ইউএসএ, বাই ফ্রেঞ্চ অ্যান্ড ইউরোপিয়ান’ নামে অনলাইনে একটি গ্রুপ খুলেছেন ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের কৃষক এডওয়ার্ড রুসেজ। মাত্র দুই সপ্তাহেই এই গ্রুপে ২০ হাজার মানুষ যোগ দিয়েছেন। রুসেজ জানিয়েছেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো ট্রাম্পের প্রচারণায় অর্থায়ন করেছে, তাই বয়কটের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানোর এটি একটি কার্যকর উপায়।

কিছু মানুষ নেটফ্লিক্সের মতো মার্কিন কিছু স্ট্রিমিং পরিষেবা বর্জনের কথা ভাবছেন। ডেনমার্কের হোরসেন্স শহরের বাসিন্দা সিমন ম্যাডসেন ও তাঁর পরিবার প্রিঙ্গলস, ওরিওস এবং পেপসি ম্যাক্স ত্যাগ করেছেন। তবে তাঁর সন্তানেরা এখনো নেটফ্লিক্স ছাড়তে রাজি হয়নি।

ম্যাডসেন বলেন, ‘মানুষের উচিত কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করা। এটাই আমাদের একমাত্র অস্ত্র।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত