Ajker Patrika

ভয়াবহ হুমকির মুখে রোহিঙ্গারা, আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান অ্যামনেস্টির

আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৭: ১৮
ভয়াবহ হুমকির মুখে রোহিঙ্গারা, আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান অ্যামনেস্টির

মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালের পর থেকেই ভয়াবহ হুমকির মুখে আছেন। এরপর, ২০২১ সালে দেশটিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর তাদের দুর্দশা আরও বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ, রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি ও জান্তাবাহিনীর মধ্যকার লড়াইয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা আরও বেড়েছে। সম্প্রতি এই দুই বাহিনীর মধ্যকার লড়াইয়ে হাজারো রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

তাদের অনেকেই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সদ্য আগত এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সহায়তা জরুরিভাবে প্রয়োজন। আর এই প্রয়োজন মেটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, ‘আবারও, রোহিঙ্গা জনগণকে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে এবং মেরে ফেলা হচ্ছে। বিষয়টি আবারও তাদের ২০১৭ সালের দেশত্যাগের ঘটনাকে দুঃখজনকভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। আমরা এমন লোকদের সঙ্গে দেখা করেছি যারা আমাদের বলেছে, তারা মিয়ানমারে পালিয়ে যাওয়ার কারণে বাবা-মা, ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের হারিয়েছেন। যারা ভাগ্যবান, তারা বাংলাদেশে আসতে পেরেছেন। কিন্তু তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার, ঘুমানোর উপযুক্ত জায়গা, এমনকি নিজেদের কাপড়ও নেই।’

গত বছরের নভেম্বরে রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরও দুই গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে জান্তাবাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে। এরই মধ্যে, আরাকান আর্মি অঞ্চলটির বড় একটি অংশই দখল করে নিয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা কেবল জান্তাবাহিনীর হামলার মুখোমুখি হলেও এবার তারা আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনী উভয়েরই আক্রমণের শিকার হচ্ছে।

অ্যামনেস্টি অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ রাখাইনের সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাচ্ছে। অন্য দিকে যারা বাংলাদেশ পৌঁছেছেন তারা প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও পরিষেবার ব্যাপক ঘাটতির কথা জানিয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে অ্যামনেস্টি ২২ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেয়। যারা সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

সদ্য আগতরা জানিয়েছে, আরাকান আর্মি বেআইনিভাবে রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে, তাদের বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে এবং তাদের আক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলেছে। জান্তাবাহিনীও একই ধরনের আচরণ করছে তাদের সঙ্গে। সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গাই শিশুসহ ডুবে মারা গেছে।

রোহিঙ্গারা অ্যামনেস্টিকে জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আতঙ্কেও ছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দেখতে পেয়েছে, বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়েছে। যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কারণ, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকিতে রয়েছে এমন দেশে কাউকে ফেরত বা স্থানান্তর করা নিষিদ্ধ কর।

 ৩৯ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেন, তিনি গত ৫ আগস্ট তাঁর পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে মংডু থেকে পালিয়ে যান। ৫ আগস্ট ভোরে তাদের নৌকাটি বাংলাদেশের উপকূলের কাছে ছিল। স্থানীয়রা তাদের সাহায্য করতে চাইলেও বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষীরা তাদের বাধা দেয়।

ওই ব্যক্তি বলেন, ‘সীমান্ত রক্ষীরা কাছাকাছি ছিল, কিন্তু তারা আমাদের সাহায্য করেনি।’ তিনি আরও জানান, তারপরও তিনি অন্য এক জায়গা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং সৈকতে ঘুম থেকে উঠে তীরের কাছে ভেসে আসা এক মৃতদেহ দেখতে পান। পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে, সেগুলো তাঁর ছয় সন্তানের লাশ। যাদের বয়স ২-১৫ বছরের মধ্যে। তারা ডুবে গিয়েছিল। তিনি জানান, তাঁর বোনও তাঁর ছয় সন্তানকে হারিয়েছে।

অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, ‘মানুষকে এমন একটি দেশে ফেরত পাঠানো ঠিক নয়, যেখানে তারা মারা যাওয়ার সত্যিকারে ঝুঁকিতে আছেন। এটি কেবল আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনই নয়, এর ফলে শরণার্থীরা শনাক্তকরণ এড়াতে আরও বেশি ঝুঁকি নিতে বাধ্য করে।’

বাংলাদেশের শরণার্থীশিবিরে নতুন আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সেখানে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বদান্যতায় জীবনযাপন করছে। সদ্য আগতরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, তারা প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে নিবন্ধন করতে পারছেন না। ফলস্বরূপ, অনেকে না খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন এবং চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হলেও নির্বাসনের ভয়ে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।

অ্যামনেস্টির কথা বলা রোহিঙ্গারা শরণার্থীশিবিরে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কথাও উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, প্রধানত দুটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপের উপস্থিতির কারণে—রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির কারণে এমনটা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটা বড় অংশই তৃতীয় একটি দেশে পুনর্বাসনের আশা করছেন।

অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও মানবিক ত্রাণ সংস্থাগুলোকে অবশ্যই একযোগে কাজ করতে হবে যাতে মানুষ খাদ্য, পর্যাপ্ত আশ্রয় এবং চিকিৎসা পরিষেবার মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো পেতে পারে। বাংলাদেশকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, দেশটি জোরপূর্বক রোহিঙ্গা জনগণকে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের দিকে ফিরিয়ে দেবে। শরণার্থীশিবিরে বসবাসকারীদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তহবিল ও সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’

এদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জোর করে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলেছেন, সীমান্তরক্ষীরা সীমান্ত অতিক্রম করার রোহিঙ্গাদের বাধা দিচ্ছে তবে ফেরত পাঠাচ্ছে না। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ নতুন আর কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার মতো জায়গায় নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টাকে প্রতিহতের ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো মূল্যে রোধ করা উচিত, কারণ এটি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইনস্টিটিউট ফর জাপান স্টাডিজ’-এর পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘জাপানের পারমাণবিক হওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতির জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে।’

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্য। জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, টোকিওর পারমাণবিক অস্ত্র রাখা উচিত।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা বেপরোয়া মন্তব্য নয়; বরং জাপানের বহুদিনের পারমাণবিক অস্ত্রায়নের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

উত্তর কোরিয়ার মতে, জাপান তাদের তথাকথিত ‘অ-পারমাণবিক নীতি’ পুনর্বিবেচনার কথা বলে কার্যত একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের কর্মকর্তাদের মন্তব্যগুলোই বলে দিচ্ছে, টোকিও এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বাসনা জানাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তার পরপরই জাপানে এই ধরনের বক্তব্য জোরালো হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের পর ওই অনুমোদন দিয়েছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন—জাপান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে এশিয়া ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়া নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের অধিকারী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান থাকার পরও দেশটি তার পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখা ও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন গিয়ং বলেন—পারমাণবিক অস্ত্র তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, জাতীয় নীতি এবং সার্বভৌম অধিকারের অংশ, যা তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটি সফল হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট তিনটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করার ঘটনা ঘটবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার ওপর ‘সর্বাত্মক নৌ অবরোধ’ ঘোষণার পর থেকে এই চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্ট গার্ড বর্তমানে একটি তেল ট্যাংকারকে ধাওয়া করছে। তবে অভিযানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা জাহাজটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এই অভিযান নিয়ে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর কেভিন হ্যাসেট আজ জানিয়েছেন, এর আগে জব্দ করা দুটি ট্যাংকার ‘ব্ল্যাক মার্কেট’ বা কালোবাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন নিষিদ্ধ দেশে তেল সরবরাহ করছিল।

কেভিন হ্যাসেট দাবি করেছেন, এই আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাঁর মতে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কেবল কালোবাজারি জাহাজগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষক ও তেল ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। একজন তেল ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আগামীকাল সোমবার এশিয়ার বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তেলের দামের এই ঊর্ধ্বগতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট ভেসেলগুলোর ওপর অন্তত দুই ডজন সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এসব সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্ক করলেন লুলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি মত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শুধু ওই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্যই এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফোজ দো ইগুয়াসুতে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক জোট ‘মারকোসুর’-এর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লুলা এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় সশস্ত্র হস্তক্ষেপ একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।’

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে রোববার (২১ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সম্প্রতি আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তেল খাতকে লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লুলা স্মরণ করিয়ে দেন, ফকল্যান্ডস যুদ্ধের চার দশকেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আমেরিকা আবারও অন্য মহাদেশীয় কোনো শক্তির সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকা আবার এমন এক ভূতের ছায়ায় পড়ছে, যেখানে এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা সামরিক শক্তি আমাদের শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন আমেরিকার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত শনিবারের বক্তব্যে লুলা আরও কঠোর দেখিয়েছেন।

‘মারকোসুর’ সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় লাতিন আমেরিকার নেতারা ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও পানামার প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুর শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ভারতেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। পকেটে টান পড়তে যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকছে। মূলত দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্যই এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।

ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ভ্রমণের দূরত্ব ও কোচের ধরনভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে ২১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা করে ভাড়া বাড়বে।

মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের (নন-এসি) যাত্রীদের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে দুই পয়সা। এসি কোচ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ক্ষেত্রেও কিলোমিটার প্রতি দুই পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে যদি কোনো যাত্রী নন-এসি কোচে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে আগের চেয়ে ১০ রুপি বেশি ভাড়া দিতে হবে।

কেন এই ভাড়া বৃদ্ধি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে জনবল এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। রেলওয়ের বর্তমান জনবল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি রুপিতে এবং পেনশনের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পরিচালনা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি।

যাত্রীদের ভাড়া ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। এর আগে গত জুলাই মাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল (নন-এসিতে এক পয়সা ও এসিতে দুই পয়সা)। তারও আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বড় ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে এসি কোচে ভাড়া বেড়েছিল কিলোমিটার প্রতি চার পয়সা পর্যন্ত।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, উন্নত সেবা এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০০ কোটি রুপি বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত