Ajker Patrika

কী আছে আফগানদের ভাগ্যে

অনলাইন ডেস্ক
কী আছে আফগানদের ভাগ্যে

আফগানিস্তানের একের পর এক এলাকা দখলে নিচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবান। এতে ভেঙে পড়েছে দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এরই মধ্যে আফগানিস্তান থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। নিরাপত্তা বাহিনীর শোচনীয় অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন আফগান জনগণ। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণার পর থেকেই তালেবানের সঙ্গে আফগান সরকারি বাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি সব সেনা আফগানিস্তান থেকে চলে যাবে। আর এর আগেই সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিজেদের দখলে নিচ্ছে। 

 ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ছিল তালেবান। মার্কিন আগ্রাসনের পর সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীতে পরিণত হওয়া তালেবান চাইছে আফগানিস্তানে আবারও ইসলামি শাসন ফিরিয়ে আনতে। আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযান শুরুর পর আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার জন্য অনেকভাবেই চেষ্টা করেছে তালেবান। শেষ পর্যন্ত সহিংসতার কৌশল নিয়েছে। পশ্চিমারা সেনা প্রত্যাহার করায় এখন আফগান সরকারকে উৎখাত করার পথে তালেবান। 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের জন্য তালেবানদের সবচেয়ে বড় বাধা ছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর এই বাধা দূর হয় ওয়াশিংটনের সঙ্গে তালেবানদের শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। ওই চুক্তি অনুযায়ী আফগান সরকারকে হাজার হাজার তালেবান কারাবন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এমন অবস্থায় তাহলে কী করছে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী। কেন তারা তালেবানের সঙ্গে পেরে উঠছে না? 

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতিতে ডুবে আছে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী। এত দিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের কারণে তেমন ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাদের। অভিযোগ রয়েছে, আফগানিস্তানের সেনারা কালো বাজারে অস্ত্র বিক্রি করে। এ ছাড়া তাদের সেনাদের সংখ্যা নিয়েও লুকোছাপা রয়েছে। মার্কিন সেনাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় আফগান সেনাবাহিনীতে দৃঢ় নেতৃত্বও গড়ে ওঠেনি। 

তালেবানেরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় গেলে দেশটিকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হবে বলে এরই মধ্যে হুমকি দিয়ে রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যুক্তরাজ্যও বলেছে, আফগানিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতা তালেবানের হাতে গেলে সেটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আর যুক্তরাষ্ট্র বলে দিয়েছে, আফগান সরকারকেই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় সামলাতে হবে। 

যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবান এবং আফগান সরকারকে নিজেদের মধ্যে শান্তি চুক্তি করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। তবে তালেবান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে জানিয়েছে, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত তাঁরা আলোচনায় বসবেন না। আফগান সরকারও পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে ক্ষমতা ভাগাভাগি করার প্রস্তাব দিয়েছে তালেবানকে। 

এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের মাত্র তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ আছে সরকারের হাতে। তালেবান আছে এখন রাজধানী কাবুল দখলের পথে। গত বুধবার মার্কিন গোয়েন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলকে ৩০ দিনে বিচ্ছিন্ন এবং ৯০ দিনের মধ্যে দখলে নিতে পারে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। 

বাস্তব চিত্র এবং মার্কিন গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে–আফগানিস্তানের পরিস্থিতি পুরোটাই তালেবানের অনুকূলে। ফলে একদা কট্টর ইসলামি শরিয়া বাস্তবায়ন করে নিজেদের স্বরূপ দেখানো তালেবান আফগান জনগণের জন্য কী নিয়ে অপেক্ষা করছে সেটিই এখন চিন্তার বিষয়। কে জানে কী আছে স্বাধীনচেতা আফগান জনগোষ্ঠীর কপালে! 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত