Ajker Patrika

ঈশ্বরের বিশ্বাসে শিশুর চিকিৎসা না করে হত্যার সাজা পেলেন বাবা-মা

অনলাইন ডেস্ক
বড় বোন জেড স্ট্রুসের কোলে এলিজাবেথ স্ট্রুস। ছবি: গো ফান্ড মি’র সৌজন্যে।
বড় বোন জেড স্ট্রুসের কোলে এলিজাবেথ স্ট্রুস। ছবি: গো ফান্ড মি’র সৌজন্যে।

অস্ট্রেলিয়ায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত আট বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় বাবা-মাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে শিশুটির বাবা-মা তাকে প্রায় এক সপ্তাহ ইনসুলিন দেননি। এর ফলে শিশুটির মৃত্যু হয়। পরবর্তীকালে একটি হত্যা মামলা হয়। এতে দোষী সাব্যস্ত হলে, শিশুটির বাবা-মাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলিজাবেথ স্ট্রুস নামের শিশুটি ২০১৯ সালে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, বেঁচে থাকতে হলে এলিজাবেথকে প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হবে। তবে তাঁর বাবা-মা ‘দা সেইন্টস’ নামের একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনুসারী ছিলেন। তাঁরা চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বরই তাঁদের মেয়েকে সুস্থ করে তুলবেন।

কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে, ব্রিসবেনের পশ্চিমে টুউম্বা শহরের নিজ বাড়িতে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিসে (একধরনের বিপজ্জনক উপসর্গ, যেখানে রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়) আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এলিজাবেথ।

এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শিশুটির বাবা জেসন স্ট্রুস ও মা এলিজাবেথ স্ট্রুসসহ ১৪ জনকে এই মৃত্যুর ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ওই মামলায় ‘দ্যা সেইন্টস’ নামের ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতা ব্রেন্ডন স্টিভেন্সকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কুইন্সল্যান্ড সুপ্রিম কোর্টের বিচারক তাঁকে ‘বিপজ্জনক ও অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি’ বলে বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর বাকি ১১ সদস্যকে ছয় থেকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

স্টিভেন্স ও এলিজাবেথের বাবা-মা প্রথমে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও, শেষ পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কম গুরুতর অভিযোগ অর্থাৎ হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

বিচারক মার্টিন বার্নস ৫০০ পৃষ্ঠার রায়ে বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে এলিজাবেথের বাবা-মা এবং গির্জার প্রতিটি সদস্য তাকে ভালোবাসতেন, কিন্তু তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তাঁরা তাকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় (ইনসুলিন) থেকে বঞ্চিত করেছেন।’

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ইনসুলিন না পেয়ে শিশুটি প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে ছিল। বিচার চলাকালে প্রসিকিউটর ক্যারোলিন মার্কো জানান, মৃত্যুর আগে শিশুটি বমি, চরম ক্লান্তি ও অচেতনতার শিকার হয়েছিল।

তবে তার পরিবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে শুধু প্রার্থনা ও গান গেয়ে তার সুস্থতা কামনা করেছিল। আদালতে শোনা যায়, শিশুটি মারা যাওয়ার পরও তাঁরা বিশ্বাস করেছিলেন, ‘ঈশ্বর তাকে আবার জীবিত করবেন’ এবং মৃত্যুর প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়া হয়।

শিশুটির বাবা আদালতে বলেছিলেন, ‘এলিজাবেথ শুধু ঘুমিয়ে আছে, আমি তাকে আবার দেখব।’

ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতা স্টিভেন্স দাবি করেন, তাঁদের কর্মকাণ্ড বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছে এবং এই বিচার ধর্মীয় নিপীড়নের শামিল।

এলিজাবেথের বড় বোন জেড স্ট্রুস জানিয়েছেন, তিনি ১৬ বছর বয়সে পরিবার ছাড়েন এবং এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি জানান, ‘দ্যা সেইন্টস’ মূলধারার চিকিৎসাকে প্রত্যাখ্যান করত এবং ক্রিসমাস ও ইস্টার সানডের মতো উৎসবগুলোকে ‘অপবিত্র’ মনে করত। প্রতিষ্ঠিত কোনো গির্জার সঙ্গে এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর কোনো সংযোগ নেই। মাত্র তিনটি পরিবারের দুই ডজন সদস্য নিয়ে এই গোষ্ঠী গঠিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত