Ajker Patrika

খনিজের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিরাপত্তা চান জেলেনস্কি, যুদ্ধ বন্ধেও রাজি

অনলাইন ডেস্ক
শিগগিরই পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
শিগগিরই পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ পাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাঁর সেই আগ্রহের সূত্র ধরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে খনিজ সম্পদ দিতে রাজি। তবে বিনিময়ে ওয়াশিংটনকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনায় রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধেও রাজি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত শুক্রবার রয়টার্সকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সে সময় তিনি ইউক্রেনের একটি গোপন মানচিত্রের ওপর দৃষ্টিপাত করেন। মানচিত্রটিতে ইউক্রেনের বিরল মৃত্তিকা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজের বিশাল মজুত চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, জেলেনস্কির এই প্রচেষ্টা মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসায়িক মনোভাবকে আকর্ষণ করার লক্ষ্যে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি চাচ্ছে। গত সপ্তাহের সোমবার ট্রাম্প বলেন, তিনি চান ইউক্রেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিরল মৃত্তিকা এবং অন্যান্য খনিজ সরবরাহ করুক। বিনিময়ে ওয়াশিংটন ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করবে।

এই প্রসঙ্গ টেনে জেলেনস্কি বলেন, ‘যদি আমরা চুক্তি নিয়ে কথা বলি, তাহলে চলুন একটি চুক্তি করি, আমরা এর পক্ষে।’ তবে এ সময় তিনি বলেন, তিনি যেকোনো সমঝোতার অংশ হিসেবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিশ্চিত করতে হবে।

গত বছরের মাঝামাঝি ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ক্ষেত্রগুলোতে মিত্রদের বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করার ধারণা উপস্থাপন করেছিল। পাশাপাশি সে সময় জেলেনস্কি একটি ‘বিজয় পরিকল্পনা’ও মিত্রদের কাছে তুলে ধরেছিল। এর মাধ্যমে দেশটি নিজেদের যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় একটি সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল এবং মস্কোকে আলোচনার টেবিলে আনার চেষ্টা করেছিল।

সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদগুলোর ২০ শতাংশের কম বর্তমানে রাশিয়ার দখলে। বিরল মৃত্তিকা খনিজগুলো উচ্চ শক্তির চৌম্বক, বৈদ্যুতিক মোটর এবং দৈনন্দিন ব্যবহার্য ইলেকট্রনিকসের উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ। জেলেনস্কি বলেন, মস্কো এই খনিজগুলো তার মিত্র উত্তর কোরিয়া এবং ইরানকে দিতে পারে।

জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের পুতিনকে থামাতে হবে এবং যা আমাদের কাছে আছে, তা রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে মধ্য ইউক্রেনের দিনিপ্রো অঞ্চল খুবই সমৃদ্ধ। এই অঞ্চলকে রক্ষা করতে হবে।’

এদিকে, রাশিয়ার সেনারা কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং তারা ব্যাপক গোলাবারুদের সহায়তায় নিরলস আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে কিয়েভের ছোট আকারের সেনাবাহিনী সৈন্যের অভাবে চাপে রয়েছে এবং ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে চিন্তিত।

রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় জেলেনস্কি কিয়েভের প্রেসিডেন্ট অফিসে একটি টেবিলের ওপর একটি মানচিত্র মেলে ধরেন। যেখানে অনেকগুলো খনিজ মজুত দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে বিস্তৃত পূর্ব ইউক্রেনে বিরল মৃত্তিকা ধাতুর মজুত থাকার চিহ্নিত ছিল। তবে এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই রাশিয়ার অধীনে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, তাঁর দেশে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে টাইটানিয়াম মজুত রয়েছে। এই টাইটানিয়াম বিমান ও মহাকাশ শিল্পে অপরিহার্য। এ ছাড়া পারমাণবিক শক্তি ও অস্ত্র উৎপাদনে ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামেরও বিশাল মজুত আছে। রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চল ছাড়াও ইউক্রেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিপুল টাইটানিয়ামের মজুত আছে বলেও জানান জেলেনস্কি।

ইউক্রেন দ্রুত পররাষ্ট্রনীতি পুনর্নির্ধারণ করেছে। যাতে দেশটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সংগতি বজায় রাখতে পারে। তবে জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, কিয়েভ ‘তার সম্পদ অন্যকে দিয়ে দেবে’—এমন কোনো প্রস্তাবনা দেয়নি, বরং একটি পারস্পরিক সুবিধাজনক অংশীদারত্বের প্রস্তাব দিচ্ছে, যাতে এই সম্পদগুলোকে যৌথভাবে ব্যবহার করা যায়।

জেলেনস্কি বলেন, ‘আমেরিকানরা সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে এবং তাই আমেরিকানদের সবচেয়ে বেশি উপার্জন করা উচিত এই খাত থেকে। তাদের এই অগ্রাধিকার থাকতে হবে এবং তা থাকবে। আমি এই বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই।’

তিনি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদের বিস্তারিত জানে। কারণ, সোভিয়েত আমলে পরিচালিত ভূতাত্ত্বিক জরিপ থেকেই এই তথ্য জানা গেছে। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ভেঙে ইউক্রেনের স্বাধীনতা লাভের পর জরিপের মূল দলিলগুলো মস্কোর কাছে চলে গেছে।

এ ছাড়া, জেলেনস্কি বলেন, কিয়েভ এবং হোয়াইট হাউস ইউক্রেনের বিশাল ভূগর্ভস্থ গ্যাস স্টোরেজ সাইটগুলো ব্যবহার করে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি সংরক্ষণের বিষয়ে আলোচনা করছে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি যে, ট্রাম্প প্রশাসন এতে খুব আগ্রহী...আমরা প্রস্তুত এবং ইচ্ছুক ইউক্রেনের জন্য চুক্তি করতে। অবশ্যই, আমরা ইউরোপের জন্য একটি হাব হতে পারব।’

এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগামী ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পশ্চিমা দেশগুলোর কর্মকর্তারা এখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করবেন। জেলেনস্কি জানান, তিনি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। এই সম্মেলনে ট্রাম্পের বিশেষ দূত কিথ কেলোগও উপস্থিত থাকবেন।

ইউক্রেনের নেতা বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সরাসরি সাক্ষাৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাঁর সঙ্গে বৈঠকের আগে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের গুরুত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অন্যথায় এটি ইউক্রেন ছাড়া ইউক্রেন সম্পর্কে একটি সংলাপ হয়ে যাবে।’

ট্রাম্প শুক্রবার জানান, তিনি আশা করছেন যে, পরবর্তী সপ্তাহে জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলবেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর অগ্রাধিকার হবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিয়ে কথা বলা, যাতে ভবিষ্যতে রাশিয়া আরেকটি আক্রমণ করতে না পারে। তিনি জানান, এরই মধ্যে তাঁর দল কিথ কেলোগ এবং ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।

এদিকে, ট্রাম্পের শান্তির প্রস্তাবের মধ্যেই রুশ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ইউক্রেনীয় পরিবহন কেন্দ্র পোকরোভস্কে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে জেলেনস্কি প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছেন, তাঁর বাহিনী বৃহস্পতিবার নতুন আক্রমণ শুরু করেছে। এই আক্রমণে তারা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে আরও আড়াই কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছে। তবে রাশিয়া ওই দিন একটি ইউক্রেনীয় আক্রমণের খবর দিয়েছিল, কিন্তু দাবি করে যে, তা প্রতিহত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসা ভাড়ার টাকা নেই, অফিসের টয়লেটেই থাকছেন চীনা তরুণী

ঈদের মোনাজাতে খালেদা জিয়ার নাম না বলায় ইমামকে হেনস্তা, চাকরিচ্যুতির হুমকি

ঈদগাহে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান: আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ৫

কোম্পানি দেউলিয়া, দেড় কোটি মানুষের ডিএনএ ডেটার এখন কী হবে

ঈদের নামাজের মধ্যে ইমামকে হত্যাচেষ্টা, চাপাতিসহ যুবক আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত