ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে অবৈধভাবে অবস্থানের অভিযোগে ১৫৯ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। বিগত ১৮ মাস সময়সীমার মধ্যে তাদের আটক করা হয়েছে। কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি. পরমেশ্বর গতকাল বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় এই তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় তিনি আরও জানান, আরও অন্তত ১১৫ জন বাংলাদেশি এখনো কর্ণাটকে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ১৮ মাসে কর্ণাটক পুলিশ রাজ্যটি থেকে ১৫৬ জন বাংলাদেশি ও ২৪ জন পাকিস্তানিকে আটক করেছে। আটককৃতদের মধ্যে সব পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশিদের মধ্যে ৯৩ জনকে বেঙ্গালুরু থেকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের রাজ্যের অন্যান্য এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।

কর্ণাটকের বিধানসভার অধিবেশনে বিজেপির বিধায়ক ডিএস অরুণের উত্থাপিত এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান জি. পরমেশ্বর। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, জি. পরমেশ্বের জানিয়েছেন, রাজ্য পুলিশ ১৫৯ জন বাংলাদেশি এবং ২৪ জন পাকিস্তানি নাগরিককে আটক করেছে অবৈধভাবে বসবাস করার অভিযোগে। পাশাপাশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, আরও ১১৫ জন বাংলাদেশি অবৈধভাবে কর্ণাটকে বসবাস করছেন।

কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, অবৈধ অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিকদের শনাক্তকরণের জন্য একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসন ভারতের জন্য নতুন কোনো ঘটনা নয়, এটি একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসী ভারতবর্ষে প্রবেশ করছে।’

জি. পরমেশ্বর জানান, ভারতীয় সেনারা সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করছেন, তবে সীমান্তে তাদের নজরদারি সত্ত্বেও অবৈধ অভিবাসীরা কীভাবে ভারতে প্রবেশ করছে—সে প্রশ্নটি এখনো অমীমাংসিত। তিনি বলেন, ‘আমরা অবৈধ অভিবাসীদের সন্ধান করতে কাজ করছি এবং প্রতি বছর আমরা তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করি এবং তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাই।’ তবে গত দেড় বছরে আটককৃত বাংলাদেশি ও পাকিস্তানির পরিণতি কী হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি তিনি।

পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের পাশাপাশি আফ্রিকার দেশগুলো থেকেও লোকজন ভারতে প্রবেশ করছে বলেও জানান জি. পরমেশ্বর। তিনি অভিযোগ করেন, এসব অভিবাসীরা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তারা স্টুডেন্ট ভিসায় ভারতে আসে এবং মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এই অপরাধীদের খুঁজে বের করার জন্য রাজ্য পুলিশ একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে।’

এদিকে, গত সেপ্টেম্বর মাসে বেঙ্গালুরু পুলিশ এক অভিযান চালিয়ে ১৭ পাকিস্তানি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। তারা হিন্দু নাম-পরিচিত হয়ে অবৈধভাবে কর্ণাটকে বসবাস করছিলেন। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, প্রতারণা এবং পাসপোর্ট আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।

জি. পরমেশ্বর বলেন, ‘যদি ১০ বছর ধরে অবৈধ অভিবাসীরা ভারতে থাকে, তবে গোয়েন্দা সংস্থা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কেন তাদের ট্র্যাক করেনি? পাসপোর্ট যাচাইয়ের পরেও তারা কীভাবে পেয়েছে, এটি একটি বড় প্রশ্ন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন নতুন নতুন অবৈধ অভিবাসী আসছে। আমরা তাদের আটক করছি এবং ফেরত পাঠাচ্ছি। সীমান্তে ঢুকতে পারা অভিবাসীদের প্রবাহের কারণে পরিস্থিতি আরও কঠোর হতে হবে। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের এবং সেনাবাহিনীর জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।’

কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি. পরমেশ্বর এই বিষয়য়ে আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্ত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি প্রয়োজন।’