ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স: শেষ ভরসা ভুক্তভোগী পরিবারের ক্ষমা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ১৯
Thumbnail image
ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়া। ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়াকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করছে তাঁর পরিবার। ২০১৭ সালে তৎকালীন ব্যবসায়িক অংশীদার তালাল আবদো মাহদিকে হত্যা এবং তাঁর দেহাবশেষ পানির ট্যাঙ্কে ফেলে দেওয়ার দায়ে নিমিশাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। রাজধানী সানার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী নিমিশার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেছেন হুথি বিদ্রোহীদের শীর্ষ নেতা প্রেসিডেন্ট মাহদি আল-মাশাত।

বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইসলামিক শরিয়া আইন অনুযায়ী ভুক্তভোগীর পরিবার ক্ষমা করলেই এই শাস্তি থেকে রেহাই পেতে পারেন নিমিশা। তাই নিমিশার পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা মাহদির পরিবারের কাছে ‘রক্তমূল্য’ বা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠছে ভুক্তভোগীর পরিবারের সিদ্ধান্ত।

মায়ের পক্ষ থেকে ইয়েমেনে নিমিশার আইনগত দায়িত্ব পালন করছেন সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোম। তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের পর, সরকারি প্রসিকিউটরের অফিস আবারও মাহদির পরিবারের সম্মতি চাইবে এবং জানতে চাইবে, তাঁরা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে রাজি কিনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি তাঁরা ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে শাস্তি সঙ্গে সঙ্গে স্থগিত হয়ে যাবে। ক্ষমাই প্রথম ধাপ। রক্তমূল্যের বিষয়টি এর পরে আসবে।’

ইয়েমেনের আইন অনুসারে, নিমিশার পরিবার সরাসরি ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। তাঁদের মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করতে হবে।

ভারতে নিমিশার পরিবারের পক্ষে কাজ করা আইনজীবী সুভাস চন্দ্রন বলেন, ‘নিমিশার পরিবার ইতিমধ্যে ভুক্তভোগীর পরিবারের জন্য ৪০ হাজার ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে। এই অর্থ ভারত সরকারের মাধ্যমে নিয়োগ করা আইনজীবীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দিতে বিলম্ব হওয়ায় আলোচনা কিছুটা প্রভাবিত হয়েছে।’

নিমিশার স্বামী টনি থমাস বলেন, ‘জেল গেটের বাইরে কী ঘটছে সে বিষয়ে নিমিশার কোনো ধারণা নেই। তাঁর একমাত্র প্রশ্ন ছিল, আমাদের মেয়ে কি ঠিক আছে?’

নিমিশার মা বর্তমানে সানায় অবস্থান করছেন। ২০২৩ সালে ভারতীয় আদালতের অনুমতিতে তিনি সেখানে যান। এরপর কারাগারে মেয়ের সঙ্গে দুবার সাক্ষাৎ করেছেন।

২০১০ সালে নিমিশা ১৯ বছর বয়সে একজন নার্স হিসেবে ইয়েমেনে যান। এরপর ২০১১ সালে ভারতে ফিরে এসে সিএনজি চালক থমাসকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে আবারও ইয়েমেনে যান। কিন্তু কয়েক বছর থাকার পর অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ২০১৪ সালে নিমিশার স্বামী ও মেয়ে ভারতে ফিরে আসেন। ২০১৬ সালে ইয়েমেনে যাওয়া–আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত। সে সময় ইয়েমেনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করছিলেন নিমিশা। সেখানে পরিচয় হয় তালাল আবদো মাহদি (৫৬) নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁর সহায়তায় ইয়েমেনে একটি ক্লিনিক খোলেন নিমিশা।

পরে মতানৈক্যের জেরে নিমিশার পাসপোর্ট নিয়ে নেন মাহদী। পাসপোর্ট উদ্ধার করতে মাহদিকে ঘুমের ইনজেকশন দেন নিমিশা; চেয়েছিলেন পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফিরে আসতে। তবে ইনজেকশনের ওভারডোজে মৃত্যু হয় মাহদির। তখন মৃতদেহটি টুকরো করে ক্লিনিকের ট্যাংকে ফেলে পালিয়ে যান নিমিশা। তিনি ২০১৮ সালে দোষী সাব্যস্ত হন। সম্প্রতি বিচার শেষে হত্যার দায়ে নিমিশাকে মৃত্যুদণ্ড দেন ইয়েমেনের আদালত।

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে জানান, ইয়েমেনে নিমিশা প্রিয়ার দণ্ডের বিষয়ে অবগত ভারত। সরকার তাঁর পরিবারকে সহায়তা দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত