দুদক কার্যালয়ে এসে গ্রেপ্তার হলেন ৩ ভুয়া দুদক কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ৫৩
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৪৭
Thumbnail image
দুদক কার্যালয়ে এসে গ্রেপ্তার হলেন তিন ভুয়া কর্মকর্তা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থা’ নামে একটি প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা সরকারি কর্মচারীর ছদ্মবেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা পরিচয়ে অভিযান পরিচালনা, জরিমানা ধার্য ও আদায়, চাঁদাবাজি করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আজ সোমবার বিকেলে সেগুনবাগিচা দুদক কার্যালয় থেকেই তাঁদের আটকের পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়। দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দুদক মহাপরিচালক বলেন, ভুয়া পরিচয়দানকারী দুদক কর্মকর্তাদের আটকের পর তাঁদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নেন প্রতারক চক্রের দুই সদস্য। পরে তাঁদের স্বীকারোক্তি রেকর্ড করে অজ্ঞাতনামা আট আসামিসহ ১৪ জনের নামে পল্টন থানায় একটি প্রতারণার মামলা করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন কথিত দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম সম্রাট, সংস্থার পরিচালক (অপারেশন) মো. রায়হান ওরফে সৈয়দ রায়হান, নেত্রকোনার সাইফুল ইসলাম। মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলেন পটুয়াখালীর সোলাইমান মুফতি, সিয়াম মাহমুদ মোবারক, হবিগঞ্জের রনি আহমেদ পায়েল। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও আটজনকে আসামি করা হয়েছে।

দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, পরস্পর যোগসাজশে সরকারি কর্মচারীর ছদ্মবেশ ধরে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে—এমন ব্যক্তিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ দুই শতাধিক বেসরকারি স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন অভিযুক্তরা। জরিমানা ধার্য ও আদায়, চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক মীমাংসার নামে অনৈতিক সুবিধা নেওয়া এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা, বিকৃত ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করে দণ্ডবিধি ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে তাঁরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে কমিশন থেকে নির্দেশিত হয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। দেখা যায়, আসামি মো. রায়হান ওরফে সৈয়দ রায়হানের নেতৃত্বাধীন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র ‘দুর্নীতি নিবারণ সহায়ক সংস্থা’ (কার্যালয়: ৮৫ নয়া পল্টন (৪র্থ তলা) নামের প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দুদকের সহযোগী বাহিনী পরিচয় দিত। অভিযুক্তরা দুদকের অনুরূপ নিজস্ব লোগো-সংবলিত ইউনিফর্ম, ছবিযুক্ত আইডি কার্ড পরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ দুই শতাধিক বেসরকারি স্থানে আইনবহির্ভূত অভিযান পরিচালনা করেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা ভুক্তভোগী জনগণের কাছ থেকে তাঁরা চাঁদা দাবি করতেন। অন্যথায় দুদকে অভিযোগ দেওয়ার হুমকি দিতেন। এ ছাড়া অভিযান পরিচালনাকালে ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম Syed Rayhan, syed rayhan official এবং ইউটিউবে ‘আইনের চোখ/Syed Rayhan’ নামের চ্যানেলে প্রচার করে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দিতেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, গত ১১ নভেম্বর হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুদক কর্মকর্তাদের ছদ্মবেশে অভিযান পরিচালনা করে কর্তব্যরত সরকারি কর্মচারীদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মো. সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজনকে তাৎক্ষণিক বিচারের নামে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন অভিযুক্তরা। এখন পর্যন্ত চক্রটি মোট ১৫৩টি স্থানে অভিযান পরিচালনাসহ মোট দুই শতাধিক স্থানে প্রকাশ্যে বিচারের নামে চাঁদাবাজি করেছে।

দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নগদ ও বাকিতে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি টাকা চাঁদাবাজি করার কথা স্বীকার করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত