Ajker Patrika

পেগাসাস নয়, অনৈতিকতার ভাইরাসই ভারতের মূল বিপদ

তরুণ চক্রবর্তী
পেগাসাস নয়, অনৈতিকতার ভাইরাসই ভারতের মূল বিপদ

পেগাসাস কাণ্ড নিমিত্ত মাত্র। ভারতীয় রাজনীতিতে বিরুদ্ধ মতের প্রতি অসহিষ্ণুতার বিষাক্ত ভাইরাস বহুদিন ধরেই চলছে। রাজনৈতিক মতবাদগত দৈন্য পরিবেশকে করে তুলছে আরও অসহনীয়। বহুদিন ধরে লাঞ্ছিত হচ্ছে ভারতীয়দের মৌলিক অধিকার। কথায় কথায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা নিয়ে তাই বিচারপতিদেরও মুখ খুলতে বাধ্য হতে হয়েছে। সংখ্যার জোরে বিরোধীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা আগেও ছিল, কিন্তু এখনকার মতো বেলাগাম আগে কখনো হয়নি। ভারতের জাতীয় সংসদে সংখ্যার থেকেও অনেক সময় পাণ্ডিত্য সম্ভ্রম আদায়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে। যেমন বামপন্থীদের সংখ্যা তেমন না থাকলেও জ্যোতির্ময় বসু, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, সোমনাথ চ্যাটার্জিরা জাতীয় সংসদে অন্যদের কাছ থেকে সম্ভ্রম আদায়ে চিরকালই মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন।

ইসরায়েলের বেসরকারি সংস্থা এনএসও গ্রুপের তৈরি সফটওয়্যার কাজে লাগিয়ে ভারত সরকার বহু মানুষের গোপন কথায় আড়িপাতার চেষ্টা করেছে। সরকার যাকেই মনে করেছে সন্দেহজনক, তারই ফোনে বিদেশি সংস্থার সফটওয়্যার ব্যবহার করে আড়ি পাতা হয়। এমনকি, ভারতের বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের ফোনেও নাকি আড়িপাতা হয়। পেগাসাস কাণ্ডের শিকারদের মধ্যে রয়েছেন অবশ্যই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা, তৃণমূল নেতা অভিষেক ব্যানার্জি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, ভারতের সাবেক মুখ্য নির্বাচন কমিশনার, বিভিন্ন তদন্তকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানেরা। এ অভিযোগ শুধু ভারতের নয়, দুনিয়ার ১৬টি গণমাধ্যমের তদন্তে উঠে এসেছে। 

এই নিয়ে সরকার পক্ষ আন্তর্জাতিক চক্রান্তের দোহাই দিয়ে ফের রাষ্ট্রপ্রেমের গান গাইতে শুরু করেছে। বিরোধীরা অবশ্য গণতন্ত্র-গণতন্ত্র-গণতন্ত্র করে আর্তনাদ করছেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনলে মনে হতেই পারে, দু-পক্ষের বক্তব্যই বোধ হয় ঠিক। ঠিক বা ভুল—যাই হোক না কেন, ভারতীয় রাজনীতি ও মিডিয়া এখন উত্তাল পেগাসাস নিয়ে। অনেকটাই ধামাচাপা পড়ে গেছে, করোনা মোকাবিলা, রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে ফরাসি তদন্ত, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি কংগ্রেসের ভাঙন, বিরোধীদের অনৈক্য থেকে শুরু করে অনেকগুলো জ্বলন্ত সমস্যা। মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, স্ট্যান্ট স্বামীর ৮৪ বছর বয়সে বন্দিদশায় মৃত্যু, উত্তর প্রদেশে লাশ খুবলে খাওয়া কুকুরের ছবি থেকে শুরু করে কলকাতায় ভুয়া আমলা-ভুয়া টিকা-ভুয়া পুলিশের জয়জয়কার। 

বিরোধীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা আগেও ছিল। অবশ্যই ছিল। কিন্তু কংগ্রেসের উদার রাজনৈতিক দর্শন জরুরি অবস্থার দিনগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে কখনোই বিরোধীদের ওপর সামগ্রিক নজরদারিকে এমন বেআব্রু করেনি। কোথাও একটা বিরুদ্ধ মতবাদের প্রতিও সম্ভ্রম ছিল ভারতীয় রাজনীতির অঙ্গ। হিন্দুত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠার পর অটলবিহারী বাজপেয়ির সরকারও সংসদীয় রাজনীতিতে সেই পরম্পরাকে অটল রেখেছিলেন। সৌজন্যবোধ ছিল ভারতীয় রাজনীতির অলংকার। কথায় কথায় বিরোধীদের জেলে ভরার রাজনীতি জরুরি অবস্থার পর তেমন একটা দেখা যায়নি। কিন্তু ২০১৪ সালে বিজেপি বিশাল জনমত নিয়ে সরকার গড়ার পর থেকেই বিরোধী মতবাদ উপেক্ষিত হতে থাকে। রাষ্ট্রীয় যন্ত্র যথেচ্ছ ব্যবহার হতে থাকে নরেন্দ্র মোদির আমলে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মোদির মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অমিত শাহের যোগদান অসহিষ্ণুতার রাজনীতিকে আরও বেশি করে প্রণোদনা দিতে থাকে। স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে ওঠে শাসক দলের শাখা সংগঠন। টলে যায় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো। নীতিহীন দলবদল হয়ে ওঠে ভারতীয় রাজনীতিতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। 

মোদির আমলে বাবরি মসজিদের জায়গায় তৈরি হচ্ছে রামমন্দির। কাশ্মীরকে আরএসএসের কর্মসূচির মতোই পরিচালনা করা হচ্ছে। নাগরিকত্বের মতো বিষয়েও হিন্দুত্ব তাস খেলতে শুরু করেছে বিজেপি। বিভাজনের রাজনীতি চলছে সর্বত্র। কিন্তু সেই বিভাজনের রাজনীতি বিজেপিকে সাফল্য এনে দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার। কংগ্রেস দুর্বল হলেও ভারতীয়দের রক্তে মিশে রয়েছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা। তাই বিজেপিকে জিততে হলে কংগ্রেসিদেরই দরকার হচ্ছে সর্বত্র। বিজেপি নেতাদের কাছে ক্ষমতা দখলের বীজমন্ত্রই হচ্ছে দলবদল। 

কংগ্রেস বা অন্য দল ভাঙিয়ে ক্ষমতা দখলে মত্ত বিজেপি। উদাহরণ হিসেবে আসন্ন উত্তর প্রদেশ নির্বাচনের কথা বলা যায়। সেখানে কংগ্রেস নেতা জীতিন প্রসাদকে দলে টেনে এনেছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভাঙিয়ে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল তারা। আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীরা একসময় কংগ্রেসেরই নেতা ছিলেন। নীতি-আদর্শের থেকেও ভারতীয় রাজনীতিতে এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে পাওয়ার বা ক্ষমতা। তাই বিজেপির পালে হাওয়া লাগতেই এতকাল সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অভিযোগ তুলে গলা ফাটালেও এখন সেই দলেই নাম লেখাচ্ছেন অনেকে। রাজনৈতিক দর্শন বদলে যাচ্ছে ৩৬০ ডিগ্রি। আসলে রাজনীতিতে বোধ হয় আর কোনো দর্শন নেই, ক্ষমতাই শেষ কথা। তাই বামেরাও এখন রামে যেতে প্রস্তুত! 

শুধু যে স্বেচ্ছায় দলবদল হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। অনেক সময় বিভিন্ন গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাও নাকি বড় ভূমিকা নিচ্ছেন এ দলবদলে। যেমন পশ্চিমবঙ্গ। টিভি ক্যামেরার সামনে ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা পড়ার অভিযোগে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা গ্রেপ্তার হলেও ছাড় পেয়ে যান বিজেপি আশ্রিত রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। কারণ তদন্তকারী সংস্থাটি ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। উল্টোটাও হচ্ছে। অনৈতিক কাজকর্মই হয়ে উঠছে রাজধর্ম। পেগাসাস উদাহরণ মাত্র। ফোনে আড়িপাতা আগেও হতো, এখনো হয়। প্রযুক্তি বদলেছে। প্রযুক্তির হাত ধরে বদলেছে নৈতিক অধঃপতনও। তাই অনৈতিক কাজকর্ম নিয়ে শাসক বা বিরোধী কেউই খুব একটা চিন্তিত নন। 

এর মধ্যেও আশা আছে। আশা—ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার মতো গণমাধ্যমও এখন স্বমহিমায় ফিরতে শুরু করেছে। ভারতীয় খবরের কাগজগুলোতে পেগাসাস বা রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে দুর্নীতির সমালোচনা শুরু হয়েছে। ২০২৪ দেরি আছে। সামনেই উত্তর প্রদেশ নির্বাচন। কিন্তু এখন থেকেই ভারতীয় গণমাধ্যমে মোদি-বন্দনার ধার কমতে থাকায় অনেকেই আশার আলো দেখছেন। মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে। অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সবাই একটু একটু করে জাগছে। এটাই হয়তো বাঁচাতে পারে ভারতের সংসদীয় শিষ্টাচার এবং অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গ্রিস উপকূলে মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশিসহ ৫৪০ অভিবাসী উদ্ধার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ গাভদোসের কাছে একটি মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫৪০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে দেশটির কোস্ট গার্ড। গ্রিক কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) গাভদোস দ্বীপ থেকে প্রায় ১৬ নটিক্যাল মাইল (২৯.৬ কিমি) দূরে লিবীয় সাগরে নৌকাটি শনাক্ত করা হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের টহল জাহাজ প্রথমে নৌকাটি দেখতে পায়। এরপর কোস্ট গার্ডের তিনটি জাহাজ, ফ্রন্টেক্সের তিনটি জাহাজ ও তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজের সমন্বয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়।

জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া ৫৪০ জন অভিবাসীর সবাই বর্তমানে সুস্থ আছেন। তাঁদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী ক্রিট দ্বীপের আগিয়া গালিনি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গ্রিক কোস্ট গার্ডের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ফিলিস্তিনি নাগরিকেরাও এই দলে ছিলেন।

তাঁদের আপাতত ক্রিট দ্বীপের রেথিমনো শহরের একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের (Asylum) আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর তোব্রুক থেকে পরিচালিত পাচারকারী চক্রগুলো এখন ইউরোপে প্রবেশের জন্য গাভদোস রুটটিকে বেশি ব্যবহার করছে। ২০২৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ক্রিট ও গাভদোসে ৭ হাজার ৩০০-এর বেশি অভিবাসী পৌঁছেছেন, যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের মোট সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন অভিবাসন চুক্তি কার্যকর হবে। এর আওতায় যাঁদের আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হবে, তাঁদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

উদ্ধারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, মিসর ও সুদানের নাগরিকেরা এই মরণযাত্রার জন্য পাচারকারী চক্রকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২.৫ থেকে ৬ লাখ টাকা) পরিশোধ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পাঠদান শুরু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৬
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। দীর্ঘ দুই বছর পর এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সশরীরে পাঠদান শুরু হয়েছে। গত অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠটি পুনরায় চালু হলো। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রূপ আর দশটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো নয়। দেখলে মনে হবে যেন একটি বিশাল উদ্বাস্তু শিবির।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষগুলো শুধু পড়াশোনার জন্যই নয়, ইসরায়েলি হামলায় ঘরবাড়ি হারানো প্রায় ৫০০ বাস্তুচ্যুত পরিবারের আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। একসময়ের বিশাল লেকচার হলের জায়গায় এখন সারি সারি তাঁবু টাঙানো।

২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত

সেখানে আশ্রয় নেওয়া একজন বলেন, ‘আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই বলে এখানে এসেছি। কিন্তু এটি শিক্ষার জায়গা, আশ্রয়কেন্দ্র নয়। আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য এই বিদ্যাপীঠের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।’

ইউনেসকোর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের ফলে গাজার ৯৫ শতাংশেরও বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও জাতিসংঘ একে ‘স্কলাস্টিসাইড’ বা পদ্ধতিগতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেছে।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ৪৯৪টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাজাভিত্তিক আল-মেজান সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ১৩৭টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী, ৭৬০ জন শিক্ষক এবং ১৫০ জন শিক্ষাবিদ ও গবেষক নিহত হয়েছেন।

গাজার সর্বশেষ সচল বিদ্যাপীঠ ইসরা ইউনিভার্সিটিকেও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।

ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে মাত্র চারটি সচল শ্রেণিকক্ষে বর্তমানে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদেল আওয়াদুল্লাহ জানান, ভাঙা দেয়ালগুলো প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ঢেকে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ নেই, তাই আমরা ধার করা জেনারেটর চালিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সচল রাখার চেষ্টা করছি।’

মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ইউমনা আলবাবা বলেন, ‘আমি যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এটি তেমন নয়। মনোযোগ দেওয়ার মতো পরিবেশ বা পর্যাপ্ত সরঞ্জাম—কোনোটিই এখানে নেই। তবুও আমি খুশি যে সশরীরে ক্লাস করতে পারছি। আমরা শূন্য থেকে সবকিছু গড়ার স্বপ্ন দেখছি।’

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, গাজার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা মূলত ফিলিস্তিনি সমাজের ভিত্তি উপড়ে ফেলার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের অভাবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবুও গাজার শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসার মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নতুন মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির ১৭ বছরের কারাদণ্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। তোশাখানা বা রাষ্ট্রীয় উপহার ভান্ডারের মূল্যবান উপহার কম দামে কিনে নেওয়ার অভিযোগে আজ শনিবার এই রায় ঘোষণা করা হয়। তবে ইমরান খানের আইনজীবীরা এই রায়কে ‘একপক্ষীয়’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা বলছেন, বিবাদী পক্ষের কোনো বক্তব্য না শুনেই এই সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালত এই রায় দেন। সাজাটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড। এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছর কারাদণ্ড। এ ছাড়া কারাদণ্ডের পাশাপাশি উভয়কে মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়েছেন, ইমরান খান বর্তমানে জমি-সংক্রান্ত একটি দুর্নীতি মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এই ১৭ বছরের কারাদণ্ড কার্যকর শুরু হবে।

এ মামলাটি মূলত সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া অত্যন্ত দামি কিছু উপহার (বিলাসবহুল ঘড়ি) নিয়ে। অভিযোগ রয়েছে—ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন উপহারগুলো তোশাখানায় জমা দেন। পরে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী রাষ্ট্রীয় নিয়ম লঙ্ঘন করে কম মূল্যে সেগুলো তোশাখানা থেকে নিজের নামে কিনে নেন। প্রসিকিউশনের দাবি, এর ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কয়েক মিলিয়ন রুপির ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে। দলের মুখপাত্র জুলফি বুখারি বলেছেন, এটি ন্যায়বিচারের নীতি লঙ্ঘন করে করা একটি ‘ফরমায়েশি রায়’।

এ রায়ের প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার পাঞ্জাব প্রদেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই।

ইমরান খানের আইনজীবী সালমান সফদর জানিয়েছেন, রায়ের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আপিল করার জন্য তাঁদের আইনি দলকে নির্দেশ দিয়েছেন কারাবন্দী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁর দলের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর পরিবার বা আইনজীবীদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলি সেটলারদের আগ্রাসন ঠেকাতে ফিলিস্তিনি গ্রামে মানবঢাল একদল স্বেচ্ছাসেবক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

প্রতিদিন সকালে কিশোর ইসরায়েলি সেটলাররা পাহাড়ের ওপর থেকে একপাল ছাগল তাড়িয়ে নিচের উপত্যকায় ফিলিস্তিনি গ্রাম রাস আইন আল-আউজার দিকে নিয়ে আসে।

এ সময় গ্রামের নারী, পুরুষ ও শিশুরা আশ্রয় নেয় তাদের কুঁড়েঘর ও তাঁবুর ভেতর। কোনো ফিলিস্তিনি যদি সামান্য প্রতিরোধের ইঙ্গিত দেয়, তাহলে প্রায় নিশ্চিতভাবেই সেখানে হাজির হয় ইসরায়েলি সেনা বা সীমান্ত পুলিশ। এরপর শুরু হয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত। বিনা বিচারে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর আটক তো আছেই।

বলা বাহুল্য, ইসরায়েলি সেটলারদের লক্ষ্য—তাদের গবাদিপশু দিয়ে গ্রামটি দখল করে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেওয়া।

আশার কথা, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে এহেন ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রতিরোধের শক্তি হয়ে সম্প্রতি হাজির হয়েছেন একদল স্বেচ্ছাসেবক। তাঁরা পাহাড় থেকে নামতে থাকা ইসরায়েলি সেটলারদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাদের সরিয়ে দেন।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আজ শনিবারে রাস আইন আল-আউজা গ্রামের বাসিন্দাদের রক্ষাকারীদের মধ্যে ছিলেন চারজন ইসরায়েলি ইহুদি, একজন হাঙ্গেরিয়ান ও একজন মার্কিন নাগরিক। তাঁরা ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ির চারপাশে মানবঢাল তৈরি করে এগিয়ে আসা পশুগুলো তাড়ানোর চেষ্টা করেন।

অবসরপ্রাপ্ত ইসরায়েলি মেজর ও স্বেচ্ছাসেবী আমির পানস্কি বলেন, ‘সেটলাররা এমন সব উসকানি দেয়, যার ফলে ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধ করতে বাধ্য হয়। আর সেটাকেই অজুহাত বানিয়ে তাদের ওপর চলে দমন-পীড়ন। আমরা এখানে সুরক্ষাকবচ হিসেবে আছি। আমরা আমাদের দেহকে ইহুদি সেটলার ও ফিলিস্তিনিদের মাঝে ঢাল হিসেবে দাঁড় করিয়েছি।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই স্বেচ্ছাসেবকেরা যতবার কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেন, ততবারই সেটলার রাখালেরা পাল্টা কৌশলে তাঁদের পাশ কাটানোর চেষ্টা করে। তারা স্বেচ্ছাসেবকদের একেবারে কাছে চলে যায়। স্বেচ্ছাসেবকেরা তখন হাত নেড়ে ও চিৎকার করে নিজেদের অবস্থানে অটল থাকার চেষ্টা করেন।

এ সময় সেটলাররা মোবাইল ফোন উঁচু করে পুরো দৃশ্য ধারণ করে এবং সরাসরি মন্তব্য করতে থাকে। অন্যদিকে প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবকের দেহে লাগানো থাকে বডি ক্যামেরা, যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে হামলা করার ভুয়া অভিযোগ না ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত