বাবার রেখে যাওয়া ৪২০টি শেয়ারে বৃদ্ধ বয়সে কোটিপতি হয়ে গেলেন ঊষা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ২২: ১৭
Thumbnail image

১৯৭০-এর দশকে ঊষা শর্মার বাবা মনন শর্মা ভারতের আইটিসি লিমিটেডের ৪২০টি শেয়ার কিনেছিলেন। কিন্তু এই শেয়ারগুলোর কথা পরিবারটি ভুলেই গিয়েছিল। ভুলে গেলেও সময়ের ব্যবধানে চক্রবৃদ্ধির জাদু শেয়ারগুলোতে ঠিকই কাজ করছিল। এভাবে বছরের পর বছর ধরে বোনাস এবং শেয়ার বিভাজনের ফলে ২০১৭ সালে সেই শেয়ারগুলোই ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮০টি শেয়ারে পরিণত হয়েছে। যার মূল্য দাঁড়ায় তখন সাড়ে ৬ কোটি রুপিরও বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ৮ কোটি টাকারও বেশি। 

তবে এই বিশাল সম্পদের দাবি করা ঊষার শর্মার জন্য কোনো সহজ কাজ ছিল না। তিনি রাঁচির প্রত্যন্ত একটি গ্রামে বসবাস করেন। কোটি কোটি টাকার আইটিসি শেয়ারের একটি আর্থিক নাটকে অনিচ্ছাকৃতভাবে তিনি নিজেকে নায়ক হিসেবে খুঁজে পেয়েছেন। 

ঊষা শর্মার বাবাকে নিঃসন্দেহে একজন দূরদর্শী আখ্যা দেওয়া যায়, যিনি ১৯৭০-এর দশকে বর্তমান ভারতের বৃহত্তম ফাস্ট মুভিং কনজ্যুমার গুডস (এফএমসিজি) কোম্পানিগুলোর একটিতে বিনিয়োগ করার জন্য আইটিসি লিমিটেডের ৪২০টি শেয়ার কিনেছিলেন। বহু বছর আগেই মনন শর্মা মারা গেছেন। মারা গেছেন তাঁর ছেলে, অর্থাৎ ঊষার ভাইও। এর ফলে শেয়ারগুলোর বিষয়ে কারও কোনো খোঁজ না থাকলেও পুরো সময়জুড়ে এগুলোর ওপর কম্পাউন্ডিংয়ের জাদু কাজ করছিল। অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি হারে শেয়ারগুলো বিভাজিত হওয়া ছাড়াও এগুলোর দাম বাড়ছিল।

বাবা আর ভাইয়ের মৃত্যু হওয়ায় মহামূল্যবান সেই ৪২০টি শেয়ারের একমাত্র উত্তরাধিকারী এখন ঊষা শর্মা। তবে গল্পটি এখানেই থেমে যায়নি। কারণ, বৃদ্ধা একজন নারীর পক্ষে নানা বাধা পেরিয়ে প্রাপ্য অর্থ হাতের নাগালে পাওয়া মোটেও সহজ ছিল না। এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হয়েছিল একটি উপযুক্ত আদালত থেকে উত্তরাধিকারের শংসাপত্র সংগ্রহ করা। প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল হরিদ্বারের আদালতে—ঊষার মতো একজন বয়স্ক নারীর জন্য রাঁচি থেকে যা অনেক দূরের গন্তব্য। 

উত্তরাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করার পর বাকি ছিল সেই আইটিসি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শেয়ারগুলো কিংবা এর মূল্য বুঝে পাওয়া। ঊষার জন্য এটিই ছিল সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়। উত্তরাধিকার নিশ্চিত করার পরও তাঁকে বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য অনেক নথি সংগ্রহের শর্ত বেঁধে দেওয়া হয় ঊষাকে। কিন্তু সব নথি জোগাড় করার পরও ঊষাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়।

এই পর্যায়ে বিষয়টিকে আর পারিবারিক না রেখে বাইরের কোনো আইনি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ঊষার ছেলে সঞ্জয়। ‘শেয়ার সমাধান’ নামে একটি বিনিয়োগকারী শিক্ষা ও সুরক্ষা তহবিল (আইইপিএফ) ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। এই কোম্পানিটিকে একটি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও তুলনা করা যেতে পারে। ঊষা যেসব বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন—সেই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি ছিল বিশেষজ্ঞ। 

ঊষার কেস নিয়ে শেয়ার সমাধানের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক বিকাশ কুমার জৈন বলেন, ‘আইটিসিকে একটি চিঠি লেখার আগে আমাদের পক্ষ থেকে আমরা প্রথমেই সব নথি হালনাগাদ করেছিলাম। যেমন—উত্তরাধিকার শংসাপত্রে মনন লাল শর্মার নাম যোগ করা। শংসাপত্রটিকে হিন্দি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ এবং আরও অনেক কিছু।’

বিকাশ কুমার দাবি করেন, এসবের পরও একটি প্রযুক্তিগত কারণ উল্লেখ করে তাঁদের অনুরোধ আবারও প্রত্যাখ্যান করে আইটিসি। তবে এতে দমে না গিয়ে আরও টানা একটি মাস নিরন্তর পরিশ্রম করে ‘শেয়ার সমাধান’। ঊষা শর্মার পক্ষ থেকে আইটিসিকে নিয়মিত চিঠি ও ই-মেইল পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এভাবে প্রায় পাঁচ মাস পর আসে সাফল্য। 

সম্প্রতি আইটিসি কর্তৃপক্ষ প্রয়াত মনন লাল শর্মার ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮০টি শেয়ার তাঁর কন্যা ঊষার নামে স্থানান্তর করে। বাবার কিনে রেখে যাওয়া শেয়ারে ঊষা শর্মা এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত