তিন ইসরায়েলির বর্ণনায় উঠে এল টর্চার ক্যাম্পে ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতার চিত্র

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৪, ১৫: ০৭
আপডেট : ১১ মে ২০২৪, ১৫: ২৯

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর বিপুল পরিমাণ ফিলিস্তিনিকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে দেশটির এসদে তিমান টর্চার ক্যাম্পে। সেখানে বন্দীদের চলাফেরা বন্ধ করা থেকে শুরু করে চোখ বেঁধে রাখা, ডায়াপারে প্রস্রাব-পায়খানা করতে বাধ্য করাসহ নানা ধরনের নির্মম নির্যাতন করত ইসরায়েলি সেনারা। সম্প্রতি সেখানে কাজ করা তিন ইসরায়েলি মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের কাছে বিষয়গুলো ফাঁস করেছেন। 

নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই তিন ইসরায়েলি জানিয়েছেন, এসদে তিমান টর্চার ক্যাম্পে ফিলিস্তিনি বন্দীদের চলাফেরা করতে দেওয়া হয় না। এমনকি তাঁদের চোখ বেঁধে রাখা হয় সব সময়। টর্চার ক্যাম্পে কাজ করা ওই তিন ইসরায়েলি বলেন, ‘আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কাউকে যেন কোনোভাবেই নড়াচড়া করতে না দেওয়া হয়। তাদের মেরুদণ্ড সোজা করে বসে থাকতে বাধ্য করা হতো। এমনকি তাদের চোখ বেঁধে রাখা হতো।’ 

বন্দীদের কথা বলতে দেওয়া হতো না বলেও জানান ওই তিন ইসরায়েলি কর্মকর্তা। তাঁরা জানান, তল্লাশির নামে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর ঘুমন্ত অবস্থায় বড় বড় কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হতো, কখনো কখনো বন্দীদের এক জায়গায় জড়ো করে তাদের মাথার ওপর সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো করা হতো। 

এসদে তিমান টর্চার ক্যাম্প বা নির্যাতন কেন্দ্রটি গাজা-ইসরায়েল সীমান্ত থেকে মাত্র ১৮ মাইল দূরে অবস্থিত। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্দীশালাটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশটি একটি আবদ্ধ জায়গা। যেখানে অন্তত ৭০ জন ফিলিস্তিনিকে খুবই ছোট পরিসরের জায়গায় বন্দী করে রাখা হয়েছে। অপরটি একটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল। যেখানে, আহত ফিলিস্তিনি বন্দীদের আটকে রাখা হয়েছে। তাদের খেতে দেওয়া হয় স্রেফ তরল খাবার এবং তাদের ডায়াপারের মধ্যেই প্রস্রাব-পায়খানা করতে বাধ্য করা হয়। 

ওই তিন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, ‘তাঁরা (ইসরায়েলি সেনারা) তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করে, যেন তারা (ফিলিস্তিনি বন্দীরা) মানুষই না। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয় স্রেফ প্রতিহিংসা, জিঘাংসা মেটানোর স্বার্থে, কোনো গোয়েন্দা তথ্য হাসিলের লক্ষ্যে নয়। 

ওই তিন কর্মকর্তার একজন জানিয়েছেন, আগে থেকেই আহত এক ফিলিস্তিনি বন্দীর কবজিতে শিকল এত শক্ত করে বাঁধা হয়েছিল যে, সেখানে ক্ষত হয়ে গিয়েছিল এবং পরে সেই ব্যক্তির হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। গত এপ্রিলে হারেৎজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসদে তিমান টর্চার ক্যাম্পে কাজ করা এক চিকিৎসকের বরাতেও একই ধরনের তথ্য উঠে এসেছিল। 

এপ্রিলে হারেৎজকে ওই চিকিৎসক বলেছিলেন, ‘এই সপ্তাহেই দুই বন্দীর পা কেটে ফেলতে হয়েছিল তাদের পায়ে থাকা শিকলের আঘাতে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ ঘটনাগুলো নৈমিত্তিক।’ ওই চিকিৎসক আরও জানান, বন্দীদের নলের মাধ্যমে খেতে দেওয়া হতো, প্রস্রাব-পায়খানার জন্য ডায়াপার ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং ক্রমাগত তাদের চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতো, যা চিকিৎসা নৈতিকতা ও আইনি মানদণ্ডের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই আইন ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত।’ 

এসদে তিমান বন্দীশালায় দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন ফিলিস্তিনি চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আল-রান। ইসরায়েলিরা তাঁর সঙ্গে হামাসের কোনো যোগসূত্র খুঁজে না পেয়ে তাঁকে মুক্তি দেয়, তবে তাঁকে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ‘শয়িশ’ হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এই শয়িশরা মূলত ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে বন্দীদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে দোভাষী হিসেবে কাজ করেন। 

ডা. আল-রান জানান, একপর্যায়ে ইসরায়েলিরা আমার চোখের বাঁধন খুলে দিয়েছিল। তিনি বলেন, সেখানে আমি এক নারকীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। তিনি বলেন, ‘আমার ওপর নির্যাতন ছিল, অন্য বন্দীদের নির্যাতন দেখতে বাধ্য হওয়া। কিন্তু আপনি সেখানে কোনো নির্যাতন দেখতে পাবেন না; যা দেখবেন তা হলো প্রতিশোধ, জিঘাংসা এবং নিপীড়ন।’ 

ফিলিস্তিনি এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘তারা (ইসরায়েলিরা) যখন আমার চোখের বাঁধন খুলে দিল, তখন আমি দেখতে পেলাম অবমাননা ও লাঞ্ছনা কাকে বলে...আমি দেখতে পেলাম তারা আমাদের মানুষ নয়, স্রেফ প্রাণী হিসেবে গণ্য করে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত