সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে পশ্চিমাদের তোড়জোড়

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ০৩
হায়াত তাহরির আল-শামসের (এইচটিএস) সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ বাড়ছে বিশ্বের। ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামসের (এইচটিএস) সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে তোড়জোড় শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছে তারা। এবার যুক্তরাজ্যও মার্কিন পদাঙ্ক অনুসরণ করল। এইচটিএসের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন করেছে তারা। দেশটিতে ৫ কোটি পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৫৩ কোটি টাকা প্রায়) পাঠানোর কথা জানিয়েছে ব্রিটেন।

দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জানান, যুক্তরাজ্য বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সিরিয়ার জন্য ৫ কোটি পাউন্ড মানবিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ল্যামি আরও বলেন, এইচটিএস এখন সিরিয়ার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে এখনো বিশ্বের কাছে এটি একটি নিষিদ্ধ ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন। তবে যুক্তরাজ্য তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ করতে পারে এবং করছে।

ব্রিটিশ সহায়তার একটি অংশ সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র পরিদর্শকদের জন্য বরাদ্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন ল্যামি।

অস্ত্রগুলো বিদ্রোহীদের হাতে যাতে না পড়ে সেই অজুহাতে বিভিন্ন ডিপোতে বোমাবর্ষণ করছে ইসরায়েল।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি প্রতিনিধিত্বশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার দেখতে চাই। আমরা চাই, রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত নিরাপদে থাকুক এবং সেগুলো ব্যবহার না করা হোক। এ ছাড়া আমরা চাই সহিংসতা বন্ধ হোক।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব কারণেই আমরা সম্ভাব্য সব চ্যানেল ব্যবহার করে, তা কূটনৈতিক বা গোয়েন্দাভিত্তিক হোক, আমরা এইচটিএসের সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী যোগাযোগ করছি।’

এদিকে, ফ্রান্সও রোববার ঘোষণা করেছে যে তারা বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সিরিয়ায় একটি কূটনৈতিক মিশন পাঠাবে। এটি হবে পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রথম উদ্যোগ, যা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং সম্পর্ক গড়ার পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়।

গতকাল রোববার ন্যাটোর সদস্য তুরস্কও ঘোষণা করে, তারা সিরিয়ার ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে প্রস্তুত। সিরিয়ার ভবিষ্যতে বড় ভূমিকা নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এটি আঙ্কারার সর্বশেষ পদক্ষেপ।

তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুলার বলেন, যদি নতুন প্রশাসন অনুরোধ করে তাহলে তাঁর দেশ এই সহায়তা দেবে। তিনি আরও যোগ করেন, বিদ্রোহী সরকারকে একটি সুযোগ দেওয়া উচিত, যদি তারা সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সম্মান করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

গত সপ্তাহে বাশার আল-আসাদের সরকারকে উৎখাত করা সিরিয়ার কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন জানিয়েছে তুরস্ক। সিরিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার আঙ্কারার গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম কালিন দামেস্ক সফর করেছেন এবং নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

বিদ্রোহীদের সঙ্গে তুরস্কের যোগাযোগ স্থাপন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর বিদ্রোহীদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ সিরিয়ায় রাশিয়ার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভূমিকাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

এদিকে, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের কাছে এখনো সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হলেও এইচটিএস সিরিয়ায় একটি বৈধ সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সিরিয়ার পাশে একে একে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান নেওয়া দেশটির রূপান্তর প্রক্রিয়া এবং দেশটিকে স্থিতিশীল করার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টারই নিদর্শন।

অন্যদিকে উত্তর সিরিয়ার কিছু অংশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেছে আসাদ সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া। তবে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা যায়, সিরিয়ার দুটি প্রধান ঘাঁটি ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা করছে না মস্কো।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত