Ajker Patrika

ইতিহাসের এই দিনে /ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ানো সৌদি বাদশাহ ফয়সাল যেভাবে খুন হলেন

অনলাইন ডেস্ক
সৌদির সাবেক বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ। ছবি: বাদশাহ ফয়সাল ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
সৌদির সাবেক বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ। ছবি: বাদশাহ ফয়সাল ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ। সকালটা ছিল আর দশটা দিনের মতোই। সৌদি রাজপ্রাসাদে তখন সাজসজ্জার ব্যস্ততা, কারণ কুয়েতি প্রতিনিধিদল আসছে। তৎকালীন বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ নিজে উপস্থিত থেকে অতিথিদের স্বাগত জানাবেন। বাদশাহর সঙ্গে রাজনীতি, অর্থনীতি—সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তেলমন্ত্রী শেখ আহমেদ জাকি ইয়ামানি। কিন্তু তারা কি ভাবতে পেরেছিলেন কী হতে যাচ্ছে আর কিছুক্ষণ পর?

পুরো রাজপ্রাসাদ যখন বিদেশি রাজনীতিকদের স্বাগত জানাতে উৎসবমুখর আমেজে আছে, তখনই ভয়ংকর এক ঘটনা ঘটে। রাজপ্রাসাদে ঢুকে খোদ বাদশাহকে গুলি করে হত্যা করে আততায়ী। সেই আততায়ী আর কেউ নয়, বাদশাহর আপন ভাতিজা!

সেদিন কী ঘটেছিল প্রসাদে তার বর্ণনা উঠে এসেছে তৎকালীন তেলমন্ত্রী জাকি ইয়ামানির মেয়ে মেই ইয়ামানির লেখায়। সেদিন দুপুরে জাকি ইয়ামানির আচরণ নিয়ে মেই ইয়ামানি লিখেছেন—

বাবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আমি। দুপুরের পর বাবা যখন ফিরলেন, তাঁর চেহারায় কেমন একটা অদ্ভুত শূন্যতা। আন্দাজ করছিলাম কিছু একটা ঘটেছে। কিন্তু কতটা ভয়াবহ, সেটা বুঝতে পারিনি। আমি বাবার ঘরে বসে ছিলাম। চারদিকে বইপত্র ছড়ানো। বাবা দরজা ঠেলে ঢুকলেন, চেহারায় গভীর বিষাদ। একদম সোজা হেঁটে গেলেন খাবার ঘরের দিকে। হঠাৎ চিৎকার করে উঠলেন—‘মুসিবাহ!’ (যার বাংলা অর্থ—ভয়ংকর বিপদ।)

বাবার এমন প্রতিক্রিয়া কখনো দেখেননি মেই। সবাই জানত, জাকি ইয়ামানি শান্ত, বিচক্ষণ মানুষ। কিন্তু সেদিন তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলেন না। কারণ, কিছুক্ষণ আগেই তাঁর চোখের সামনে যা ঘটেছে, তা ভুলে যাওয়ার মতো নয়।

সকালে যখন বাদশাহ ফয়সাল কুয়েতি প্রতিনিধিদলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন কিছুই অস্বাভাবিক মনে হয়নি। রাজপ্রাসাদে নিয়মমতো নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল। তেলমন্ত্রী জাকি ইয়ামানি বাদশাহর সঙ্গে বৈঠকের আলোচ্য বিষয়গুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে কুয়েতের প্রতিনিধি দল রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করল। আর সেই দলের মাঝেই ছিলেন একজন রাজপুত্র—ফয়সাল বিন মুসাইদ। তিনি বাদশাহ ফয়সালের সৎভাইয়ের ছেলে।

ভাতিজাকে দেখে খুশি হলেন বাদশাহ। সৌদি রীতি অনুযায়ী তাঁকে আলিঙ্গন করতে হাত বাড়ালেন, ঝুঁকে চুমু খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর তখনই কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটল ভয়ংকর সেই ঘটনা। ফয়সাল বিন মুসাইদ পকেট থেকে একটি ছোট পিস্তল বের করে পরপর তিনটি গুলি করেন। প্রথম গুলিটি লাগে বাদশাহর চিবুকে।

মুহূর্তেই পুরো রাজপ্রাসাদে ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা। একজন দেহরক্ষী দ্রুত এগিয়ে এসে তলোয়ার বের করে আক্রমণ করেন রাজপুত্রকে। কিন্তু ঠিক তখনই তেলমন্ত্রী জাকি ইয়ামানি চিৎকার করে বাধা দেন—‘না! রাজপুত্রকে হত্যা করা যাবে না!’

ততক্ষণে বাদশাহ ফয়সাল মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু ততক্ষণে আর বেঁচে নেই!

ফয়সাল বিন মুসাইদকে প্রথমে মানসিক ভারসাম্যহীন ঘোষণা করা হলেও, পরবর্তী তদন্তে দেখা যায়, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। বিচারে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয়। রিয়াদের এক জনাকীর্ণ চত্বরে তাঁর শিরশ্ছেদ করা হয়। হাজার হাজার মানুষ সেই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে। তদন্তে উঠে আসে, ফয়সাল বিন মুসাইদের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিশোধ। তাঁর ভাইকে সৌদি সরকারের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিল, সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। যদিও এ হত্যাকাণ্ডকে শুধু ব্যক্তিগত প্রতিশোধ হিসেবে দেখতে রাজি নন অনেকেই।

বিশ্লেষকদের মতে, বাদশাহ ফয়সালের মৃত্যুর পেছনে হাত ছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের। কারণ, তিনিই ছিলেন একমাত্র সৌদি শাসক, যিনি প্রকাশ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেছিলেন, তেলকে ব্যবহার করেছিলেন কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় যে কারণে চীনের সঙ্গে পেরে উঠছে না ভারত

মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল ঢাকা: এনসিপি নেতা-কর্মীদের গলা ধাক্কা

সারা জীবন ‘একজনের কাছে কৃতজ্ঞ’ থাকবেন তামিম, কে তিনি

বিমসটেকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক আয়োজনের চেষ্টায় মিয়ানমার: রয়টার্স

সচিবালয়ে কর্মরতদের রেশন দেবে সরকার, ক্ষুব্ধ বাইরে কর্মরতরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত