অনলাইন ডেস্ক
‘মা কোথায়, আমার পা কোথায় গেল?’—তিন বছর বয়সী ফিলিস্তিনি হানান আল-দাক্কি বারবার এই প্রশ্ন করছে তার বছরখানেক ছোট বোন মিসককে। হানান ও মিসক প্রায় চার মাস ধরে হাসপাতালে। ইসরায়েলি বোমা হামলায় আহত এবং রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের সেখানে আনা হয়েছিল। এরপর তাদের দুজনেরই পা কেটে ফেলা হয়।
তাদের ফুপু ২৮ বছর বয়সী শেফা আল-দাক্কি তখন থেকেই তাদের পাশে আছেন। কিন্তু তিনি জানেন না, তাঁর দুই শিশু ভাতিজির এই প্রশ্নের জবাব কীভাবে দেবেন।
গত ২ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। সেদিন সকালে শাইমা আল-দাক্কি ভোরে উঠে তাঁর দুই মেয়ে—হানান এবং ২২ মাস বয়সী মিসককে পোলিও টিকা দিতে নিয়ে যান। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যেও এই টিকা দেওয়া হচ্ছিল। পরদিন দুপুরে পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাওয়ার পর ইসরায়েল দায়ের এল-বালাহে অবস্থিত তাঁদের বাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়।
ইসরায়েলি বোমা হামলায় ২৫ বছর বয়সী শাইমা নিহত হন এবং পরিবারের বাকি সদস্যরা আহত হন। আহতদের মধ্যে ছিলেন তাঁর স্বামী মোহাম্মদ আল-দাক্কি। বোমার আঘাতে দুই ছোট মেয়ের পা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
হানান গুরুতর আহত হয় এবং একপর্যায়ে তার দুই পা-ই হারায়। একটি হাঁটুর ওপরে কেটে ফেলা হয় এবং অন্যটি হাঁটুর নিচে। শরীরজুড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এমনকি মুখ ও খাদ্যনালিতেও। তার অন্ত্রের একটি অংশ অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়। অন্যদিকে, মিসকের বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়।
তাদের বাবা মোহাম্মদ আল-দাক্কি (৩১) দুই সপ্তাহ আইসিইউতে ছিলেন। তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং বুকে আঘাত লেগেছিল। শেফা আল-দাক্কি বলেন, ‘চার মাস ধরে আমরা যেন একটি দুঃস্বপ্নে আটকা পড়েছি।’
ইসরায়েলি হামলায় ভাইয়ের পরিবার ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর থেকেই হাসপাতালে আছেন শেফা। তিনি জানান, ইসরায়েলি হামলার পর থেকেই হানান অত্যন্ত ভঙ্গুর ও অস্থির হয়ে পড়েছে। তিনি হানানকে শান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তিনি আরও জানান, এই দুই মেয়েই ভয় এবং আতঙ্কের মধ্যে আছে এবং সব সময়ই তাদের তাঁর গায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকে।
শেফা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে প্রায়ই নিজেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। কখনো মেয়েদের জন্য দুঃখে, কখনো ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়ে। তিনি বলেন, ‘আমি এখন শুধু এটুকুই বলতে পারি যে তাদের মা জান্নাতে আছেন। কিন্তু তাদের জন্য ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে? সেটি তো আমি বলতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বড় হয়ে তারা যখন দেখবে যে তাদের বয়সী অন্য শিশুদের থেকে তারা আলাদা তখন তারা কেমন অনুভব করবে? হানান কীভাবে তার পছন্দের পোশাক পরবে? সে যখন আমার কাছে তার পছন্দের জামা বা জুতো চাইবে তখন আমি তাকে কী জবাব দেব?’ দাক্কি পরিবারের এই সদস্য আরও বলেন, ‘হানানের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন। কারণ, সে তার বোনের চেয়ে অনেক বেশি বোঝে এবং তার আঘাতগুলোও ছিল অনেক গুরুতর।’
হাসপাতালটির কর্মীরা এতটাই ব্যস্ত এবং সেখানে এত বেশি হতাহত মানুষ আসছে যে সরঞ্জামবিহীন পরিবেশে কাজ করা চিকিৎসাকর্মীদের পক্ষে হানান বা মিসকের মতো অনেককেই তাঁরা মানসিক সমর্থনটুকুও দিতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে তিন সন্তানের জননী শেফা পালা করে তাঁর এই ভাতিজির দেখাশোনা করেন। তিনি শাইমার মা অর্থাৎ হানানের নানি, হানান-মিসকের দাদি এবং ২৯ বছর বয়সী চাচা আহমেদ ও বাবা মোহাম্মদ পালাক্রমে এই দুই শিশুর দেখভাল করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হানানের পরিবারের অন্য প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা প্রায়ই তাদের জন্য হাসপাতালে বিভিন্ন ছোটখাটো উপহার আনেন। বাচ্চা দুটো প্রায়ই খেলনা চায়, কিন্তু চাইলেও তাদের সেই সাধ পূর্ণ হয় না। একে তো বাজার বলে কিছু নেই, তার ওপর আর্থিক টানাপোড়েন। ফলে পরিবার যা আনতে পারে, সেটাই নিয়ে তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
শেফা জানান, চাচা আহমেদ হানান ও মিসকের কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় ব্যক্তি। কারণ, সে তাদের সঙ্গে খেলেন এবং হাসপাতালের বাকি অংশ ঘুরে দেখার জন্য তাদের ঘর থেকে বাইরে নিয়ে যায়। ঘুমের অভাবে লাল হয়ে থাকা অশ্রুসিক্ত চোখে শেফা বলেন, ‘আমাদের তো কেউই কোনো দিন তাদের মা-কে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না।’
শেফা বলেন, ‘আমি কখনোই একটি ঘটনা ভুলব না। আমি একবার আমারে মেয়ে হালাকে এনেছিলাম হাসপাতালে। হালা ও হানান সময় বয়সী। সে সময় হানান তাকিয়ে থাকত হালার পায়ের দিকে, তারপর নিজের কাটা পায়ের দিকে। যেন বিভ্রান্ত। এ ঘটনার আগে তারা সব সময় একসঙ্গে দৌড়াত ও খেলত। এখন তারা হাসপাতালের বিছানায় খেলে।’
যেহেতু হানান ও মিসক দ্রুত বেড়ে ওঠার পর্যায়ে আছে, তাই তাদের লম্বা হাড়গুলোর নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতালে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে যে সামান্য ফিজিওথেরাপি সম্ভব, তা তাদের খুব একটা সাহায্য করে না। হাসপাতালের সময়টুকু তাদের কাটে আঁকাআঁকি করে, দর্শনার্থীদের সঙ্গে খেলাধুলা করে বা সময় কাটানোর জন্য বড়দের মোবাইল ফোন নিয়ে খেলে।
শেফা জানান, যখন গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হয় তখন থেকেই শাইমা তাঁর মেয়েদের জন্য আতঙ্কে ছিলেন। তিনি খেতে পারতেন না, ঘুমাতে পারতেন না, মেয়েদের জন্য খাবার আর ফর্মুলা খুঁজে পাওয়ার চিন্তায় তাঁর অনেক ওজন কমে গিয়েছিল। তিনি সব সময় তার মেয়েদের প্রতি নিবেদিত ছিলেন, তাদের সঙ্গে সময় কাটাতেন এবং তারা যা চাইত—তা দেওয়ার চেষ্টা করতেন।
শেফা বলেন, ছোট্ট হানান সাজতে খুব পছন্দ করত, সে পোশাক আর জুতোর প্রতি খুবই যত্নবান ছিল। শাইমা তাদের ভীষণ ভালোবাসতেন। যখন গাজায় পোলিও টিকা দেওয়া শুরু হয় এবং ইসরায়েল এই ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়, তখন শাইমা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে তার মেয়েরা অন্তত সেই সুরক্ষা পাবে। শাইমা তাঁর বোন ও শ্বশুরবাড়ির লোকদেরও একই কাজ করার উৎসাহ দিয়েছেন।
হানানের ফুপু বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা সবাই আমাদের সন্তানদের ক্ষতির ব্যাপারে ভয় পেতাম। কিন্তু কী লাভ? পোলিও থেকে সুরক্ষা পাবে, তারপর একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের পা হারাবে? এর মানে কী?’
হানান ও মিসকের যে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, তা গাজায় সম্ভব নয়। কারণ, ইসরায়েল গাজার স্বাস্থ্য খাত ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই তাদের নাম গাজা ছেড়ে চিকিৎসার জন্য যাদের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে তাদের অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই তালিকার জন্য নাম সংগ্রহ করে। কিন্তু ইসরায়েল অনুমোদন না দিলে কেউই গাজা বের হতে পারে না। এখনো এই দুই শিশুকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
শেফা বলেন, ‘আমরা তিন মাসের বেশি অপেক্ষা করছি। তারা তো ছোট মেয়ে, যাদের ভীষণভাবে কৃত্রিম অঙ্গের প্রয়োজন। তাদের মানসিক অবস্থাও খারাপ হচ্ছে।’
গাজাতে কেবল কৃত্রিম অঙ্গ পাওয়া গেলেই হবে না। তাদের সম্পূর্ণ মূল্যায়ন এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, তারপর কৃত্রিম অঙ্গের কথা ভাবা যেতে পারে। হানান ও মিসক যেহেতু এখনো বড় হচ্ছে, তাদের বয়স অনুযায়ী হাড়ের বৃদ্ধি বেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করবে—যার ফলে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং সম্ভবত কয়েকটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
শেফা যা জানেন তা হলো, ‘এই ছোট মেয়েদের জীবন আর কখনো আগের মতো হবে না।’ তিনি বলেন, ‘হানান জুতা পরতে চায় এবং আমাকে জিজ্ঞেস করে কেন সে পরতে পারে না...কেন সে পার্কে গিয়ে খেলতে পারে না। আমার কাছে কোনো উত্তর নেই।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
‘মা কোথায়, আমার পা কোথায় গেল?’—তিন বছর বয়সী ফিলিস্তিনি হানান আল-দাক্কি বারবার এই প্রশ্ন করছে তার বছরখানেক ছোট বোন মিসককে। হানান ও মিসক প্রায় চার মাস ধরে হাসপাতালে। ইসরায়েলি বোমা হামলায় আহত এবং রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের সেখানে আনা হয়েছিল। এরপর তাদের দুজনেরই পা কেটে ফেলা হয়।
তাদের ফুপু ২৮ বছর বয়সী শেফা আল-দাক্কি তখন থেকেই তাদের পাশে আছেন। কিন্তু তিনি জানেন না, তাঁর দুই শিশু ভাতিজির এই প্রশ্নের জবাব কীভাবে দেবেন।
গত ২ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। সেদিন সকালে শাইমা আল-দাক্কি ভোরে উঠে তাঁর দুই মেয়ে—হানান এবং ২২ মাস বয়সী মিসককে পোলিও টিকা দিতে নিয়ে যান। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যেও এই টিকা দেওয়া হচ্ছিল। পরদিন দুপুরে পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাওয়ার পর ইসরায়েল দায়ের এল-বালাহে অবস্থিত তাঁদের বাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়।
ইসরায়েলি বোমা হামলায় ২৫ বছর বয়সী শাইমা নিহত হন এবং পরিবারের বাকি সদস্যরা আহত হন। আহতদের মধ্যে ছিলেন তাঁর স্বামী মোহাম্মদ আল-দাক্কি। বোমার আঘাতে দুই ছোট মেয়ের পা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
হানান গুরুতর আহত হয় এবং একপর্যায়ে তার দুই পা-ই হারায়। একটি হাঁটুর ওপরে কেটে ফেলা হয় এবং অন্যটি হাঁটুর নিচে। শরীরজুড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এমনকি মুখ ও খাদ্যনালিতেও। তার অন্ত্রের একটি অংশ অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়। অন্যদিকে, মিসকের বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়।
তাদের বাবা মোহাম্মদ আল-দাক্কি (৩১) দুই সপ্তাহ আইসিইউতে ছিলেন। তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং বুকে আঘাত লেগেছিল। শেফা আল-দাক্কি বলেন, ‘চার মাস ধরে আমরা যেন একটি দুঃস্বপ্নে আটকা পড়েছি।’
ইসরায়েলি হামলায় ভাইয়ের পরিবার ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর থেকেই হাসপাতালে আছেন শেফা। তিনি জানান, ইসরায়েলি হামলার পর থেকেই হানান অত্যন্ত ভঙ্গুর ও অস্থির হয়ে পড়েছে। তিনি হানানকে শান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তিনি আরও জানান, এই দুই মেয়েই ভয় এবং আতঙ্কের মধ্যে আছে এবং সব সময়ই তাদের তাঁর গায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকে।
শেফা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে প্রায়ই নিজেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। কখনো মেয়েদের জন্য দুঃখে, কখনো ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়ে। তিনি বলেন, ‘আমি এখন শুধু এটুকুই বলতে পারি যে তাদের মা জান্নাতে আছেন। কিন্তু তাদের জন্য ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে? সেটি তো আমি বলতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বড় হয়ে তারা যখন দেখবে যে তাদের বয়সী অন্য শিশুদের থেকে তারা আলাদা তখন তারা কেমন অনুভব করবে? হানান কীভাবে তার পছন্দের পোশাক পরবে? সে যখন আমার কাছে তার পছন্দের জামা বা জুতো চাইবে তখন আমি তাকে কী জবাব দেব?’ দাক্কি পরিবারের এই সদস্য আরও বলেন, ‘হানানের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন। কারণ, সে তার বোনের চেয়ে অনেক বেশি বোঝে এবং তার আঘাতগুলোও ছিল অনেক গুরুতর।’
হাসপাতালটির কর্মীরা এতটাই ব্যস্ত এবং সেখানে এত বেশি হতাহত মানুষ আসছে যে সরঞ্জামবিহীন পরিবেশে কাজ করা চিকিৎসাকর্মীদের পক্ষে হানান বা মিসকের মতো অনেককেই তাঁরা মানসিক সমর্থনটুকুও দিতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে তিন সন্তানের জননী শেফা পালা করে তাঁর এই ভাতিজির দেখাশোনা করেন। তিনি শাইমার মা অর্থাৎ হানানের নানি, হানান-মিসকের দাদি এবং ২৯ বছর বয়সী চাচা আহমেদ ও বাবা মোহাম্মদ পালাক্রমে এই দুই শিশুর দেখভাল করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হানানের পরিবারের অন্য প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা প্রায়ই তাদের জন্য হাসপাতালে বিভিন্ন ছোটখাটো উপহার আনেন। বাচ্চা দুটো প্রায়ই খেলনা চায়, কিন্তু চাইলেও তাদের সেই সাধ পূর্ণ হয় না। একে তো বাজার বলে কিছু নেই, তার ওপর আর্থিক টানাপোড়েন। ফলে পরিবার যা আনতে পারে, সেটাই নিয়ে তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
শেফা জানান, চাচা আহমেদ হানান ও মিসকের কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় ব্যক্তি। কারণ, সে তাদের সঙ্গে খেলেন এবং হাসপাতালের বাকি অংশ ঘুরে দেখার জন্য তাদের ঘর থেকে বাইরে নিয়ে যায়। ঘুমের অভাবে লাল হয়ে থাকা অশ্রুসিক্ত চোখে শেফা বলেন, ‘আমাদের তো কেউই কোনো দিন তাদের মা-কে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না।’
শেফা বলেন, ‘আমি কখনোই একটি ঘটনা ভুলব না। আমি একবার আমারে মেয়ে হালাকে এনেছিলাম হাসপাতালে। হালা ও হানান সময় বয়সী। সে সময় হানান তাকিয়ে থাকত হালার পায়ের দিকে, তারপর নিজের কাটা পায়ের দিকে। যেন বিভ্রান্ত। এ ঘটনার আগে তারা সব সময় একসঙ্গে দৌড়াত ও খেলত। এখন তারা হাসপাতালের বিছানায় খেলে।’
যেহেতু হানান ও মিসক দ্রুত বেড়ে ওঠার পর্যায়ে আছে, তাই তাদের লম্বা হাড়গুলোর নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতালে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে যে সামান্য ফিজিওথেরাপি সম্ভব, তা তাদের খুব একটা সাহায্য করে না। হাসপাতালের সময়টুকু তাদের কাটে আঁকাআঁকি করে, দর্শনার্থীদের সঙ্গে খেলাধুলা করে বা সময় কাটানোর জন্য বড়দের মোবাইল ফোন নিয়ে খেলে।
শেফা জানান, যখন গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হয় তখন থেকেই শাইমা তাঁর মেয়েদের জন্য আতঙ্কে ছিলেন। তিনি খেতে পারতেন না, ঘুমাতে পারতেন না, মেয়েদের জন্য খাবার আর ফর্মুলা খুঁজে পাওয়ার চিন্তায় তাঁর অনেক ওজন কমে গিয়েছিল। তিনি সব সময় তার মেয়েদের প্রতি নিবেদিত ছিলেন, তাদের সঙ্গে সময় কাটাতেন এবং তারা যা চাইত—তা দেওয়ার চেষ্টা করতেন।
শেফা বলেন, ছোট্ট হানান সাজতে খুব পছন্দ করত, সে পোশাক আর জুতোর প্রতি খুবই যত্নবান ছিল। শাইমা তাদের ভীষণ ভালোবাসতেন। যখন গাজায় পোলিও টিকা দেওয়া শুরু হয় এবং ইসরায়েল এই ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়, তখন শাইমা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে তার মেয়েরা অন্তত সেই সুরক্ষা পাবে। শাইমা তাঁর বোন ও শ্বশুরবাড়ির লোকদেরও একই কাজ করার উৎসাহ দিয়েছেন।
হানানের ফুপু বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা সবাই আমাদের সন্তানদের ক্ষতির ব্যাপারে ভয় পেতাম। কিন্তু কী লাভ? পোলিও থেকে সুরক্ষা পাবে, তারপর একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের পা হারাবে? এর মানে কী?’
হানান ও মিসকের যে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, তা গাজায় সম্ভব নয়। কারণ, ইসরায়েল গাজার স্বাস্থ্য খাত ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই তাদের নাম গাজা ছেড়ে চিকিৎসার জন্য যাদের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে তাদের অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই তালিকার জন্য নাম সংগ্রহ করে। কিন্তু ইসরায়েল অনুমোদন না দিলে কেউই গাজা বের হতে পারে না। এখনো এই দুই শিশুকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
শেফা বলেন, ‘আমরা তিন মাসের বেশি অপেক্ষা করছি। তারা তো ছোট মেয়ে, যাদের ভীষণভাবে কৃত্রিম অঙ্গের প্রয়োজন। তাদের মানসিক অবস্থাও খারাপ হচ্ছে।’
গাজাতে কেবল কৃত্রিম অঙ্গ পাওয়া গেলেই হবে না। তাদের সম্পূর্ণ মূল্যায়ন এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, তারপর কৃত্রিম অঙ্গের কথা ভাবা যেতে পারে। হানান ও মিসক যেহেতু এখনো বড় হচ্ছে, তাদের বয়স অনুযায়ী হাড়ের বৃদ্ধি বেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করবে—যার ফলে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং সম্ভবত কয়েকটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
শেফা যা জানেন তা হলো, ‘এই ছোট মেয়েদের জীবন আর কখনো আগের মতো হবে না।’ তিনি বলেন, ‘হানান জুতা পরতে চায় এবং আমাকে জিজ্ঞেস করে কেন সে পরতে পারে না...কেন সে পার্কে গিয়ে খেলতে পারে না। আমার কাছে কোনো উত্তর নেই।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
১৯৭৪ সালে ‘অঙ্কুর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাঁর পরিচালনার যাত্রা শুরু করেন। এতে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন অনন্ত নাগ এবং শাবানা আজমি। চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের বিপুল প্রশংসা অর্জন করে এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে দ্বিতীয় সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এটি বেনেগাল এবং এতে অংশ নেওয়া সবার ক্যারিয়ারের জন্যই একট
১ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল মৃত্যুদণ্ডের তালিকায় থাকা ৪০ জনের মধ্যে ৩৭ জনেরই মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হয়নি তিনজনের। এই তিনজন হলেন—ডাইলান রুফ, জোখার সারনায়েভ এবং রবার্ট বাউয়ার্স।
২ ঘণ্টা আগেআলবার্ট আইনস্টাইনকে (১৮৭৯-১৯৫৫) অনেকেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে অভিহিত করেন। তবে শুধু বিজ্ঞানের জন্যই তিনি নিবেদিত ছিলেন না, জীবনের প্রতি ভালোবাসা ও নারীর প্রতি আকর্ষণও ছিল তাঁর মধ্যে।
৩ ঘণ্টা আগেসোমবার এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারতের উত্তরখন্ড প্রদেশ রাজ্যের বাসিন্দা সীমা ওরফে নিক্কি প্রথম বিয়ে করেছিলেন ২০১৩ সালে। সেবার তিনি আগ্রার এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরই সেই ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন সীমা।
৪ ঘণ্টা আগে