ইজাজুল হক, ঢাকা
বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে যে মিছিলগুলো হচ্ছে, তাতে অনেককে সাদাকালো একটি রুমাল গায়ে জড়াতে দেখা যায়। একে কেফিয়েহ বলে। একইভাবে বিক্ষোভকারীদের বড় বড় চাবি বহন করতেও দেখা যাচ্ছে। আবার দেখা যায়, শিশুদের পিঠে তুলে ঘোরানো হচ্ছে। কেউ কেউ আবার তরমুজ এঁকেও নিয়ে আসেন। এসব মূলত ফিলিস্তিনের বিভিন্ন ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে, যা সময়ের ব্যবধানে ইসরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রতীক হয়ে উঠেছে।১. কেফিয়েহ
কেফিয়েহকে কুফিয়াও বলা হয়। এটি আরব বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত বর্গাকারের বড় সুতি রুমাল। স্বতন্ত্র প্যাটার্নে নকশা করা এসব রুমাল ফিলিস্তিনি নারী–পুরুষ সবাই পরিধান করে। সাদা জমিনে কালো ডোরের এই কাপড় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রুমালে জয়তুন পাতার প্যাটার্ন উদ্যম, শক্তি ও স্থিতির প্রতীক। মাছ ধরার জালের প্যাটার্ন ফিলিস্তিনি জেলে ও জনগণের সঙ্গে ভূমধ্যসাগরের সম্পর্ক নির্দেশ করে। আর মোটা প্যাটার্নটি ফিলিস্তিনের প্রতিবেশী ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক রুটকে প্রতিনিধিত্ব করে।
মধ্যপ্রাচ্যে গরম থেকে বাঁচতেই মূলত রুমাল ব্যবহার করা হয়। গত শতকের তিরিশের দশকে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহের সময় মূলত এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
কেফিয়েহ ফিলিস্তিনের প্রয়াত অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতের ব্যক্তিগত স্টাইলও ছিল। তিনি একে ত্রিভুজ আকারে ভাঁজ করে কাঁধের ওপর দিয়ে মাথা ঢাকতেন।
এটি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ, মানবাধিকারকর্মী ও বিভিন্ন সংস্থা এটি ব্যবহার করে।
২. জয়তুনের ডাল
ফিলিস্তিনের সঙ্গে জয়তুন গাছের গভীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। জয়তুনের ডাল হাজার বছর ধরে শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা দিয়ে যাচ্ছে।
জয়তুন গাছের শক্ত কাণ্ড খরা, শূন্য ডিগ্রির নিচের তাপমাত্রা, তুষারপাত এমনকি আগুনও সহ্য করতে পারে। এটি ইসরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের অবিচলতা এবং এখানকার মাটির সঙ্গে তাঁদের নাড়ির সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করে।
তেল, সাবানসহ অনেক পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে জয়তুন। ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ফিলিস্তিনি পরিবার জয়তুন চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিবছর অক্টোবর–নভেম্বরেই জয়তুন ফল সংগ্রহ করা হয়। এ সময়টি তাদের জন্য উৎসবের। তবে এ সময়ে বারবার ইসরায়েলি আগ্রাসনে উবে যায় সব আনন্দ।
জাতিসংঘের হিসাব মতে, ২০২৩ সালের প্রথম ৫ মাসে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ৫ হাজারের বেশি জয়তুন গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১৯৭৪ সালে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) নেতা ইয়াসির আরাফাত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বলেছিলেন, ‘আজ আমি এক হাতে জয়তুনের ডাল এবং অন্য হাতে মুক্তিযোদ্ধার বন্দুক নিয়ে এসেছি। আমার হাত থেকে জয়তুনের ডাল যেন পড়ে না যায়। আমি আবার বলছি, আমার হাত থেকে জয়তুনের ডাল পড়ে যেতে দিয়ো না।’
৩. ফিলিস্তিনি এমব্রয়ডারি
ফিলিস্তিনি এমব্রয়ডারি শিল্পকে তাতরিজও বলা হয়। সুই–সুতার নান্দনিক এক শিল্প, ফিলিস্তিনি নারীদের হাত ধরে যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলে আসছে।
ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের জীবনধারা ও অভিরুচির আলোকে তাতরিজের একাধিক স্বতন্ত্র শৈলী তৈরি হয়েছে। প্রতিটি শৈলীর পেছনে রয়েছে আলাদা গল্প। গাছের মতো প্রকৃতি অনুপ্রাণিত মোটিফ থেকে শুরু করে জ্যামিতিক আকৃতির মোটিফও এতে ব্যবহৃত হয়।
ফিলিস্তিনি নারীরা এমব্রয়ডারি করা ঢিলেঢালা একটি জামা পরিধান করে, যাকে আরবিতে সওব বলা হয়। এগুলো সাধারণত পাট, তুলা, পশম বা রেশমের তৈরি হয় এবং হাতে বোনা বা মেশিনে তৈরি হয়। লাল এমব্রয়ডারি প্রভাবশালী বর্ণ; যদিও তা অঞ্চল বা শিল্পী ভেদে ভিন্নও হয়।
২০২১ সালে ইউনেসকো ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি এমব্রয়ডারিকে অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করেছে।
৪. ফিলিস্তিনি চাবি
১৯৪৮ সালে ইহুদিবাদী দখলদার বাহিনী সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে, যা নাকাবা (নাকবা) বা বিপর্যয় নামে পরিচিত। মানুষ ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদের সময় ঘরের চাবিটি সঙ্গে নিয়ে যায়। কারণ তাদের বিশ্বাস, তারা একদিন নিশ্চিত ঘরে ফিরবে।
অনেক ফিলিস্তিনি এখনো তাদের আসল বাড়ির চাবি ধরে রেখেছে তাদের আশা ও সংকল্পের প্রতীক হিসেবে। এই চাবিগুলো কয়েক প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এবং ফিলিস্তিনিদের ঘরে ফেরার অধিকারের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের সর্বশেষ আক্রমণে প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনিকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে, যা ১৯৪৮ সালের নাকবার সময়ের দ্বিগুণ। ফিলিস্তিনিদের জন্য নাকবা ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা নয়; এটি তাদের বিরতিহীন বাস্তুচ্যুতির চলমান প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে।
৫. ফিলিস্তিনের মানচিত্র
ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক মানচিত্রটি ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আগে এই অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত ভৌগোলিক সীমানার প্রতিনিধিত্ব করে। মানচিত্রটি ফিলিস্তিনিদের ভূমি এবং স্বাধিকারের দাবির দৃশ্যমান প্রতীক।
১৯৪৮ সালে সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাড়িয়ে এই মানচিত্রের ৭৮ শতাংশ ভূমি দখল করে নেয় ইহুদিবাদী সামরিক বাহিনী। অবশিষ্ট ২২ শতাংশ নামেই ফিলিস্তিনিদের ভাগে রাখা হয়েছে, যা বর্তমানে অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা নামে পরিচিত।
বর্তমানে ৭০ লাখ নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি দেশটির ভেতরে ও আশপাশের দেশগুলোর শরণার্থীশিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফিলিস্তিনি শরণার্থী সমস্যা বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর একটি।
নেকলেস, টিশার্ট, চাবির তোড়াসহ অনেক উপহারসামগ্রীতে ফিলিস্তিনি মানচিত্র ব্যবহার করা হয়, যা দেশটির স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
৬. আল–আকসা প্রাঙ্গণ
ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাতের মূলে রয়েছে আল–আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণ, যা জেরুজালেমে অবস্থিত। ৩৫ একরের এই প্রাঙ্গণে রয়েছে আল–কিবলি মসজিদ ও ডোম অব দ্য রকসহ ফিলিস্তিনিদের গভীর ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য।
ইসলামি বিশ্বাস মতে, আল–আকসা থেকেই নবী মুহাম্মদ (সা.) মিরাজে গমন করেন। তাই ইসলামে মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীর পরই এটিকে ইসলামের অন্যতম পবিত্র স্থান বিবেচনা করা হয়। প্রাঙ্গণটি মুসলমানদের কাছে আল–হারাম আশ–শরিফ এবং ইহুদিদের কাছে টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত।
এই প্রাঙ্গণ সব সময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকে। কারণ ইসরায়েলি বাহিনী এখানে বারবার হামলা চালায় এবং মুসলমানদের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে।
৭. হানযালা
হানযালা হলো ফিলিস্তিনি কার্টুনিস্ট নাজি আল–আলির আঁকা একটি কার্টুন চরিত্র। এর মাধ্যমে তিনি নিজের শৈশবের শরণার্থী জীবনের অভিজ্ঞতা এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। ১৯৬৯ সালে একটি কুয়েতি সংবাদপত্রে কার্টুনটি প্রথম ছাপা হয়।
১৯৭৩ সালে অক্টোবরের যুদ্ধের পর আল–আলি পুরো বিশ্ব কীভাবে ফিলিস্তিন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তা তুলে ধরতে পিঠ দেখানো হানযালা কার্টুন আঁকতে শুরু করেন। হানযালার মাধ্যমে শিল্পী ১০ বছর বয়সে ঘরবাড়ি ছেড়ে শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেওয়া তালিযুক্ত পোশাক পরা ও খালি পায়ে হাঁটা নিজের শৈশবকে খুঁজে বেড়ান।
ফিলিস্তিনের শুষ্ক এলাকায় উৎপাদিত তিক্ত ফল ‘হানযাল’–এর নামানুসারে এর নামকরণ। এই গাছগুলো কেটে ফেললে আবার বেড়ে ওঠে। আর এর শিকড় থাকে অনেক গভীরে।
১৯৮৭ সালে লন্ডনে কার্টুনিস্ট নাজি আল–আলি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হাতে খুন হন। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডে কাউকে অভিযুক্ত পর্যন্ত করা হয়নি।
৮. তরমুজ
তরমুজই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করে। জেনিন থেকে গাজা পর্যন্ত জন্মানো এই ফল দেখতে ফিলিস্তিনি পতাকার মতো। পতাকার মতো এই ফলে রয়েছে লাল, সবুজ, সাদা ও কালো অংশ। তাই এটিকে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের পতাকার প্রতীক হিসেবে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সময় ব্যবহার করে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর, ইসরায়েল যখন পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে, তখন দখলদারেরা অধিকৃত ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি পতাকা নিষিদ্ধ করে। তবে আইন করে পতাকা নিষিদ্ধ করা যায়নি। মুক্তিকামী মানুষ প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে তরমুজ প্রদর্শন করতে শুরু করে। ফলে তরমুজ শিল্পমাধ্যম, টিশার্ট, গ্রাফিতি, পোস্টার এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার ইমোজি হিসেবেও ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হতে থাকে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুলিশকে জনসমাগম স্থল থেকে ফিলিস্তিনি পতাকা বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরে জুনে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পতাকা নিষিদ্ধ করার বিল আসে। এর প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থা জাজিম তেল আবিবের ডজনখানেক ট্যাক্সিতে তরমুজের ছবি লাগিয়ে দেয়।
চলমান যুদ্ধে গাজার ঘটনা পোস্ট করার ক্ষেত্রে মানুষ তরমুজের ইমোজি ব্যবহার করছে। কারণ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিলিস্তিনি পতাকা ব্যবহার কার্যত নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা
বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে যে মিছিলগুলো হচ্ছে, তাতে অনেককে সাদাকালো একটি রুমাল গায়ে জড়াতে দেখা যায়। একে কেফিয়েহ বলে। একইভাবে বিক্ষোভকারীদের বড় বড় চাবি বহন করতেও দেখা যাচ্ছে। আবার দেখা যায়, শিশুদের পিঠে তুলে ঘোরানো হচ্ছে। কেউ কেউ আবার তরমুজ এঁকেও নিয়ে আসেন। এসব মূলত ফিলিস্তিনের বিভিন্ন ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে, যা সময়ের ব্যবধানে ইসরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রতীক হয়ে উঠেছে।১. কেফিয়েহ
কেফিয়েহকে কুফিয়াও বলা হয়। এটি আরব বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত বর্গাকারের বড় সুতি রুমাল। স্বতন্ত্র প্যাটার্নে নকশা করা এসব রুমাল ফিলিস্তিনি নারী–পুরুষ সবাই পরিধান করে। সাদা জমিনে কালো ডোরের এই কাপড় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রুমালে জয়তুন পাতার প্যাটার্ন উদ্যম, শক্তি ও স্থিতির প্রতীক। মাছ ধরার জালের প্যাটার্ন ফিলিস্তিনি জেলে ও জনগণের সঙ্গে ভূমধ্যসাগরের সম্পর্ক নির্দেশ করে। আর মোটা প্যাটার্নটি ফিলিস্তিনের প্রতিবেশী ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক রুটকে প্রতিনিধিত্ব করে।
মধ্যপ্রাচ্যে গরম থেকে বাঁচতেই মূলত রুমাল ব্যবহার করা হয়। গত শতকের তিরিশের দশকে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহের সময় মূলত এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
কেফিয়েহ ফিলিস্তিনের প্রয়াত অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতের ব্যক্তিগত স্টাইলও ছিল। তিনি একে ত্রিভুজ আকারে ভাঁজ করে কাঁধের ওপর দিয়ে মাথা ঢাকতেন।
এটি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ, মানবাধিকারকর্মী ও বিভিন্ন সংস্থা এটি ব্যবহার করে।
২. জয়তুনের ডাল
ফিলিস্তিনের সঙ্গে জয়তুন গাছের গভীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। জয়তুনের ডাল হাজার বছর ধরে শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা দিয়ে যাচ্ছে।
জয়তুন গাছের শক্ত কাণ্ড খরা, শূন্য ডিগ্রির নিচের তাপমাত্রা, তুষারপাত এমনকি আগুনও সহ্য করতে পারে। এটি ইসরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের অবিচলতা এবং এখানকার মাটির সঙ্গে তাঁদের নাড়ির সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করে।
তেল, সাবানসহ অনেক পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে জয়তুন। ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ফিলিস্তিনি পরিবার জয়তুন চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিবছর অক্টোবর–নভেম্বরেই জয়তুন ফল সংগ্রহ করা হয়। এ সময়টি তাদের জন্য উৎসবের। তবে এ সময়ে বারবার ইসরায়েলি আগ্রাসনে উবে যায় সব আনন্দ।
জাতিসংঘের হিসাব মতে, ২০২৩ সালের প্রথম ৫ মাসে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ৫ হাজারের বেশি জয়তুন গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১৯৭৪ সালে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) নেতা ইয়াসির আরাফাত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বলেছিলেন, ‘আজ আমি এক হাতে জয়তুনের ডাল এবং অন্য হাতে মুক্তিযোদ্ধার বন্দুক নিয়ে এসেছি। আমার হাত থেকে জয়তুনের ডাল যেন পড়ে না যায়। আমি আবার বলছি, আমার হাত থেকে জয়তুনের ডাল পড়ে যেতে দিয়ো না।’
৩. ফিলিস্তিনি এমব্রয়ডারি
ফিলিস্তিনি এমব্রয়ডারি শিল্পকে তাতরিজও বলা হয়। সুই–সুতার নান্দনিক এক শিল্প, ফিলিস্তিনি নারীদের হাত ধরে যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলে আসছে।
ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের জীবনধারা ও অভিরুচির আলোকে তাতরিজের একাধিক স্বতন্ত্র শৈলী তৈরি হয়েছে। প্রতিটি শৈলীর পেছনে রয়েছে আলাদা গল্প। গাছের মতো প্রকৃতি অনুপ্রাণিত মোটিফ থেকে শুরু করে জ্যামিতিক আকৃতির মোটিফও এতে ব্যবহৃত হয়।
ফিলিস্তিনি নারীরা এমব্রয়ডারি করা ঢিলেঢালা একটি জামা পরিধান করে, যাকে আরবিতে সওব বলা হয়। এগুলো সাধারণত পাট, তুলা, পশম বা রেশমের তৈরি হয় এবং হাতে বোনা বা মেশিনে তৈরি হয়। লাল এমব্রয়ডারি প্রভাবশালী বর্ণ; যদিও তা অঞ্চল বা শিল্পী ভেদে ভিন্নও হয়।
২০২১ সালে ইউনেসকো ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি এমব্রয়ডারিকে অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করেছে।
৪. ফিলিস্তিনি চাবি
১৯৪৮ সালে ইহুদিবাদী দখলদার বাহিনী সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে, যা নাকাবা (নাকবা) বা বিপর্যয় নামে পরিচিত। মানুষ ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদের সময় ঘরের চাবিটি সঙ্গে নিয়ে যায়। কারণ তাদের বিশ্বাস, তারা একদিন নিশ্চিত ঘরে ফিরবে।
অনেক ফিলিস্তিনি এখনো তাদের আসল বাড়ির চাবি ধরে রেখেছে তাদের আশা ও সংকল্পের প্রতীক হিসেবে। এই চাবিগুলো কয়েক প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এবং ফিলিস্তিনিদের ঘরে ফেরার অধিকারের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের সর্বশেষ আক্রমণে প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনিকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে, যা ১৯৪৮ সালের নাকবার সময়ের দ্বিগুণ। ফিলিস্তিনিদের জন্য নাকবা ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা নয়; এটি তাদের বিরতিহীন বাস্তুচ্যুতির চলমান প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে।
৫. ফিলিস্তিনের মানচিত্র
ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক মানচিত্রটি ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আগে এই অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত ভৌগোলিক সীমানার প্রতিনিধিত্ব করে। মানচিত্রটি ফিলিস্তিনিদের ভূমি এবং স্বাধিকারের দাবির দৃশ্যমান প্রতীক।
১৯৪৮ সালে সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাড়িয়ে এই মানচিত্রের ৭৮ শতাংশ ভূমি দখল করে নেয় ইহুদিবাদী সামরিক বাহিনী। অবশিষ্ট ২২ শতাংশ নামেই ফিলিস্তিনিদের ভাগে রাখা হয়েছে, যা বর্তমানে অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা নামে পরিচিত।
বর্তমানে ৭০ লাখ নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি দেশটির ভেতরে ও আশপাশের দেশগুলোর শরণার্থীশিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফিলিস্তিনি শরণার্থী সমস্যা বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর একটি।
নেকলেস, টিশার্ট, চাবির তোড়াসহ অনেক উপহারসামগ্রীতে ফিলিস্তিনি মানচিত্র ব্যবহার করা হয়, যা দেশটির স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
৬. আল–আকসা প্রাঙ্গণ
ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাতের মূলে রয়েছে আল–আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণ, যা জেরুজালেমে অবস্থিত। ৩৫ একরের এই প্রাঙ্গণে রয়েছে আল–কিবলি মসজিদ ও ডোম অব দ্য রকসহ ফিলিস্তিনিদের গভীর ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য।
ইসলামি বিশ্বাস মতে, আল–আকসা থেকেই নবী মুহাম্মদ (সা.) মিরাজে গমন করেন। তাই ইসলামে মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীর পরই এটিকে ইসলামের অন্যতম পবিত্র স্থান বিবেচনা করা হয়। প্রাঙ্গণটি মুসলমানদের কাছে আল–হারাম আশ–শরিফ এবং ইহুদিদের কাছে টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত।
এই প্রাঙ্গণ সব সময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকে। কারণ ইসরায়েলি বাহিনী এখানে বারবার হামলা চালায় এবং মুসলমানদের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে।
৭. হানযালা
হানযালা হলো ফিলিস্তিনি কার্টুনিস্ট নাজি আল–আলির আঁকা একটি কার্টুন চরিত্র। এর মাধ্যমে তিনি নিজের শৈশবের শরণার্থী জীবনের অভিজ্ঞতা এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। ১৯৬৯ সালে একটি কুয়েতি সংবাদপত্রে কার্টুনটি প্রথম ছাপা হয়।
১৯৭৩ সালে অক্টোবরের যুদ্ধের পর আল–আলি পুরো বিশ্ব কীভাবে ফিলিস্তিন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তা তুলে ধরতে পিঠ দেখানো হানযালা কার্টুন আঁকতে শুরু করেন। হানযালার মাধ্যমে শিল্পী ১০ বছর বয়সে ঘরবাড়ি ছেড়ে শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেওয়া তালিযুক্ত পোশাক পরা ও খালি পায়ে হাঁটা নিজের শৈশবকে খুঁজে বেড়ান।
ফিলিস্তিনের শুষ্ক এলাকায় উৎপাদিত তিক্ত ফল ‘হানযাল’–এর নামানুসারে এর নামকরণ। এই গাছগুলো কেটে ফেললে আবার বেড়ে ওঠে। আর এর শিকড় থাকে অনেক গভীরে।
১৯৮৭ সালে লন্ডনে কার্টুনিস্ট নাজি আল–আলি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হাতে খুন হন। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডে কাউকে অভিযুক্ত পর্যন্ত করা হয়নি।
৮. তরমুজ
তরমুজই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করে। জেনিন থেকে গাজা পর্যন্ত জন্মানো এই ফল দেখতে ফিলিস্তিনি পতাকার মতো। পতাকার মতো এই ফলে রয়েছে লাল, সবুজ, সাদা ও কালো অংশ। তাই এটিকে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের পতাকার প্রতীক হিসেবে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সময় ব্যবহার করে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর, ইসরায়েল যখন পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে, তখন দখলদারেরা অধিকৃত ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি পতাকা নিষিদ্ধ করে। তবে আইন করে পতাকা নিষিদ্ধ করা যায়নি। মুক্তিকামী মানুষ প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে তরমুজ প্রদর্শন করতে শুরু করে। ফলে তরমুজ শিল্পমাধ্যম, টিশার্ট, গ্রাফিতি, পোস্টার এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার ইমোজি হিসেবেও ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হতে থাকে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুলিশকে জনসমাগম স্থল থেকে ফিলিস্তিনি পতাকা বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরে জুনে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পতাকা নিষিদ্ধ করার বিল আসে। এর প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থা জাজিম তেল আবিবের ডজনখানেক ট্যাক্সিতে তরমুজের ছবি লাগিয়ে দেয়।
চলমান যুদ্ধে গাজার ঘটনা পোস্ট করার ক্ষেত্রে মানুষ তরমুজের ইমোজি ব্যবহার করছে। কারণ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিলিস্তিনি পতাকা ব্যবহার কার্যত নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি দাবি করেছেন, ইমরান খানের সরকার পতনের পেছনে সৌদি আরবের ভূমিকা ছিল। কারাবন্দী ইমরান খানের স্ত্রী এক বিরল ভিডিও বার্তায় এই দাবি করেছেন। পাশাপাশি, তিনি ভিডিওতে আগামী ২৪ নভেম্বর ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিক্ষোভ মিছিলে ইমরান খানের দল পাকিস
১ ঘণ্টা আগেপোল্যান্ডে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঘাঁটি ‘পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ানোর’ কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে রাশিয়া। পাশাপাশি বলেছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এখন রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ, রাশিয়া প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো সময় এই ঘাঁটিতে হামলা চা
১ ঘণ্টা আগেমার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ম্যাট গেটজ। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএসের প্রতিবেদন থেকে
১ ঘণ্টা আগেপাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান নিশ্চিত করেছেন, আগামী ২৪ নভেম্বর তাঁর দল রাজধানী ইসলামাবাদে যে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছে তা স্থগিত করলে, তাঁকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে ‘প্রস্তাব’ এসেছে। পিটিআইয়ের শীর্ষ নেতাদের কাছে পাকিস্তান সরকার এই প্রস্তাব দিয়েছে
১ ঘণ্টা আগে