Ajker Patrika

হিজবুল্লাহর পেজার ও ওয়াকিটকিতে যেভাবে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল মোসাদ

অনলাইন ডেস্ক
পেজার বিস্ফোরণে নিহত এক হিজবুল্লাহ সদস্যের মরদেহ বহন করছেন অন্যরা। ছবি: বিবিসি
পেজার বিস্ফোরণে নিহত এক হিজবুল্লাহ সদস্যের মরদেহ বহন করছেন অন্যরা। ছবি: বিবিসি

নিজেদের হাতে থাকা পেজার ও ওয়াকিটকিগুলো যে ইসরায়েলে তৈরি হয়েছিল তা ঘুণাক্ষরেও জানত না লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তার তথ্য অনুসারে, ওই সরঞ্জামগুলোতে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে সরবরাহ করা হয়েছিল।

ইসরায়েলে তৈরি পেজারগুলো প্রায় ১০ ধরে ব্যবহার করেছে হিজবুল্লাহ সদস্যরা। অবশেষে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করেই এগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক মোসাদ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কীভাবে এই সরঞ্জামগুলো হিজবুল্লাহর কাছে বিক্রি করা হয়েছিল।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই হিজবুল্লাহর সঙ্গেও ইসরায়েলের সংঘাত বাড়তে থাকে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে হিজবুল্লাহ সদস্যদের হাতে থাকা হাজার হাজার পেজার একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। এই ঘটনার পরদিনই আবার ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ ঘটে। এই দুটি হামলার ঘটনায় শতাধিক মানুষ নিহত ও আহত হন।

তবে দুই মাস পরে ওই দুটি হামলার দায় স্বীকার করেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। লেবাননের কর্মকর্তারা দাবি করেন, হামলায় বেসামরিক মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মোসাদ কীভাবে হিজবুল্লাহকে ফাঁদে ফেলেছিল, তা নিয়ে সাক্ষাৎকারে সাবেক দুই গোয়েন্দা বিস্তারিত জানান। এর মধ্যে মাইকেল নামে একজন জানান, মোসাদ ওয়াকিটকির ব্যাটারির ভেতরে বিস্ফোরক বসিয়ে দিয়েছিল। এগুলো সাধারণত ব্যবহারকারীদের বুকের কাছে রাখা হতো। ফলে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একসঙ্গে অনেককে মেরে ফেলা সম্ভব হবে।

মাইকেল আরও জানান, ১০ বছর আগে ১৬ হাজার ওয়াকিটকি কিনেছিল হিজবুল্লাহ। এগুলো একটি ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছিল। আসলে অন্তরালে থেকে ইসরায়েলের গোয়েন্দারাই এই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিল।

মাইকেল বলেন, ‘আমরা এমন একটি জগৎ তৈরি করি যেখানে সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে। আমরা গল্প লিখি, পরিচালনা করি, প্রযোজনা করি এবং অভিনয় করি। বিশ্ব আমাদের মঞ্চ।’

হিজবুল্লাহর কাছে পেজার সরবরাহ শুরু হয় দুই বছর আগে। মোসাদ জানতে পারে, হিজবুল্লাহ একটি তাইওয়ানের কোম্পানির কাছ থেকে পেজার কিনছে। পরে তারা সেই কোম্পানির নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান তৈরি করে এবং বিস্ফোরকসহ পেজার বিক্রি করে।

গ্যাব্রিয়েল নামে মোসাদের সাবেক আরেক এজেন্ট জানান, মোসাদ চেয়েছিল বিস্ফোরক শুধু ব্যবহারকারীদেরই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

গ্যাব্রিয়েল বলেন, ‘আমরা এমন একটি রিংটোন ব্যবহার করেছিলাম, যা কাউকে বার্তা চেক করতে উদ্বুদ্ধ করবে।’

পরপর দুই দিনের হামলায় লেবাননের বিভিন্ন স্থানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। হাসপাতালগুলো আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এই বিস্ফোরণে সুপারমার্কেটসহ জনবহুল এলাকাগুলোও প্রভাবিত হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টার্ক এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী আইন লঙ্ঘন করে।’

লেবানন পেজার এবং ওয়াকিটকি হামলার জন্য কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে। কয়েক দিন পর ইসরায়েল হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায় এবং লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করে।

গত ২৬ নভেম্বর উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিরিয়ায় রাশিয়ার ঘাঁটি রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের তদবির

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

নয়াদিল্লিতে নতুন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ৩ মাস সময় নিল ভারত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত