Ajker Patrika

ভাইয়ের স্বপ্নপূরণে ডাক্তার হতে চায় ১০ বছরের আমর

অনলাইন ডেস্ক
আমর আল-হিন্দি। ছবি: সংগৃহীত
আমর আল-হিন্দি। ছবি: সংগৃহীত

সময়টা গত বছরের অক্টোবরের কোনো এক বিকেল। গাজার বাইত লাহিয়ার একটি ভবনে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। মুহূর্তেই সবকিছু ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে একটি পরিবার। সেই হামলায় একটি পরিবারের পুরোটাই শেষ হয়ে যায়। বাবা, মা ও ভাইবোন সবাই মারা পড়ে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কেবল একা বেঁচে ছিল ১০ বছরের আমর আল-হিন্দি।

হামলার পরপরই আমরকে নেওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। চারপাশে কেবল আর্তনাদ-হাহাকার, রোনাজারি। রক্তাক্ত মানুষের মিছিল। মেঝেতে পড়ে থাকা এক নারীর কানের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। এক কোণে এক লোকের নিথর দেহ।

আমর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে বারবার জানতে চাইল তাঁর ভাই শরীফের কথা। আমর বলছিল, ‘শরীফ কোথায়?’ পাশে থাকা নার্স সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ‘শরীফ ঠিক আছে। আমি তোমাকে তার কাছে নিয়ে যাব।’ কিন্তু আমর তার বড় ভাই শরীফকে আর জীবিত দেখেনি। নেই তার আরেক ভাই আলী, তার বোন আসিল। মা-বাবাও নেই। পুরো পরিবারই শেষ হয়ে গেছে।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা কার্যকর হওয়ার পর বিবিসি আমরের খোঁজ নিতে যায়। সে সময় আমর তার দাদা-দাদির কাছে ছিল। এই আমরই এখন তাদের শেষ আশ্রয়। আমরের বেঁচে থাকার আনন্দের মাঝেও লুকিয়ে আছে এক গভীর ক্ষত। আমরের পায়ের তিনটি আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে। তারপরও সে হাঁটার চেষ্টা করছে ধীরে ধীরে।

আমর তার দাদুর কোলে বসে মায়াময় চোখের গভীরতা দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদকদের দিকে তাকিয়ে বলছিল, তার বড় ভাই আলীর কথা। ‘আলী ডাক্তার হতে চেয়েছিল। সে জর্ডানে গিয়ে পড়াশোনা করার স্বপ্ন দেখত।’ কথাগুলো বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গেল আমর। চোখ থেকে বড় বড় অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়ল। তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ল। তারপরও বলছিল, ‘আমি আলীর মতো হতে চাই। তার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই, জর্ডানে গিয়ে ডাক্তার হতে চাই।’

কান্নায় ভেঙে পড়া আমরের দাদা তৎক্ষণাৎ তাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বললেন, ‘বাবা, তোমার কিছু হবে না।’ এক হাতে বুক চাপড়ে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন আমরের দাদা।

এই একটি দৃশ্যই যেন, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের আসল রূপ তুলে ধরে। যুদ্ধ কেবল ভূখণ্ডের দখলই কেড়ে নেয় না, জীবনের স্বপ্ন, ভালোবাসাকেও ছিনিয়ে নেয়। কিছু যুদ্ধ হয়তো অস্ত্রের শব্দে থেমে যায়। কিন্তু কিছু যুদ্ধ থেকে যায় বেঁচে থাকা মানুষদের ভেতর, অনেক দিন ধরে, হয়তো সারা জীবন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত