উপার্জনের অভিনব কৌশল পাকিস্তান সরকারের, আফগান শরণার্থীদের এক্সিট ফি ৮৩০ ডলার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ২২: ০৪

তালেবান শাসনামলে এবং মার্কিন সামরিক অভিযানের সময় পালিয়ে আসা আফগান শরণার্থীদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে পাকিস্তান। তবে যারা পাকিস্তান থেকে পশ্চিমা কোনো দেশে যেতে চাচ্ছেন তাঁদের জন্য জনপ্রতি প্রায় ১ হাজার ডলার এক্সিট ফি নির্ধারণ করেছে। পাকিস্তান সরকারের এ পদক্ষেপকে ‘বিস্ময়কর ও হতাশাজনক’ উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ ও পশ্চিমা কূটনীতিকেরা।   

সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুসারে, নজিরবিহীন এ সিদ্ধান্তে পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমা দেশের উদ্দেশে পাকিস্তান ছাড়তে চাওয়া প্রত্যেক শরণার্থীর ওপর ৮৩০ ডলার (৯১ হাজার ৮৬৭ টাকা) এক্সিট ফি আরোপ করা হবে।  

চলতি মাসের শুরুর দিকে শরণার্থী এবং অবৈধ অভিবাসীদের জোর করে নিজ নিজ দেশে পাঠানো শুরু করেছে পাকিস্তান। গত ১ নভেম্বরের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ অবৈধ আফগান অভিবাসীদের পাকিস্তান ছেড়ে যাওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। ডেডলাইন পার হয়ে যাওয়ার পর থেকে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করেছে পাকিস্তান।

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর হাজারো আফগান পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশে পালিয়ে যান। তাঁদের অনেকে সঠিক কাগজপত্র বা মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসাসহ পাকিস্তানে থাকছেন। তাঁদের বেশির ভাগই পশ্চিমা দেশে নতুন জীবন শুরু করার অপেক্ষায় আছেন। তাঁদের অনেকে আফগানিস্তানে পশ্চিমা সরকার ও সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন।

মার্কিন সরকার প্রায় ২৫ হাজার আফগানকে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসিত করার পরিকল্পনা করেছে। যুক্তরাজ্য বলছে, তারা ২০ হাজার জনকে পুনর্বাসিত করবে।  

পাকিস্তানে অবস্থানরত বিদেশি পাঁচ জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, পাকিস্তান ছাড়ার জন্য অভিবাসীদের ওপর ফি আরোপের এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নজিরবিহীন। এ সিদ্ধান্তে সবাই বিস্মিত। এক কূটনীতিক বলেন, ‘আমি জানি, পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে বেশ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শরণার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় করে অর্থ উপার্জনের এমন উপায় অত্যন্ত অশোভনীয়!’

ওই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের দুটি সংস্থা—   জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা—উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এটি নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে।’

আরেক কূটনীতিক বলেন, পশ্চিমা কর্মকর্তাদের পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে এই পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে। যখন ফি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, তখন কর্মকর্তাদের বলা হয়, প্রাথমিক সিদ্ধান্তে প্রতি ব্যক্তির ফি ১০ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়, তবে পরে তা কমিয়ে ৮৩০ ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটা উদ্ভট সিদ্ধান্ত এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে এটিকে অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করি। পাকিস্তান যদি পশ্চিমে শরণার্থীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটি সহজ করতে চায় তবে তাদের এ ধরনের অযৌক্তিক শর্ত দিয়ে এটিকে আরও জটিল করা উচিত নয়। এই এক্সিট পারমিট ফির যৌক্তিকতা কী? অনেক টাকা উপার্জন করা?’

আরেক কূটনীতিক বলেন, ‘এক্সিট পারমিট বা দেশ ছাড়ার অনুমতি ফি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে, যা অনেক আফগান শরণার্থীর নেই। আমার মনে হয়, আমাদের শরণার্থীদের সহযোগিতা করার জন্য একসঙ্গে কাজ করা উচিত এবং আমরা আশা করি পাকিস্তান সহযোগিতা করবে।’

এ ব্যাপারে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মমতাজ জাহরা বালুচ বলেন, ‘এ নীতি পরিবর্তন করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তারা দুই বছর ধরে এখানে অবস্থান করছেন এবং তাঁরা শরণার্থী নন বরং অভিবাসনপ্রত্যাশী। তাঁদের ভিসার মেয়াদ শেষ ও সঠিক কাগজপত্র নেই। তবে আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ভিসা ও অনুমোদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবেন, যেন তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন।’

মমতাজ বালুচ বলেন, ‘শরণার্থীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আরও তথ্য প্রয়োজন। কারণ, কয়েকটি পশ্চিমা দেশ কোনো তথ্য ছাড়া শুধু শরণার্থীদের নাম পাঠাচ্ছে।’

তবে, পশ্চিমা এক কূটনীতিক বলছেন, ‘আমরা পাকিস্তানি সরকারের জানতে চাওয়া সব তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি, তবে আমরা কতটুকু তথ্য সরবরাহ করতে পারব—এর ওপর বিধি–নিষেধ রয়েছে।’

এক্সিট পারমিট ফির বিষয়ে ইসলামাবাদে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশন মন্তব্য করতে অসম্মতি জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত