কানাডার অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ, হুমকির মুখে ট্রুডোর প্রধানমন্ত্রিত্ব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ১৫
ট্রুডোর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ও বিশ্বস্ত মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত

টানা নয় বছর ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এ দীর্ঘ পথচলায় এতটা অস্থিতিশীল অবস্থায় পড়তে হয়নি তাঁকে, যতটা বর্তমানে আছেন তিনি। জনপ্রিয়তা ঠেকেছে তলানিতে। এমনকি তাঁর নিজ দল থেকে পদত্যাগের আহ্বান উঠছে। এমন সময় অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগ তাঁর জন্য বড় ধাক্কাই বলা যায়।

আজ মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ট্রুডোর সবচেয়ে প্রভাবশালী ও বিশ্বস্ত মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত ক্রিস্টিয়া গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। ক্রিস্টিনা অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন।

ক্রিস্টিয়ার এ পদত্যাগকে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর মন্ত্রিসভায় প্রথম প্রকাশ্য বিরোধের বহিঃপ্রকাশ বলা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত ট্রুডোর ক্ষমতায় থাকার অধিকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।

জনমত জরিপে লিবারেল পার্টির নেতা ট্রুডো তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পয়লিভারের চেয়ে ২০ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছেন। গত সেপ্টেম্বর থেকে তিনবার সরকার পতনের চেষ্টা করেছেন পয়লিভার এবং দ্রুত একটি নির্বাচন ঘোষণার দাবি করেছেন।

এক্সে এক পোস্টে নিজের পদত্যাগের কথা জানিয়ে ক্রিস্টিয়া বলেন, গত সপ্তাহে ট্রুডো তাঁকে জানান, তিনি তাঁকে আর অর্থমন্ত্রীর পদে চান না। তিনি তাঁকে মন্ত্রিপরিষদের অন্য একটি দায়িত্ব দিতে চান। ক্রিস্টিনা বলেন, ‘তখন আমার মনে হয়েছিল, আমার একমাত্র সঠিক ও কাজের সিদ্ধান্ত হবে মন্ত্রিসভা ছেড়ে যাওয়া।’

কানাডার প্রধান বাণিজ্য অংশীদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবছর দেশটির ৭৫ শতাংশ রপ্তানি আয় আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এ অবস্থায় ট্রাম্প কানাডা থেকে আমদানি পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ পরিকল্পনার ঘোষণার প্রতি ইঙ্গিত করে ক্রিস্টিনা তাঁর পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘আজ আমাদের দেশ একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে, আপনি এবং আমি কানাডার জন্য সঠিক পথ নিয়ে মতবিরোধে রয়েছি।’

অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এ জন্য অটোয়াকে আর্থিক শক্তি সঞ্চয় করার আহ্বান জানান তিনি।

ক্রিস্টিয়া বলেন, রাজনৈতিক বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকতে হবে আমাদের। এর ভার আমরা বহন করতে পারব না।

২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন সাবেক সাংবাদিক ফ্রিল্যান্ড। ২০১৫ সালে লিবারেলদের জয়ের পর ট্রুডোর মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন ক্রিস্টিনা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।

সর্বশেষ তাঁকে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের প্রতি কানাডার প্রতিক্রিয়া জানাতে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

ক্রিস্টিয়ার পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় পিয়েরে পয়লিভারের ডেপুটি অ্যান্ড্রু শিয়ার বলেছেন, ‘এই সরকার সম্পূর্ণ অস্থির, এমনকি তিনিও ট্রুডোর প্রতি আস্থা হারিয়েছেন।’

ক্রিস্টিয়ার পদত্যাগ ট্রুডোর জন্য বিপর্যয় হিসেবে অভিহিত করেছেন ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লরি টার্নবুল। তিনি বলেন, ট্রুডোর প্রতি আস্থা সংকট তুলে ধরছে এই পদত্যাগ। এই ঘটনা ট্রুডোর প্রধানমন্ত্রিত্ব হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে বলা যায়।

অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেনেভিয়েভ তেলিয়ার বলেন, মন্ত্রিসভা এত দিন ট্রুডোর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ছিল। তবে, অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে ফ্রিল্যান্ডের বিরোধিতা একটি বড় সমস্যা। পদত্যাগে বোঝা যাচ্ছে ট্রুডোর দল তাঁর পেছনে আগের মতো ঐক্যবদ্ধ নয়।

এদিকে আবাসন মন্ত্রী শন ফ্রেজারও রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ক্রিস্টিয়ার এ পদত্যাগকে সমর্থন জানিয়ে তাঁকে ‘পেশাদার ও সাহায্যকারী’ বলে বর্ণনা করেন।

তবে ক্রিস্টিয়া ২০২৫ সালে প্রত্যাশিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড’ তেল আবিবে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সাগরে নিম্নচাপ, কত দিন বৃষ্টি হতে পারে জানাল আবহাওয়া দপ্তর

শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান যার যার স্থানে শ্রেষ্ঠ: গয়েশ্বর

র‌্যাব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি: নূর খান লিটন

হাসিনার আমলে রাশিয়ার সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি, জড়াল টিউলিপের নামও

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত