ট্রাম্পের হাশ মানি মামলার রায় ১০ জানুয়ারি, যে ইঙ্গিত দিলেন বিচারক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২: ৩৬
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৪০
Thumbnail image
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদান-সংক্রান্ত মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ১০ জানুয়ারি। তবে, তাঁকে কারাদণ্ড বা অন্য কোনো দণ্ড দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে গতকাল শুক্রবার জানিয়েছেন এক বিচারক। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

হাশ মানি মামলার বিচারক হুয়ান মেরচান সম্প্রতি এই মামলা বাতিলের শুনানিতে আবেদন খারিজ করে রায়ে বলেন, ‘এই রায় অনুযায়ী ট্রাম্পকে ২০ জানুয়ারির অভিষেকের মাত্র ১০ দিন আগে আদালতে হাজির হতে হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। ট্রাম্পের আগে কোনো বর্তমান বা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট অপরাধে অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত হননি।’

হুয়ান মেরচান জানান, ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প তাঁর সাজা ঘোষণার সময় সরাসরি বা ভার্চুয়ালি উপস্থিত হতে পারবেন। তিনি লিখেছেন, ট্রাম্পকে কারাদণ্ড দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি নন এবং ‘নিঃশর্ত খালাসই’ অর্থাৎ, কোনো কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা প্রবেশন ছাড়াই এই মামলার ‘সবচেয়ে কার্যকর সমাধান’ হবে।

এই দণ্ডাদেশ ট্রাম্পকে আপিলের পথ খুলে দেবে। মেরচান তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন, ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, তিনি আপিল করার পরিকল্পনা করছেন।

এই মামলা প্রসঙ্গে এর আগে, এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের মুখপাত্র স্টিভেন চিয়াং বলেন, ‘মামলাটিতে কোনো সাজা হওয়া উচিত নয়। এই বেআইনি মামলা কখনোই আদালতে আনার প্রয়োজন ছিল এবং মার্কিন সংবিধানের বিধি এটিই বলে যে এই মামলা অবিলম্বে খারিজ করতে হবে।’

এর আগে, ট্রাম্পের কৌঁসুলিরা আদালতে হাশ মানি মামলাটি বাতিলের আবেদন করেন। ট্রাম্পের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালে এই মামলাটি তাঁর শাসনকার্য পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করবে। তবে আবেদন খারিজ করে দেন মেরচান। তিনি লিখেন, ‘জুরির রায় বাতিল করা হলে তা আইনের শাসনকে অগণিত উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

এর আগে, গত ৩ ডিসেম্বর আদালতে ট্রাম্পের তরফ থেকে দাবি করা হয়, মামলাটি খারিজ করা উচিত। কারণ, এই শহর এবং জাতির প্রতি তাঁর নাগরিক ও আর্থিক অবদান অগণিত। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের সেবা স্বীকার করলেও বিচারক বলেন, বিচারব্যবস্থার প্রতি ট্রাম্পের প্রকাশ্য অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলেছে।

মেরচান বিচার প্রক্রিয়ার ওপর ট্রাম্পের ‘অবিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন আক্রমণের’ সমালোচনা করে বলেন, ‘ট্রাম্প আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করার জন্য ১০টি অবমাননার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।’ তিনি লিখেন, ‘আসামি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে বিচারক, জুরি, গ্র্যান্ড জুরি এবং পুরো বিচারব্যবস্থার প্রতি অসম্মান প্রদর্শনে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।’

এর আগে, ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পর্নো অভিনেত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে চুপ থাকার জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই মামলা শুরু হয়। এই অর্থ ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন দিয়েছিলেন। ড্যানিয়েলস দাবি করেন, এক দশক আগে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর যৌন সম্পর্ক ছিল। ট্রাম্প বিষয়টি অস্বীকার করেন।

চলতি বছরের ‘মে’তে ম্যানহাটানের এক আদালত ট্রাম্পকে ৩৪টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। অভিযোগ ছিল ব্যবসার রেকর্ড জালিয়াতির মাধ্যমে ওই অর্থ প্রদানের ঘটনা গোপন করার চেষ্টা। তবে ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এই মামলাকে ডেমোক্রেটিক প্রসিকিউটর আলভিন ব্র্যাগের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দেন। ট্রাম্পের দাবি, ব্র্যাগ তাঁর ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণা ক্ষতিগ্রস্ত করতেই এই মামলা করেছেন।

প্রথমে ট্রাম্পের সাজা ঘোষণার তারিখ ২০২৪ সালের ১১ জুলাই নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই তারিখ কয়েকবার পিছিয়ে যায়। আগস্টে ট্রাম্প নিজে অনুরোধ করেন যেন সাজা ঘোষণার তারিখ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে নির্ধারণ করা হয়। বিচারক হুয়ান মেরচান বৃহস্পতিবার বলেন, ট্রাম্পের সেই অনুরোধ বোঝায় যে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরকালের মধ্যেই সাজা ঘোষণার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছিলেন।

মেরচান আরও লেখেন, ‘নির্বাচনে বিজয়ের পর আসামি যে পরিস্থিতি বদলে গেছে বলে দাবি করছেন, তা সুবিধাজনক হলেও অসৎ।’

ব্র্যাগ সাজা ঘোষণার তারিখ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে পিছিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করেননি। সেপ্টেম্বর মাসে মেরচান সেই তারিখ পিছিয়ে ২৬ নভেম্বর নির্ধারণ করেন। ৫ নভেম্বর নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করার পর বিচারক অনির্দিষ্টকালের জন্য সাজা ঘোষণার তারিখ স্থগিত করেন।

ট্রাম্প ১৬ ডিসেম্বর এক আলাদা আবেদনে হাশ মানি মামলার দণ্ড বাতিল করানোর চেষ্টা করেন। এর আগে ১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্টদের দায়িত্বকালে কোনো সরকারি কার্যক্রম নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে না এবং এই ধরনের কার্যক্রমের তথ্য ব্যক্তিগত আচরণের মামলা নিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা যাবে না।

তবে মেরচান ট্রাম্পের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘ব্যক্তিগত কাজে ব্যবসার রেকর্ড জাল করার মামলাটি নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব ও কার্যক্রমে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ঘটায় না।’

ব্যবসার রেকর্ড জাল করার অভিযোগে সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে, তবে কারাবাস বাধ্যতামূলক নয়। নির্বাচনে বিজয়ের আগে আইনি বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, ট্রাম্পের পূর্ব অপরাধের রেকর্ড না থাকা এবং তাঁর বয়স বিবেচনায় তাঁকে কারাগারে পাঠানোর সম্ভাবনা কম।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে একটি ছিল ক্ষমতা ছাড়ার পর গোপন নথি সংরক্ষণ এবং বাকি দুটি ছিল ২০২০ সালের নির্বাচনী ফল পাল্টানোর চেষ্টার অভিযোগে। তিনটি মামলাতেই তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। নির্বাচনে জয়ের পর বিচার বিভাগ দুটি ফেডারেল মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়। তবে জর্জিয়ায় ২০২০ সালের নির্বাচনী ফল পাল্টানোর চেষ্টা-সংক্রান্ত মামলাটি স্থগিত অবস্থায় আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত