সূর্যের সবচেয়ে কাছে যাওয়ার রুদ্ধশ্বাস পথে এখন নাসার মহাকাশযান

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ১৪
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯: ২৫
নাসার মহাকাশযান ‘পার্কার সোলার প্রোব’। ছবি: নাসা

নাসার একটি মহাকাশযান এখন পর্যন্ত সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মঙ্গলবার বিবিসি জানিয়েছে, ‘পার্কার সোলার প্রোব’ নামের এই মহাকাশযানটি সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছে। এই মুহূর্তে এটি চরম তাপমাত্রা এবং তীব্র বিকিরণ সহ্য করছে।

সূর্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ এই প্রক্রিয়ার জন্য কয়েক দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে পার্কার। এটির কাছ থেকে আগামী ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৫টায় পরবর্তী সংকেত পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা অপেক্ষায় থাকবেন। সংকেত পাওয়া গেলে তাঁরা নিশ্চিত হবেন, তাপমাত্রা এবং বিকিরণ সহ্য করে এটি টিকে আছে কিনা।

এই মিশনটির মাধ্যমে সূর্যের কাজকর্ম সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

নাসার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. নিকোলা ফক্স বলেছেন, ‘শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ সূর্য নিয়ে গবেষণা করেছে। কিন্তু সরাসরি সেখানে না গেলে প্রকৃত পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের জানা সম্ভব হবে না।’

২০১৮ সালে পার্কার সোলার প্রোব মহাকাশে যাত্রা শুরু করেছিল। এটি ইতিমধ্যে সূর্যের চারপাশে ২১ বার প্রদক্ষিণ করেছে। তবে এবারের ‘ক্রিসমাস ইভ ফ্লাই-বাই’ একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে।

এবারের মিশনে মহাকাশযানটি সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩.৮ মিলিয়ন মাইল দূরে রয়েছে। নিকোলা ফক্স এই দূরত্বকে তুলনা করে বলেন, ‘পৃথিবী থেকে সূর্য ৯৩ মিলিয়ন মাইল দূরে। যদি সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব এক মিটার ধরা হয়, তবে পার্কার সোলার প্রোব সূর্য থেকে মাত্র চার সেন্টিমিটার দূরে রয়েছে।’

মহাকাশযানটি ১ হাজার ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং এমন বিকিরণ সহ্য করছে যা যেকোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারে। এটি একটি ১১.৫ সেন্টিমিটার পুরু কার্বন-কম্পোজিট ঢাল দিয়ে সুরক্ষিত। তবে এর প্রধান কৌশল হলো দ্রুত ঢুকে আবার বের হয়ে যাওয়া।

পার্কার মহাকাশযান মানুষের নির্মিত অন্য যে কোনো বস্তুর চেয়ে দ্রুতগতিতে চলছে। প্রতি ঘণ্টায় এটি ৪ লাখ ৩০ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিচ্ছে। এ হিসেবে লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত পৌঁছাতে এটির মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময় লাগবে।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, মহাকাশ যানটি সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল বা করোনা দিয়ে অতিক্রম করার সময় একটি দীর্ঘদিনের রহস্য সমাধান করতে পারবে।

ড. জেনিফার মিলার্ড বলেন, ‘করোনা খুব গরম, কিন্তু আমরা জানি না কেন। সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডলে থাকা করোনার এমনও কিছু অংশ রয়েছে, যেখানকার তাপমাত্রা মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই রহস্যটিও জানতে চান বিজ্ঞানীরা।

এ ছাড়া এই মিশন সৌর বায়ু সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা দিতে পারবে। এই কণা স্রোত পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে আকাশে ঝলমলে অরোরার সৃষ্টি করে। তবে এটি স্পেস ওয়েদার বা মহাকাশ আবহাওয়া ঘটিয়ে বিদ্যুৎ গ্রিড, ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি করতে পারে।

বড়দিনের সময় নাসার বিজ্ঞানীরা মহাকাশযানটির ভাগ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকবেন। মহাকাশযানটি যখন সংকেত পাঠাবে, তখন এই মিশনের সদস্যরা ড. নিকোলা ফক্সকে একটি সবুজ হৃদয়ের ইমোজি পাঠিয়ে জানাবেন, প্রোবটি ঠিক আছে।

ড. ফক্স বলেন, ‘আমি মহাকাশযানটি নিয়ে চিন্তিত থাকব। তবে আমরা এটিকে নির্মাণ করেছি এমন সব চরম পরিস্থিতি সহ্য করার জন্য। এটি খুবই শক্তপোক্ত একটি মহাকাশযান।’

মহাকাশ যানটি যদি এই চ্যালেঞ্জে টিকে যায়, তবে এটি ভবিষ্যতে সূর্যের চারপাশে আরও মিশন চালিয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত