নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে টিকবে না শিল্পকারখানা

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১০: ০০
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১০: ৩১

আজকের পত্রিকা: কারখানা ও ব্যক্তি পর্যায়ে নিরাপত্তা কেন প্রয়োজন? 
জাকির উদ্দিন: সেফটি ও সিকিউরিটি ছাড়া বিশ্বে কোনো স্থাপনা তৈরি হয় না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো খাত দাঁড়াতে পারে না। এটি ছাড়া জীবন ও সম্পদের হানি হয়। শুরুতে পদক্ষেপ নিলে ক্ষতিও ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসে। কমার্শিয়াল, রেসিডেন্সিয়াল বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল—সব স্থাপনায়ই নির্মাণের শুরু থেকে ভবন যত দিন থাকবে, তত দিন নিরাপত্তার কোনো না কোনো ‍দিক থাকতে হবেই।

আজকের পত্রিকা: বিভিন্ন খাতের নিরাপত্তাব্যবস্থা এখন কেমন? 
জাকির উদ্দিন: রানা প্লাজা ধসের পর ক্রেতা জোটের চাপে দেশের পোশাক কারখানার মালিকদের সেফটি-সিকিউরিটির আওতায় আসতে হয়েছে। কারণ, কমপ্লায়েন্সের অন্যতম শর্ত সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি। সেদিক থেকে পোশাক খাত একটা ভালো অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। অন্য সেক্টরের মধ্যে, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য শিল্প, চামড়া শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, কেমিক্যাল খাত কিন্তু অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কারণ, সরকার বা অন্য কোনো পক্ষ তাদের কোনো ধরনের চাপ দিচ্ছে না। গত বছর বিডা ও এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে একটা উচ্চপর্যায়ের কমিটি হয়েছে। কমিটি পোশাক কারখানার বাইরে ৫ হাজার শিল্পকারখানার অগ্রাধিকার তালিকা করেছে, যেগুলো আগে নিরাপত্তার আওতায় আনা প্রয়োজন।

আজকের পত্রিকা: দেশের সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি খাতের ভবিষ্যৎ কেমন? 
জাকির উদ্দিন: দেশে এ খাতের মাত্র শুরু। এর ভবিষ্যৎ অনেক ভালো। নিরাপত্তা নিশ্চিতে ক্ষতি অনেক কমে আসে। স্থাপনা নির্মাণের সময় ৫ শতাংশ নিরাপত্তার জন্যই বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। যত দিন শিল্পায়ন হবে, নগরায়ণ হবে, উন্নয়ন হবে, তত দিন নিরাপত্তা থাকবে। 

এ খাতে সারা দেশে ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি কাজ করছে। এ খাতের পণ্যগুলোর প্রায় ৯৫ শতাংশ আমদানিনির্ভর। তবে কিছু কিছু দেশি প্রতিষ্ঠান দু-একটি পণ্য দেশে উৎপাদন শুরু করেছে।

আজকের পত্রিকা: সিকিউরিটি খাতে কী কী পণ্য ব্যবহার হয়? 
জাকির উদ্দিন: এ খাতের প্রধান পণ্য অল্প কয়েকটি। তবে ছোট ছোট উপাদান হিসাব করলে হাজারের বেশি। যেমন—সিসি ক্যামেরা, এক্সেস কন্ট্রোল, ফায়ার হাইড্রেন্ট, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম, ফায়ার স্প্রিংকলার সিস্টেম, কার পার্কিং সিস্টেম, রিয়েল টাইম অ্যাটেন্ডেন্স, অটোমেটিক এক্সেস সিস্টেম, হাই ফ্লো এয়ার কম্প্রেসার, ফায়ার রেডেট ডোর—সব মিলিয়ে বলার মতো ২০টি পণ্য রয়েছে। এগুলো অনেক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। এসব পণ্য দেশে উৎপাদন করা গেলে খরচ অনেক কমে আসবে। মানুষের আরও নাগালে আসবে।

আজকের পত্রিকা: নিরাপত্তাসামগ্রীর নিরাপত্তা নিয়েও তো প্রশ্ন আছে... 
জাকির উদ্দিন: এটা সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিম্নমানের নিরাপত্তা যন্ত্রে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, আবার দুর্ঘটনায় কার্যকর সুরক্ষাও পাওয়া যায় না। নিম্নমানের পণ্যগুলো বেশির ভাগই নকল, দামেও কম। একই সঙ্গে টেকসই নয়। ছয় মাস-এক বছর পরই দাম শূন্যে নেমে আসে। আবার যে কাজের জন্য কেনা হয় সে কাজও ঠিকমতো করে না। ফলে নিরাপত্তা সামগ্রী নিরাপদ কি না, সেটাই আগে নিশ্চিত করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে মানসম্মত যন্ত্র নিশ্চিত করতে বিএসটিআইয়ের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নির্দিষ্ট মান নিয়ে কাজ করতে হবে। আমদানি পর্যায়র, বাজারজাতকরণ পর্যায়ে নজরদারি করতে হবে। অনেক সময় মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি হয়, যার বেশির ভাগই নিম্নমানের—এসব বিষয় দেখতে হবে। আমরাই একমাত্র সংগঠন (ইসাব), যারা আমদানি ও বাজারজাত পর্যায়ে পণ্যের মান নিশ্চিত করতে বিএসটিআইর সাহায্য চেয়েছে।

আজকের পত্রিকা: এ খাতে বিনিয়োগে বাধা কোথায়? 
জাকির উদ্দিন: নিরাপত্তা পণ্য সহজলভ্য করতে দেশে উৎপাদনের বিকল্প নেই। এ খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে। এর জন্য নীতিসহায়তা আরও বাড়াতে হবে, কিছু নীতির পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নিরাপত্তা সামগ্রীর অনেক চাহিদা রয়েছে। বিডায় বিনিয়োগকারীরা এখনো ওয়ান স্টপ সার্ভিস পায় না। কারখানা করতে ১৮টি লাইসেন্স প্রয়োজন। কোনো বিনিয়োগকারীকে সেগুলো নিতে যে জটিলতা পোহাতে হয়, তাতেই অনেকে পিছিয়ে যায়। এসব সহজ করতে হবে। আবার এসব পণ্যের স্থানীয় ও বিদেশি বাজার রয়েছে। কিন্তু বেপজায় কারখানা করলে দেশের বাজারে পণ্য বিক্রি করা যাবে না। এসব নিয়ে ভাবতে হবে। বিনিয়োগের নিরাপত্তা দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত