কোরআনের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ গ্রন্থ

Thumbnail image

পবিত্র কোরআনের পর ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মহানবী (সা.)-এর হাদিস। তাই প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে মহানবীর শাশ্বত বাণীসমূহ পৌঁছে দেওয়ার জন্য মুসলিম মনীষীরা অসংখ্য হাদিস গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলোর মধ্যে হিজরি তৃতীয় শতকের প্রথিতযশা হাদিসবিশারদ ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল বুখারি (রহ.) রচিত ‘সহিহ’ তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে মুসলমানদের কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। এখানে এই গ্রন্থের পরিচিতি, বৈশিষ্ট্য, রচনার পটভূমি ইত্যাদি সংক্ষেপে আলোকপাত করেছেন মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ

পরিচিতি
কিতাবটির পূর্ণ নাম আল-জামি আল-মুসনাদ আস-সহিহ আল-মুখতাসার মিন উমুরি রাসুলিল্লাহি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) ওয়া সুনানিনিহি ওয়া আইয়ামিহি। এর অর্থ হলো, রাসুল (সা.)-এর আদর্শ ও জীবনের সব দিক সম্পর্কে বর্ণিত বিশুদ্ধ সনদযুক্ত হাদিসসমূহের সংক্ষিপ্ত সংকলন। অধিকাংশ হাদিস গবেষকের মতে, এটিই প্রথম শতভাগ বিশুদ্ধ হাদিসের সংকলন। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের কাছে পবিত্র কোরআনের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য কিতাব এটিই। 

বৈশিষ্ট্য
হাদিস গবেষকগণ এই কিতাবের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। 

তাৎপর্যপূর্ণ শিরোনাম: ইমাম বুখারি (রহ.) বিষয়ভিত্তিক সূচিতে হাদিসগুলো সংকলন করেছেন এবং প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি গভীর অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ শিরোনাম লিখেছেন। 
সনদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা: আবুল ফজল আল-মাকদিসি বলেন, ‘সহিহুল বুখারিতে শুধু সেই সব হাদিস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যেগুলো প্রসিদ্ধ সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং সব স্তরের বর্ণনাকারীগণ রিজাল গবেষকদের সর্বসম্মতিক্রমে নির্ভরযোগ্য।’ ইবনে হাজার আসকালানি বলেন, ‘যে হাদিসের বর্ণনাকারীদের পারস্পরিক সাক্ষাৎ প্রমাণিত নয়, সমসাময়িক হওয়ার দরুন তাদের মধ্যে সাক্ষাতের সম্ভাবনা থাকলেও সহিহ আল-বুখারিতে সেই হাদিস অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। 

রচনার পটভূমি 
ইতিপূর্বে যত হাদিসের কিতাব রচিত হয়েছিল, তাতে বিশুদ্ধ হাদিসের পাশাপাশি কিছু দুর্বল ও বানোয়াট হাদিসও ছিল। তাই নিরেট বিশুদ্ধ হাদিসের একটা কিতাব রচনা করা সময়ের দাবি ছিল। ইমাম বুখারির শিক্ষক ইমাম ইসহাক বিন রাহওয়াইহ একদিন তাঁকে কাজটি করার পরামর্শ দিলেন। শিক্ষকের পরামর্শ ইমাম বুখারি গুরুত্বসহকারে নিয়ে সহিহ আল-বুখারি রচনার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তিনি স্বপ্নে দেখলেন, তিনি রাসুল (সা.)-এর পাশে দাঁড়িয়ে একটি পাখা দিয়ে তাঁর আশপাশ থেকে পোকামাকড় তাড়িয়ে দিচ্ছেন। স্বপ্ন ব্যাখ্যাকারেরা এর ব্যাখ্যায় বললেন, ‘আপনি রাসুলের নামে ছড়িয়ে পড়া মিথ্যাসমূহ বিতাড়িত করবেন। এতে তিনি সহিহ আল-বুখারি রচনা করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তাঁর কাছে থাকা প্রায় ৬ লাখ হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে কালজয়ী এই গ্রন্থ রচনা করেন।

এর জন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর তা সম্পন্ন হয়। প্রতিটি হাদিস লেখার আগে ইস্তেখারা করতেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। রচনা সম্পন্ন হওয়ার পর একাধিকবার সম্পাদনা করেছেন। এরপর তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাদিসবিশারদ ইমাম আলী ইবনুল মাদিনি, ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাইন ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর কাছে তা উপস্থাপন করেন। তাঁরা গভীরভাবে অধ্যয়নের পর এর ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বিশুদ্ধতার সাক্ষ্য দেন। 

হাদিসের সংখ্যা
ইমাম ইবনে সালাহ ও ইমাম নববি বলেন, সহিহুল বুখারিতে মোট হাদিস আছে ৭ হাজার ২৭৫টি। পুনরুক্তিকৃত হাদিস বাদ দিয়ে ধরলে ৪ হাজার। ইবনে হাজার আসকালানি বলেন, তালিকাত, মুতাবিআত, পুনরুক্তি—সব মিলিয়ে হাদিস আছে ৯ হাজার ৮২টি। পুনরুক্তি ও অন্যান্য অমৌলিক হাদিস না ধরলে এর সংখ্যা ২ হাজার ৬০২। 

মুদ্রণ
লেখকের জীবদ্দশায়ই কিতাবটি বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। বর্ণিত আছে, ৭০ হাজারের বেশি মানুষ সরাসরি তাঁর থেকে কিতাবটি শুনেছেন এবং অসংখ্য মানুষ তা লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করেছেন। তন্মধ্যে মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ আল ফেরেব্রির সূত্রে মারুজির বর্ণনায় লিখিত কপিটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যতা পায়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আধুনিক ছাপাখানা থেকে তা মুদ্রিত হয়।

সূত্র: ফাতহুল বারি, আল হাদিসু ওয়াল মুহাদ্দিসুন, তাদরিবুর রাবি, তাহজিবুত তাহজিব। 

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা: সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত