আবদুল আযীয কাসেমি
মুজাদ্দিদে আলফে সানি নামে পরিচিত শায়খ আহমদ সিরহিন্দি (রহ.) (১৫৬৪–১৬২৪) হলেন ইসলামের ইতিহাসে একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। মোগল আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামি পুনর্জাগরণের অন্যতম প্রধান নেতা। তাঁর উপাধি ‘মুজাদ্দিদে আলফে সানি’–এর অর্থ হলো ‘দ্বিতীয় সহস্রাব্দের পুনর্জাগরণকারী’। তিনি ইসলামের শিক্ষা ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব রেখেছেন।
বেড়ে ওঠা
শায়খ আহমদ সিরহিন্দি (রহ.) ১৫৬৪ সালে (হিজরি ৯৭১) ভারতের সিরহিন্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শায়খ আব্দুল আহাদ ছিলেন একজন বড় আলেম ও সুফিসাধক। শায়খ আহমদ সিরহিন্দি প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার থেকেই লাভ করেন এবং পরবর্তীতে ইসলামি জ্ঞান, ফিকহ, হাদিস, তাফসির এবং তাসাউফে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
আধ্যাত্মিকতা
আধ্যাত্মিক ধারায় আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে চারটি বিখ্যাত তরিকা রয়েছে। সোহরাওয়ার্দীয়া, কাদেরিয়া, নকশবন্দিয়া ও চিশতিয়া। তিনি নকশবন্দি তরিকার একজন বিশিষ্ট পীর শায়খ বাকি বিল্লাহ (রহ.)–এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। শায়খ আহমদ সিরহিন্দি নকশবন্দি তরিকার শিক্ষা ও আদর্শকে নতুনভাবে প্রাণবন্ত করেন এবং এর মাধ্যমে সমাজে সংস্কার আনার চেষ্টা করেন। তিনি ‘মুজাদ্দিদি’ তরিকা প্রতিষ্ঠা করেন, যা নকশবন্দি তরিকার একটি শাখা হিসেবে পরিচিত।
মুজাদ্দিদে আলফে সানি উপাধি
নবীজির ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতি শতাব্দীর শুরুতে আল্লাহ তাআলা একজন মুজাদ্দিদ (পুনর্জাগরণকারী বা সংস্কারক) প্রেরণ করেন, যিনি ইসলামের মূল শিক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। শায়খ আহমদ সিরহিন্দি দ্বিতীয় হিজরি সহস্রাব্দের (১০০০ হিজরি) মুজাদ্দিদ হিসেবে স্বীকৃত হন। তাঁর কাজ ছিল বিদআত ও নানা কুসংস্কার সমাজ থেকে মিটিয়ে দিয়ে সুন্নাহ তথা বিশুদ্ধ দীনচর্চা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। আজীবন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি এ গুরুদায়িত্ব পালন করেন। বিশুদ্ধ দীনের প্রতি আহ্বান জানাতে গিয়ে তিনি কারও পরোয়া করেননি। কোনো নিন্দুকের নিন্দার তোয়াক্কা করেননি। এমনকি প্রয়োজনে সময়ের সবচেয়ে বড় ক্ষমতাবান মানুষটির সামনেও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
সম্রাট আকবরের বিরোধিতা
দোর্দণ্ড প্রতাপশালী বিখ্যাত মোগল সম্রাট আকবর (১৫৪২–১৬০৫) তাঁর রাজত্বকালে ‘দীন-ই-ইলাহি’ নামে একটি নতুন ধর্মের প্রবর্তন করেন। এটি ছিল মূলত ইসলাম, ইহুদি, খ্রিষ্টান ও হিন্দু ধর্মের সমন্বয়ে একটি জগাখিচুড়ি দর্শন। যেখানে প্রবৃত্তির ওপর কোনো লাগাম ছিল না। আবার বিশেষ একটি ধর্মের প্রতি ছিল অন্যায় পক্ষপাত। বলাবাহুল্য, এটি ছিল ইসলামের সঙ্গে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ। শায়খ আহমদ সিরহিন্দি এ ধর্মদ্রোহিতার মোকাবিলায় কোমর বেঁধে মাঠে নামেন। নিজের আধ্যাত্মিক অবস্থান ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে এ ফিতনার মূলোৎপাটনে কাজ করতে থাকেন। অবশেষে তিনি সাফল্যের মুখ দেখেন। তাঁর প্রচেষ্টায় পরবর্তীতে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে ফলপ্রসূ হয়, যিনি ইসলামের প্রতি অধিক অনুরাগী ছিলেন।
রচনাবলী
শায়খ আহমদ সিরহিন্দির চিন্তাধারা ও শিক্ষা ‘মাকতুবাত-ই-ইমাম রব্বানি’ নামে চিঠির সংকলনে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এগুলো তৎকালীন সরকারি ভাষা হিসেবে ফারসি ভাষায় লেখা হয়। এ সংকলনটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। আজও আধ্যাত্মিক জগতের মানুষদের কাছে এ সংকলনটি বিপুলভাবে সমাদৃত। এই চিঠিগুলো তাঁর শিষ্যদের কাছে লেখা হয়েছিল এবং এগুলোতে ইসলামি আধ্যাত্মিকতা, ফিকহ, সমাজসংস্কার এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নের বিষয়ে গভীর আলোচনা রয়েছে। ‘মাকতুবাত-ই-ইমাম রব্বানি’ ইসলামি সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
শায়খ আহমদ সিরহিন্দি (রহ.) ১৬২৪ সালে (হিজরি ১০৩৪) মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মাজার ভারতের সিরহিন্দে অবস্থিত। তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ আজও মুসলিম বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। তাঁর সংস্কারমূলক প্রচেষ্টা এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষা মুসলিম উম্মাহর জন্য আজও অনুপ্রেরণাদায়ক।
মুজাদ্দিদে আলফে সানি নামে পরিচিত শায়খ আহমদ সিরহিন্দি (রহ.) (১৫৬৪–১৬২৪) হলেন ইসলামের ইতিহাসে একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। মোগল আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামি পুনর্জাগরণের অন্যতম প্রধান নেতা। তাঁর উপাধি ‘মুজাদ্দিদে আলফে সানি’–এর অর্থ হলো ‘দ্বিতীয় সহস্রাব্দের পুনর্জাগরণকারী’। তিনি ইসলামের শিক্ষা ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব রেখেছেন।
বেড়ে ওঠা
শায়খ আহমদ সিরহিন্দি (রহ.) ১৫৬৪ সালে (হিজরি ৯৭১) ভারতের সিরহিন্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শায়খ আব্দুল আহাদ ছিলেন একজন বড় আলেম ও সুফিসাধক। শায়খ আহমদ সিরহিন্দি প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার থেকেই লাভ করেন এবং পরবর্তীতে ইসলামি জ্ঞান, ফিকহ, হাদিস, তাফসির এবং তাসাউফে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
আধ্যাত্মিকতা
আধ্যাত্মিক ধারায় আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে চারটি বিখ্যাত তরিকা রয়েছে। সোহরাওয়ার্দীয়া, কাদেরিয়া, নকশবন্দিয়া ও চিশতিয়া। তিনি নকশবন্দি তরিকার একজন বিশিষ্ট পীর শায়খ বাকি বিল্লাহ (রহ.)–এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। শায়খ আহমদ সিরহিন্দি নকশবন্দি তরিকার শিক্ষা ও আদর্শকে নতুনভাবে প্রাণবন্ত করেন এবং এর মাধ্যমে সমাজে সংস্কার আনার চেষ্টা করেন। তিনি ‘মুজাদ্দিদি’ তরিকা প্রতিষ্ঠা করেন, যা নকশবন্দি তরিকার একটি শাখা হিসেবে পরিচিত।
মুজাদ্দিদে আলফে সানি উপাধি
নবীজির ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতি শতাব্দীর শুরুতে আল্লাহ তাআলা একজন মুজাদ্দিদ (পুনর্জাগরণকারী বা সংস্কারক) প্রেরণ করেন, যিনি ইসলামের মূল শিক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। শায়খ আহমদ সিরহিন্দি দ্বিতীয় হিজরি সহস্রাব্দের (১০০০ হিজরি) মুজাদ্দিদ হিসেবে স্বীকৃত হন। তাঁর কাজ ছিল বিদআত ও নানা কুসংস্কার সমাজ থেকে মিটিয়ে দিয়ে সুন্নাহ তথা বিশুদ্ধ দীনচর্চা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। আজীবন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি এ গুরুদায়িত্ব পালন করেন। বিশুদ্ধ দীনের প্রতি আহ্বান জানাতে গিয়ে তিনি কারও পরোয়া করেননি। কোনো নিন্দুকের নিন্দার তোয়াক্কা করেননি। এমনকি প্রয়োজনে সময়ের সবচেয়ে বড় ক্ষমতাবান মানুষটির সামনেও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
সম্রাট আকবরের বিরোধিতা
দোর্দণ্ড প্রতাপশালী বিখ্যাত মোগল সম্রাট আকবর (১৫৪২–১৬০৫) তাঁর রাজত্বকালে ‘দীন-ই-ইলাহি’ নামে একটি নতুন ধর্মের প্রবর্তন করেন। এটি ছিল মূলত ইসলাম, ইহুদি, খ্রিষ্টান ও হিন্দু ধর্মের সমন্বয়ে একটি জগাখিচুড়ি দর্শন। যেখানে প্রবৃত্তির ওপর কোনো লাগাম ছিল না। আবার বিশেষ একটি ধর্মের প্রতি ছিল অন্যায় পক্ষপাত। বলাবাহুল্য, এটি ছিল ইসলামের সঙ্গে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ। শায়খ আহমদ সিরহিন্দি এ ধর্মদ্রোহিতার মোকাবিলায় কোমর বেঁধে মাঠে নামেন। নিজের আধ্যাত্মিক অবস্থান ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে এ ফিতনার মূলোৎপাটনে কাজ করতে থাকেন। অবশেষে তিনি সাফল্যের মুখ দেখেন। তাঁর প্রচেষ্টায় পরবর্তীতে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে ফলপ্রসূ হয়, যিনি ইসলামের প্রতি অধিক অনুরাগী ছিলেন।
রচনাবলী
শায়খ আহমদ সিরহিন্দির চিন্তাধারা ও শিক্ষা ‘মাকতুবাত-ই-ইমাম রব্বানি’ নামে চিঠির সংকলনে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এগুলো তৎকালীন সরকারি ভাষা হিসেবে ফারসি ভাষায় লেখা হয়। এ সংকলনটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। আজও আধ্যাত্মিক জগতের মানুষদের কাছে এ সংকলনটি বিপুলভাবে সমাদৃত। এই চিঠিগুলো তাঁর শিষ্যদের কাছে লেখা হয়েছিল এবং এগুলোতে ইসলামি আধ্যাত্মিকতা, ফিকহ, সমাজসংস্কার এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নের বিষয়ে গভীর আলোচনা রয়েছে। ‘মাকতুবাত-ই-ইমাম রব্বানি’ ইসলামি সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
শায়খ আহমদ সিরহিন্দি (রহ.) ১৬২৪ সালে (হিজরি ১০৩৪) মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মাজার ভারতের সিরহিন্দে অবস্থিত। তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ আজও মুসলিম বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। তাঁর সংস্কারমূলক প্রচেষ্টা এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষা মুসলিম উম্মাহর জন্য আজও অনুপ্রেরণাদায়ক।
শরিয়ত-সমর্থিত কোনো অপারগতা ছাড়া রমজান মাসে রোজা না রাখলে বা ভেঙে ফেললে কাজা ও কাফফারা উভয়টিই আদায় করতে হয়। কাজা মানে বকেয়া। আর কাফফারা মানে জরিমানা।
১৩ ঘণ্টা আগেস্বাস্থ্য আল্লাহর অপার অনুগ্রহ। সুস্থ থাকতে শরীর ও স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হয়। নবী করিম (সা.) অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন ছিলেন। তিনি নিজে স্বাস্থ্যের যত্ন নিতেন এবং সাহাবাদেরও এতে উৎসাহিত করতেন। এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে।’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৭০৩)
২ দিন আগেপবিত্র রমজানে শরিয়ত-সমর্থিত অপারগতার কারণে রোজা ভাঙা বা না রাখার বিধান রয়েছে। শরিয়ত-সমর্থিত অপারগতা হলো, নারীদের ঋতুস্রাব ও প্রসব-পরবর্তী স্রাবকাল, সফর, রোজার কারণে প্রাণনাশের আশঙ্কা, গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির ভয়, বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা ইত্যাদি।
২ দিন আগেসদ্য বিদায় নিল মাহে রমজান। সিয়াম সাধনার এই মাস শেষে এখন চলছে শাওয়াল মাস। এ মাসের বিশেষ কিছু আমল রয়েছে—এর মধ্যে অন্যতম ছয়টি নফল রোজা। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, এই রোজাগুলো রাখলে মিলবে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব। নবী করিম (সা.) নিজে এই রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদেরও নির্দেশ দিতেন।
৪ দিন আগে