নবীজির শৈশবের দিনগুলো

হাবিব মুহাম্মাদ
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ২০: ০৭
Thumbnail image

সেকালে আরব জাতি ছিল অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। বংশ মর্যাদা, বীরত্ব, বদান্যতা, অতিথিসেবা, আত্মমর্যাদা এবং অবিশ্বাস্য রকমের স্মৃতিশক্তি ও ভাষা সৌন্দর্য ছিল তাঁদের অন্যতম গুণ। আরবের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত পরিবার কোরাইশের হাশেমি বংশ। সেই বংশে আবদুল্লাহ ও আমিনার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন প্রিয় নবী (সা.)। সেটি ছিল আবরাহার হাতিবাহিনী ধ্বংসের বছর। 

মক্কার সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও অন্যদের তুলনায় নবীজির শৈশব ছিল দুঃখে ভরা। জন্মের আগেই বাবা আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। ব্যবসায়িক কাজে সিরিয়ায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে মদিনায় শ্বশুরবাড়িতে কিছুদিন অবস্থান করার পর ইন্তেকাল করেন আব্দুল্লাহ। জন্মের ৬ বছরের মাথায় মা আমিনাও ইন্তেকাল করেন। বাবার কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে একদিন আমেনা নবীজিকে সঙ্গে করে মদিনায় যান। সেখান থেকে ফেরার পথে আবওয়া নামক স্থানে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই ইন্তেকাল করেন। অবুঝ বয়সেই নবীজি মা–বাবা হারিয়ে এতিম হয়ে পড়েন। 

আরবের প্রথা অনুযায়ী নবীজির জন্মের সপ্তম দিনে দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁর খতনা করেন। নাম রাখেন মুহাম্মদ। ভোজের আয়োজন করেন। প্রথম কয়দিন মা আমিনা তাঁকে দুধ পান করান। তখন আরবে নিয়ম ছিল শিশুদের সুস্বাস্থ্য, মজবুত দৈহিক গঠন ও বিশুদ্ধ ভাষা শেখার উদ্দেশ্যে শহরের বাইরে গ্রামে দুধ মায়েদের কাছে শিশু লালনপালনের জন্য দেওয়া হতো। বনু সাআদ গোত্রের সম্ভ্রান্ত নারী হালিমা সাদিয়া নবীজিকে দুধপানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 

শৈশব থেকেই নবীজি ছিলেন বরকতের উৎস। মা হালিমা সাদিয়া বলেন, ‘যে বাহনে করে শিশু মুহাম্মদকে গ্রহণ করতে এসেছিলাম, তা ছিল অতি দুর্বল ও ধীরগতির একটি মাদি গাধা। তখন আমার স্তনে দুধ ছিল না। আমাদের বৃদ্ধ উটের ওলানেও দুধ ছিল না। কিন্তু আমি তাকে কোলে নেওয়ার পরই আমার স্তন দুধে পূর্ণ হয়ে যায়। আমার বৃদ্ধ উটের ওলানও দুধে পূর্ণ দেখা যায়। এরপর আমরা বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলে আমাদের সেই দুর্বল গাধাটি দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকে এবং সবাইকে পেছনে ফেলে দেয়। বছরটি ছিল দুর্ভিক্ষের। বনু সাআদের ভূমি ছিল অনুর্বর। তবু আমাদের গবাদিপশুগুলো সন্ধ্যায় ভরা পেটে এবং ভরা ওলানে ফিরত। অথচ অন্যদের পশুগুলো ফিরত শূন্য ওলানে ক্ষুধার্ত অবস্থায়।’ 

মা আমিনার ইন্তেকালের পর দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁকে লালনপালন করেন। সব সময় তিনি শিশু মুহাম্মদকে নিজের কাছে রাখতেন। আপন সন্তানের চেয়েও তাঁকে বেশি যত্ন করতেন। আট বছর বয়সে নবীজির দাদা আবদুল মুত্তালিব ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের আগে দাদা আবদুল মুত্তালিব শিশু মুহাম্মদের কথা ভুলে যাননি। নবীজির চাচা আবু তালিবকে তাঁর লালনপালনের অসিয়ত করে যান। এরপর থেকে আবু তালিব নবীজির লালন–পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁকে নিজের সন্তানের মতো দেখাশোনা করতে থাকেন। তিনিই দীর্ঘ সময় রাসুলের ছায়া হয়ে ছিলেন। 

আবু তালিবের পরিবারে অভাব–অনটন ছিল। তবে শিশু মুহাম্মদ আসার পর তাঁরা এক অলৌকিক বরকত দেখতে পান। এতদিন তৃপ্তিসহকারে খাবার খেতে পারতেন না। তিনি আসার পর তৃপ্তিসহকারে খাবার খেতে পারছেন। এ জন্য আবু তালিব তাঁকে ছাড়া খাবার খেতে বসতেন না। এভাবে তিনি আবু তালিবের প্রতিপালনে কৈশোর ও যৌবনে পদার্পণ করেন। 

নবীজি শৈশব থেকেই পরিপাটি, সুশৃঙ্খল, শান্ত, লাজুক, সুবোধ, চিন্তাশীল, সত্যবাদী ও দয়ালু ছিলেন। খেলাধুলা ও অনর্থক কাজের প্রতি অনাগ্রহী ছিলেন। মূর্তিপূজা, শিরক ও কুসংস্কারের প্রতি তাঁর অনীহা ছিল। শৈশবেই তাঁর মধ্যে নবী হওয়ার আলামত প্রকাশ পেয়েছিল। তাই সবাই বলত, সে এক অসাধারণ শিশু এবং ভবিষ্যতে সে বড় মানুষ হবে। 

লেখক: মাদ্রাসাশিক্ষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত