বিসিএস খাদ্য ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৪, ০৭: ৪০

বিসিএস চাকরিপ্রার্থীদের অনেকে খাদ্য ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত হয়তো জানেন না। খাদ্য ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা, অসুবিধা ও প্রমোশন নিয়ে ৪০তম বিসিএস খাদ্য ক্যাডারে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী অনিক পালের (অন্তু) কাছ থেকে বিস্তারিত শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

বর্তমানে বিসিএস খাদ্য ক্যাডারে দুই রকম ক্যাডার রয়েছে। বিসিএস খাদ্য (জেনারেল) ও বিসিএস খাদ্য (টেকনিক্যাল)। 

বিসিএস খাদ্য (জেনারেল) 
পদায়ন: বিসিএস খাদ্য (জেনারেল) ক্যাডারে নির্বাচিত হলে আপনাকে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে যোগদান করতে হবে। সেখান থেকে আপনাকে খাদ্য অধিদপ্তরে ন্যস্ত করা হবে। খাদ্য অধিদপ্তর থেকে যেকোনো জেলায় পোস্টিং দেওয়া হবে। একজন সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাধারণত ‘এ’ গ্রেডে পোস্টিং পেয়ে থাকেন। 

পদক্রম

  • মাঠপর্যায়: Assistant Controller of Food (AC Food) > District Controller of Food (DC Food) > Regional Controller of Food Director > Additional Director General > Director General.
  • খাদ্য ভবন: Assistant Director > Deputy Director > Additional Director > Director > Additional Director General > Director General

দায়িত্ব
একজন এসি ফুড বা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রকের মূল কাজ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা ডিসি ফুডকে সহায়তা করা। খাদ্য অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন ধান, চাল, গম ইত্যাদি সংগ্রহ করে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজার স্থিতিশীল রাখা, বিদেশ থেকে নানা ধরনের খাদ্য আমদানি করা, সরকারি খাদ্যগুদাম নির্মাণ ও মজুত রাখা, ওএমএস, টিসিবি, ভিজিএফ, ভিজিডি, কাবিখা, টিআর, ভিআর, রেশনিং ইত্যাদি খাতে সুলভ মূল্যে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিক্রি, খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখাসহ আরও অনেক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এসি ফুড মূলত ডিসি ফুডকে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সাহায্য করেন। 

সুবিধা-অসুবিধা
খাদ্য ভবনে পোস্টিং হলে যাতায়াতের জন্য মাইক্রোবাসের সুবিধা পাবেন। জেলা পর্যায়ে পোস্টিং হলে এক-দেড় বছরের মধ্যে সাধারণত কোনো জেলার ডিসি ফুডের (গ্রেড ৬) চলতি দায়িত্ব পেয়ে যাবেন। কাজের প্রেশার এখানে মোটামুটি, ছুটিছাটা পাবেন ভালো। তখন ব্যক্তিগত গাড়ি সুবিধা পাবেন। যেসব জেলায় বাংলো আছে, সেখানে পোস্টিং পেলে বাংলোর সুবিধাও পাবেন। পদোন্নতি ভালো। গ্রেড ৩ বা ২ পর্যন্ত অনায়াসে যাওয়া যায়। ক্যারিয়ারের শীর্ষে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, যা একটি গ্রেড ১ পদে যাওয়ার সুযোগও আছে। ঝামেলাহীন জীবন, নিয়মিত প্রমোশন, ভালো লজিস্টিক সাপোর্ট পেতে চাইলে খুব পছন্দের দু-তিনটি ক্যাডারের পরে চোখ বন্ধ করে এই ক্যাডার আপনার চয়েজ লিস্টে রাখতে পারেন। 

শিক্ষাগত যোগ্যতা
কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ বছর মেয়াদি যেকোনো বিষয়ে ডিগ্রি। 

প্রশিক্ষণ
যোগদানের পর খাদ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকে অন্য ক্যাডারদের সঙ্গে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর খাদ্য অধিদপ্তর থেকে ক্যাডারদের বিভাগীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। চাকরিকালে একজন কর্মকর্তা দেশের ভেতরে ও বাইরে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া সরকারি বৃত্তি নিয়ে দেশ-বিদেশে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করার সুযোগও আছে। 

বেতন ও ভাতা
জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুসারে সব ক্যাডারের কর্মকর্তা ৯ম গ্রেডে ২২,০০০ টাকা মূল বেতনে চাকরিজীবন শুরু করে থাকেন। যোগদানের সময় একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর মূল বেতন হয় ২৩,১০০ টাকা। এ ছাড়া মূল বেতনের নির্দিষ্ট হারে বাড়িভাড়া (জেলা শহরে ৪০ শতাংশ, অন্য বিভাগে ৪৫ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৫০ শতাংশ), ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, সন্তানের জন্য শিক্ষা সহায়ক ভাতা, ঈদ/পূজায় উৎসব ভাতা, বৈশাখে নববর্ষ ভাতা, সরকারি দায়িত্ব ও যাতায়াতের জন্য টিএ/ডিএ ভাতাসহ সরকারি সব আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। 

বিসিএস খাদ্য (টেকনিক্যাল)
পদায়ন: বিসিএস খাদ্য (টেকনিক্যাল) ক্যাডারে আপনাকে সহকারী রক্ষণ প্রকৌশলী বা অ্যাসিস্ট্যান্ট মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে যোগদান করতে হবে। সেখান থেকে আপনাকে খাদ্য অধিদপ্তরে ন্যস্ত করা হবে। খাদ্য অধিদপ্তর থেকে সাইলোতে বা খাদ্য ভবনে পদায়ন করা হবে। 

পদক্রম

  • সাইলো: Assistant Maintenance Engineer > Maintenance Engineer > Silo Superintendent > Director > Additional Director General > Director General
  • খাদ্য ভবন: Assistant Director > Deputy Director > Additional Director > Director > Additional Director General > Director General. 

দায়িত্ব
সহকারী রক্ষণ প্রকৌশলী বা অ্যাসিস্ট্যান্ট মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মূলত সরকারি গম সংরক্ষণাগার বা সাইলোতে কাজ করেন। সাইলোর প্রয়োজনীয় যান্ত্রিক কার্যাবলি সম্পাদন করেন, সাইলোর যন্ত্রাংশে কোনো ধরনের সমস্যা হলে তা সমাধান করেন। আর যদি খাদ্য ভবনে পদায়ন হয়, তাহলে খাদ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেন। 

সুবিধা-অসুবিধা
খাদ্য ভবনে পোস্টিং হলে যাতায়াতের জন্য মাইক্রোবাসের সুবিধা পাবেন। সাইলোতে পদায়ন হলে আবাসন সুবিধা পাবেন, তবে গাড়ি সুবিধা পাবেন না। সাইলো সুপার হলে গাড়ি পাওয়া যায়। কাজের প্রেশার এখানে মোটামুটি, ছুটিছাটা পাবেন ভালো। পদোন্নতি মোটামুটি ভালো। সাধারণত গ্রেড ৩ পর্যন্ত অনায়াসে যাওয়া যায়। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড ১) এ যাওয়ার সুযোগও আছে। সাইলো এবং খাদ্য অধিদপ্তরের বাইরে সাধারণত পদায়ন হয় না বিধায় নিজ এলাকায় থাকার সুযোগ কম। 

শিক্ষাগত যোগ্যতা
কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে যন্ত্রকৌশলে বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। 

প্রশিক্ষণ
যোগদানের পর খাদ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকে অন্য ক্যাডারদের সঙ্গে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর খাদ্য অধিদপ্তর থেকে ক্যাডারদের বিভাগীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। চাকরিকালে একজন কর্মকর্তা দেশের ভেতরে ও বাইরে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া সরকারি বৃত্তি নিয়ে দেশ-বিদেশে মাস্টার্স এবং পিএইচডি করার সুযোগও আছে। 

বেতন ও ভাতা
যোগদানের সময় ২২,০০০ টাকা মূল বেতনের সঙ্গে দুটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট যোগ হওয়ার ফলে মূল বেতন হয় ২৪,২৬০ টাকা। মূল বেতনের সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে বাড়িভাড়া (জেলা শহরে ৪০ শতাংশ, অন্যান্য বিভাগে ৪৫ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৫০ শতাংশ), ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, সন্তানের জন্য শিক্ষা সহায়ক ভাতা, ঈদ/পূজায় উৎসব ভাতা, বৈশাখে নববর্ষ ভাতা, সরকারি দায়িত্ব ও যাতায়াতের জন্য টিএ/ডিএ ভাতাসহ সরকারি সব আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত