যেমন হবে বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮: ২২
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮: ২৭

চলতি মাসেই ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন। প্রিলিমিনারি হচ্ছে মূলত বিসিএস পরীক্ষার প্রথম ধাপ। সেই প্রথম ধাপের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ আসে। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষার্থীদের প্রিলিমিনারি তথা বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করার পরামর্শ দিচ্ছেন ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. বেলায়েত হোসেন।

বিসিএস পরীক্ষার মান বণ্টন:

  • বাংলা ভাষা ও সাহিত্য:    ৩৫ নম্বর
  • ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য:    ৩৫ নম্বর
  • বাংলাদেশ বিষয়াবলি:    ৩০ নম্বর
  • আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি:    ২০ নম্বর
  • ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা:    ১০ নম্বর
  • সাধারণ বিজ্ঞান:    ১৫ নম্বর
  • কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি:     ১৫ নম্বর
  • গাণিতিক যুক্তি:     ১৫ নম্বর
  • মানসিক দক্ষতা:     ১৫ নম্বর
  • নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন:     ১০ নম্বর
  • মোট:    ২০০ নম্বর

বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ
বাংলা: গত বিসিএসের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাহিত্য অংশে গতানুগতিক প্রশ্ন কম হচ্ছে। তাই প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কেবল সাহিত্যকর্ম পড়লেই হবে না। সাহিত্যকর্মের চরিত্র ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে হবে। বাংলা সাহিত্যে প্রস্তুতির জন্য অগ্রদূত এবং সৌমিত্র শেখর স্যারের ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা’ বই দেখা যেতে পারে। ব্যাকরণের জন্য বিগত বছরের প্রশ্ন ভালোভাবে সমাধান করতে হবে। তা ছাড়া পুরোনো ভার্সনের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ এবং ড. হায়াৎ মামুদের ভাষা শিক্ষা বই থেকে সিলেবাসের সঙ্গে মিলিয়ে পড়া ভালো।

ইংরেজি: ইংরেজি গ্রামারের জন্য বিগত প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ বিশ্লেষণ করে পড়তে হবে। গ্রামার ও ভোকাবুলারি অংশের অনুশীলনের জন্য মাস্টার বই অনুসরণ করা যেতে পারে। ইংরেজি সাহিত্যের জন্য ‘A hand book on English literature’ বইটি সহায়ক, আর ভোকাবুলারির জন্য Saifur’s vocabulary এবং T.J. Fitikides-এর Common Mistake in English বই পড়া যেতে পারে।

গণিত: গণিতে ভালো নম্বর পেতে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বুঝে বুঝে সমাধান করতে হবে। খাইরুল’স বেসিক ম্যাথ থেকে অনুশীলন করা বেশ সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি সিলেবাস অনুযায়ী নবম-দশম শ্রেণির ‘সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত’ বইটি অনুসরণ করলেই হবে। 

মানসিক দক্ষতা: এই অংশের অনুশীলনের জন্য ‘IQ Doctor’ বইটি অনুসরণ করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি: এই অংশে বিগত সালের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করে পড়তে হবে। মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান এবং বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে। এই অংশে ভালো করার জন্য Basic view এবং সাম্প্রতিক অংশে ভালো করার জন্য Recent view বইটি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আব্দুল হাই স্যারের বাংলাদেশ স্টাডিজ বই অনুসরণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়া ভালো। 

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: জাতিসংঘ, পরিবেশ ইস্যু, সংস্থা, স্নায়ুযুদ্ধ, ভূরাজনীতি ও সাম্প্রতিক অংশ গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। এই অংশে ভালো করার জন্য Basic view অথবা mp3 বইটি অনুসরণ করা যেতে পারে। তা ছাড়া নিয়মিত পত্রিকা পড়া ও বিস্তারিত তথ্যের জন্য শাহ মো. আব্দুল হাই স্যারের ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সংগঠন ও পররাষ্ট্রনীতি’ বই অনুসরণের মধ্য দিয়ে বেশ ভালো নম্বর পাওয়া যেতে পারে।

মো. বেলায়েত হোসেন।নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন: অনেকেই মনে করে যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশে নম্বর তোলা যায় না। এটি ভুল ধারণা। শুধু বিগত প্রশ্ন পড়লেও এই অংশ থেকে তিন-চার নম্বর কমন পাওয়া যায়। এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বিগত বছরের প্রশ্ন ভালোভাবে অনুশীলনের পাশাপাশি Basic view বইটি সহায়ক হতে পারে। 

ভূগোল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: এই অংশে ভালো করতে হলে নবম-দশম শ্রেণির ভূগোল বইয়ের পাশাপাশি mp3 বা Basic view বইটি পড়া যেতে পারে।
সাধারণ বিজ্ঞান: তরঙ্গ ও শব্দ, স্থির এবং চল তড়িৎ, ইলেকট্রনিকস, শক্তির উৎস এবং এর প্রয়োগ, খাদ্য ও পুষ্টি, রক্ত ও রক্ত সঞ্চালন, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, সংক্রামক রোগ এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান—এই বিষয়গুলো থেকে প্রতিবারই কোনো না কোনো প্রশ্ন আসছে, তাই গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। তা ছাড়া সিলেবাসের বিষয় অনুযায়ী নবম-দশম শ্রেণির জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান বই থেকে নোট করে পড়া উচিত, পাশাপাশি সহায়ক বই হিসেবে mp3 ভালো। 

কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি: এই অংশে ভালো করার জন্য ‘Alal’s Computer Hour’ বইটি বেশ সহায়ক।

সাধারণ পরামর্শ

  • বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় কনফিউজিং বা গোলমেলে প্রশ্নগুলো প্রার্থীদের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়। এই পার্থক্য দূর করতে বারবার রিভিশনের 
    বিকল্প নেই। কেউ যদি দিনে আট ঘণ্টা পড়ালেখা করেন, তবে সেই শিক্ষার্থীর অন্তত দুই ঘণ্টা রিভিশনের জন্য রাখা উচিত। 
  • প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি নেওয়ার সময় যে বিষয়গুলো বিসিএস লিখিত অংশের সঙ্গে মিল আছে, সেই বিষয়গুলো নোট করে পড়া উচিত। এর মধ্য দিয়ে লিখিত প্রস্তুতি সহজ হয়ে ওঠে। 
  • নিজের দুর্বলতা মোকাবিলার জন্য কৌশল অবলম্বন করে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত