১৯৬৭-৬৮ সালের দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর আব্দুল লতিফ ভূঁইয়ার হাত ধরে জন্ম ডিপার্টমেন্ট অব মেরিন বায়োলজি অ্যান্ড ওশানোগ্রাফির। সেই থেকে এই ইনস্টিটিউটের পথচলা। পরে এটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ হিসেবে পরিচিত হয়। এই ইনস্টিটিউটের অধীনে মেরিন সায়েন্স, ফিশারিজ ও ওশানোগ্রাফি—এই তিনটি বিভাগ রয়েছে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি দেশের প্রথম পাবলিক মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে।
ভর্তির যোগ্যতা
ওশানোগ্রাফি স্নাতক প্রোগ্রামে আবেদন ও ভর্তি পরীক্ষার ন্যূনতম যোগ্যতা হলো এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পর্যায়ের পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ এর মধ্যে উভয় ক্ষেত্রে ৪ পেতে হবে (অন্যান্য নিয়ম এবং প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ সাপেক্ষে)।
যেখানে পড়ানো হয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এ ছাড়া পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি ইন মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি নামে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। ওশানোগ্রাফি ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক আর্থ অ্যান্ড ওশান সায়েন্স অনুষদের অধীনে মেরিন ফিশারিজ, ফিশারিজ, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সসহ অনেক প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়।
পঠন-পাঠন
ওশানোগ্রাফি প্রোগ্রামের অধীনে মূলত বায়োলজিক্যাল, ফিজিক্যাল, কেমিক্যাল ও জিওলজিক্যাল ওশানোগ্রাফির বিষয়সমূহ পড়ানো হয়। বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফিতে ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক প্ল্যাঙ্কটন থেকে শুরু করে তিমির মতো বৃহৎ ম্যামালস এবং অন্যান্য বায়োলজিক্যাল অর্গানিজমস, জীবনচক্র, বিচরণক্ষেত্র, ইকোসিস্টেম ও সামুদ্রিক বায়োলজিক্যাল রিসোর্স আহরণ এবং এদের সাসটেইনেবল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ানো হয়। ফিজিক্যাল ওশানোগ্রাফিতে সমুদ্রের ফিজিক্যাল প্রসেস, ওশান সার্কুলেশন অ্যান্ড ক্লাইমেট এবং তার সঙ্গে বায়োলজিক্যাল অর্গানিজমসের প্রভাব এবং ওশান কেমিক্যাল প্রসেসের প্রভাব বিষয়ে পড়ানো হয়। কেমিক্যাল ওশানোগ্রাফিতে ওশান কেমিস্ট্রি যেমন স্যালিনিটি, মেজর এবং মাইনর এলিমেন্টস, পিএইচ, নিউট্রিয়েন্টসের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। জিওলজিক্যাল ওশানোগ্রাফির মধ্যে আর্থ অ্যান্ড ওশান ফরমেশন, সেডিমেন্টস, ওশান ফ্লোর এক্সপ্লোরেশন এবং ওশান মাউন্টেইন, ভ্যালে, ক্যানিয়নের মতো অন্যান্য জিওলজিক্যাল ফিচার রয়েছে। এই বিষয়গুলো সামগ্রিক ধারণামাত্র। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয় বিস্তৃত পরিসরে পড়ানো হয়।
গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা
পৃথিবীর ৭১ শতাংশ সমুদ্রের অংশ, বাকি ২৯ শতাংশ স্থলভাগ। এই ৭১ শতাংশ সমুদ্রের সামগ্রিক বিষয়সমূহের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ শতাংশ অন্বেষণ করা হয়েছে (মতভেদে পার্থক্য রয়েছে), বাকি ৯৫ শতাংশ আমাদের অজানা। বাংলাদেশের নিজস্ব সমুদ্রসীমা বে অব বেঙ্গল তথা উত্তর ভারত মহাসাগরের অংশ। বাংলাদেশের পূর্ববর্তী সমুদ্রসীমার সঙ্গে ১৪ মার্চ ২০১২ সালে ইটলস ‘ITLOS’-ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দি ল অব দ্য সি-তে মিয়ানমারের সঙ্গে ও ৭ জুলাই ২০১৪ সালে ‘PCA’-পারমানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন, হেগ, নেদারল্যান্ডসে ভারতের সঙ্গে বে অব বেঙ্গলে নতুন সমুদ্রসীমা অর্জন করে এবং সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের সমুদ্রের অংশ এখন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। উক্ত সমুদ্রসীমায় মোটাদাগের তেমন কোনো গবেষণা জরিপ না হওয়ায় কোন প্রজাতির কী পরিমাণ আহরণযোগ্য বায়োলজিক্যাল এবং নন-বায়োলজিক্যাল সম্পদ রয়েছে, এ তথ্যগুলো অজানা। কাজেই এটা স্পষ্টত যে আমাদের সমুদ্রসীমায় গবেষণার বিকল্প নেই এবং এই গবেষণাকে ত্বরান্বিত করতে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন। সমুদ্র গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, চীন, জাপান ছাড়াও পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। তবে আমাদের নিশ্চয় ডেভেলপমেন্ট বা উন্নয়নের কিছু ‘গ্রে এরিয়া’ রয়েছে। যেমন উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আমাদের দেশের সঙ্গে বাইরের দেশের কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। সমুদ্র গবেষণায় প্রথমেই আসে ‘রিসার্চ ভেসেল’ বিষয়টি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সমুদ্র গবেষণায় অত্যাধুনিক রিসার্চ ভেসেল ব্যবহার করছে, তবে আমাদের একটিও অত্যাধুনিক ‘রিসার্চ ভেসেল’ নেই; যেটা কিনা পুরো বছর ধরে সমুদ্রে গবেষণা করতে সক্ষম হবে, অথচ মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র বিজয়ের ১২ এবং ১০ বছর পার করছি আমরা। এখন পর্যন্ত আমরা ছোট ‘কান্ট্রি বোট’ ভাড়া করে শুধু উপকূলের কাছাকাছি অল্পবিস্তর গবেষণা করছি বছরের নির্দিষ্ট স্বল্প সময় ধরে। অন্যান্য সময়ে আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় উপকূলের কাছেও জরিপ বা সার্ভে করা সম্ভব নয়। অথচ উপকূলে বসবাসকারী দরিদ্র পরিবারগুলোকে উপকূলের সম্পদের ওপর গবেষণা করে সেই সম্পদের যথাযোগ্যভাবে আহরণ ও ব্যবহার করে দারিদ্র্যের হার কমানো সম্ভব। অন্যান্য দেশের পর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত গবেষণার জন্য এরই মধ্যে আর্কটিকে ‘হিমাদ্রি’ নামে একটি এবং অ্যান্টার্কটিকে ‘ভারতী’, ‘দক্ষিণ গাঙ্গোত্রী’ ও মৈত্রী নামে তিনটি গবেষণা বা রিসার্চ স্টেশন স্থাপন করেছে। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে নিশ্চয়ই আমাদের সমুদ্র গবেষণায় অনেক উন্নতির জায়গা রয়েছে। তবে শুধু রিসার্চ ভেসেল কেনা ছাড়াও এই ক্ষেত্রকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাদের রিসার্চ ভেসেল ব্যবহার করে কোলাবরেটিভ কাজ আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে করতে পারি। টার্গেটভিত্তিক গবেষণাও খুব জরুরি। বাংলাদেশের মিঠাপানির মাছের ওপর এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা হয়েছে। গবেষণার মধ্য দিয়ে আমরা ইলিশের প্রজনন ও বৃদ্ধির সময় নির্ধারণ করে ওই সময়সীমার জন্য মা ইলিশ এবং জাটকা ধরা ও ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ থাকায় ইলিশের স্টক অধিকাংশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছি। কিন্তু ইলিশের জীবনচক্র ফ্রেশ ওয়াটার ও মেরিন ওয়াটার—এই দুই জায়গাতে সম্পন্ন হয় বলে মেরিন ওয়াটার অংশের ম্যানেজমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজেই আমাদের ‘মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া’ নির্ধারণ, গবেষণা, ম্যানেজমেন্ট পলিসি তৈরি এবং তা প্রয়োগ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যাঁরা সমুদ্রবিজ্ঞান এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ডিগ্রি সম্পন্ন করছেন, তাঁদের উচ্চশিক্ষার ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
চাকরির সুযোগ
সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, স্পারসো ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের চাকরির সুযোগ উল্লেখযোগ্য। তবে প্রতিবছর স্নাতক ডিগ্রি ও উচ্চশিক্ষা সম্পন্নকারী চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা এবং চাকরির পদসংখ্যার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা দরকার। এ দুই বিষয়ে সামঞ্জস্য না থাকায় অনেকে বিষয়ভিত্তিক চাকরিতে আগ্রহী না হয়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজের চেষ্টা করছে। এই বিষয়ে সামঞ্জস্য রক্ষার্থে বিষয় প্রাসঙ্গিক সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ইনস্টিটিউট ও অর্গানাইজেশন চালু করা এবং চাকরির পদসংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। প্রথমে যে বিষয়টি আসে, তা হলো বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের অধীনে মেরিটাইম ক্যাডারের জন্য অনুমোদন ও প্রার্থী নিয়োগ করা। ফিশারিজ ক্যাডার পদ থাকলেও মূলত এই অংশে ফ্রেশ ওয়াটার-সম্পর্কিত কাজ বেশির ভাগ করা হয়। একই সঙ্গে সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মূলত সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি সম্পন্নকারী চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা, চাকরির পদসংখ্যা, গবেষণালব্ধ ফল থেকে পলিসি তৈরি এবং প্রয়োগ করা—এই সব পর্যায়ের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। তাহলে নিশ্চয়ই আমরা সমুদ্রসম্পদ আহরণে এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের গ্রে এরিয়াগুলোতে উন্নতি করতে সক্ষম হব। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘ক্যারিয়ার সেন্টার’ থাকা আবশ্যক, যেখানে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা ‘ক্যারিয়ার ফেয়ারে অংশ নেবেন, যাতে করে তাঁরা সাবজেক্ট রিলেভেন্ট বা প্রাসঙ্গিক চাকরি করতে বেশি হয় এবং সেই সঙ্গে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানও তাদের টার্গেট অনুযায়ী প্রার্থী নিয়োগ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসেই প্রাসঙ্গিক খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় যেমন উপকৃত হতে পারে তাদের কর্মদক্ষতা কাজে লাগিয়ে, তেমনই শিক্ষার্থীরা পরিবারের ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল না হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ‘ব্রেন ড্রেইন’-এর হার কমানোর মাধ্যমে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসার ক্ষেত্রে মানুষের অধিকতর আগ্রহী হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করা খুব জরুরি।
অনুলিখন: শাহ বিলিয়া জুলফিকার
১৯৬৭-৬৮ সালের দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর আব্দুল লতিফ ভূঁইয়ার হাত ধরে জন্ম ডিপার্টমেন্ট অব মেরিন বায়োলজি অ্যান্ড ওশানোগ্রাফির। সেই থেকে এই ইনস্টিটিউটের পথচলা। পরে এটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ হিসেবে পরিচিত হয়। এই ইনস্টিটিউটের অধীনে মেরিন সায়েন্স, ফিশারিজ ও ওশানোগ্রাফি—এই তিনটি বিভাগ রয়েছে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি দেশের প্রথম পাবলিক মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে।
ভর্তির যোগ্যতা
ওশানোগ্রাফি স্নাতক প্রোগ্রামে আবেদন ও ভর্তি পরীক্ষার ন্যূনতম যোগ্যতা হলো এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পর্যায়ের পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ এর মধ্যে উভয় ক্ষেত্রে ৪ পেতে হবে (অন্যান্য নিয়ম এবং প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ সাপেক্ষে)।
যেখানে পড়ানো হয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এ ছাড়া পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি ইন মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি নামে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। ওশানোগ্রাফি ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক আর্থ অ্যান্ড ওশান সায়েন্স অনুষদের অধীনে মেরিন ফিশারিজ, ফিশারিজ, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সসহ অনেক প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়।
পঠন-পাঠন
ওশানোগ্রাফি প্রোগ্রামের অধীনে মূলত বায়োলজিক্যাল, ফিজিক্যাল, কেমিক্যাল ও জিওলজিক্যাল ওশানোগ্রাফির বিষয়সমূহ পড়ানো হয়। বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফিতে ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক প্ল্যাঙ্কটন থেকে শুরু করে তিমির মতো বৃহৎ ম্যামালস এবং অন্যান্য বায়োলজিক্যাল অর্গানিজমস, জীবনচক্র, বিচরণক্ষেত্র, ইকোসিস্টেম ও সামুদ্রিক বায়োলজিক্যাল রিসোর্স আহরণ এবং এদের সাসটেইনেবল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ানো হয়। ফিজিক্যাল ওশানোগ্রাফিতে সমুদ্রের ফিজিক্যাল প্রসেস, ওশান সার্কুলেশন অ্যান্ড ক্লাইমেট এবং তার সঙ্গে বায়োলজিক্যাল অর্গানিজমসের প্রভাব এবং ওশান কেমিক্যাল প্রসেসের প্রভাব বিষয়ে পড়ানো হয়। কেমিক্যাল ওশানোগ্রাফিতে ওশান কেমিস্ট্রি যেমন স্যালিনিটি, মেজর এবং মাইনর এলিমেন্টস, পিএইচ, নিউট্রিয়েন্টসের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। জিওলজিক্যাল ওশানোগ্রাফির মধ্যে আর্থ অ্যান্ড ওশান ফরমেশন, সেডিমেন্টস, ওশান ফ্লোর এক্সপ্লোরেশন এবং ওশান মাউন্টেইন, ভ্যালে, ক্যানিয়নের মতো অন্যান্য জিওলজিক্যাল ফিচার রয়েছে। এই বিষয়গুলো সামগ্রিক ধারণামাত্র। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয় বিস্তৃত পরিসরে পড়ানো হয়।
গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা
পৃথিবীর ৭১ শতাংশ সমুদ্রের অংশ, বাকি ২৯ শতাংশ স্থলভাগ। এই ৭১ শতাংশ সমুদ্রের সামগ্রিক বিষয়সমূহের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ শতাংশ অন্বেষণ করা হয়েছে (মতভেদে পার্থক্য রয়েছে), বাকি ৯৫ শতাংশ আমাদের অজানা। বাংলাদেশের নিজস্ব সমুদ্রসীমা বে অব বেঙ্গল তথা উত্তর ভারত মহাসাগরের অংশ। বাংলাদেশের পূর্ববর্তী সমুদ্রসীমার সঙ্গে ১৪ মার্চ ২০১২ সালে ইটলস ‘ITLOS’-ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দি ল অব দ্য সি-তে মিয়ানমারের সঙ্গে ও ৭ জুলাই ২০১৪ সালে ‘PCA’-পারমানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন, হেগ, নেদারল্যান্ডসে ভারতের সঙ্গে বে অব বেঙ্গলে নতুন সমুদ্রসীমা অর্জন করে এবং সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের সমুদ্রের অংশ এখন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। উক্ত সমুদ্রসীমায় মোটাদাগের তেমন কোনো গবেষণা জরিপ না হওয়ায় কোন প্রজাতির কী পরিমাণ আহরণযোগ্য বায়োলজিক্যাল এবং নন-বায়োলজিক্যাল সম্পদ রয়েছে, এ তথ্যগুলো অজানা। কাজেই এটা স্পষ্টত যে আমাদের সমুদ্রসীমায় গবেষণার বিকল্প নেই এবং এই গবেষণাকে ত্বরান্বিত করতে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন। সমুদ্র গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, চীন, জাপান ছাড়াও পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। তবে আমাদের নিশ্চয় ডেভেলপমেন্ট বা উন্নয়নের কিছু ‘গ্রে এরিয়া’ রয়েছে। যেমন উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আমাদের দেশের সঙ্গে বাইরের দেশের কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। সমুদ্র গবেষণায় প্রথমেই আসে ‘রিসার্চ ভেসেল’ বিষয়টি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সমুদ্র গবেষণায় অত্যাধুনিক রিসার্চ ভেসেল ব্যবহার করছে, তবে আমাদের একটিও অত্যাধুনিক ‘রিসার্চ ভেসেল’ নেই; যেটা কিনা পুরো বছর ধরে সমুদ্রে গবেষণা করতে সক্ষম হবে, অথচ মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র বিজয়ের ১২ এবং ১০ বছর পার করছি আমরা। এখন পর্যন্ত আমরা ছোট ‘কান্ট্রি বোট’ ভাড়া করে শুধু উপকূলের কাছাকাছি অল্পবিস্তর গবেষণা করছি বছরের নির্দিষ্ট স্বল্প সময় ধরে। অন্যান্য সময়ে আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় উপকূলের কাছেও জরিপ বা সার্ভে করা সম্ভব নয়। অথচ উপকূলে বসবাসকারী দরিদ্র পরিবারগুলোকে উপকূলের সম্পদের ওপর গবেষণা করে সেই সম্পদের যথাযোগ্যভাবে আহরণ ও ব্যবহার করে দারিদ্র্যের হার কমানো সম্ভব। অন্যান্য দেশের পর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত গবেষণার জন্য এরই মধ্যে আর্কটিকে ‘হিমাদ্রি’ নামে একটি এবং অ্যান্টার্কটিকে ‘ভারতী’, ‘দক্ষিণ গাঙ্গোত্রী’ ও মৈত্রী নামে তিনটি গবেষণা বা রিসার্চ স্টেশন স্থাপন করেছে। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে নিশ্চয়ই আমাদের সমুদ্র গবেষণায় অনেক উন্নতির জায়গা রয়েছে। তবে শুধু রিসার্চ ভেসেল কেনা ছাড়াও এই ক্ষেত্রকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাদের রিসার্চ ভেসেল ব্যবহার করে কোলাবরেটিভ কাজ আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে করতে পারি। টার্গেটভিত্তিক গবেষণাও খুব জরুরি। বাংলাদেশের মিঠাপানির মাছের ওপর এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা হয়েছে। গবেষণার মধ্য দিয়ে আমরা ইলিশের প্রজনন ও বৃদ্ধির সময় নির্ধারণ করে ওই সময়সীমার জন্য মা ইলিশ এবং জাটকা ধরা ও ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ থাকায় ইলিশের স্টক অধিকাংশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছি। কিন্তু ইলিশের জীবনচক্র ফ্রেশ ওয়াটার ও মেরিন ওয়াটার—এই দুই জায়গাতে সম্পন্ন হয় বলে মেরিন ওয়াটার অংশের ম্যানেজমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজেই আমাদের ‘মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া’ নির্ধারণ, গবেষণা, ম্যানেজমেন্ট পলিসি তৈরি এবং তা প্রয়োগ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যাঁরা সমুদ্রবিজ্ঞান এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ডিগ্রি সম্পন্ন করছেন, তাঁদের উচ্চশিক্ষার ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
চাকরির সুযোগ
সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, স্পারসো ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের চাকরির সুযোগ উল্লেখযোগ্য। তবে প্রতিবছর স্নাতক ডিগ্রি ও উচ্চশিক্ষা সম্পন্নকারী চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা এবং চাকরির পদসংখ্যার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা দরকার। এ দুই বিষয়ে সামঞ্জস্য না থাকায় অনেকে বিষয়ভিত্তিক চাকরিতে আগ্রহী না হয়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজের চেষ্টা করছে। এই বিষয়ে সামঞ্জস্য রক্ষার্থে বিষয় প্রাসঙ্গিক সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ইনস্টিটিউট ও অর্গানাইজেশন চালু করা এবং চাকরির পদসংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। প্রথমে যে বিষয়টি আসে, তা হলো বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের অধীনে মেরিটাইম ক্যাডারের জন্য অনুমোদন ও প্রার্থী নিয়োগ করা। ফিশারিজ ক্যাডার পদ থাকলেও মূলত এই অংশে ফ্রেশ ওয়াটার-সম্পর্কিত কাজ বেশির ভাগ করা হয়। একই সঙ্গে সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মূলত সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি সম্পন্নকারী চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা, চাকরির পদসংখ্যা, গবেষণালব্ধ ফল থেকে পলিসি তৈরি এবং প্রয়োগ করা—এই সব পর্যায়ের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। তাহলে নিশ্চয়ই আমরা সমুদ্রসম্পদ আহরণে এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের গ্রে এরিয়াগুলোতে উন্নতি করতে সক্ষম হব। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘ক্যারিয়ার সেন্টার’ থাকা আবশ্যক, যেখানে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা ‘ক্যারিয়ার ফেয়ারে অংশ নেবেন, যাতে করে তাঁরা সাবজেক্ট রিলেভেন্ট বা প্রাসঙ্গিক চাকরি করতে বেশি হয় এবং সেই সঙ্গে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানও তাদের টার্গেট অনুযায়ী প্রার্থী নিয়োগ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসেই প্রাসঙ্গিক খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় যেমন উপকৃত হতে পারে তাদের কর্মদক্ষতা কাজে লাগিয়ে, তেমনই শিক্ষার্থীরা পরিবারের ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল না হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ‘ব্রেন ড্রেইন’-এর হার কমানোর মাধ্যমে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসার ক্ষেত্রে মানুষের অধিকতর আগ্রহী হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করা খুব জরুরি।
অনুলিখন: শাহ বিলিয়া জুলফিকার
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডে (ডেসকো) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির শূন্য পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা প্রতিষ্ঠানটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
৩ ঘণ্টা আগেমৎস্য অধিদপ্তরের ৮টি পদে ৫৮০ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা সময়সূচি প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে এ পরীক্ষা শুরু হবে। প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক (প্রশাসন) এস এম রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ১৫ ধরনের শূন্য পদে ৬০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে। গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) থেকে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেমাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ৮৬টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি। হিসাবরক্ষক, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন পদে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের শেষ তারিখ: ৫ ডিসেম্বর ২০২৪।
২ দিন আগে