জাহীদ রেজা নূর
আজ একটা ভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখাটা শুরু হোক।
মার্কিন দেশে এখনো মানুষ বই পড়ে। কিনেই পড়ে। কাগজে দুই মলাটের মধ্যে বন্দী পাতাগুলোকে যেমন আপন করে নেয়, তেমনি ই–বুকও এখন ভালো লাগছে অনেকের। পয়সা দিয়ে সেগুলোও কিনে নেয় আগ্রহীজন।
সিডনি ম্যাককেইনের লেখা ‘স্ট্রংগার: কারেজ, হোপ অ্যান্ড হিউমার ইন মাই লাইফ উইথ জন ম্যাককেইন’ বইটি এখন যুক্তরাষ্ট্রে হু হু করে বিক্রি হচ্ছে। বেস্টসেলার হয়েছে বইটি, সমালোচকদের মুখে প্রশংসার স্রোত।
জন ম্যাককেইন ছিলেন রিপাবলিকান সিনেটর। সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমর জন্য তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দলের সদস্যরা। ২০১৮ সালে তাঁর মৃত্যু হলে মার্কিন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে জিমি কার্টার, বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামা যোগ দিয়েছিলেন তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। সিডনি ম্যাককেইন সেই সিনেটরের স্ত্রী।
জন ম্যাককেইন সম্পর্কে একটু বলে না নিলে কেন তাঁকে নিয়ে কথা বলছি, তা বুঝতে পারা যাবে না। তিনি রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর হয়েও তখনকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বোকামি, অবিনয়ী মনোভঙ্গি এবং দেশের মানুষের প্রতি উদাসীনতা ও নির্মমতার কড়া সমালোচনা করতেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য তা সুখকর ছিল না। তাই যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সব সময় চেষ্টা করেছেন, জন ম্যাককেইনকে অপমান করতে; কিন্তু ম্যাককেইন তা গায়ে মাখেননি।
সিডনির সঙ্গে জনের ছিল ৩৮ বছরের বিবাহিত জীবন। নানা ধরনের সংকটকাল কাটিয়েছেন তাঁরা একসঙ্গে। চার সন্তানকে মানুষ করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আদর্শ পরিবারের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
কেউ যদি মনে করে থাকেন ৬৬ বছর বয়স্ক সিডনির বইটি জন ম্যাককেইনের রাজনীতিক জীবন নিয়ে, তাহলে ভুল করবেন। একজন পুরোপুরি রাজনীতিতে ডুবে থাকা মানুষের সঙ্গে যে রোমান্টিক জীবন কাটিয়েছেন সিডনি, বইটি সে বিষয়েই লেখা। সিডনি এখানে লিখেছেন জনের সঙ্গে তাঁর পরিচয়ের ঘটনা, বিয়ে করার সিদ্ধান্ত এবং কীভাবে তাঁরা অবসর সময়গুলো কাটিয়েছেন, তা নিয়ে। সমালোচকেরা বলেছেন, বইটি পড়লে নিকোলাস স্পার্কসের লেখা বিখ্যাত বই নোটবুক–এর ধরনটির কথা মনে পড়বে। দুটো বইয়ের স্বাদ একই রকম।
সিডনি ম্যাককেইন এখন ব্যবসা সামলাচ্ছেন, গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বইটি থেকে যা আয় হবে, তা দেশের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষদের কল্যাণের জন্য ব্যয় করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আমাজনে বইটির দাম ১৯ ডলার ৫৮ সেন্ট। আর ট্যাব–সংস্করণ ১৪ ডলার ৯৯ সেন্ট।
অ্যালি পন্ড পার্ক
স্প্রিংফিল্ড বুলেভার্দ থেকে হাঁটতে হাঁটতে কয়েক মাইল গেলেই অ্যালি পন্ড পার্ক। গত বছর যখন নিউইয়র্কে এসেছিলাম, তখনই ২৭ নম্বর বাসে করে কুইন্স লাইব্রেরির একটি শাখায় যাওয়ার সময় পার্কটি নজরে পড়েছিল। তারপর হাঁটতে হাঁটতে একদিন সেই পার্কে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম। তখন শীতকাল। নিউইয়র্কে শীতকালে দু–একদিন প্রচণ্ড তুষারপাত হলেও রোদমাখা দিনের দেখা মেলে বেশি। রাস্তায় খুব বেশি দিন বরফ জমে থাকে না।
আর এ সময় ঝকঝকে রোদ্দুর, কিছুটা গরম। বেশি হাঁটলে একটু ঘামও হয়। হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন নিউইয়র্কের রোদ্দুরের কথা। নীল আকাশটা সত্যিই মোহনীয়। ঢাকা শহরে এতটা নীল আকাশ দেখা যায় না।
অ্যালি পন্ড পার্কটি কুইন্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম পার্ক। এই পথেই ১৭৯০ সালে লং আইল্যান্ডে গিয়েছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। এ কথা অনেকখানেই লেখা আছে।
রোববার ছুটির দিন। বিকেলে আমরা অ্যালি পন্ড পার্কে গেলাম। রোদ তখনো আকাশে। পার্কে পৌঁছে দেখি, বিভিন্ন জাতি–বর্ণের মানুষ এখানে এসেছেন পিকনিকে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাঁরা বসেছেন, বাড়ি থেকে আনা টেবিল পেতেছেন। খাচ্ছেন। শিশুরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে।
পার্কটি খুব বড়। গোল মাঠের চারধারে রাস্তা, হাঁটার জন্য আদর্শ। মাঠটি দুই চক্কর দিলে শরীরটা চনমনে হয়ে ওঠে। ক্লান্ত মানুষ বসে পড়ে বেঞ্চিতে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটে। একজন ভিয়েতনামি বংশোদ্ভূত ষাটোর্ধ্ব মানুষকে দেখলাম অন্তত দশবার প্রদক্ষিণ করলেন মাঠটা। দৌড়ে। ঘামে ভিজে গেছেন তিনি।
এ মাঠে অনেকেই হাঁটতে এসেছেন তাঁদের প্রিয় কুকুরটাকে সঙ্গে নিয়ে। মাঠের কোনো কোনো জায়গায় রয়েছে ব্যায়াম করার যন্ত্র। যে কেউ ইচ্ছে করলেই ফ্রি–হ্যান্ড ব্যায়াম করে নিতে পারেন সেখানে। শিশুদের জন্য রয়েছে খেলার জায়গা। ওখানে তাদের ছেড়ে দিয়ে বাবা–মা একটু অবসর উপভোগ করতে পারেন।
মাঠের পাশ দিয়েই একটা রাস্তা চলে গেছে ওপরের দিকে। পাহাড়ের মতো জায়গাটা। এই পথটা দেখলে মনে হয় চট্টগ্রাম–রাঙামাটি সড়ক। দুপাশে গাছের সারির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে ভালো লাগে। এরই মধ্যে প্রাচীনকালের গাছ আছে অনেক। তারই কয়েকটিতে ঝুলছে বোর্ড, যেখানে লেখা আছে, ‘আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারো।’ আমরা তিনজনই গাছটাকে জড়িয়ে ধরলাম। ছবিও তুললাম। আমার মনে হলো, গাছটি যেন বলছে, ‘আমাকে জড়িয়ে ধরো’। মনে পড়ে গেল ১৯৯২ সালের কথা। সে সময় আমরা ছিলাম রাশিয়ার ক্রাসনাদার শহরে। সে বছর জানুয়ারি মাসে প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা এসেছিলেন আমাদের শহরে বেড়াতে। তিনি প্রগতি প্রকাশনের চাকরি করতেন। তখন তৃতীয় বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক একটু একটু করে খারাপ হচ্ছিল। অনুবাদ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। দ্বিজেন শর্মা যখন আমাদের শহরে এসেছিলেন, তখন শীতকাল প্রায় শেষ। তারপরও বরফ জমে ছিল মাটির ওপর। একটি বিশাল গাছ জড়িয়ে ধরে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রকৃতির কাছ থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি! প্রকৃতির কাছে থাকা প্রয়োজন!’ তাঁর বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেল।
সীমিতভাবে রেস্তোরাঁ খোলা
কোভিডের শুরুতে রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া–দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নিউইয়র্কে। শুধু টেকওয়ে–প্রথা চালু ছিল। সে সময় রেস্তোরাঁর বাইরে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রেখে ক্রেতারা দাঁড়াত সারিতে। অর্ডার দেওয়ার পর খাবার প্রস্তুত হলে সেটা নিয়ে যেত বাড়িতে। বাইরে খাওয়া–দাওয়ার কথা ভাবতেই পারত না কেউ।
এখন কোভিডের টুঁটি টিপে ধরতে পেরেছে বলেই মনে করে নিউইয়র্ক। একটু একটু করে খুলে যাচ্ছে দোকানপাট; রেস্তোরাঁ। পার্ক থেকে ফেরার পথে একটি ম্যাক্সিকান, আরেকটি ইতালিয়ান খাবারের দোকানে দেখলাম টেবিল–চেয়ারে বসে খাচ্ছেন অনেকে। এদের মধ্যে একটি বাঙালি পরিবারেরও দেখা পেলাম। ব্র্যাডক অ্যাভিনিউতে কি–ফুডের পাশে বিশাল এক বুফে রেস্তোরাঁয় অনেক ভিড়। অর্থাৎ রেস্তোরাঁয় খাওয়ার যুগ আবার ফিরে আসছে।
কাজ হারিয়ে অনেক মানুষই বেকার হয়ে গেছে। এ কারণে ইদানীং সাবওয়েতে সহিংসতা বেড়েছে। বিশেষ করে রাতে চলাচল করা কিছুটা অনিরাপদ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে পুলিশ এই দুর্বৃত্তদের ধরার ব্যাপারে তৎপর।
সাহিত্যের নিউইয়র্ক
নিউইয়র্কের সঙ্গে অন্যভাবেও পরিচিত হওয়া যায়। পৃথিবীর আর কোনো শহরের সঙ্গেই নিউইয়র্কের কোনো মিল নেই। জন্মের শুরু থেকেই এ শহর কোলাহলমুখর। আজও রয়েছে তার স্পন্দন একই রকম। এর কারণ আর কিছুই নয়, প্রতি মুহূর্তে এখানে যুক্ত হচ্ছে নতুন রক্ত, নতুন মানুষ। সারা পৃথিবী থেকে নানা পথে, নানাভাবে এখানে আসছে মানুষ। নিউইয়র্কের টিকে থাকা সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করছে নিজের সংস্কৃতিকে, ঐতিহ্যকে। তাই খুব দৃঢ়ভাবেই বলা যায়, নিউইয়র্কের কোনো নির্দিষ্ট ভাষা নেই। নানা দেশ থেকে আসা মানুষ তাদের ভাষা ও ঐতিহ্য দিয়ে গড়ে নিচ্ছে নিউইয়র্ককে।
আছে ইতালির নিউইয়র্ক, স্পেনের নিউইয়র্ক, চীনের নিউইয়র্ক, রাশিয়ার নিউইয়র্ক। আছে আফ্রিকার নিউইয়র্ক। যদিও বলা হয় এশিয়ার নিউইয়র্ক, কিন্তু এখানে আছে বাংলাদেশের নিউইয়র্ক, ভারতের নিউইয়র্ক, পাকিস্তানের নিউইয়র্ক। আরব দেশগুলোরও রয়েছে নিউইয়র্ক। এখানে একে অন্যের সঙ্গে মানুষ মেশে, আবার নিজেদের ঐতিহ্যও ধরে রাখে কেউ কেউ।
বাঙালিদের কথা বলেছিলাম একবার। জ্যাকসন হাইটস বা পারসন্স বুলেভার্দের উল্লেখ করেছিলাম সে লেখায়। মূল মার্কিন ধারার সঙ্গে অনেক সময়ই দেখাশোনা হয় না বাঙালিদের। আমেরিকাকে ধারণ করে আছে যে জাদুঘরগুলো, ধর্মীয় স্থাপনাগুলো, তা নিয়ে অনেকেরই কোনো ভাবনা নেই। এমনকি কী ঘটছে এই দেশটায়, সরকার পরিবর্তনে আদতেই কোনো কল্যাণ হচ্ছে কিনা, সে ভাবনাও করে না অনেকে। দৃষ্টি শুধু থাকে, নিজে কতটা লাভবান হচ্ছি, তার ওপর।
মূলধারার সাংস্কৃতিক মিলন না হলে যে শূন্যতা থেকে যায়, নিউইয়র্কের বাঙালিদের একটা বড় অংশের মধ্যে সেটা আছে। শুধু বাঙালি নয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যেই সেটা লক্ষ্য করা যায়। এখানে একটা ভয়াবহ ব্যাপারও ঘটে। নিজ দেশ থেকে যে শিক্ষা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস নিয়ে এ দেশে অভিবাসী হয়েছে মানুষ, তা তারা আঁকড়ে ধরে থাকে। কোনো পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে চায় না। নতুন চিন্তা–ভাবনার সঙ্গে পরিচয় না হওয়ায় আচরিত জীবন একসময় রূপান্তরিত হয় মজা খালে। কোনোদিকেই থাকে না তার স্রোত। পুরোনো বিশ্বাস আঁকড়ে থাকায় জীবনবোধে আসে না কোনো আনন্দ। ফল যা হয়, তা নিয়েও লিখব একদিন।
তারপরও নিউইয়র্ক সব সময়ই নবীন হয়ে ধরা দেয় চোখে। নিউইয়র্কের সাহিত্যজীবন নিয়েও কিছু কথা বলা না হলে অপূর্ণ থেকে যাবে অনেক কিছু। নিউইয়র্কের জন্মের পর থেকেই ঋদ্ধ এর সাহিত্যজীবন। হুইটম্যান, উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়াম, ডিলান টমাস, ফ্র্যাঙ্ক ওহারার লেখায় উঠে এসেছে নিউইয়র্ক।
সে কথা দিয়েই শুরু হবে পরের লেখাটি।
আজ একটা ভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখাটা শুরু হোক।
মার্কিন দেশে এখনো মানুষ বই পড়ে। কিনেই পড়ে। কাগজে দুই মলাটের মধ্যে বন্দী পাতাগুলোকে যেমন আপন করে নেয়, তেমনি ই–বুকও এখন ভালো লাগছে অনেকের। পয়সা দিয়ে সেগুলোও কিনে নেয় আগ্রহীজন।
সিডনি ম্যাককেইনের লেখা ‘স্ট্রংগার: কারেজ, হোপ অ্যান্ড হিউমার ইন মাই লাইফ উইথ জন ম্যাককেইন’ বইটি এখন যুক্তরাষ্ট্রে হু হু করে বিক্রি হচ্ছে। বেস্টসেলার হয়েছে বইটি, সমালোচকদের মুখে প্রশংসার স্রোত।
জন ম্যাককেইন ছিলেন রিপাবলিকান সিনেটর। সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমর জন্য তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দলের সদস্যরা। ২০১৮ সালে তাঁর মৃত্যু হলে মার্কিন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে জিমি কার্টার, বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামা যোগ দিয়েছিলেন তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। সিডনি ম্যাককেইন সেই সিনেটরের স্ত্রী।
জন ম্যাককেইন সম্পর্কে একটু বলে না নিলে কেন তাঁকে নিয়ে কথা বলছি, তা বুঝতে পারা যাবে না। তিনি রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর হয়েও তখনকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বোকামি, অবিনয়ী মনোভঙ্গি এবং দেশের মানুষের প্রতি উদাসীনতা ও নির্মমতার কড়া সমালোচনা করতেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য তা সুখকর ছিল না। তাই যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সব সময় চেষ্টা করেছেন, জন ম্যাককেইনকে অপমান করতে; কিন্তু ম্যাককেইন তা গায়ে মাখেননি।
সিডনির সঙ্গে জনের ছিল ৩৮ বছরের বিবাহিত জীবন। নানা ধরনের সংকটকাল কাটিয়েছেন তাঁরা একসঙ্গে। চার সন্তানকে মানুষ করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আদর্শ পরিবারের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
কেউ যদি মনে করে থাকেন ৬৬ বছর বয়স্ক সিডনির বইটি জন ম্যাককেইনের রাজনীতিক জীবন নিয়ে, তাহলে ভুল করবেন। একজন পুরোপুরি রাজনীতিতে ডুবে থাকা মানুষের সঙ্গে যে রোমান্টিক জীবন কাটিয়েছেন সিডনি, বইটি সে বিষয়েই লেখা। সিডনি এখানে লিখেছেন জনের সঙ্গে তাঁর পরিচয়ের ঘটনা, বিয়ে করার সিদ্ধান্ত এবং কীভাবে তাঁরা অবসর সময়গুলো কাটিয়েছেন, তা নিয়ে। সমালোচকেরা বলেছেন, বইটি পড়লে নিকোলাস স্পার্কসের লেখা বিখ্যাত বই নোটবুক–এর ধরনটির কথা মনে পড়বে। দুটো বইয়ের স্বাদ একই রকম।
সিডনি ম্যাককেইন এখন ব্যবসা সামলাচ্ছেন, গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বইটি থেকে যা আয় হবে, তা দেশের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষদের কল্যাণের জন্য ব্যয় করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আমাজনে বইটির দাম ১৯ ডলার ৫৮ সেন্ট। আর ট্যাব–সংস্করণ ১৪ ডলার ৯৯ সেন্ট।
অ্যালি পন্ড পার্ক
স্প্রিংফিল্ড বুলেভার্দ থেকে হাঁটতে হাঁটতে কয়েক মাইল গেলেই অ্যালি পন্ড পার্ক। গত বছর যখন নিউইয়র্কে এসেছিলাম, তখনই ২৭ নম্বর বাসে করে কুইন্স লাইব্রেরির একটি শাখায় যাওয়ার সময় পার্কটি নজরে পড়েছিল। তারপর হাঁটতে হাঁটতে একদিন সেই পার্কে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম। তখন শীতকাল। নিউইয়র্কে শীতকালে দু–একদিন প্রচণ্ড তুষারপাত হলেও রোদমাখা দিনের দেখা মেলে বেশি। রাস্তায় খুব বেশি দিন বরফ জমে থাকে না।
আর এ সময় ঝকঝকে রোদ্দুর, কিছুটা গরম। বেশি হাঁটলে একটু ঘামও হয়। হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন নিউইয়র্কের রোদ্দুরের কথা। নীল আকাশটা সত্যিই মোহনীয়। ঢাকা শহরে এতটা নীল আকাশ দেখা যায় না।
অ্যালি পন্ড পার্কটি কুইন্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম পার্ক। এই পথেই ১৭৯০ সালে লং আইল্যান্ডে গিয়েছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। এ কথা অনেকখানেই লেখা আছে।
রোববার ছুটির দিন। বিকেলে আমরা অ্যালি পন্ড পার্কে গেলাম। রোদ তখনো আকাশে। পার্কে পৌঁছে দেখি, বিভিন্ন জাতি–বর্ণের মানুষ এখানে এসেছেন পিকনিকে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাঁরা বসেছেন, বাড়ি থেকে আনা টেবিল পেতেছেন। খাচ্ছেন। শিশুরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে।
পার্কটি খুব বড়। গোল মাঠের চারধারে রাস্তা, হাঁটার জন্য আদর্শ। মাঠটি দুই চক্কর দিলে শরীরটা চনমনে হয়ে ওঠে। ক্লান্ত মানুষ বসে পড়ে বেঞ্চিতে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটে। একজন ভিয়েতনামি বংশোদ্ভূত ষাটোর্ধ্ব মানুষকে দেখলাম অন্তত দশবার প্রদক্ষিণ করলেন মাঠটা। দৌড়ে। ঘামে ভিজে গেছেন তিনি।
এ মাঠে অনেকেই হাঁটতে এসেছেন তাঁদের প্রিয় কুকুরটাকে সঙ্গে নিয়ে। মাঠের কোনো কোনো জায়গায় রয়েছে ব্যায়াম করার যন্ত্র। যে কেউ ইচ্ছে করলেই ফ্রি–হ্যান্ড ব্যায়াম করে নিতে পারেন সেখানে। শিশুদের জন্য রয়েছে খেলার জায়গা। ওখানে তাদের ছেড়ে দিয়ে বাবা–মা একটু অবসর উপভোগ করতে পারেন।
মাঠের পাশ দিয়েই একটা রাস্তা চলে গেছে ওপরের দিকে। পাহাড়ের মতো জায়গাটা। এই পথটা দেখলে মনে হয় চট্টগ্রাম–রাঙামাটি সড়ক। দুপাশে গাছের সারির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে ভালো লাগে। এরই মধ্যে প্রাচীনকালের গাছ আছে অনেক। তারই কয়েকটিতে ঝুলছে বোর্ড, যেখানে লেখা আছে, ‘আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারো।’ আমরা তিনজনই গাছটাকে জড়িয়ে ধরলাম। ছবিও তুললাম। আমার মনে হলো, গাছটি যেন বলছে, ‘আমাকে জড়িয়ে ধরো’। মনে পড়ে গেল ১৯৯২ সালের কথা। সে সময় আমরা ছিলাম রাশিয়ার ক্রাসনাদার শহরে। সে বছর জানুয়ারি মাসে প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা এসেছিলেন আমাদের শহরে বেড়াতে। তিনি প্রগতি প্রকাশনের চাকরি করতেন। তখন তৃতীয় বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক একটু একটু করে খারাপ হচ্ছিল। অনুবাদ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। দ্বিজেন শর্মা যখন আমাদের শহরে এসেছিলেন, তখন শীতকাল প্রায় শেষ। তারপরও বরফ জমে ছিল মাটির ওপর। একটি বিশাল গাছ জড়িয়ে ধরে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রকৃতির কাছ থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি! প্রকৃতির কাছে থাকা প্রয়োজন!’ তাঁর বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেল।
সীমিতভাবে রেস্তোরাঁ খোলা
কোভিডের শুরুতে রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া–দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নিউইয়র্কে। শুধু টেকওয়ে–প্রথা চালু ছিল। সে সময় রেস্তোরাঁর বাইরে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রেখে ক্রেতারা দাঁড়াত সারিতে। অর্ডার দেওয়ার পর খাবার প্রস্তুত হলে সেটা নিয়ে যেত বাড়িতে। বাইরে খাওয়া–দাওয়ার কথা ভাবতেই পারত না কেউ।
এখন কোভিডের টুঁটি টিপে ধরতে পেরেছে বলেই মনে করে নিউইয়র্ক। একটু একটু করে খুলে যাচ্ছে দোকানপাট; রেস্তোরাঁ। পার্ক থেকে ফেরার পথে একটি ম্যাক্সিকান, আরেকটি ইতালিয়ান খাবারের দোকানে দেখলাম টেবিল–চেয়ারে বসে খাচ্ছেন অনেকে। এদের মধ্যে একটি বাঙালি পরিবারেরও দেখা পেলাম। ব্র্যাডক অ্যাভিনিউতে কি–ফুডের পাশে বিশাল এক বুফে রেস্তোরাঁয় অনেক ভিড়। অর্থাৎ রেস্তোরাঁয় খাওয়ার যুগ আবার ফিরে আসছে।
কাজ হারিয়ে অনেক মানুষই বেকার হয়ে গেছে। এ কারণে ইদানীং সাবওয়েতে সহিংসতা বেড়েছে। বিশেষ করে রাতে চলাচল করা কিছুটা অনিরাপদ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে পুলিশ এই দুর্বৃত্তদের ধরার ব্যাপারে তৎপর।
সাহিত্যের নিউইয়র্ক
নিউইয়র্কের সঙ্গে অন্যভাবেও পরিচিত হওয়া যায়। পৃথিবীর আর কোনো শহরের সঙ্গেই নিউইয়র্কের কোনো মিল নেই। জন্মের শুরু থেকেই এ শহর কোলাহলমুখর। আজও রয়েছে তার স্পন্দন একই রকম। এর কারণ আর কিছুই নয়, প্রতি মুহূর্তে এখানে যুক্ত হচ্ছে নতুন রক্ত, নতুন মানুষ। সারা পৃথিবী থেকে নানা পথে, নানাভাবে এখানে আসছে মানুষ। নিউইয়র্কের টিকে থাকা সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করছে নিজের সংস্কৃতিকে, ঐতিহ্যকে। তাই খুব দৃঢ়ভাবেই বলা যায়, নিউইয়র্কের কোনো নির্দিষ্ট ভাষা নেই। নানা দেশ থেকে আসা মানুষ তাদের ভাষা ও ঐতিহ্য দিয়ে গড়ে নিচ্ছে নিউইয়র্ককে।
আছে ইতালির নিউইয়র্ক, স্পেনের নিউইয়র্ক, চীনের নিউইয়র্ক, রাশিয়ার নিউইয়র্ক। আছে আফ্রিকার নিউইয়র্ক। যদিও বলা হয় এশিয়ার নিউইয়র্ক, কিন্তু এখানে আছে বাংলাদেশের নিউইয়র্ক, ভারতের নিউইয়র্ক, পাকিস্তানের নিউইয়র্ক। আরব দেশগুলোরও রয়েছে নিউইয়র্ক। এখানে একে অন্যের সঙ্গে মানুষ মেশে, আবার নিজেদের ঐতিহ্যও ধরে রাখে কেউ কেউ।
বাঙালিদের কথা বলেছিলাম একবার। জ্যাকসন হাইটস বা পারসন্স বুলেভার্দের উল্লেখ করেছিলাম সে লেখায়। মূল মার্কিন ধারার সঙ্গে অনেক সময়ই দেখাশোনা হয় না বাঙালিদের। আমেরিকাকে ধারণ করে আছে যে জাদুঘরগুলো, ধর্মীয় স্থাপনাগুলো, তা নিয়ে অনেকেরই কোনো ভাবনা নেই। এমনকি কী ঘটছে এই দেশটায়, সরকার পরিবর্তনে আদতেই কোনো কল্যাণ হচ্ছে কিনা, সে ভাবনাও করে না অনেকে। দৃষ্টি শুধু থাকে, নিজে কতটা লাভবান হচ্ছি, তার ওপর।
মূলধারার সাংস্কৃতিক মিলন না হলে যে শূন্যতা থেকে যায়, নিউইয়র্কের বাঙালিদের একটা বড় অংশের মধ্যে সেটা আছে। শুধু বাঙালি নয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যেই সেটা লক্ষ্য করা যায়। এখানে একটা ভয়াবহ ব্যাপারও ঘটে। নিজ দেশ থেকে যে শিক্ষা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস নিয়ে এ দেশে অভিবাসী হয়েছে মানুষ, তা তারা আঁকড়ে ধরে থাকে। কোনো পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে চায় না। নতুন চিন্তা–ভাবনার সঙ্গে পরিচয় না হওয়ায় আচরিত জীবন একসময় রূপান্তরিত হয় মজা খালে। কোনোদিকেই থাকে না তার স্রোত। পুরোনো বিশ্বাস আঁকড়ে থাকায় জীবনবোধে আসে না কোনো আনন্দ। ফল যা হয়, তা নিয়েও লিখব একদিন।
তারপরও নিউইয়র্ক সব সময়ই নবীন হয়ে ধরা দেয় চোখে। নিউইয়র্কের সাহিত্যজীবন নিয়েও কিছু কথা বলা না হলে অপূর্ণ থেকে যাবে অনেক কিছু। নিউইয়র্কের জন্মের পর থেকেই ঋদ্ধ এর সাহিত্যজীবন। হুইটম্যান, উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়াম, ডিলান টমাস, ফ্র্যাঙ্ক ওহারার লেখায় উঠে এসেছে নিউইয়র্ক।
সে কথা দিয়েই শুরু হবে পরের লেখাটি।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে