সানজিদা কাওছার ঋতু, ঢাকা
প্রণয়ের সম্পর্কে ভালোবাসা প্রকাশ করতে প্রেমিক–প্রেমিকারা একে অপরকে কত নামেই ডাকে! একেক ভাষায় এই আদুরে ডাক একেক রকম। বাংলায় প্রেমিক–প্রেমিকাদের মধ্যে বাবু, সোনা, জাদুর মতো শব্দের প্রচলন রয়েছে। তবে সব ভাষায় লিঙ্গ নির্বিশেষে যে আদুরে ডাকটি অহরহ ব্যবহার করা হয়, তা হলো ‘বেবি’।
অসংখ্য গান, কবিতা, প্রেমপত্রে রোমান্টিক সঙ্গীকে ‘বেবি’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এই ইংরেজি শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘শিশু’। তাহলে প্রাপ্তবয়স্ক সঙ্গীকে আদর করে ‘বেবি’ বলে ডাকার এ প্রবণতা এল কোথা থেকে?
পরনির্ভরশীল অসহায় শিশু হয়ে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কাটানো প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম মানুষ। জন্মের পর মানবশিশু পুরোপুরি লালন–পালনকারীর ওপর নির্ভরশীল থাকে। পরবর্তী জীবনে এর গভীর এক মনস্তাত্ত্বিক ছাপ রয়ে যায়। অস্ট্রিয়ান মনোবিশ্লেষক সিগ্মুন্ড ফ্রয়েড তাঁর তত্ত্বে বলেছেন, শৈশব থেকেই মানুষের মধ্যে একই সঙ্গে দুই ধরনের প্রবৃত্তি সক্রিয় থাকে—ইরোস এবং থানাটোস।
ইরোস হলো— বেঁচে থাকা, প্রেম, সৃজনশীলতা এবং যৌনতা, আত্মতুষ্টি এবং প্রজাতি সংরক্ষণের প্রবণতা।
আর গ্রিক শব্দ থানাটোস অর্থ মৃত্যু। এটি বলতে বোঝায়— আগ্রাসন, দুঃখবাদ, ধ্বংস, সহিংসতা এবং হত্যার প্রবণতা। এই প্রবণতা অন্তর্মুখীও হতে পারে। তখন মানুষ আত্মবিনাশী বা আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে উঠতে পারে।
এক কথায়, ইরোস হলো— বেঁচে থাকার তাড়না। আর থানাটোস হলো— মৃত্যুর তাড়না।
ইরোসের কারণে মানুষ জীবনের প্রথম ব্যক্তির সঙ্গে তার সংযুক্তির কথা স্মরণ করতে থাকে— যারা চোখে চোখে রেখেছিল, কোলে তুলে নিয়েছিল, হাসিয়েছিল, আমাদের সঙ্গে আনন্দে মেতেছিল— তাদের স্মৃতি মানুষ ভোলে না। এর জন্য প্রেমিক–প্রেমিকা তাদের অন্তরঙ্গতার সময়টাতে নিজের সবচেয়ে গভীর অনুভূতি আর মূল্যবান স্বরূপের সংস্পর্শ অনুভব করে।
শৈশবে যেমন মানুষের শারীরিক অনুভূতি ও আবেগ একই সঙ্গে মিশ্র অবস্থায় থাকে, যুগলের অন্তরঙ্গতার সময়ও তা মিশ্র অবস্থায় থাকে। এ থেকে সঙ্গীকে ‘বেবি’ বলে ডাকার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।
এর পেছনে একটি বিবর্তনীয় কারণও থাকতে পারে—অনেক পুরুষ তার সঙ্গীর সঙ্গে শিশুসুলভ আচরণ করতে পছন্দ করে। এমনকি তারা এমন সঙ্গীর সন্ধান করে, যার দেখলে বা যার সংস্পর্শ অবচেতনভাবে শিশুর সঙ্গ বলে মনে হয়।
বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রিয়ার প্রাণীদের আচরণ বিশেষজ্ঞ কনরাড লরেঞ্জ বলেন, শিশুর মধ্যে অপাপবিদ্ধ সৌন্দর্য দেখতে পাওয়া হলো একটি বিবর্তনীয় সুবিধাজনক অভিযোজন। সার্বক্ষণিক যত্নের মধ্যে রাখতে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উৎসাহ–অনুপ্রেরণার প্রয়োজনেই এমন অভিযোজন।
লরেঞ্জের মতে, শিশুর সৌন্দর্যের মধ্যে ওই উৎসাহ পায় মানুষ। তাঁর ধারণা, পুরুষেরা এই প্রবণতা থেকে নারীর মধ্যেও এ ধরনের সৌন্দর্য খোঁজে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ‘বেবি’ ডাকটি শুরুতে শুধু নারীদের জন্যই বরাদ্দ ছিল। পরবর্তীতে পুরুষ সঙ্গীকেও ‘বেবি’ সম্বোধন করার প্রবণতা শুরু হয়েছে।
সঙ্গীকে আদুরে নামে ডাকা স্বাস্থ্যকর সম্পর্কেরই নিদর্শন। এতে যুগলের মধ্যে একান্ত ব্যক্তিগত জগৎ তৈরি সহজ হয়। মনোবিজ্ঞানী স্টিভেন স্টোসনি বলেন, ‘প্রণয় যখন জমে ক্ষীর, তখন আসল নামে ডাকাটার মধ্যে কোনো আবেগ আবেদন থাকে না!’
সম্পর্ক ও যৌনতা বিষয়ক লেখক লোগান লেভকফ বলেন, ‘শিশুরা পরম সম্পদের মতো। কেউ আপনার “বেবি” মানে হলো সে একান্ত আপনার। অবশ্য সঙ্গীর প্রতি কর্তৃত্বপরায়ণ মানসিকতা থেকে যদি তাকে “বেবি” ডাকা হয় তাহলে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।’
‘বেবি’ শব্দটি দুর্বলতা ও ভালোবাসা এবং যত্ন নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। এটি বেঁচে থাকার জন্য ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে। শিশুদের বেঁচে থাকতে হলে অন্যের যত্ন, স্নেহ প্রয়োজন। শিশুদের প্রতি যেমন মানুষের সুরক্ষামূলক মনোভাব থাকে, সঙ্গীর ক্ষেত্রেও একই ধরনের মনোভাব থাকে। সঙ্গীকে ‘বেবি’ বলে ডাকার মাধ্যমে জানান দেওয়া হয় যে, আপনি তাঁর প্রতি শিশুর মতোই যত্নশীল।
কারও সঙ্গে গভীর সম্পর্ক অনুভব মানুষকে নির্ভার, নিরাপদ ও উদ্বেগহীন শৈশবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর ‘বেবি’ শব্দটির সঙ্গেও মিষ্টি, কোমল, স্নেহময় এবং আদর মিশে রয়েছে।
হতে পারে আপনিও আপনার সঙ্গীকে এমন রূপে দেখতে চান, যার একদম শিশুর মতোই মনযোগ আর যত্ন প্রয়োজন!
তথ্যসূত্র: সাইকোলজি পোস্ট, নিউ রিপাবলিক
প্রণয়ের সম্পর্কে ভালোবাসা প্রকাশ করতে প্রেমিক–প্রেমিকারা একে অপরকে কত নামেই ডাকে! একেক ভাষায় এই আদুরে ডাক একেক রকম। বাংলায় প্রেমিক–প্রেমিকাদের মধ্যে বাবু, সোনা, জাদুর মতো শব্দের প্রচলন রয়েছে। তবে সব ভাষায় লিঙ্গ নির্বিশেষে যে আদুরে ডাকটি অহরহ ব্যবহার করা হয়, তা হলো ‘বেবি’।
অসংখ্য গান, কবিতা, প্রেমপত্রে রোমান্টিক সঙ্গীকে ‘বেবি’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এই ইংরেজি শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘শিশু’। তাহলে প্রাপ্তবয়স্ক সঙ্গীকে আদর করে ‘বেবি’ বলে ডাকার এ প্রবণতা এল কোথা থেকে?
পরনির্ভরশীল অসহায় শিশু হয়ে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কাটানো প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম মানুষ। জন্মের পর মানবশিশু পুরোপুরি লালন–পালনকারীর ওপর নির্ভরশীল থাকে। পরবর্তী জীবনে এর গভীর এক মনস্তাত্ত্বিক ছাপ রয়ে যায়। অস্ট্রিয়ান মনোবিশ্লেষক সিগ্মুন্ড ফ্রয়েড তাঁর তত্ত্বে বলেছেন, শৈশব থেকেই মানুষের মধ্যে একই সঙ্গে দুই ধরনের প্রবৃত্তি সক্রিয় থাকে—ইরোস এবং থানাটোস।
ইরোস হলো— বেঁচে থাকা, প্রেম, সৃজনশীলতা এবং যৌনতা, আত্মতুষ্টি এবং প্রজাতি সংরক্ষণের প্রবণতা।
আর গ্রিক শব্দ থানাটোস অর্থ মৃত্যু। এটি বলতে বোঝায়— আগ্রাসন, দুঃখবাদ, ধ্বংস, সহিংসতা এবং হত্যার প্রবণতা। এই প্রবণতা অন্তর্মুখীও হতে পারে। তখন মানুষ আত্মবিনাশী বা আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে উঠতে পারে।
এক কথায়, ইরোস হলো— বেঁচে থাকার তাড়না। আর থানাটোস হলো— মৃত্যুর তাড়না।
ইরোসের কারণে মানুষ জীবনের প্রথম ব্যক্তির সঙ্গে তার সংযুক্তির কথা স্মরণ করতে থাকে— যারা চোখে চোখে রেখেছিল, কোলে তুলে নিয়েছিল, হাসিয়েছিল, আমাদের সঙ্গে আনন্দে মেতেছিল— তাদের স্মৃতি মানুষ ভোলে না। এর জন্য প্রেমিক–প্রেমিকা তাদের অন্তরঙ্গতার সময়টাতে নিজের সবচেয়ে গভীর অনুভূতি আর মূল্যবান স্বরূপের সংস্পর্শ অনুভব করে।
শৈশবে যেমন মানুষের শারীরিক অনুভূতি ও আবেগ একই সঙ্গে মিশ্র অবস্থায় থাকে, যুগলের অন্তরঙ্গতার সময়ও তা মিশ্র অবস্থায় থাকে। এ থেকে সঙ্গীকে ‘বেবি’ বলে ডাকার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।
এর পেছনে একটি বিবর্তনীয় কারণও থাকতে পারে—অনেক পুরুষ তার সঙ্গীর সঙ্গে শিশুসুলভ আচরণ করতে পছন্দ করে। এমনকি তারা এমন সঙ্গীর সন্ধান করে, যার দেখলে বা যার সংস্পর্শ অবচেতনভাবে শিশুর সঙ্গ বলে মনে হয়।
বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রিয়ার প্রাণীদের আচরণ বিশেষজ্ঞ কনরাড লরেঞ্জ বলেন, শিশুর মধ্যে অপাপবিদ্ধ সৌন্দর্য দেখতে পাওয়া হলো একটি বিবর্তনীয় সুবিধাজনক অভিযোজন। সার্বক্ষণিক যত্নের মধ্যে রাখতে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উৎসাহ–অনুপ্রেরণার প্রয়োজনেই এমন অভিযোজন।
লরেঞ্জের মতে, শিশুর সৌন্দর্যের মধ্যে ওই উৎসাহ পায় মানুষ। তাঁর ধারণা, পুরুষেরা এই প্রবণতা থেকে নারীর মধ্যেও এ ধরনের সৌন্দর্য খোঁজে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ‘বেবি’ ডাকটি শুরুতে শুধু নারীদের জন্যই বরাদ্দ ছিল। পরবর্তীতে পুরুষ সঙ্গীকেও ‘বেবি’ সম্বোধন করার প্রবণতা শুরু হয়েছে।
সঙ্গীকে আদুরে নামে ডাকা স্বাস্থ্যকর সম্পর্কেরই নিদর্শন। এতে যুগলের মধ্যে একান্ত ব্যক্তিগত জগৎ তৈরি সহজ হয়। মনোবিজ্ঞানী স্টিভেন স্টোসনি বলেন, ‘প্রণয় যখন জমে ক্ষীর, তখন আসল নামে ডাকাটার মধ্যে কোনো আবেগ আবেদন থাকে না!’
সম্পর্ক ও যৌনতা বিষয়ক লেখক লোগান লেভকফ বলেন, ‘শিশুরা পরম সম্পদের মতো। কেউ আপনার “বেবি” মানে হলো সে একান্ত আপনার। অবশ্য সঙ্গীর প্রতি কর্তৃত্বপরায়ণ মানসিকতা থেকে যদি তাকে “বেবি” ডাকা হয় তাহলে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।’
‘বেবি’ শব্দটি দুর্বলতা ও ভালোবাসা এবং যত্ন নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। এটি বেঁচে থাকার জন্য ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে। শিশুদের বেঁচে থাকতে হলে অন্যের যত্ন, স্নেহ প্রয়োজন। শিশুদের প্রতি যেমন মানুষের সুরক্ষামূলক মনোভাব থাকে, সঙ্গীর ক্ষেত্রেও একই ধরনের মনোভাব থাকে। সঙ্গীকে ‘বেবি’ বলে ডাকার মাধ্যমে জানান দেওয়া হয় যে, আপনি তাঁর প্রতি শিশুর মতোই যত্নশীল।
কারও সঙ্গে গভীর সম্পর্ক অনুভব মানুষকে নির্ভার, নিরাপদ ও উদ্বেগহীন শৈশবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর ‘বেবি’ শব্দটির সঙ্গেও মিষ্টি, কোমল, স্নেহময় এবং আদর মিশে রয়েছে।
হতে পারে আপনিও আপনার সঙ্গীকে এমন রূপে দেখতে চান, যার একদম শিশুর মতোই মনযোগ আর যত্ন প্রয়োজন!
তথ্যসূত্র: সাইকোলজি পোস্ট, নিউ রিপাবলিক
খাবার মজাদার করতে আমরা সাধারণভাবে তেল-মসলার খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলি। সেখান থেকে বাদ যায় না পেঁয়াজ কিংবা রসুন। পেঁয়াজকে কায়দা করে সরিয়ে রাখলেও খাবার মজাদার হতে পারে। তেমনই কিছু রেসিপি...
১২ মিনিট আগেবাংলা অঞ্চলে মিষ্টিজাতীয় প্রাচীন খাবারগুলোর মধ্যে সন্দেশের নাম আছে একেবারে প্রথম দিকে। সব মিষ্টির কিছু না কিছু বদল হলেও, এর বদল হয়েছে খুবই কম। যশোরের নলেন গুড়ের সন্দেশ, মানিকগঞ্জ বা নাগরপুরের প্যারা সন্দেশ, পাবনার মাছের পেটি সন্দেশ ইত্যাদি কে না খেতে পছন্দ করে!
২৮ মিনিট আগেজীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঘুরেফিরে এসেছে দারুচিনি দ্বীপের কথা, তার রহস্যময় শ্যামলিমার কথা, সেই সবুজের গহিনে দিকহারা নাবিকের আশ্রয়-আকাঙ্ক্ষার কথা। এই দারুচিনি দ্বীপ কি আসলে কোনো সমুদ্রঘেরা ভূখণ্ড, নাকি বনলতা সেন নিজেই, তা নিয়ে কবিরা বিতর্ক করুক। আমরা বরং এই দ্বীপের তত্ত্বতালাশ করি।
৩৫ মিনিট আগে‘প্রসেসেস’-এ প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভাতের মাড় ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি হজমযোগ্য স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে কাজ করে। এমনকি এটি ওজন কমাতে পারে।
৪১ মিনিট আগে