অনলাইন ডেস্ক
কৈশোর মানেই বয়ঃসন্ধিকাল। এই বয়সে লিঙ্গনির্বিশেষে বাল্যকালের মধুর কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। পরিবর্তন আসে আচরণে। না শিশু, না প্রাপ্তবয়স্ক— কোনো দলেই আর জায়গা হয় না। আদরের শিশুর হঠাৎ এই পরিবর্তনে অভিভাবকেরাও সহজবোধ করেন না। আর হঠাৎ আদরে ভাটা পড়ে যাওয়া কিশোর-কিশোরী চারপাশের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতেও হিমশিম খায়। রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছেন, ‘তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই!’
কৈশোরের এই জটিল সন্ধিক্ষণ কখনো কখনো পারিবারিক সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলে। সম্পর্কে দূরত্বের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি করে চোখে পড়ে মা-মেয়ের মধ্যে। এই সময়টাতে কিশোরীর প্রাইভেসি অর্থাৎ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা-জ্ঞান টনটনে হয়।
সম্পর্কের ব্যবধান শুরু হয় কিশোরী মেয়ের হুট করেই দূরত্ব বজায় রেখে চলার প্রবণতার মাধ্যমে। কিশোর বয়সে পরিবারকে সময় দেওয়ার চেয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে, একা নিজের ঘরে বা হাল আমলে স্মার্টফোনে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করে কিশোরী। মায়েরা যতই শাসনের দণ্ড শক্ত করে ধরেন, মেয়েরা আরও বেশি দূরে সরে যায়। তারা আরও স্বাধীনতা চায়, স্বাতন্ত্র্য চায়। পান থেকে চুন খসলেই অভিমান করে। আচরণের এ বৈপরীত্য দুজনের সম্পর্ক রেষারেষিতে রূপ নেয়।
কৈশোরের কয়েকটি বছর মা-মেয়ের মধ্যে শোনা যায় শত অভিযোগ অনুযোগের ফিরিস্তি। মায়েরা কিশোরী কন্যার ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন, অযৌক্তিক আচরণ, অকারণে বিরক্তি প্রকাশ এবং কষ্ট দিয়ে কথা বলা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন। কিশোরীরা মায়ের শাসনে বিরক্ত হয়। শুধু ভাবে, মা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন, মা তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে চান না, দুজনের বোঝাপড়ার ঘাটতি, ওজর-আবদার শুনতে মায়ের অনিচ্ছা, কথা না শুনলেই চিৎকার-চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তোলেন—মায়ের বিরুদ্ধে এমন একগাদা অভিযোগ নিয়ে বসে থাকা তারা।
মায়ের প্রতি কিশোরীদের বিরূপ আচরণের কারণ
মায়েরা আশা করে বসে থাকেন, এ সময়টাতে মেয়ে তাঁর সঙ্গে আরও খোলাখুলি কথা বলবে, মাকে সময় দেবে। তাঁরা আশা করেন, মায়ের সঙ্গে এ সময়টাতে তাঁদের যেমন সম্পর্ক ছিল, মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মধুর হবে। কিন্তু বাস্তবে তা সাধারণত হয় না। কাঙ্ক্ষিত বাস্তবতার দেখা না পেয়ে মায়েরা হতাশ হন, মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান।
খেয়াল রাখতে হবে, কিশোরীর আচরণ ও মেজাজ যদিও হুট করেই উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়, তাহলে এটি শুধু হরমোনের প্রভাবের কারণে নয়; বরং বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থা বা বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তার মতো মানসিক স্বাস্থ্যজনিত কোনো সমস্যা। এ ক্ষেত্রে কোনো পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যেসব কারণে কিশোরীদের বিরূপ আচরণ দেখা দিতে পারে—
স্বাধীন হওয়ার ইচ্ছা
বয়ঃসন্ধিকাল হলো এমন একটা সময়, যখন মেয়েদের মধ্যে ‘ব্যক্তিত্ব’ বা ‘অহং’ সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠে। তারা এ সময় বেশ কয়েকটি ব্যক্তিত্ব ও পরিচয় নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়। নিজেকে বোঝার চেষ্টা করে যে কোন ব্যক্তিত্ব তাকে মানায়। ব্যক্তিত্বের এ ঘন ঘন পরিবর্তনকে অনেক মা-বাবা বেয়াড়া আচরণ বলে ধরে নেন।
এ ধরনের আচরণের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে হবে যে, এটা তার নিজেকে প্রকাশেরই ধরন কি না। তাকে তার পোশাক, কাজকর্ম ও নিজেকে প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে।
বয়ঃসন্ধিকাল ও মস্তিষ্কের বিকাশ
কৈশোরের সময়টাতে অনেকেই নানা রকম হরমোন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। মেয়েদের মধ্যে এর প্রভাব বেশি দেখা যায়। এ সময় তাদের মেজাজের ঘন ঘন পরিবর্তন দেখা যায়, তারা আবেগপ্রবণও হয় বেশি। এ কারণে তাদের মুহূর্তেই হাসতে দেখা যায়, আবার পরক্ষণেই কাঁদতে দেখা যায়। আবেগ-অনুভূতির এ পরিবর্তনের কারণে তারা অন্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে সহজে।
তাই এ সময় তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে এই আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে মানিয়ে চলা শেখাতে হবে।
আধুনিক হয়ে ওঠার তাড়না
কৈশোরের সময়টাতে হাল ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার একটা প্রবণতা থাকে। সব কিশোরীর মনেই একটি তাড়না থাকে, তাকে যেন অন্যদের চেয়ে আলাদা এবং অবশ্যই সেরা দেখা যায়। হাল ফ্যাশনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পারলে সে হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকে। হীনম্মন্যতা ক্রমে বিষণ্নতায়, উদ্বিগ্নতায় ও আত্মহননের চিন্তায় পর্যবসিত হয়।
এ প্রতিযোগিতা শুধু ফ্যাশনের ক্ষেত্রেই নয়, পড়ালেখায়, সামাজিক অবস্থানে, বন্ধুবান্ধবের কাছে গুরুত্ব পাওয়ার মতো নানা বিষয়ে। ফলে ঘরের বাইরে নানা দিক থেকেই মানসিক চাপ বোধ করে তারা। এ সময়টাতে ব্যর্থতার শঙ্কা তাকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রাখে।
কিশোরীর মা-বাবা হিসেবে এ ধরনের চাপ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং তাদের এ সময়ের সঙ্গে মানিয়ে চলা শেখাতে হবে। মায়েরা এসব ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাঁরা কিশোরীকে নিজের যত্ন নেওয়া, আত্মবিশ্বাস তৈরি ও নিজেকে মূল্যায়ন করার উপায় দেখিয়ে দিতে পারেন।
আর কিছু না হলেও, কখনো শুধু মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনার মাধ্যমেও তাকে সহযোগিতা করা যায়। কিশোরীর দৃষ্টিভঙ্গি ও সমস্যা মায়েদের কাছে নগণ্য মনে হতে পারে। কিন্তু এ সময় তাদের আবেগ থাকে বেশি। তাই সমাধান না করতে পারলেও তার কথা শোনা এবং সহমর্মী হওয়া প্রয়োজন।
অন্যদের সঙ্গে তাল মেলানোর প্রবণতা
বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীরা পরিবারের চেয়ে বন্ধুবান্ধবকে সময় দিতে বেশি পছন্দ করে। তাই বন্ধুদের সঙ্গে মানানসই পোশাক, জুতা, মোবাইল ফোন ইত্যাদি চাহিদা তৈরি হয় কিশোরীদের মধ্যে। এ তাল মিলিয়ে চলার প্রবণতার কারণে তারা ধীরে ধীরে মা-বাবার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। কখনো কখনো চাহিদা পূরণ না হলে অবাধ্য হয়ে উঠতে পারে। অনেক কিশোরীই পরিবারের আর্থিক অবস্থাকে গ্রাহ্য করতে চায় না বা পরিস্থিতির গুরুত্ব অনেক সময় তারা অনুধাবন করতে পারে না।
বন্ধুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার প্রবণতা কিশোরীদের মধ্যে সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য। এতে ব্যর্থ হলে তাদের আচরণে অসহিষ্ণুতা দেখা দিতে পারে।
কিশোরীদের এসব আচরণ ব্যক্তিগতভাবে না নেওয়াটা জরুরি। একসময় তারা বাবা-মায়ের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। কিছু কিশোরীর এ অনুধাবন জলদি হয়, কারও ক্ষেত্রে দেরিতে।
যোগাযোগ
কিশোরীদের যোগাযোগদক্ষতা কিশোরদের তুলনায় দ্রুত বিকশিত হয়। তবে অনেকে তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। কিশোরীদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে দেখা যায়, তারা এককথায় এবং প্রায় একই ধরনের যেমন: হুম, জানি তো, যাহোক—ইত্যাদি উত্তর দেয়। এটি প্রায়ই মায়েদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়। মেয়েদেরও মায়ের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ থাকে। এভাবে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। তর্ক, ঝগড়া ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।
কিশোরীরা তাদের আবেগ, অনুভূতি, চাহিদা ব্যক্ত করতে তেমন পটু হয় না। তারা যোগাযোগকে অনেক সময় অন্যকে নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এ কারণে তারা অপরপক্ষের আগ্রহ বুঝতে পারলে সম্পূর্ণ তথ্য দিতে চায় না।
এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে মায়েরা যা করতে পারেন তা হলো, বিষয়টি নিয়ে আর কথা না বাড়ানো। এটা মনে হওয়াটা স্বাভাবিক যে এই বয়সী মেয়েদের অনেক কিছু শেখার আছে, তার অনেক কিছু শুধরে দেওয়ার আছে। কিন্তু এটিও মাথায় রাখতে হবে যে এই সময়টাতে কিশোরীর জীবনে প্রতিটা দিন অনেক কিছু ঘটছে এবং বহু পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে সে যাচ্ছে। কখনো কখনো সমস্ত খ্যাপাটে স্বভাবের প্রশ্রয় চায়। তারা তাদের স্বভাবের বিপরীতে কোনো মন্তব্য শুনতে প্রস্তুত থাকে না। কেবল নিজের কথা বলতে চায়।
তাই তাদের বলতে দেওয়া উচিত। যোগাযোগের ধরন যেমনই হোক, তা একেবারে বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়।
নিয়ম ও সীমা নির্ধারণ
কিশোরীরা ভাবে, তারা সব জানে। কিন্তু তারা অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন থাকে না। এদিকে মায়েরা তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে সচেতন করতে চান এবং সব বিষয়েই আতঙ্কিত থাকেন। দুজনের এ বৈপরীত্য মতবিরোধে রূপ নিতে পারে।
কিশোরীরা মনে করে, ঘরের নিয়মশৃঙ্খলা তাদের জীবন উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত করছে। তবে এসব সীমা নির্ধারণ ও নিয়মশৃঙ্খলা কিশোরীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, দায়িত্ববোধ ও কর্মের পরিণতি জ্ঞান তৈরি করার জন্য আবশ্যক। এতে তাদের মধ্যে জবাবদিহি তৈরি হয়।
তবে নিয়মশৃঙ্খলা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেশি কঠোরতা অবলম্বন করলে কিশোরীদের মধ্যে বিপ্লবী ভাব দেখা দিতে পারে। তাই সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হবে।
ব্যক্তিগত সমস্যা
কিশোর বয়সে মেয়েদের ‘ব্যক্তিগত জীবনের’ শুরু হয়, যা সম্পর্কে অনেক মা-ই সচেতন থাকেন না। বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক, বাইরে কোনো অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা, অন্যদের সঙ্গে তাল মেলানোর প্রতিযোগিতা বা অন্য কোনো চাপ—অনেক কিছুই তার মানসিক অবস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে।
ঘরের বাইরেও যে তার একটি পৃথিবী গড়ে উঠছে, সে সম্পর্কে মায়েদের সহানুভূতিশীল হতে হবে। বাইরের পৃথিবীর নতুন নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য তার যে পরামর্শ প্রয়োজন, তা সবচেয়ে বেশি মায়ের কাছেই পাওয়া সম্ভব। কিশোরীদেরও অন্য সব প্রাপ্তবয়স্কের মতোই বাইরের চ্যালেঞ্জ, উৎকণ্ঠা, চাপ ইত্যাদি মোকাবিলা করতে হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানুষের জীবনযাপনের ধরনের সঙ্গে এতটাই জড়িয়ে গেছে যে এর উল্লেখ ছাড়া কোনো আলোচনাই সম্পূর্ণ হয় না। বেশির ভাগ মায়েরই দাবি, তাঁরা সন্তানের অনলাইন কার্যকলাপ জানেন। তবে গবেষণা বলছে, ৭০ শতাংশ কিশোরই তাদের অনলাইন ব্যক্তিত্বকে পরিবারের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে।
কিশোরীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হয় বেশি। নানা ধরনের ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে তারা খাবারে অনীহা, নিজের ক্ষতি ও নিজেকে নিখুঁত হিসেবে উপস্থাপন করার প্রবণতার ফাঁদে পড়ে।
এ ছাড়া কিশোরীদের মধ্যে মোবাইল ফোনের প্রতি তীব্র আসক্তি দেখা দেয়। এটি তাদের ঘুম, খাওয়া, মেজাজ ও সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
কিশোরীদের সঙ্গে সম্পর্কে উন্নতি করতে চাইলে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে—এর দায়িত্বের গুরু ভাগ মায়েদেরই। নিজের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। মনে রাখতে হবে, মেয়ের সব ভুলের দায় যেমন মায়েদের নয়, তেমন তাদের সব অর্জনের কৃতিত্বও মায়েদের নয়।
সর্বোপরি যেকোনো পরিস্থিতিতে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। একে অপরের কথা, অভিযোগ, অনুযোগ শোনার জন্য মনকে সব সময়কে উদার রাখতে হবে। বাঁধন ছিঁড়ে মুক্ত হওয়ার প্রবণতা মেয়ের; আর মায়ের দায়িত্ব হলো, তার জন্য অপেক্ষা করা, তার ফিরে আসার পথ খোলা রাখা।
কৈশোর মানেই বয়ঃসন্ধিকাল। এই বয়সে লিঙ্গনির্বিশেষে বাল্যকালের মধুর কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। পরিবর্তন আসে আচরণে। না শিশু, না প্রাপ্তবয়স্ক— কোনো দলেই আর জায়গা হয় না। আদরের শিশুর হঠাৎ এই পরিবর্তনে অভিভাবকেরাও সহজবোধ করেন না। আর হঠাৎ আদরে ভাটা পড়ে যাওয়া কিশোর-কিশোরী চারপাশের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতেও হিমশিম খায়। রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছেন, ‘তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই!’
কৈশোরের এই জটিল সন্ধিক্ষণ কখনো কখনো পারিবারিক সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলে। সম্পর্কে দূরত্বের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি করে চোখে পড়ে মা-মেয়ের মধ্যে। এই সময়টাতে কিশোরীর প্রাইভেসি অর্থাৎ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা-জ্ঞান টনটনে হয়।
সম্পর্কের ব্যবধান শুরু হয় কিশোরী মেয়ের হুট করেই দূরত্ব বজায় রেখে চলার প্রবণতার মাধ্যমে। কিশোর বয়সে পরিবারকে সময় দেওয়ার চেয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে, একা নিজের ঘরে বা হাল আমলে স্মার্টফোনে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করে কিশোরী। মায়েরা যতই শাসনের দণ্ড শক্ত করে ধরেন, মেয়েরা আরও বেশি দূরে সরে যায়। তারা আরও স্বাধীনতা চায়, স্বাতন্ত্র্য চায়। পান থেকে চুন খসলেই অভিমান করে। আচরণের এ বৈপরীত্য দুজনের সম্পর্ক রেষারেষিতে রূপ নেয়।
কৈশোরের কয়েকটি বছর মা-মেয়ের মধ্যে শোনা যায় শত অভিযোগ অনুযোগের ফিরিস্তি। মায়েরা কিশোরী কন্যার ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন, অযৌক্তিক আচরণ, অকারণে বিরক্তি প্রকাশ এবং কষ্ট দিয়ে কথা বলা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন। কিশোরীরা মায়ের শাসনে বিরক্ত হয়। শুধু ভাবে, মা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন, মা তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে চান না, দুজনের বোঝাপড়ার ঘাটতি, ওজর-আবদার শুনতে মায়ের অনিচ্ছা, কথা না শুনলেই চিৎকার-চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তোলেন—মায়ের বিরুদ্ধে এমন একগাদা অভিযোগ নিয়ে বসে থাকা তারা।
মায়ের প্রতি কিশোরীদের বিরূপ আচরণের কারণ
মায়েরা আশা করে বসে থাকেন, এ সময়টাতে মেয়ে তাঁর সঙ্গে আরও খোলাখুলি কথা বলবে, মাকে সময় দেবে। তাঁরা আশা করেন, মায়ের সঙ্গে এ সময়টাতে তাঁদের যেমন সম্পর্ক ছিল, মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মধুর হবে। কিন্তু বাস্তবে তা সাধারণত হয় না। কাঙ্ক্ষিত বাস্তবতার দেখা না পেয়ে মায়েরা হতাশ হন, মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান।
খেয়াল রাখতে হবে, কিশোরীর আচরণ ও মেজাজ যদিও হুট করেই উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়, তাহলে এটি শুধু হরমোনের প্রভাবের কারণে নয়; বরং বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থা বা বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তার মতো মানসিক স্বাস্থ্যজনিত কোনো সমস্যা। এ ক্ষেত্রে কোনো পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যেসব কারণে কিশোরীদের বিরূপ আচরণ দেখা দিতে পারে—
স্বাধীন হওয়ার ইচ্ছা
বয়ঃসন্ধিকাল হলো এমন একটা সময়, যখন মেয়েদের মধ্যে ‘ব্যক্তিত্ব’ বা ‘অহং’ সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠে। তারা এ সময় বেশ কয়েকটি ব্যক্তিত্ব ও পরিচয় নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়। নিজেকে বোঝার চেষ্টা করে যে কোন ব্যক্তিত্ব তাকে মানায়। ব্যক্তিত্বের এ ঘন ঘন পরিবর্তনকে অনেক মা-বাবা বেয়াড়া আচরণ বলে ধরে নেন।
এ ধরনের আচরণের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে হবে যে, এটা তার নিজেকে প্রকাশেরই ধরন কি না। তাকে তার পোশাক, কাজকর্ম ও নিজেকে প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে।
বয়ঃসন্ধিকাল ও মস্তিষ্কের বিকাশ
কৈশোরের সময়টাতে অনেকেই নানা রকম হরমোন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। মেয়েদের মধ্যে এর প্রভাব বেশি দেখা যায়। এ সময় তাদের মেজাজের ঘন ঘন পরিবর্তন দেখা যায়, তারা আবেগপ্রবণও হয় বেশি। এ কারণে তাদের মুহূর্তেই হাসতে দেখা যায়, আবার পরক্ষণেই কাঁদতে দেখা যায়। আবেগ-অনুভূতির এ পরিবর্তনের কারণে তারা অন্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে সহজে।
তাই এ সময় তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে এই আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে মানিয়ে চলা শেখাতে হবে।
আধুনিক হয়ে ওঠার তাড়না
কৈশোরের সময়টাতে হাল ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার একটা প্রবণতা থাকে। সব কিশোরীর মনেই একটি তাড়না থাকে, তাকে যেন অন্যদের চেয়ে আলাদা এবং অবশ্যই সেরা দেখা যায়। হাল ফ্যাশনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পারলে সে হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকে। হীনম্মন্যতা ক্রমে বিষণ্নতায়, উদ্বিগ্নতায় ও আত্মহননের চিন্তায় পর্যবসিত হয়।
এ প্রতিযোগিতা শুধু ফ্যাশনের ক্ষেত্রেই নয়, পড়ালেখায়, সামাজিক অবস্থানে, বন্ধুবান্ধবের কাছে গুরুত্ব পাওয়ার মতো নানা বিষয়ে। ফলে ঘরের বাইরে নানা দিক থেকেই মানসিক চাপ বোধ করে তারা। এ সময়টাতে ব্যর্থতার শঙ্কা তাকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রাখে।
কিশোরীর মা-বাবা হিসেবে এ ধরনের চাপ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং তাদের এ সময়ের সঙ্গে মানিয়ে চলা শেখাতে হবে। মায়েরা এসব ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাঁরা কিশোরীকে নিজের যত্ন নেওয়া, আত্মবিশ্বাস তৈরি ও নিজেকে মূল্যায়ন করার উপায় দেখিয়ে দিতে পারেন।
আর কিছু না হলেও, কখনো শুধু মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনার মাধ্যমেও তাকে সহযোগিতা করা যায়। কিশোরীর দৃষ্টিভঙ্গি ও সমস্যা মায়েদের কাছে নগণ্য মনে হতে পারে। কিন্তু এ সময় তাদের আবেগ থাকে বেশি। তাই সমাধান না করতে পারলেও তার কথা শোনা এবং সহমর্মী হওয়া প্রয়োজন।
অন্যদের সঙ্গে তাল মেলানোর প্রবণতা
বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীরা পরিবারের চেয়ে বন্ধুবান্ধবকে সময় দিতে বেশি পছন্দ করে। তাই বন্ধুদের সঙ্গে মানানসই পোশাক, জুতা, মোবাইল ফোন ইত্যাদি চাহিদা তৈরি হয় কিশোরীদের মধ্যে। এ তাল মিলিয়ে চলার প্রবণতার কারণে তারা ধীরে ধীরে মা-বাবার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। কখনো কখনো চাহিদা পূরণ না হলে অবাধ্য হয়ে উঠতে পারে। অনেক কিশোরীই পরিবারের আর্থিক অবস্থাকে গ্রাহ্য করতে চায় না বা পরিস্থিতির গুরুত্ব অনেক সময় তারা অনুধাবন করতে পারে না।
বন্ধুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার প্রবণতা কিশোরীদের মধ্যে সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য। এতে ব্যর্থ হলে তাদের আচরণে অসহিষ্ণুতা দেখা দিতে পারে।
কিশোরীদের এসব আচরণ ব্যক্তিগতভাবে না নেওয়াটা জরুরি। একসময় তারা বাবা-মায়ের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। কিছু কিশোরীর এ অনুধাবন জলদি হয়, কারও ক্ষেত্রে দেরিতে।
যোগাযোগ
কিশোরীদের যোগাযোগদক্ষতা কিশোরদের তুলনায় দ্রুত বিকশিত হয়। তবে অনেকে তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। কিশোরীদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে দেখা যায়, তারা এককথায় এবং প্রায় একই ধরনের যেমন: হুম, জানি তো, যাহোক—ইত্যাদি উত্তর দেয়। এটি প্রায়ই মায়েদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়। মেয়েদেরও মায়ের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ থাকে। এভাবে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। তর্ক, ঝগড়া ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।
কিশোরীরা তাদের আবেগ, অনুভূতি, চাহিদা ব্যক্ত করতে তেমন পটু হয় না। তারা যোগাযোগকে অনেক সময় অন্যকে নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এ কারণে তারা অপরপক্ষের আগ্রহ বুঝতে পারলে সম্পূর্ণ তথ্য দিতে চায় না।
এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে মায়েরা যা করতে পারেন তা হলো, বিষয়টি নিয়ে আর কথা না বাড়ানো। এটা মনে হওয়াটা স্বাভাবিক যে এই বয়সী মেয়েদের অনেক কিছু শেখার আছে, তার অনেক কিছু শুধরে দেওয়ার আছে। কিন্তু এটিও মাথায় রাখতে হবে যে এই সময়টাতে কিশোরীর জীবনে প্রতিটা দিন অনেক কিছু ঘটছে এবং বহু পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে সে যাচ্ছে। কখনো কখনো সমস্ত খ্যাপাটে স্বভাবের প্রশ্রয় চায়। তারা তাদের স্বভাবের বিপরীতে কোনো মন্তব্য শুনতে প্রস্তুত থাকে না। কেবল নিজের কথা বলতে চায়।
তাই তাদের বলতে দেওয়া উচিত। যোগাযোগের ধরন যেমনই হোক, তা একেবারে বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়।
নিয়ম ও সীমা নির্ধারণ
কিশোরীরা ভাবে, তারা সব জানে। কিন্তু তারা অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন থাকে না। এদিকে মায়েরা তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে সচেতন করতে চান এবং সব বিষয়েই আতঙ্কিত থাকেন। দুজনের এ বৈপরীত্য মতবিরোধে রূপ নিতে পারে।
কিশোরীরা মনে করে, ঘরের নিয়মশৃঙ্খলা তাদের জীবন উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত করছে। তবে এসব সীমা নির্ধারণ ও নিয়মশৃঙ্খলা কিশোরীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, দায়িত্ববোধ ও কর্মের পরিণতি জ্ঞান তৈরি করার জন্য আবশ্যক। এতে তাদের মধ্যে জবাবদিহি তৈরি হয়।
তবে নিয়মশৃঙ্খলা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেশি কঠোরতা অবলম্বন করলে কিশোরীদের মধ্যে বিপ্লবী ভাব দেখা দিতে পারে। তাই সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হবে।
ব্যক্তিগত সমস্যা
কিশোর বয়সে মেয়েদের ‘ব্যক্তিগত জীবনের’ শুরু হয়, যা সম্পর্কে অনেক মা-ই সচেতন থাকেন না। বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক, বাইরে কোনো অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা, অন্যদের সঙ্গে তাল মেলানোর প্রতিযোগিতা বা অন্য কোনো চাপ—অনেক কিছুই তার মানসিক অবস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে।
ঘরের বাইরেও যে তার একটি পৃথিবী গড়ে উঠছে, সে সম্পর্কে মায়েদের সহানুভূতিশীল হতে হবে। বাইরের পৃথিবীর নতুন নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য তার যে পরামর্শ প্রয়োজন, তা সবচেয়ে বেশি মায়ের কাছেই পাওয়া সম্ভব। কিশোরীদেরও অন্য সব প্রাপ্তবয়স্কের মতোই বাইরের চ্যালেঞ্জ, উৎকণ্ঠা, চাপ ইত্যাদি মোকাবিলা করতে হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানুষের জীবনযাপনের ধরনের সঙ্গে এতটাই জড়িয়ে গেছে যে এর উল্লেখ ছাড়া কোনো আলোচনাই সম্পূর্ণ হয় না। বেশির ভাগ মায়েরই দাবি, তাঁরা সন্তানের অনলাইন কার্যকলাপ জানেন। তবে গবেষণা বলছে, ৭০ শতাংশ কিশোরই তাদের অনলাইন ব্যক্তিত্বকে পরিবারের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে।
কিশোরীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হয় বেশি। নানা ধরনের ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে তারা খাবারে অনীহা, নিজের ক্ষতি ও নিজেকে নিখুঁত হিসেবে উপস্থাপন করার প্রবণতার ফাঁদে পড়ে।
এ ছাড়া কিশোরীদের মধ্যে মোবাইল ফোনের প্রতি তীব্র আসক্তি দেখা দেয়। এটি তাদের ঘুম, খাওয়া, মেজাজ ও সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
কিশোরীদের সঙ্গে সম্পর্কে উন্নতি করতে চাইলে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে—এর দায়িত্বের গুরু ভাগ মায়েদেরই। নিজের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। মনে রাখতে হবে, মেয়ের সব ভুলের দায় যেমন মায়েদের নয়, তেমন তাদের সব অর্জনের কৃতিত্বও মায়েদের নয়।
সর্বোপরি যেকোনো পরিস্থিতিতে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। একে অপরের কথা, অভিযোগ, অনুযোগ শোনার জন্য মনকে সব সময়কে উদার রাখতে হবে। বাঁধন ছিঁড়ে মুক্ত হওয়ার প্রবণতা মেয়ের; আর মায়ের দায়িত্ব হলো, তার জন্য অপেক্ষা করা, তার ফিরে আসার পথ খোলা রাখা।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১ দিন আগে