মইনুল হাসান, ফ্রান্স
এবার গরমের ছুটি কাটাতে গিয়েছিলাম দক্ষিণ ফ্রান্সের পারফিউমের উৎসকেন্দ্র গ্রাস শহরে। ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষে, আল্পসের কোলে ছবির মতো সুন্দর ছোট এই শহরকে বলা হয় ‘পারফিউমের রাজধানী’ বা ‘সুগন্ধি শহর’। দিগন্ত ছোঁয়া সবুজ উপত্যকা, দূরে মহিমাময় নির্জনতায় পাহাড়, নির্ঝর ধারা। এই অঞ্চলে অকৃপণ সূর্যালোক আর বৃষ্টির কারণে বহু শতাব্দী ধরে নানান সুগন্ধি ফুলের চাষ হয়। কমলা, জুঁই, বেলি, ল্যাভেন্ডার, রজনীগন্ধা, নার্সিসাস, জেরানিয়াম, আইরিস, গোলাপের দিগন্ত বিস্তীর্ণ মাঠ। এ যেন ফুলের রাজ্য, ফুলের মেলা, এক রূপকথার দেশ।
গ্রাস শহরের প্রবেশমুখের গোলচত্বরে পারফিউম পাত্রের ভাস্কর্য ঘিরে ঝরনা। অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, এই শহরের প্রতিটি রাস্তা, গলি বহু গোলাপি ছাতায় ঢাকা। অবশ্য গোলাপি ছাতার রহস্য উদ্ঘাটন করতে আমাদের বেশি বেগ পেতে হয়নি।
এ অঞ্চলে একটি বিস্ময়কর, বিরল উজ্জ্বল গোলাপি রঙের গোলাপ জন্মে। যেমন তার রূপ, তেমনি তার গুণ। অপূর্ব সুবাসযুক্ত এ গোলাপের নাম ‘সেন্টিফোলিয়া’ বা ‘মে মাসের গোলাপ’। ‘সেন্টিফোলিয়া’ মানে শত পাপড়ির গোলাপ। পাপড়ির প্রাচুর্য বোঝাতেই জনপ্রিয় এই নামটি দেওয়া হয়েছে। আসলে এই গোলাপে রয়েছে ৩০টির মতো পাপড়ি। প্রায় কাঁটাবিহীন এ গোলাপগাছের উচ্চতা ২ মিটার বা ৭ ফুট পর্যন্ত। এর একটি ধরনের নাম রোজা সেন্টিফোলিয়া। বেশ কিছু গোলাপ প্রজাতির সংকর করে উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা এই প্রজাতি তৈরি করেছেন।
মে মাসে ফুল তোলা হয় বলেই অনেকে ‘মে মাসের গোলাপ’ নামে ডাকে এ গোলাপকে। ফুল তোলার সময় বিশেষ কায়দা বা নিয়ম মেনে তুলতে হয়। প্রথমে তর্জনী এবং মধ্যমার মাঝখানে রেখে ফুলের নিচে বৃন্ত হালকা করে চেপে ধরতে হবে। এরপর ফুলের ওপরে মাঝখানে বুড়ো আঙুল দিয়ে আলতো করে চেপে ধরে খানিকটা বাঁকিয়ে মট করে ভেঙে গাছ থেকে আলাদা করা হয়। ফুল তোলা দেখার মতো দৃশ্য।
বাহারি বাগানে অজস্র ফুলের অপূর্ব সমাহারে ফুলশ্রমিকেরা কোমল হাতে ছন্দময় শব্দ তুলে অসম্ভব দ্রুততায় এক মনে ফুল তুলে যাচ্ছেন। পাহাড়, সাগর আর নীল আকাশের ক্যানভাসে নিসর্গের সে এক অপূর্ব রূপ। রাতের সজীবতা ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই, খুব ভোরে এই ফুল তোলা হয়ে থাকে। পাপড়ি তখনো শিশিরের আর্দ্রতা মাখা! ফুলগুলো পাটের তৈরি বস্তায় করে সূর্যের আলো প্রখর হওয়ার আগেই কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। মোটেই সময় নষ্ট না করে, দ্রুত বিশাল সব আধারে পাতন অর্থাৎ ডিস্টিলেশন শুরু করা হয়।
সকালবেলার গোলাপের সুবাসের সব গুণ যাতে অক্ষুণ্ন থাকে, সে জন্যই এমন ত্বরিত ব্যবস্থা। এক কেজি ‘অ্যাবসলু’ অর্থাৎ উদ্বায়ী তেলের জন্য প্রয়োজন ৪ হাজার কেজি পাপড়ি। এই এলাকায় প্রতিবছর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টন সেন্টিফোলিয়া গোলাপ উৎপাদন করা হয়। আর শ্যানেল, ডিওর, গালিমার, গারল্যাঁসহ নামকরা সুগন্ধি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সেন্টিফোলিয়ার উদ্বায়ী তেল কিনে নিতে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার ইউরো খরচ করতে মোটেই দ্বিধা করে না।
মন মাতানো সুবাস আর গুণগত মান শুধু এই গ্রাসের নীল সমুদ্রের বাতাসে জন্মানো বিশেষ গোলাপের পাপড়িতেই সঞ্চিত হয়, পৃথিবীর আর কোথাও নয়। এই কিংবদন্তি ফুলের নির্যাসে সৃষ্টি হয়েছে নামকরা সব সুগন্ধি। সেগুলোর মধ্যে আছে শ্যানেল ফাইভ, ক্যালভিন ক্লেইনের এতারনিতে বা অনন্তকাল, জিভাঞ্চির আমারিজ, জয়, ডিওর, মিস ডিওর ইত্যাদি।
এই জাদুকরী গোলাপটিকে ঘিরে গ্রাস শহরের দৈনন্দিন জীবন আবর্তিত হচ্ছে বহু বছর ধরে। গোলাপের চাষ, কোমল হাতে বিশেষ কায়দায় পাপড়ি তোলা, জাদুকরী সুবাসের নির্যাস নিঃসরণ, সংগ্রহ এবং পরিশেষে নতুন সুগন্ধি সৃষ্টির শৈল্পিক কলাকৌশল এক দিনে গড়ে ওঠেনি। এই শহরেই আছে বিশ্বখ্যাত ‘আন্তর্জাতিক সুগন্ধি জাদুঘর’। ফুল ও সুগন্ধিকে ঘিরে বহু মানুষের বহু বছরের সাধনা, মেধা, পরিশ্রম, নিষ্ঠার কারণেই ইউনেস্কো এই শহরকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদায় মহিমান্বিত করেছে। মিষ্টি ঘ্রাণের সেন্টিফোলিয়া গোলাপটি গ্রাস শহরের অহংকার, গৌরব, অর্জন। আর সে কারণেই ইতিহাস, সৌন্দর্য, বৈভবে সমৃদ্ধ গ্রাস শহরের রাস্তাগুলোতে মাথার ওপরে শোভা পায় গোলাপি রঙের বহু ছাতা।
এবার গরমের ছুটি কাটাতে গিয়েছিলাম দক্ষিণ ফ্রান্সের পারফিউমের উৎসকেন্দ্র গ্রাস শহরে। ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষে, আল্পসের কোলে ছবির মতো সুন্দর ছোট এই শহরকে বলা হয় ‘পারফিউমের রাজধানী’ বা ‘সুগন্ধি শহর’। দিগন্ত ছোঁয়া সবুজ উপত্যকা, দূরে মহিমাময় নির্জনতায় পাহাড়, নির্ঝর ধারা। এই অঞ্চলে অকৃপণ সূর্যালোক আর বৃষ্টির কারণে বহু শতাব্দী ধরে নানান সুগন্ধি ফুলের চাষ হয়। কমলা, জুঁই, বেলি, ল্যাভেন্ডার, রজনীগন্ধা, নার্সিসাস, জেরানিয়াম, আইরিস, গোলাপের দিগন্ত বিস্তীর্ণ মাঠ। এ যেন ফুলের রাজ্য, ফুলের মেলা, এক রূপকথার দেশ।
গ্রাস শহরের প্রবেশমুখের গোলচত্বরে পারফিউম পাত্রের ভাস্কর্য ঘিরে ঝরনা। অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, এই শহরের প্রতিটি রাস্তা, গলি বহু গোলাপি ছাতায় ঢাকা। অবশ্য গোলাপি ছাতার রহস্য উদ্ঘাটন করতে আমাদের বেশি বেগ পেতে হয়নি।
এ অঞ্চলে একটি বিস্ময়কর, বিরল উজ্জ্বল গোলাপি রঙের গোলাপ জন্মে। যেমন তার রূপ, তেমনি তার গুণ। অপূর্ব সুবাসযুক্ত এ গোলাপের নাম ‘সেন্টিফোলিয়া’ বা ‘মে মাসের গোলাপ’। ‘সেন্টিফোলিয়া’ মানে শত পাপড়ির গোলাপ। পাপড়ির প্রাচুর্য বোঝাতেই জনপ্রিয় এই নামটি দেওয়া হয়েছে। আসলে এই গোলাপে রয়েছে ৩০টির মতো পাপড়ি। প্রায় কাঁটাবিহীন এ গোলাপগাছের উচ্চতা ২ মিটার বা ৭ ফুট পর্যন্ত। এর একটি ধরনের নাম রোজা সেন্টিফোলিয়া। বেশ কিছু গোলাপ প্রজাতির সংকর করে উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা এই প্রজাতি তৈরি করেছেন।
মে মাসে ফুল তোলা হয় বলেই অনেকে ‘মে মাসের গোলাপ’ নামে ডাকে এ গোলাপকে। ফুল তোলার সময় বিশেষ কায়দা বা নিয়ম মেনে তুলতে হয়। প্রথমে তর্জনী এবং মধ্যমার মাঝখানে রেখে ফুলের নিচে বৃন্ত হালকা করে চেপে ধরতে হবে। এরপর ফুলের ওপরে মাঝখানে বুড়ো আঙুল দিয়ে আলতো করে চেপে ধরে খানিকটা বাঁকিয়ে মট করে ভেঙে গাছ থেকে আলাদা করা হয়। ফুল তোলা দেখার মতো দৃশ্য।
বাহারি বাগানে অজস্র ফুলের অপূর্ব সমাহারে ফুলশ্রমিকেরা কোমল হাতে ছন্দময় শব্দ তুলে অসম্ভব দ্রুততায় এক মনে ফুল তুলে যাচ্ছেন। পাহাড়, সাগর আর নীল আকাশের ক্যানভাসে নিসর্গের সে এক অপূর্ব রূপ। রাতের সজীবতা ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই, খুব ভোরে এই ফুল তোলা হয়ে থাকে। পাপড়ি তখনো শিশিরের আর্দ্রতা মাখা! ফুলগুলো পাটের তৈরি বস্তায় করে সূর্যের আলো প্রখর হওয়ার আগেই কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। মোটেই সময় নষ্ট না করে, দ্রুত বিশাল সব আধারে পাতন অর্থাৎ ডিস্টিলেশন শুরু করা হয়।
সকালবেলার গোলাপের সুবাসের সব গুণ যাতে অক্ষুণ্ন থাকে, সে জন্যই এমন ত্বরিত ব্যবস্থা। এক কেজি ‘অ্যাবসলু’ অর্থাৎ উদ্বায়ী তেলের জন্য প্রয়োজন ৪ হাজার কেজি পাপড়ি। এই এলাকায় প্রতিবছর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টন সেন্টিফোলিয়া গোলাপ উৎপাদন করা হয়। আর শ্যানেল, ডিওর, গালিমার, গারল্যাঁসহ নামকরা সুগন্ধি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সেন্টিফোলিয়ার উদ্বায়ী তেল কিনে নিতে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার ইউরো খরচ করতে মোটেই দ্বিধা করে না।
মন মাতানো সুবাস আর গুণগত মান শুধু এই গ্রাসের নীল সমুদ্রের বাতাসে জন্মানো বিশেষ গোলাপের পাপড়িতেই সঞ্চিত হয়, পৃথিবীর আর কোথাও নয়। এই কিংবদন্তি ফুলের নির্যাসে সৃষ্টি হয়েছে নামকরা সব সুগন্ধি। সেগুলোর মধ্যে আছে শ্যানেল ফাইভ, ক্যালভিন ক্লেইনের এতারনিতে বা অনন্তকাল, জিভাঞ্চির আমারিজ, জয়, ডিওর, মিস ডিওর ইত্যাদি।
এই জাদুকরী গোলাপটিকে ঘিরে গ্রাস শহরের দৈনন্দিন জীবন আবর্তিত হচ্ছে বহু বছর ধরে। গোলাপের চাষ, কোমল হাতে বিশেষ কায়দায় পাপড়ি তোলা, জাদুকরী সুবাসের নির্যাস নিঃসরণ, সংগ্রহ এবং পরিশেষে নতুন সুগন্ধি সৃষ্টির শৈল্পিক কলাকৌশল এক দিনে গড়ে ওঠেনি। এই শহরেই আছে বিশ্বখ্যাত ‘আন্তর্জাতিক সুগন্ধি জাদুঘর’। ফুল ও সুগন্ধিকে ঘিরে বহু মানুষের বহু বছরের সাধনা, মেধা, পরিশ্রম, নিষ্ঠার কারণেই ইউনেস্কো এই শহরকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদায় মহিমান্বিত করেছে। মিষ্টি ঘ্রাণের সেন্টিফোলিয়া গোলাপটি গ্রাস শহরের অহংকার, গৌরব, অর্জন। আর সে কারণেই ইতিহাস, সৌন্দর্য, বৈভবে সমৃদ্ধ গ্রাস শহরের রাস্তাগুলোতে মাথার ওপরে শোভা পায় গোলাপি রঙের বহু ছাতা।
খাবার মজাদার করতে আমরা সাধারণভাবে তেল-মসলার খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলি। সেখান থেকে বাদ যায় না পেঁয়াজ কিংবা রসুন। পেঁয়াজকে কায়দা করে সরিয়ে রাখলেও খাবার মজাদার হতে পারে। তেমনই কিছু রেসিপি...
১৭ ঘণ্টা আগেবাংলা অঞ্চলে মিষ্টিজাতীয় প্রাচীন খাবারগুলোর মধ্যে সন্দেশের নাম আছে একেবারে প্রথম দিকে। সব মিষ্টির কিছু না কিছু বদল হলেও, এর বদল হয়েছে খুবই কম। যশোরের নলেন গুড়ের সন্দেশ, মানিকগঞ্জ বা নাগরপুরের প্যারা সন্দেশ, পাবনার মাছের পেটি সন্দেশ ইত্যাদি কে না খেতে পছন্দ করে!
১৭ ঘণ্টা আগেজীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঘুরেফিরে এসেছে দারুচিনি দ্বীপের কথা, তার রহস্যময় শ্যামলিমার কথা, সেই সবুজের গহিনে দিকহারা নাবিকের আশ্রয়-আকাঙ্ক্ষার কথা। এই দারুচিনি দ্বীপ কি আসলে কোনো সমুদ্রঘেরা ভূখণ্ড, নাকি বনলতা সেন নিজেই, তা নিয়ে কবিরা বিতর্ক করুক। আমরা বরং এই দ্বীপের তত্ত্বতালাশ করি।
১৮ ঘণ্টা আগে‘প্রসেসেস’-এ প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভাতের মাড় ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি হজমযোগ্য স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে কাজ করে। এমনকি এটি ওজন কমাতে পারে।
১৮ ঘণ্টা আগে