Ajker Patrika

পুরান ঢাকায় একদিন

আমিনুল ইসলাম নাবিল
আপডেট : ১২ মে ২০২৩, ১৩: ১৪
Thumbnail image

বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা ৪০০ বছরের পুরোনো শহর ঢাকা। বাহান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির আদি এই শহরে ঘুরতে পছন্দ করেন অনেকেই। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে সময় বের করা কঠিন। এর মধ্যে পুরান ঢাকার সরু গলির যানজটের কথা ভেবে আর যাওয়া হয়ে ওঠে না। তাই একদিন প্ল্যান করে পুরান ঢাকার সকল দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারেন।

লালবাগ কেল্লা
লালবাগ কেল্লা থেকে ভ্রমণের শুরুটা করতে পারেন। গুলিস্তান থেকে রিকশা কিংবা লেগুনাযোগে লালবাগ কেল্লা যেতে পারবেন। গুলিস্তান থেকে মাত্র ২০ টাকা লেগুনা ভাড়ায় পৌঁছে যেতে পারবেন একেবারে কেল্লার গেটে।

লালবাগ কেল্লা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার। লালবাগ কেল্লায় প্রবেশের টিকিট মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ১০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের লালবাগ কেল্লায় প্রবেশ করতে টিকিটের প্রয়োজন নেই। সশরীরে কিংবা অনলাইনেও টিকিট কাটতে পারবেন।

লালবাগ কেল্লাসকাল সকাল লালবাগ কেল্লা ভ্রমণ শেষে ওখানেই সেরে নিতে পারেন সকালের নাশতার পর্ব। ঢাকাইয়া ট্র্যাডিশনাল অনেক খাবার পাবেন লালবাগ কেল্লার আশপাশের রেস্তোরাঁয়। 

আরমানিটোলা
লালবাগ কেল্লা ঘোরা শেষে হাঁটতে হাঁটতেই চলে আসতে পারবেন আরমানিটোলার ঐতিহাসিক তারা মসজিদের দিকে। চাইলে রিকশাযোগেও এখানে আসতে পারেন। তবে পুরান ঢাকার অলিগলি ঘুরে ঘুরে এলে ভ্রমণটা বেশি আনন্দদায়ক হবে। বিশেষ করে রাস্তার পাশে হরেক পদের খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন। তারা মসজিদ ঢাকার প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর অসাধারণ নির্মাণশৈলী আপনাকে মুগ্ধ করবে।

এই আরমানিটোলাতেই পেয়ে যাবেন আর্মেনিয়ান গির্জা। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি রাস্তাঘাট ধরে হাঁটতে হাঁটতেই চোখে পড়বে সুবিশাল স্থাপনাটি। স্থাপনাটির ফটকে বড় করে লেখা ‘আর্মেনিয়ান চার্চ, ১৭৮১’। আর্মেনিয় গির্জা পুরান ঢাকার একটি প্রাচীন খ্রিষ্টধর্মীয় উপাসনালয়।

আরমানিটোলা ঘোরা শেষ করে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেলে পুরান ঢাকার ট্র্যাডিশনাল মোরগ পোলাও কিংবা কাচ্চি দিয়ে সেরে নিতে পারেন দুপুরের খাবার। আরমানিটোলা থেকে কিছুটা পথ হেঁটে এলেই বেচারাম দেউড়ি এলাকা। আর এখানেই পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক নান্না বিরিয়ানির প্রধান শাখার দেখা পেয়ে যাবেন।

তাঁতীবাজার
পুরান ঢাকার সরু রাস্তায় আপনি বাস কিংবা লেগুনার দেখা পাবেন না। রিকশা কিংবা পায়ে হেঁটে চলাচল ছাড়া উপায় নেই। আরমানিটোলা থেকে রিকশাযোগে চলে আসতে পারেন তাঁতীবাজার। রিকশাযোগে বংশাল হয়ে কিংবা পেছনের দিক দিয়ে বাবুবাজার হয়েও তাঁতীবাজার এলাকায় আসা যায়। তাঁতীবাজার-শাঁখারীবাজার এলাকাটিতে এলে আপনি কলকাতা শহরের একটা অনুভূতি পাবেন। চারদিকে শতবর্ষী পুরোনো পুরোনো ভবন। যা আপনাকে অদ্ভুত এক ভালো লাগার অনুভূতি এনে দেবে।

আহসান মঞ্জিলআহসান মঞ্জিল
তাঁতীবাজার থেকে ১০ মিনিট হাঁটলেই চলে যেতে পারবেন আহসান মঞ্জিলে। এটি ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাচারি। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আহসান মঞ্জিলের সঙ্গে ঢাকার শত বছরের পুরোনো ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে।

আহসান মঞ্জিল প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বৃহস্পতিবার। শুক্রবার অর্ধবেলা বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

সাধারণ দর্শনার্থীদের আহসান মঞ্জিল পরিদর্শন করতে জনপ্রতি ৪০ টাকা দিয়ে প্রবেশ টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। ১২ বছরের কম বয়সী শিশুরা জনপ্রতি ২০ টাকায় প্রবেশ করতে পারে। সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৩০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০০ টাকা। প্রতিবন্ধী দর্শনার্থীদের জন্য আহসান মঞ্জিলে কোনো টিকিটের প্রয়োজন হয় না। সশরীরে কিংবা অনলাইনেও টিকিট কাটার সুবিধা রয়েছে।

বিউটি বোর্ডিং
বিকেলের স্নিগ্ধ পরিবেশে বুড়িগঙ্গার বাতাস গায়ে মেখে চলে আসতে পারেন বিউটি বোর্ডিংয়ে। এটি পুরান ঢাকার বাংলা বাজার ১ নং শ্রীশদাস লেনে অবস্থিত। রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা, বিপ্লবীদের সোনার বাংলা, সাপ্তাহিক পত্রিকা সোনার বাংলা আর বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার পটভূমিতে গড়ে উঠেছে আজকের বিউটি বোর্ডিং।

বিউটি বোর্ডিংয়ে ঘুরে দেখতে দেখতে সন্ধ্যার নাশতাটা সেরে নিতে পারেন এখানেই। লুচি-হালিমসহ অনেক মুখোরোচক খাবার পাবেন বিউটি বোর্ডিংয়ে।বিউটি বোর্ডিং

বাহাদুর শাহ পার্ক
বিউটি বোর্ডিং ঘোরা শেষে উঁকি দিতে পারেন ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কে। ব্রিটিশ আন্দোলনের স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই পার্কটি। চারদিকে সবুজে ঘেরা শীতল পরিবেশ প্রশান্তি এনে দেবে।

সারা দিন ঘোরাফেরা করে ক্লান্ত হয়ে পড়া শরীরকে মুহূর্তেই চাঙা করতে শতবর্ষী বিউটি লাচ্ছি দিয়ে গলাটা ভিজিয়ে নিতে ভুলবেন না। বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে মাত্র ২ মিনিট দূরত্বেই রায়সাহেব বাজার মোড়ে পাবেন বিউটি লাচ্ছির দোকান।

নাজিরা বাজার
দিনভর ব্যস্ততা থাকলেও সন্ধ্যা পেরিয়ে যখন রাত গভীর হতে থাকে তখন এই শহরে যানজট কমে আসতে শুরু করে। রায়সাহেব বাজার থেকে তাই রিকশা নিয়েই বেরিয়ে পড়তে পারেন নাজিরা বাজারের উদ্দেশে। শহরের নির্জনতার বিন্দুমাত্র প্রভাব নেই এখানে। এখানে রাত-দিন পৃথক করাই মুশকিল। ২৪ ঘণ্টা এখানকার দোকানগুলো খোলা থাকে।

নাজিরা বাজার জুড়েই হরেক পদের খাবারের দোকান। বিরিয়ানি, বারবিকিউ, জুস, মাঠা, ফুচকা, পনিরসহ আরও কত কি! সাশ্রয়ী খরচে মজাদার খাবার দিয়ে ডিনারের পর্বটা এখানেই করতে পারেন।

সব শেষে এবার পুরান ঢাকাকে বিদায় জানানোর পালা। নাজিরা বাজার থেকে বঙ্গবাজার কিংবা গুলিস্তান দিয়ে খুব সহজেই ঢাকার যেকোনো গন্তব্যে যেতে পারবেন। সারা দিনের এই ভ্রমণ আপনাকে অন্যরকম এক শান্তি এনে দেবে। ব্যস্ত এই শহরের প্রতিটি কণায় কণায় আপনি প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাবেন।

জনপ্রতি মাত্র সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকার মধ্যেই আপনি দিনব্যাপী এই ভ্রমণটা সেরে নিতে পারবেন। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যোগ করতে পারবেন অসংখ্য সুখস্মৃতি।

আরও পড়ুন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী সহকর্মীর সঙ্গে রাতযাপন: হাইটেক পার্কের ডিডি আতিক বরখাস্ত

বাংলাদেশসহ ৩ দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের

পদ্মা সেতু ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ! ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন

বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন কর্মসূচি শুরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত