শাকেরা তাসনীম ইরা, ঢাকা
পৃথিবীর ইতিহাস ভ্রমণের ইতিহাস। পৃথিবীর বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি মানুষের কাছে তুলে ধরতে বরাবরই অবদান রেখে গেছেন পর্যটকেরা। ৭০০ বছর আগে ইবনে বতুতা ইতিহাসের পাতায় বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন পৃথিবী ভ্রমণের কারণে। তেমনি আবার কলম্বাসের মতো পর্যটকেরাও আছেন। আমাদের অজানা নয় কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের নামে সে অঞ্চলের জনজীবন অতিষ্ঠ করে তোলার কুখ্যাত ইতিহাসও।
বর্তমান সময়ে যেন তারই ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেক পর্যটকদের সঙ্গে। বিশ্বজুড়ে প্রায় প্রতিদিনই ভ্রমণে গিয়ে করা পর্যটকদের খারাপ আচরণের খবর পাওয়া যায়। কয়েক সপ্তাহ আগে দুজন আমেরিকান নাগরিককে মদ্যপ অবস্থায় আইফেল টাওয়ারের একটি বন্ধ অংশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রবেশ নিষেধ জেনেও তাঁরা সেখানে লুকিয়ে ছিলেন। আরেকজন কানাডীয় কিশোর বিকৃত করেছিল ১ হাজার ২০০ বছরের পুরোনো একটি জাপানি মন্দির। আমাদের দেশে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ভ্রমণকারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ কিংবদন্তির মতো ছড়িয়ে আছে। সাংবাদিক ল্যারি ব্লাইবার্গ সম্প্রতি একটি লেখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই বলে যে পর্যটকদের এমন অসহিষ্ণু আচরণে মনে হয়, আজকাল বিশ্ব ভুলে যাচ্ছে অন্যের বাড়িতে গিয়ে কী ধরনের আচরণ করা বাঞ্ছনীয়। যেন যতই তাঁরা ঘুরছেন, ততই অসভ্য হয়ে উঠছেন।
তবে লন্ডনের গ্রিনউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যটন প্রভাষক লরেন এ সিগেলের মতে, ব্রিটিশদের মধ্যে এ আচরণ যে সাম্প্রতিক, এমনটাও নয়। এ সময়ের সমস্যা আলোচনায় তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অদ্ভুত সব কাণ্ড উপস্থাপন করে জনপ্রিয়তা লাভ করাও পর্যটনব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। কারণ, প্যাসেঞ্জার শেমিংয়ের মতো অসংবেদনশীল ও অসম্মানজনক আচরণ তুলে ধরতে আজকাল ব্যবহার করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো।
জনপ্রিয় পডকাস্ট ‘হাও ক্যান আই হেল্প’-এর উপস্থাপক গেইল সল্টজ পর্যটকদের অসহিষ্ণু আচরণকে দেখেন ‘প্রতিশোধপরায়ণ ভ্রমণ’ হিসেবে। তাঁর মতে, কোভিড-পরবর্তী সময়ে পর্যটকদের মধ্যে এমন মনোভাব জাগ্রত হয়েছে। এত দিন লকডাউন থাকার কারণে তাঁরা যা করতে পারেননি, তার সবটাই উশুল করে নেবেন—এই তাঁদের ধারণা। এ ছাড়া পর্যটকদের মনে একটা ভাবনা কাজ করে যে পর্যটন স্থানগুলো অবাধে ঘুরে বেড়ানোর মতো জায়গা। সেখানে চাইলে যা ইচ্ছা তা-ই করা যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভগুলোতে পর্যটকদের নাম খোদাই করে রাখা। সল্টজের মতে, এই পর্যটকেরা মনে করেন, এটি নিজেদের অমর করার সুযোগ।
পর্যটকদের অসহিষ্ণু আচরণ নিয়ে সাংবাদিক ল্যারি ব্লাইবার্গ তাঁর লেখায় টেনে এনেছেন নিউইয়র্কের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের দাবানল প্রসঙ্গ। সেখানকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, দাবানল সংঘটিত হওয়ার মাত্র তিন দিনের মাথায় পর্যটকেরা সেখানে ভিড় জমিয়েছিলেন। পর্যটকেরা সেই জলেই সাঁতার কাটছিলেন, যে জলে তিন দিন আগেও ভেসে ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের লাশ!
সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেছে যে পর্যটন স্থানগুলোতে কঠোর নিয়মনীতির দ্বারস্থ হতে হচ্ছে সেসবের কর্তৃপক্ষকে। বালি ও আইসল্যান্ডের মতো পর্যটনের হটস্পটগুলো এখন আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটকদের কাছ থেকে তাদের সংস্কৃতি ও পরিবেশের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি নিচ্ছে। পালাউ যেতে চাইলে দর্শকদের এখন একটি ইকো-প্রতিশ্রুতি স্বাক্ষর করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় পর্যটকদের জন্য আয়ারেস রক আরোহণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, অস্ট্রেলিয়া এই স্থানকে আদিবাসী পবিত্র স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আমস্টারডাম সম্প্রতি মাতাল ব্রিটিশদের লক্ষ্য করে একটি ‘দূরে থাকুন’ বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করেছে।
আমাদের দেশেও অহরহ দেখতে পাওয়া যায় এমন চিত্র। পাহাড়ি ঝরনায় গেলে হরহামেশাই দেখা পাওয়া যায় পাহাড়ের গায়ে পর্যটকেরা খোদাই করে গেছেন নানা অক্ষর। কিংবা সমুদ্রের তীরে স্তূপ হয়ে আছে প্লাস্টিকের বর্জ্য, যা হুমকিতে ফেলছে সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবন। আবার প্রায়ই দেখা যায় পাহাড়ি অঞ্চলে বিনা অনুমতিতে পর্যটকেরা ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন আদিবাসীদের। পর্যটকদের অসহনশীল আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কারণ, ভ্রমণ অবশ্যই আনন্দ দেয়। সেই সঙ্গে দেয় নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানার সুযোগ। কিন্তু নিজের আনন্দ যেন কখনোই অন্যের অসুবিধার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, এ বিষয়েও সতর্ক থাকা উচিত সব পর্যটকের।
তথ্যসূত্র: ইজ দিস দ্য সামার অব ব্যাড ট্যুরিস্টস?, ল্যারি ব্লাইবার্গ, বিবিসি (ট্রাভেল)
পৃথিবীর ইতিহাস ভ্রমণের ইতিহাস। পৃথিবীর বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি মানুষের কাছে তুলে ধরতে বরাবরই অবদান রেখে গেছেন পর্যটকেরা। ৭০০ বছর আগে ইবনে বতুতা ইতিহাসের পাতায় বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন পৃথিবী ভ্রমণের কারণে। তেমনি আবার কলম্বাসের মতো পর্যটকেরাও আছেন। আমাদের অজানা নয় কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের নামে সে অঞ্চলের জনজীবন অতিষ্ঠ করে তোলার কুখ্যাত ইতিহাসও।
বর্তমান সময়ে যেন তারই ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেক পর্যটকদের সঙ্গে। বিশ্বজুড়ে প্রায় প্রতিদিনই ভ্রমণে গিয়ে করা পর্যটকদের খারাপ আচরণের খবর পাওয়া যায়। কয়েক সপ্তাহ আগে দুজন আমেরিকান নাগরিককে মদ্যপ অবস্থায় আইফেল টাওয়ারের একটি বন্ধ অংশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রবেশ নিষেধ জেনেও তাঁরা সেখানে লুকিয়ে ছিলেন। আরেকজন কানাডীয় কিশোর বিকৃত করেছিল ১ হাজার ২০০ বছরের পুরোনো একটি জাপানি মন্দির। আমাদের দেশে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ভ্রমণকারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ কিংবদন্তির মতো ছড়িয়ে আছে। সাংবাদিক ল্যারি ব্লাইবার্গ সম্প্রতি একটি লেখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই বলে যে পর্যটকদের এমন অসহিষ্ণু আচরণে মনে হয়, আজকাল বিশ্ব ভুলে যাচ্ছে অন্যের বাড়িতে গিয়ে কী ধরনের আচরণ করা বাঞ্ছনীয়। যেন যতই তাঁরা ঘুরছেন, ততই অসভ্য হয়ে উঠছেন।
তবে লন্ডনের গ্রিনউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যটন প্রভাষক লরেন এ সিগেলের মতে, ব্রিটিশদের মধ্যে এ আচরণ যে সাম্প্রতিক, এমনটাও নয়। এ সময়ের সমস্যা আলোচনায় তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অদ্ভুত সব কাণ্ড উপস্থাপন করে জনপ্রিয়তা লাভ করাও পর্যটনব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। কারণ, প্যাসেঞ্জার শেমিংয়ের মতো অসংবেদনশীল ও অসম্মানজনক আচরণ তুলে ধরতে আজকাল ব্যবহার করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো।
জনপ্রিয় পডকাস্ট ‘হাও ক্যান আই হেল্প’-এর উপস্থাপক গেইল সল্টজ পর্যটকদের অসহিষ্ণু আচরণকে দেখেন ‘প্রতিশোধপরায়ণ ভ্রমণ’ হিসেবে। তাঁর মতে, কোভিড-পরবর্তী সময়ে পর্যটকদের মধ্যে এমন মনোভাব জাগ্রত হয়েছে। এত দিন লকডাউন থাকার কারণে তাঁরা যা করতে পারেননি, তার সবটাই উশুল করে নেবেন—এই তাঁদের ধারণা। এ ছাড়া পর্যটকদের মনে একটা ভাবনা কাজ করে যে পর্যটন স্থানগুলো অবাধে ঘুরে বেড়ানোর মতো জায়গা। সেখানে চাইলে যা ইচ্ছা তা-ই করা যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভগুলোতে পর্যটকদের নাম খোদাই করে রাখা। সল্টজের মতে, এই পর্যটকেরা মনে করেন, এটি নিজেদের অমর করার সুযোগ।
পর্যটকদের অসহিষ্ণু আচরণ নিয়ে সাংবাদিক ল্যারি ব্লাইবার্গ তাঁর লেখায় টেনে এনেছেন নিউইয়র্কের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের দাবানল প্রসঙ্গ। সেখানকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, দাবানল সংঘটিত হওয়ার মাত্র তিন দিনের মাথায় পর্যটকেরা সেখানে ভিড় জমিয়েছিলেন। পর্যটকেরা সেই জলেই সাঁতার কাটছিলেন, যে জলে তিন দিন আগেও ভেসে ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের লাশ!
সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেছে যে পর্যটন স্থানগুলোতে কঠোর নিয়মনীতির দ্বারস্থ হতে হচ্ছে সেসবের কর্তৃপক্ষকে। বালি ও আইসল্যান্ডের মতো পর্যটনের হটস্পটগুলো এখন আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটকদের কাছ থেকে তাদের সংস্কৃতি ও পরিবেশের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি নিচ্ছে। পালাউ যেতে চাইলে দর্শকদের এখন একটি ইকো-প্রতিশ্রুতি স্বাক্ষর করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় পর্যটকদের জন্য আয়ারেস রক আরোহণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, অস্ট্রেলিয়া এই স্থানকে আদিবাসী পবিত্র স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আমস্টারডাম সম্প্রতি মাতাল ব্রিটিশদের লক্ষ্য করে একটি ‘দূরে থাকুন’ বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করেছে।
আমাদের দেশেও অহরহ দেখতে পাওয়া যায় এমন চিত্র। পাহাড়ি ঝরনায় গেলে হরহামেশাই দেখা পাওয়া যায় পাহাড়ের গায়ে পর্যটকেরা খোদাই করে গেছেন নানা অক্ষর। কিংবা সমুদ্রের তীরে স্তূপ হয়ে আছে প্লাস্টিকের বর্জ্য, যা হুমকিতে ফেলছে সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবন। আবার প্রায়ই দেখা যায় পাহাড়ি অঞ্চলে বিনা অনুমতিতে পর্যটকেরা ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন আদিবাসীদের। পর্যটকদের অসহনশীল আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি করা। কারণ, ভ্রমণ অবশ্যই আনন্দ দেয়। সেই সঙ্গে দেয় নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানার সুযোগ। কিন্তু নিজের আনন্দ যেন কখনোই অন্যের অসুবিধার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, এ বিষয়েও সতর্ক থাকা উচিত সব পর্যটকের।
তথ্যসূত্র: ইজ দিস দ্য সামার অব ব্যাড ট্যুরিস্টস?, ল্যারি ব্লাইবার্গ, বিবিসি (ট্রাভেল)
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১ দিন আগে