সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
বাস ছুটছে উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ ধরে। এ যেন আকাশের পথ ধরে চলা। দিগন্তরেখা বরাবর দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়গুলো নীলাভ রং নিয়ে জেগে আছে বহুকাল। দূরের পাহাড়গুলো সবুজের চেয়ে নীল রঙে বেশি শোভা পায়। রাস্তার দুধারে চেনা গ্রাম পেরিয়ে চিম্বুক, নীলগিরি, জীবননগরের দীর্ঘ পাহাড় বেয়ে বলিপাড়া ক্যাম্পে স্বল্প চা-বিরতি। ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ে চুমুক পর্ব শেষ করে মধ্য দুপুরে বাস পৌঁছায় থানচি বাজারে।
নদী আর পাহাড় যেন একসঙ্গে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে প্রাগৈতিহাসিক কালের সাক্ষী হয়ে। সাঙ্গুতীরে গড়ে উঠেছে থানচি বাজার। জনপদ আর অরণ্য তো আছেই। বাজারে নেমে ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে চললাম থানচি বাজার ঘাটের দিকে।
দুপুরে থানচি বাজারে উদর পূর্তি করে যাত্রা করলাম দেশি বোটে চড়ে। সাঙ্গুর পথ ধরে, প্রচণ্ড স্রোতের বিপরীতে ইঞ্জিনের খটখট শব্দে এগিয়ে চলেছে দেশি ইঞ্জিন-নৌকা।
সাঙ্গুর দুপার ঘেঁষে সবুজ বন। আর জেগে ওঠা বালুর চরে বাদামখেত সবুজ মখমলে ভর করে আছে সাঙ্গুর ডানায়। স্বচ্ছ পানি আর ছোট-বড় পাথর যেন এই সাঙ্গুর প্রাণ। আর সাঙ্গু টিকিয়ে রেখেছে এই পুরো জনপদ।
নদীর পাড়ে পাহাড়ি গ্রাম। থানচি থেকে বেশ কিছুটা পথ পেরিয়ে চোখে পড়ে তিন্দু বাজার। বাজারের ঘাটে কিছুক্ষণের বিরতি। নদী আর পাহাড়ের সঙ্গেই জীবন চলে তিন্দুর মানুষের।
ছোট ছিমছাম তিন্দু বাজার। সবুজ পাহাড় যেন আগলে রেখেছে নিসর্গের গ্রাম তিন্দুকে। এর সামনে দিয়ে ছুটে চলা খরস্রোতা সাঙ্গু বারবার আছড়ে পড়ছে পাথরের গায়ে। তিন্দু থেকে বিকেলের দিকে যাত্রা করলাম রেমাক্রির পথে।
কিছু পথ পেরিয়ে গিয়ে দেখা যায়, যুগের পর যুগ সাঙ্গুর বুকে জেগে থাকা বিশাল বিশাল পাথরখণ্ড। বর্ষা কিংবা অন্য যেকোনো সময় তীব্র স্রোতেও অবিচল থেকেছে রাজা পাথর, রানি পাথরসহ অসংখ্য ছোট-বড় পাথরখণ্ড। পাহাড়ের গায়ে হেলান দেওয়া সূর্যের আলোকছটা নদীর বুকে। জলের পথ ধরে নৌকা এগোতে থাকল রেমাক্রির পথে।
আঁকাবাঁকা রৌদ্রোজ্জ্বল পানিপথে কোথাও কোথাও তীব্র স্রোত। তাই বিপদ এড়াতে কিছু জায়গা হেঁটেই যেতে হচ্ছে।
নদীতে ছিপ ফেলে মাছ ধরার অপেক্ষায় পাহাড়ি তরুণ। স্বচ্ছ জলে অনেকে স্থানীয় সনাতনী পদ্ধতিতে ধারালো লোহার শিক দিয়ে মাছ শিকার করে।
এই পথ মিশেছে দুর্গম পাহাড়ে। পাহাড়ের অবিন্যস্ত ঝিরি এসে মিলেছে সাঙ্গুর তীব্র স্রোতে। সাঙ্গুর পথে চলতে চলতে গোধূলিবেলায় নৌকা থামে রেমাক্রি বাজারের ঘাটে। রাতে সেখানেই নিশিযাপন।
পাহাড়ের ওপর রেমাক্রি বাজার। রাত হতেই এই জনপদজুড়ে নেমেছে জোছনার দল। পাহাড় পেরিয়ে চাঁদের আলো ছুঁয়েছে নদীর জল। পাহাড়ের বুকে জেগে থাকা জোছনা ক্রমশ ভরিয়ে দিচ্ছে পুরো লোকালয়। রেমাক্রি খালে বিরামহীন কলকল ধ্বনি মিশে যাচ্ছে সাঙ্গুর জলে, জলের শব্দমালা অদ্ভুত শোনাচ্ছিল নীরব-শব্দহীন অরণ্য ঘেরা জনপদে।
চাঁদের আলো দূরের উঁচু পাহাড়ের চূড়াকে স্পষ্ট করেছে। এই যেন গৃহত্যাগী জোছনা নেমেছে পাহাড়ের পৃথিবীতে। নদী ও পাহাড় ঘেরা এই জনপদ নাগরিক জীবন থেকে মুক্ত, ষোলো আনা প্রকৃতির স্বাদে-গন্ধে ভরপুর। পোড়া কাঠের আগুন জ্বলছে সাঙ্গুর তীরে।
রাত পেরিয়ে ভোর, চারপাশে কুয়াশার রাজত্ব। সকালে শীতল আলোয় যাত্রা হলো নাফাখুমের পথে। অরণ্য পেরিয়ে কেবল সূর্যের আলো প্রবেশ করছে ভোরের পৃথিবীতে। জল-ঘাসে তখনো শিশিরে মাখামাখি। খালের পাশ ধরে এগোচ্ছে অভিযাত্রীর দল।
খালের হাঁটুজলে, স্রোত পেরিয়ে, কখনো খালের পার ধরে এগোতে থাকল দলটি। সবাই মাঝপথে চা-পর্ব শেষ করে আবার যাত্রা করলাম।
সবুজ-স্বচ্ছ জলরং পেরিয়ে পা ফেলছি নাফাখুমের পথে। পথের শেষে অবশেষে পাহাড় ও পাথুরে খাল পেরিয়ে নেমে আসছে নাফাখুমের জলধারা। বিশাল ক্যাসকেড থেকে বিরামহীনভাবে নেমে আসছে দুধ-সাদা জল। পাহাড়ের বহু দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এই জলের ধারা মিশেছে সাঙ্গুতে। অরণ্যের দীর্ঘ পথে জেগে আছে চেনা-অচেনা বহু ঝরনা, জলপ্রপাত, ঝিরি, বুনো পথ, খরস্রোতা খাল।
সব ছাপিয়ে নাফাখুম—যেন এই অরণ্যভূমির সুন্দরতম জলস্রোত। অরণ্য ঘেরা এই জলধারা পেছনে রেখে বিকেলের শেষ আলোয় ফেরার পথ ধরল অভিযাত্রীরা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে এসি ও নন-এসি বাস সরাসরি বান্দরবানে যায়। চট্টগ্রাম থেকে পূরবী ও পূরনী বাস প্রতি ৪০ মিনিট পরপর ছেড়ে যায় বান্দরবানের উদ্দেশে। সেখান থেকে রিজার্ভ চান্দের গাড়ি কিংবা লোকাল বাসে করে থানচি পৌঁছাতে হবে।
থানচি থেকে বিজিবির অনুমতি নিয়ে নিবন্ধন করা গাইডের সঙ্গে যেতে হবে রেমাক্রি বাজার। সেখান থেকে আবার গাইড নিয়ে ট্রেকিং করে নাফাখুম পৌঁছাতে পারবেন।
বাস ছুটছে উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ ধরে। এ যেন আকাশের পথ ধরে চলা। দিগন্তরেখা বরাবর দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়গুলো নীলাভ রং নিয়ে জেগে আছে বহুকাল। দূরের পাহাড়গুলো সবুজের চেয়ে নীল রঙে বেশি শোভা পায়। রাস্তার দুধারে চেনা গ্রাম পেরিয়ে চিম্বুক, নীলগিরি, জীবননগরের দীর্ঘ পাহাড় বেয়ে বলিপাড়া ক্যাম্পে স্বল্প চা-বিরতি। ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ে চুমুক পর্ব শেষ করে মধ্য দুপুরে বাস পৌঁছায় থানচি বাজারে।
নদী আর পাহাড় যেন একসঙ্গে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে প্রাগৈতিহাসিক কালের সাক্ষী হয়ে। সাঙ্গুতীরে গড়ে উঠেছে থানচি বাজার। জনপদ আর অরণ্য তো আছেই। বাজারে নেমে ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে চললাম থানচি বাজার ঘাটের দিকে।
দুপুরে থানচি বাজারে উদর পূর্তি করে যাত্রা করলাম দেশি বোটে চড়ে। সাঙ্গুর পথ ধরে, প্রচণ্ড স্রোতের বিপরীতে ইঞ্জিনের খটখট শব্দে এগিয়ে চলেছে দেশি ইঞ্জিন-নৌকা।
সাঙ্গুর দুপার ঘেঁষে সবুজ বন। আর জেগে ওঠা বালুর চরে বাদামখেত সবুজ মখমলে ভর করে আছে সাঙ্গুর ডানায়। স্বচ্ছ পানি আর ছোট-বড় পাথর যেন এই সাঙ্গুর প্রাণ। আর সাঙ্গু টিকিয়ে রেখেছে এই পুরো জনপদ।
নদীর পাড়ে পাহাড়ি গ্রাম। থানচি থেকে বেশ কিছুটা পথ পেরিয়ে চোখে পড়ে তিন্দু বাজার। বাজারের ঘাটে কিছুক্ষণের বিরতি। নদী আর পাহাড়ের সঙ্গেই জীবন চলে তিন্দুর মানুষের।
ছোট ছিমছাম তিন্দু বাজার। সবুজ পাহাড় যেন আগলে রেখেছে নিসর্গের গ্রাম তিন্দুকে। এর সামনে দিয়ে ছুটে চলা খরস্রোতা সাঙ্গু বারবার আছড়ে পড়ছে পাথরের গায়ে। তিন্দু থেকে বিকেলের দিকে যাত্রা করলাম রেমাক্রির পথে।
কিছু পথ পেরিয়ে গিয়ে দেখা যায়, যুগের পর যুগ সাঙ্গুর বুকে জেগে থাকা বিশাল বিশাল পাথরখণ্ড। বর্ষা কিংবা অন্য যেকোনো সময় তীব্র স্রোতেও অবিচল থেকেছে রাজা পাথর, রানি পাথরসহ অসংখ্য ছোট-বড় পাথরখণ্ড। পাহাড়ের গায়ে হেলান দেওয়া সূর্যের আলোকছটা নদীর বুকে। জলের পথ ধরে নৌকা এগোতে থাকল রেমাক্রির পথে।
আঁকাবাঁকা রৌদ্রোজ্জ্বল পানিপথে কোথাও কোথাও তীব্র স্রোত। তাই বিপদ এড়াতে কিছু জায়গা হেঁটেই যেতে হচ্ছে।
নদীতে ছিপ ফেলে মাছ ধরার অপেক্ষায় পাহাড়ি তরুণ। স্বচ্ছ জলে অনেকে স্থানীয় সনাতনী পদ্ধতিতে ধারালো লোহার শিক দিয়ে মাছ শিকার করে।
এই পথ মিশেছে দুর্গম পাহাড়ে। পাহাড়ের অবিন্যস্ত ঝিরি এসে মিলেছে সাঙ্গুর তীব্র স্রোতে। সাঙ্গুর পথে চলতে চলতে গোধূলিবেলায় নৌকা থামে রেমাক্রি বাজারের ঘাটে। রাতে সেখানেই নিশিযাপন।
পাহাড়ের ওপর রেমাক্রি বাজার। রাত হতেই এই জনপদজুড়ে নেমেছে জোছনার দল। পাহাড় পেরিয়ে চাঁদের আলো ছুঁয়েছে নদীর জল। পাহাড়ের বুকে জেগে থাকা জোছনা ক্রমশ ভরিয়ে দিচ্ছে পুরো লোকালয়। রেমাক্রি খালে বিরামহীন কলকল ধ্বনি মিশে যাচ্ছে সাঙ্গুর জলে, জলের শব্দমালা অদ্ভুত শোনাচ্ছিল নীরব-শব্দহীন অরণ্য ঘেরা জনপদে।
চাঁদের আলো দূরের উঁচু পাহাড়ের চূড়াকে স্পষ্ট করেছে। এই যেন গৃহত্যাগী জোছনা নেমেছে পাহাড়ের পৃথিবীতে। নদী ও পাহাড় ঘেরা এই জনপদ নাগরিক জীবন থেকে মুক্ত, ষোলো আনা প্রকৃতির স্বাদে-গন্ধে ভরপুর। পোড়া কাঠের আগুন জ্বলছে সাঙ্গুর তীরে।
রাত পেরিয়ে ভোর, চারপাশে কুয়াশার রাজত্ব। সকালে শীতল আলোয় যাত্রা হলো নাফাখুমের পথে। অরণ্য পেরিয়ে কেবল সূর্যের আলো প্রবেশ করছে ভোরের পৃথিবীতে। জল-ঘাসে তখনো শিশিরে মাখামাখি। খালের পাশ ধরে এগোচ্ছে অভিযাত্রীর দল।
খালের হাঁটুজলে, স্রোত পেরিয়ে, কখনো খালের পার ধরে এগোতে থাকল দলটি। সবাই মাঝপথে চা-পর্ব শেষ করে আবার যাত্রা করলাম।
সবুজ-স্বচ্ছ জলরং পেরিয়ে পা ফেলছি নাফাখুমের পথে। পথের শেষে অবশেষে পাহাড় ও পাথুরে খাল পেরিয়ে নেমে আসছে নাফাখুমের জলধারা। বিশাল ক্যাসকেড থেকে বিরামহীনভাবে নেমে আসছে দুধ-সাদা জল। পাহাড়ের বহু দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এই জলের ধারা মিশেছে সাঙ্গুতে। অরণ্যের দীর্ঘ পথে জেগে আছে চেনা-অচেনা বহু ঝরনা, জলপ্রপাত, ঝিরি, বুনো পথ, খরস্রোতা খাল।
সব ছাপিয়ে নাফাখুম—যেন এই অরণ্যভূমির সুন্দরতম জলস্রোত। অরণ্য ঘেরা এই জলধারা পেছনে রেখে বিকেলের শেষ আলোয় ফেরার পথ ধরল অভিযাত্রীরা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে এসি ও নন-এসি বাস সরাসরি বান্দরবানে যায়। চট্টগ্রাম থেকে পূরবী ও পূরনী বাস প্রতি ৪০ মিনিট পরপর ছেড়ে যায় বান্দরবানের উদ্দেশে। সেখান থেকে রিজার্ভ চান্দের গাড়ি কিংবা লোকাল বাসে করে থানচি পৌঁছাতে হবে।
থানচি থেকে বিজিবির অনুমতি নিয়ে নিবন্ধন করা গাইডের সঙ্গে যেতে হবে রেমাক্রি বাজার। সেখান থেকে আবার গাইড নিয়ে ট্রেকিং করে নাফাখুম পৌঁছাতে পারবেন।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে