Ajker Patrika

অধ্যাপক তাহের হত্যায় ২ জনের ফাঁসি কার্যকর: নিন্দা জানাল অ্যামনেস্টি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৩, ২১: ৩২
অধ্যাপক তাহের হত্যায় ২ জনের ফাঁসি কার্যকর: নিন্দা জানাল অ্যামনেস্টি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামির ফাঁসির রায় কার্যকরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংগঠনটি বলেছে, এই ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের বিষয়ে সরকার উদাসীনতা দেখিয়েছে। আজ শুক্রবার অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। 

এই রায়ের সমালোচনা করে অ্যামনেস্টির মৃত্যুদণ্ডবিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিয়ারা সানজর্জিও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে সাম্প্রতিক মৃত্যুদণ্ড এবং মৃত্যুদণ্ডের ক্রমাগত ব্যবহারের নিন্দা জানাই। এটি মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের প্রতি সরকারের ক্রমাগত উদাসীনতাই তুলে ধরে।’ 
 
বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকারকে দেশে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার লক্ষ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ওপর একটি সরকারি স্থগিতাদেশ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। 
 

এ বিষয়ে চিয়ারা সানজর্জিও বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড কখনই সমাধান নয়। আমরা বিশ্বাস করি যে রাষ্ট্রের অবশ্যই ন্যায়বিচারের নামে কারও জীবন কেড়ে নেওয়ার অধিকার থাকতে পারে না। বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান হারে মৃত্যুদণ্ড বিলোপকারী দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এই বিষয়টিকে আরও শক্তিশালী করেছে।’ চিয়ারা বলেন, ‘অপরাধ যত বড়ই হোক না কেন—এই চূড়ান্ত নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক শাস্তি কাউকে ভোগ করতে দেওয়া যাবে না। তা ছাড়া, মৃত্যুদণ্ড যে অপরাধ কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে—এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।’ 

বিবৃতিতে চিয়ারা আরও বলেছেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকারকে দেশে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার লক্ষ্যে মৃত্যুদণ্ডের ওপর একটি সরকারি স্থগিতাদেশ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সবার মামলা পর্যালোচনা করতে হবে; যাতে তাদের সাজা কমানো যায় বা মৃত্যুদণ্ডের আশ্রয় না নিয়ে তাদের ন্যায্য পুনর্বিচারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের অবশ্যই সব আইন ও বিচারিক অনুশীলন আনতে হবে।’ 

২৭ জুলাই অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার আসামি ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। 

এর আগে, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। একদিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের গলিত মরদেহ। ওই দিন রাতে তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামি ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। 

 ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন। 

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, তাঁর ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালাম। তবে বিচারে খালাস পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও জাহাঙ্গীরের বাবা আজিমুদ্দিন মুন্সি। 

পরবর্তীকালে সাজাপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন। অন্য দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আদালত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত