Ajker Patrika

আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় কষ্ট পাচ্ছে সাধারণ মানুষ, বিবেচনার অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২২, ১৩: ১০
আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় কষ্ট পাচ্ছে সাধারণ মানুষ, বিবেচনার অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকার ‍নিষেধাজ্ঞার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমেরিকা ও ইউরোপের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা যাদের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন, তাদের আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছেন। কিন্তু কতটুকু তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তার থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সব দেশের সাধারণ মানুষ।’ 

আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত আটতলা অফিস ভবন উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। 

করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিশ্ববাসী ঝুঁকিতে পড়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক সেই সময়ে ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধে জড়ায়। এতে বিশ্বব্যাপী মানুষের অবস্থা আরও করুণ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা দেওয়ার ফলে আমাদের পণ্য প্রাপ্তিতে বা যেগুলো আমরা আমদানি করি, সেখানে বিরাট বাধা আসছে। শুধু বাধাই না, পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে এবং আমরা কোথায় আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী পাব সেই প্রাপ্তির ক্ষেত্রটাও সংকুচিত হয়ে গেছে। এই প্রভাবটা শুধু বাংলাদেশ নয়, আমি মনে করি আমেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে সারা বিশ্ব এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ 

মানুষ কষ্ট ভোগ করছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটা আসলে সবার, অন্তত উন্নত দেশগুলোর বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত। আমেরিকাকেই বিবেচনা করা উচিত, তারা যে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে, তাতে তাদের দেশের লোকও কষ্ট পাচ্ছে। সেদিকেও তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’ 

করোনা মহামারি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমি মনে করি, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কখনো কোনো দেশ বা জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেটা নিশ্চয়ই এখন দেখতে পাচ্ছেন। তার প্রভাব নিজেদের দেশের ওপরও পড়ে।’ 

প্রবাসীদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কী অর্থ থাকতে পারে আমরা ঠিক জানি না। এখানে আমি বলব, একদিক থেকে বলতে গেলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। মানুষের যে অধিকার আছে, সেই অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। আমরা আশা করি, একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেওয়া—এখান থেকে সরে আসাটাই বোধ হয় বাঞ্ছনীয়। সবাই সেটাই চাইবে আমি এটা মনে করি।’ 

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ছাড়াও নিষেধাজ্ঞা আমাদের যথেষ্ট সমস্যার সৃষ্টি করছে বলে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আশা করি বিষয়টা উন্নত দেশগুলো একটু দেখবে। জলবায়ুর অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো—আমরা যাতে বাঁচতে পারি, সেটাও সবাই দেখবেন সেটাই আমরা চাই।’ 

মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনটা বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের জন্য আসলে এটা একটা বিরাট বোঝা। একে তো করোনাভাইরাস, তার ওপরে যুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের এই সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের ওপরে এই আরেকটা বোঝা টানা যে কত কষ্টকর, সেটা সবার উপলব্ধি করা উচিত।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলো যদি আরেকটু সক্রিয় হয়, যাতে এই রোহিঙ্গারা তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে, তাদের ছেলে-মেয়েরা যেন তাদের নিজের দেশে মানুষ হতে পারে, তারা একটা ভালো পরিবেশে চলে যেতে পারে। এভাবে ক্যাম্পে জীবন-যাপন যেন না করতে হয়। তাদেরও তো একটা মানবাধিকার আছে। কাজেই সে ব্যাপারে সবাই একটু সক্রিয় হবেন সেটাই আমি আশা করি।’ 

কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে সমস্যাগুলো ছিল, সবার সঙ্গে আলোচনা করে দেশের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছেন বলে জানান সরকারপ্রধান। অর্থনৈতিক কূটনীতিকে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীটা একটা গ্লোবাল ভিলেজ। আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে যে, সবার সঙ্গে মিলে আমরা কাজ করব, যাতে মানুষের উন্নতি হয়। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমার কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমার দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে আমরা আমাদের উন্নয়নটা ত্বরান্বিত করতে চাই।’ 

নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ চলতে চায় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা অহেতুক কারও কাছ থেকে অতিরিক্ত পয়সা নিই না। একটা কাজ করলে মানুষ কতটা লাভবান হবে, আমরা যেন কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ি, আমরা যেন আত্মনির্ভরশীল থাকতে পারি, আত্মমর্যাদাশীল থাকতে পারি এবং আমরা যেন বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এটা গুরুত্ব দিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’ 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমুখ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত