নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার অনেককে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশন। হত্যার পর লাশ ডুবিয়ে দিতে সিমেন্টের ব্যাগের সঙ্গে বেঁধে তিনটি সেতু থেকে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। গুমের শিকার ২৭ শতাংশ এখনো নিখোঁজ। গুমের পর ভারতে হস্তান্তরের অভিযোগও পেয়েছে কমিশন।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের গুম তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত শনিবার এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছে কমিশন। গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, গুমের সঙ্গে শেখ হাসিনা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততাও পাওয়া গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গতকাল রোববার ওই প্রতিবেদনের প্রকাশযোগ্য অংশ গণমাধ্যমকে সরবরাহ করেছে। প্রতিবেদনে কমিশনের তদন্ত, ঘটনায় সম্পৃক্ত কর্মকর্তা এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের বয়ানে উঠে এসেছে গুম ও নির্যাতনের রোমহর্ষ বর্ণনা।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ১৫ বছরে ১ হাজার ৬৭৬টি জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ রেকর্ড হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগ কমিশন পর্যালোচনা করেছে। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ১৩০ গুমের ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত গুমের ২১টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
দুই ধরনের পদ্ধতিতে গুম
গুম তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাউকে গুম করার ক্ষেত্রে দুই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। অনেক সময় প্রথমে কাউকে আটক করে নির্যাতন করে অন্যদের নাম বের করা হতো। পরে তাঁদেরও ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। পরে এঁদের সবাইকে গুম করা হতো। এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি বা নেতার সরাসরি নির্দেশেও গুম ও নির্যাতন করা হতো। উদাহরণ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় র্যাবের তৎকালীন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদের স্বীকারোক্তি তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের অবস্থান চিহ্নিত করতে মোবাইল প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হতো। গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার (এনএমসি) এবং পরবর্তী সময়ে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) মোবাইল নজরদারি পরিচালনা করেছে। সাধারণত সাদাপোশাকে ভুক্তভোগীদের তুলে নেওয়া হতো এবং নিজেদের পরিচয় গোপনের জন্য এক সংস্থা আরেক সংস্থার নাম ব্যবহার করত বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গুম করে ভয়াবহ নির্যাতন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটক ব্যক্তিদের গোপন কারাগারে রাখা হতো, যেখানে তাঁদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো। আটক রাখার সময়কাল ৪৮ ঘণ্টা থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত হতো। বিভিন্ন স্থানে আটটি গোপন কারাগার ছিল, যেগুলো ডিজিএফআই, র্যাব, সিটিটিসি পরিচালনা করত। এসব কারাগারে আটক ব্যক্তিদের পেটানো, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া এবং বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ভয়াবহ নির্যাতন করা হতো। ২০১০ সালে র্যাব এক যুবকের ঠোঁট সেলাই করেছিল। আরেক ভুক্তভোগীর কানে ও যৌনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল। গুম করা ব্যক্তিদের হত্যা করা হতো কিংবা বিচারবহির্ভূতভাবে মুক্তি দেওয়া হতো। বন্দিশালাগুলোতে নির্যাতনের জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়া ছিল সাউন্ডপ্রুফ কক্ষ এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের জন্য বিভিন্ন যন্ত্র।
গুমের পর মাথায় গুলি করে হত্যা
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুমের পর অনেক ভুক্তভোগীকে মাথায় গুলি করে হত্যা শেষে মরদেহ সিমেন্টের ব্যাগের সঙ্গে বেঁধে নদীতে ফেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের মরদেহ বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যায় ফেলা হয়। এ কাজে কাঞ্চন সেতু, পোস্তগোলা ও বুড়িগঙ্গা সেতু ব্যবহার করা হতো।
এক সাক্ষীর তথ্য অনুযায়ী, র্যাবের একটি ওরিয়েন্টেশন সেশনে তাঁকে দুজন ভুক্তভোগীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা দেখানো হয়। র্যাবে থাকা আরেক সেনাসদস্য জানান, এক ভুক্তভোগী পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে উদ্ধার করে গুলি করা হয়। অন্য এক ঘটনায় একজনের মরদেহ রেললাইনে ফেলে ট্রেনে কাটার পরিকল্পনার কথা জানান র্যাবে থাকা আরেক সেনাসদস্য। চলন্ত গাড়ির সামনে ফেলে হত্যার চেষ্টার কথাও উঠে এসেছে।
কমিশন জানায়, গুমের কার্যক্রম বিভিন্ন বাহিনী সুসংগঠিতভাবে পরিচালনা করত। অপহরণ, আটক ও হত্যা—প্রতিটি ধাপে আলাদা দল কাজ করত। অনেকে জানতেনও না, তাঁরা কাকে এবং কেন হত্যা করছেন।
প্রতিবেদনে ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, তাঁকে প্রথমে ডিজিএফআইয়ের সেলে, পরে র্যাবের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয় এবং সর্বশেষ চট্টগ্রামে র্যাব-৭ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের নির্মূল ও তাঁদের লাশ চিরতরে অদৃশ্য করার লক্ষ্যেই এসব ঘটনা ঘটানো হতো।
গুমের শিকার ২৭ শতাংশ এখনো নিখোঁজ
কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ জীবিত ফিরে এসেছেন; বাকি ২৭ শতাংশ এখনো নিখোঁজ। ফিরে আসা ভুক্তভোগীদের অনেকে জানিয়েছেন, গুম, নির্যাতন করার এবং বন্দী করে রাখার পর তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইন, অস্ত্র আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।
গুমের পর ভারতে হস্তান্তরের ঘটনাও ঘটেছে
কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে জোর করে গুমের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে র্যাব, ডিবি এবং সিটিটিসি মূল ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের সংশ্লিষ্টতার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ঘটনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে জবাবদিহি এড়িয়ে গেছেন। গুমের ঘটনা শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, এটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ।
প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তরা থেকে আটক করে ভারতে হস্তান্তর করা হয়। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী এটা আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছেন। আপনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) ছেলে হাম্মাম কাদের চৌধুরী তাঁর বন্দিশালায় হিন্দিভাষী লোকদের কথা শোনার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। সুখরঞ্জন বালি ও অন্যদের ক্ষেত্রেও গুমের পর ভারতে স্থানান্তরের তথ্য উঠে এসেছে।
গুম তদন্ত কমিশন বলেছে, র্যাব ও ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী আন-অফিশিয়াল বন্দিবিনিময় করত।
কমিশনের প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী শনিবার বলেছেন, আগামী মার্চে কমিশন আরও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেবে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কমপক্ষে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার অনেককে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশন। হত্যার পর লাশ ডুবিয়ে দিতে সিমেন্টের ব্যাগের সঙ্গে বেঁধে তিনটি সেতু থেকে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। গুমের শিকার ২৭ শতাংশ এখনো নিখোঁজ। গুমের পর ভারতে হস্তান্তরের অভিযোগও পেয়েছে কমিশন।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের গুম তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত শনিবার এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছে কমিশন। গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, গুমের সঙ্গে শেখ হাসিনা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততাও পাওয়া গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গতকাল রোববার ওই প্রতিবেদনের প্রকাশযোগ্য অংশ গণমাধ্যমকে সরবরাহ করেছে। প্রতিবেদনে কমিশনের তদন্ত, ঘটনায় সম্পৃক্ত কর্মকর্তা এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের বয়ানে উঠে এসেছে গুম ও নির্যাতনের রোমহর্ষ বর্ণনা।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ১৫ বছরে ১ হাজার ৬৭৬টি জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ রেকর্ড হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগ কমিশন পর্যালোচনা করেছে। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ১৩০ গুমের ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত গুমের ২১টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
দুই ধরনের পদ্ধতিতে গুম
গুম তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাউকে গুম করার ক্ষেত্রে দুই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। অনেক সময় প্রথমে কাউকে আটক করে নির্যাতন করে অন্যদের নাম বের করা হতো। পরে তাঁদেরও ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। পরে এঁদের সবাইকে গুম করা হতো। এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি বা নেতার সরাসরি নির্দেশেও গুম ও নির্যাতন করা হতো। উদাহরণ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় র্যাবের তৎকালীন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদের স্বীকারোক্তি তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের অবস্থান চিহ্নিত করতে মোবাইল প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হতো। গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার (এনএমসি) এবং পরবর্তী সময়ে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) মোবাইল নজরদারি পরিচালনা করেছে। সাধারণত সাদাপোশাকে ভুক্তভোগীদের তুলে নেওয়া হতো এবং নিজেদের পরিচয় গোপনের জন্য এক সংস্থা আরেক সংস্থার নাম ব্যবহার করত বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গুম করে ভয়াবহ নির্যাতন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটক ব্যক্তিদের গোপন কারাগারে রাখা হতো, যেখানে তাঁদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো। আটক রাখার সময়কাল ৪৮ ঘণ্টা থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত হতো। বিভিন্ন স্থানে আটটি গোপন কারাগার ছিল, যেগুলো ডিজিএফআই, র্যাব, সিটিটিসি পরিচালনা করত। এসব কারাগারে আটক ব্যক্তিদের পেটানো, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া এবং বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ভয়াবহ নির্যাতন করা হতো। ২০১০ সালে র্যাব এক যুবকের ঠোঁট সেলাই করেছিল। আরেক ভুক্তভোগীর কানে ও যৌনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল। গুম করা ব্যক্তিদের হত্যা করা হতো কিংবা বিচারবহির্ভূতভাবে মুক্তি দেওয়া হতো। বন্দিশালাগুলোতে নির্যাতনের জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়া ছিল সাউন্ডপ্রুফ কক্ষ এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের জন্য বিভিন্ন যন্ত্র।
গুমের পর মাথায় গুলি করে হত্যা
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুমের পর অনেক ভুক্তভোগীকে মাথায় গুলি করে হত্যা শেষে মরদেহ সিমেন্টের ব্যাগের সঙ্গে বেঁধে নদীতে ফেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের মরদেহ বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যায় ফেলা হয়। এ কাজে কাঞ্চন সেতু, পোস্তগোলা ও বুড়িগঙ্গা সেতু ব্যবহার করা হতো।
এক সাক্ষীর তথ্য অনুযায়ী, র্যাবের একটি ওরিয়েন্টেশন সেশনে তাঁকে দুজন ভুক্তভোগীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা দেখানো হয়। র্যাবে থাকা আরেক সেনাসদস্য জানান, এক ভুক্তভোগী পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে উদ্ধার করে গুলি করা হয়। অন্য এক ঘটনায় একজনের মরদেহ রেললাইনে ফেলে ট্রেনে কাটার পরিকল্পনার কথা জানান র্যাবে থাকা আরেক সেনাসদস্য। চলন্ত গাড়ির সামনে ফেলে হত্যার চেষ্টার কথাও উঠে এসেছে।
কমিশন জানায়, গুমের কার্যক্রম বিভিন্ন বাহিনী সুসংগঠিতভাবে পরিচালনা করত। অপহরণ, আটক ও হত্যা—প্রতিটি ধাপে আলাদা দল কাজ করত। অনেকে জানতেনও না, তাঁরা কাকে এবং কেন হত্যা করছেন।
প্রতিবেদনে ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, তাঁকে প্রথমে ডিজিএফআইয়ের সেলে, পরে র্যাবের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয় এবং সর্বশেষ চট্টগ্রামে র্যাব-৭ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের নির্মূল ও তাঁদের লাশ চিরতরে অদৃশ্য করার লক্ষ্যেই এসব ঘটনা ঘটানো হতো।
গুমের শিকার ২৭ শতাংশ এখনো নিখোঁজ
কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ জীবিত ফিরে এসেছেন; বাকি ২৭ শতাংশ এখনো নিখোঁজ। ফিরে আসা ভুক্তভোগীদের অনেকে জানিয়েছেন, গুম, নির্যাতন করার এবং বন্দী করে রাখার পর তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইন, অস্ত্র আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।
গুমের পর ভারতে হস্তান্তরের ঘটনাও ঘটেছে
কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে জোর করে গুমের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে র্যাব, ডিবি এবং সিটিটিসি মূল ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের সংশ্লিষ্টতার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ঘটনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে জবাবদিহি এড়িয়ে গেছেন। গুমের ঘটনা শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, এটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ।
প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তরা থেকে আটক করে ভারতে হস্তান্তর করা হয়। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী এটা আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছেন। আপনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) ছেলে হাম্মাম কাদের চৌধুরী তাঁর বন্দিশালায় হিন্দিভাষী লোকদের কথা শোনার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। সুখরঞ্জন বালি ও অন্যদের ক্ষেত্রেও গুমের পর ভারতে স্থানান্তরের তথ্য উঠে এসেছে।
গুম তদন্ত কমিশন বলেছে, র্যাব ও ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী আন-অফিশিয়াল বন্দিবিনিময় করত।
কমিশনের প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী শনিবার বলেছেন, আগামী মার্চে কমিশন আরও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেবে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কমপক্ষে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
৩ ঘণ্টা আগেবিভিন্ন দেশে বসবাস করা দেড় কোটি বাংলাদেশি নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজন। অনলাইন ভোটিং পদ্ধতির মাধ্যমে এটি করা সম্ভব বলে তাঁরা কারিগরি একটি ব্যবস্থাও তুলে ধরেন।
৩ ঘণ্টা আগেআজ আমাদের বিজয় দিবস। তিপ্পান্ন বছর আগে ৯ মাসের একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয়ের সূর্যকে আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম। পেয়েছিলাম একটি স্বাধীন দেশ—বাংলাদেশ। বিজয় দিবস তাই বাংলাদেশের জন্য আনন্দের, উৎসবের।
৩ ঘণ্টা আগে১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। সময় বিকেল প্রায় সাড়ে ৪টা। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। আজ সেই বিজয়ের গৌরবময় দিন।
৪ ঘণ্টা আগে