শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
উপসচিব পুলের কোটা নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ভাবনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে বিরোধ ক্রমেই জটিল হচ্ছে। একত্র হওয়া ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কলমবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণার পাল্টা হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারও পুরোদমে মাঠে নেমেছে। গতকাল রোববার প্রশাসন ক্যাডারের কয়েক শ কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে নিজেদের দাবি জানিয়েছেন।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস করার দাবিতে এই অবস্থান করেন। এত কর্মকর্তার এভাবে অবস্থান নেওয়া নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
এই অবস্থানের পর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। তবে অন্য ২৫ ক্যাডারের সঙ্গে আর বৈঠক করবে না তারা। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিশন সুপারিশ নেবে।
উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোন ক্যাডার সার্ভিস কী সুবিধা পাবে বা না পাবে, সে বিষয়ে কথা বলা সংস্কার কমিশনের কাজ নয়। এখতিয়ারের বাইরে কথা বলে কমিশন আন্তক্যাডার বিতর্ককে উসকে দিয়েছে। এতে সরকার বেকায়দায় পড়তে পারে।
প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ২৫ ক্যাডারের এ বিরোধ ও পাল্টাপাল্টি অবস্থানের শুরু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর এক মন্তব্যের পর। ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে কমিশনের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি জানান, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করবেন তাঁরা। বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আন্তক্যাডার বিতর্ক নিরসনের দাবিতে কর্মসূচি পালনরত ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা সংস্কার কমিশনের প্রধানের ওই বক্তব্যের পর বক্তৃতা-বিবৃতিতে এর প্রতিবাদ জানান। প্রশাসন ক্যাডারও পাল্টা বক্তব্য-বিবৃতি দেয়। একপর্যায়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সব অফিসে ১ ঘণ্টার কলমবিরতি এবং বৃহস্পতিবার নিজ নিজ কর্মস্থলের সামনে মানববন্ধনের কর্মসূচি দেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
এদিকে প্রশাসন ক্যাডারকে আলাদা করে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গত দুই দিন তাঁরা ফেসবুকে নিজেদের প্রোফাইল পরিবর্তন করে একই লোগো যুক্ত করেন।
সচিবালয়ে নজিরবিহীন অবস্থান
গতকাল বেলা ১১টার পর সচিবালয় ও আশপাশে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সচিবালয়ের ৩ নম্বর ভবনের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পূর্বঘোষণা
ছাড়াই চার শতাধিক কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় তলায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। অবশ্য গত শনিবার রাতে প্রশাসন ক্যাডারের ব্যাচভিত্তিক গ্রুপগুলোতে এ কর্মসূচি জানানো হয় বলে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্লাহ এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদসহ ১৫-২০ জন কর্মকর্তা ভবনের তৃতীয় তলায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের দপ্তরে যান। বেলা পৌনে ১টায় তিনি দপ্তরে গেলে তাঁর সঙ্গে আধা ঘণ্টা বৈঠক করেন তাঁরা। বেলা ২টা পর্যন্ত অবস্থান করেন কর্মকর্তারা।
প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং সদস্যসচিব নিয়মিত চাকরিতে থাকলে এমন সুপারিশ করার চিন্তা করতেন না। তাঁরা দুজনেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করতে চান। এ জন্যই তাঁরা এ বিতর্ক উসকে দিয়েছেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা অন্য কোনো ক্যাডারের পদে যাবেন না। তাঁদের পদেও যাতে কেউ না আসতে পারেন, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্যই তাঁরা প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছেন।
তবে আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা এখন যৌক্তিক কিছু বলছেন না। উপসচিব পদ শুধু প্রশাসন ক্যাডারের পদ নয়, এটি সরকারের সিনিয়র সার্ভিস পুল (এসএসপি)। এ পদে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয় না, নিয়োগ দেওয়া হয়। আর নতুন করে নিয়োগের সময় আগের পদ ছেড়ে আসতে হয়।
২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলো সরকারের পদ। এসব পদে সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে থাকেন।
এভাবে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, কর্মকর্তারা কমিশনের সদস্যসচিবের মুখ থেকে একটা কথা শোনার জন্য ১০ মিনিটের জন্য এসেছেন। সেটা তো আসতেই পারেন। এখানে কোনো অশোভন আচরণ করা হয়নি। তাঁরা বক্তব্য শোনার জন্য এসেছেন। এটাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘তাঁরা তো অ্যাসোসিয়েশন। তাঁরা এখানে হয়তো দল বেঁধে এসেছেন। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে কীভাবে পজিটিভভাবে এগোনো যায়। আমরা বিভাগে, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে গেছি। এখন সেন্ট্রালে কমিশনের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেব।’
আবার আলোচনায় বসবে কমিশন
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জনপ্রশাসন সচিব জানান, কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগে চলতি সপ্তাহেই অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। এরপর বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে আর ভুল-বোঝাবুঝির সুযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি মৌলিক বিষয় নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারকে স্থিতিশীল রেখে, জনগণের স্বার্থে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যাতে এগোনো যায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘এটি কমিশনে জমা দেব। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যে কেউ কমিশনকে তথ্য ও সুপারিশ দিতে পারবে।’
জনপ্রশাসন সচিবকে গতকাল দেওয়া লিখিত সুপারিশে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, সিভিল প্রশাসন সার্ভিসকে অন্যান্য টেকনিক্যাল ও প্রফেশনাল ক্যাডারের সংমিশ্রণ থেকে আলাদা করে স্বতন্ত্র বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক। এ জন্য অন্যান্য টেকনিক্যাল, প্রফেশনাল বা বিষয়ভিত্তিক ক্যাডার সার্ভিস থেকে প্রশাসন ক্যাডারকে আলাদা করে এন্ট্রি পদ সহকারী কমিশনার বা সহকারী সচিব থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত পদগুলোতে (নন-ক্যাডার পদ ছাড়া) বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যায্যভাবে বাদ দেওয়া উপসচিবের ২৫ শতাংশ পদ আবার এই সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। উপসচিব থেকে শুরু করে সরকারের পদগুলোতে কীভাবে কর্মকর্তাদের পদায়ন হবে, এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের কপিও জনপ্রশাসন সচিবকে দেয় অ্যাসোসিয়েশন।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার উল্লাহ বলেন, ‘আমরা কোনো ক্যাডারকে আন্ডারমাইন্ড করছি না। যার যার অবস্থান বা পদ থেকে ওপরে ওঠার যে সুযোগ রয়েছে, সেটা অবারিত আছে। সেখানে আমরা কখনো কারও বিরুদ্ধাচরণ করছি না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কমিশনের সঙ্গে আরও একবার বসার সুযোগ চাই।’
উপসচিব পুলে কোটা এল যেভাবে
১৯৯২ সালে সচিবালয় ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করে সচিবালয় ক্যাডারের সব পদ প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নীতিমালা জারি করে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে ২৫ শতাংশ পদ অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে আনুপাতিকভাবে বণ্টন করে কোটাপদ্ধতি চালু করে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সেবার উন্নতি, দুর্নীতি, হয়রানি ও রাজনীতিকীকরণ বন্ধ, জনসেবার মানোন্নয়ন, সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার মতো মূল কাজের বাইরে গিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। কোন ক্যাডারকে কী দেবে না দেবে, সেটি তো কমিশনের বলার কথা নয়। আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর করা কী তাদের কাজ? সব পক্ষেরই দাবিদাওয়া আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসনে আলাদা কমিটি করা যেতে পারে। এখন যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, এটা সহজে মিটবে না। এক পক্ষকে যখন সুবিধা দেবে, করপোরেশনসহ অন্যরাও রাস্তায় নেমে গেলে সরকারের কী হবে?
উপসচিব পুলের কোটা নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ভাবনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে বিরোধ ক্রমেই জটিল হচ্ছে। একত্র হওয়া ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কলমবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণার পাল্টা হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারও পুরোদমে মাঠে নেমেছে। গতকাল রোববার প্রশাসন ক্যাডারের কয়েক শ কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে নিজেদের দাবি জানিয়েছেন।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস করার দাবিতে এই অবস্থান করেন। এত কর্মকর্তার এভাবে অবস্থান নেওয়া নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
এই অবস্থানের পর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। তবে অন্য ২৫ ক্যাডারের সঙ্গে আর বৈঠক করবে না তারা। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিশন সুপারিশ নেবে।
উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোন ক্যাডার সার্ভিস কী সুবিধা পাবে বা না পাবে, সে বিষয়ে কথা বলা সংস্কার কমিশনের কাজ নয়। এখতিয়ারের বাইরে কথা বলে কমিশন আন্তক্যাডার বিতর্ককে উসকে দিয়েছে। এতে সরকার বেকায়দায় পড়তে পারে।
প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ২৫ ক্যাডারের এ বিরোধ ও পাল্টাপাল্টি অবস্থানের শুরু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর এক মন্তব্যের পর। ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে কমিশনের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি জানান, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করবেন তাঁরা। বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আন্তক্যাডার বিতর্ক নিরসনের দাবিতে কর্মসূচি পালনরত ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা সংস্কার কমিশনের প্রধানের ওই বক্তব্যের পর বক্তৃতা-বিবৃতিতে এর প্রতিবাদ জানান। প্রশাসন ক্যাডারও পাল্টা বক্তব্য-বিবৃতি দেয়। একপর্যায়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সব অফিসে ১ ঘণ্টার কলমবিরতি এবং বৃহস্পতিবার নিজ নিজ কর্মস্থলের সামনে মানববন্ধনের কর্মসূচি দেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
এদিকে প্রশাসন ক্যাডারকে আলাদা করে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গত দুই দিন তাঁরা ফেসবুকে নিজেদের প্রোফাইল পরিবর্তন করে একই লোগো যুক্ত করেন।
সচিবালয়ে নজিরবিহীন অবস্থান
গতকাল বেলা ১১টার পর সচিবালয় ও আশপাশে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সচিবালয়ের ৩ নম্বর ভবনের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পূর্বঘোষণা
ছাড়াই চার শতাধিক কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় তলায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। অবশ্য গত শনিবার রাতে প্রশাসন ক্যাডারের ব্যাচভিত্তিক গ্রুপগুলোতে এ কর্মসূচি জানানো হয় বলে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্লাহ এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদসহ ১৫-২০ জন কর্মকর্তা ভবনের তৃতীয় তলায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের দপ্তরে যান। বেলা পৌনে ১টায় তিনি দপ্তরে গেলে তাঁর সঙ্গে আধা ঘণ্টা বৈঠক করেন তাঁরা। বেলা ২টা পর্যন্ত অবস্থান করেন কর্মকর্তারা।
প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং সদস্যসচিব নিয়মিত চাকরিতে থাকলে এমন সুপারিশ করার চিন্তা করতেন না। তাঁরা দুজনেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করতে চান। এ জন্যই তাঁরা এ বিতর্ক উসকে দিয়েছেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা অন্য কোনো ক্যাডারের পদে যাবেন না। তাঁদের পদেও যাতে কেউ না আসতে পারেন, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্যই তাঁরা প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছেন।
তবে আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা এখন যৌক্তিক কিছু বলছেন না। উপসচিব পদ শুধু প্রশাসন ক্যাডারের পদ নয়, এটি সরকারের সিনিয়র সার্ভিস পুল (এসএসপি)। এ পদে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয় না, নিয়োগ দেওয়া হয়। আর নতুন করে নিয়োগের সময় আগের পদ ছেড়ে আসতে হয়।
২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলো সরকারের পদ। এসব পদে সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে থাকেন।
এভাবে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, কর্মকর্তারা কমিশনের সদস্যসচিবের মুখ থেকে একটা কথা শোনার জন্য ১০ মিনিটের জন্য এসেছেন। সেটা তো আসতেই পারেন। এখানে কোনো অশোভন আচরণ করা হয়নি। তাঁরা বক্তব্য শোনার জন্য এসেছেন। এটাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘তাঁরা তো অ্যাসোসিয়েশন। তাঁরা এখানে হয়তো দল বেঁধে এসেছেন। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে কীভাবে পজিটিভভাবে এগোনো যায়। আমরা বিভাগে, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে গেছি। এখন সেন্ট্রালে কমিশনের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেব।’
আবার আলোচনায় বসবে কমিশন
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জনপ্রশাসন সচিব জানান, কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগে চলতি সপ্তাহেই অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। এরপর বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে আর ভুল-বোঝাবুঝির সুযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি মৌলিক বিষয় নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারকে স্থিতিশীল রেখে, জনগণের স্বার্থে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যাতে এগোনো যায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘এটি কমিশনে জমা দেব। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যে কেউ কমিশনকে তথ্য ও সুপারিশ দিতে পারবে।’
জনপ্রশাসন সচিবকে গতকাল দেওয়া লিখিত সুপারিশে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, সিভিল প্রশাসন সার্ভিসকে অন্যান্য টেকনিক্যাল ও প্রফেশনাল ক্যাডারের সংমিশ্রণ থেকে আলাদা করে স্বতন্ত্র বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক। এ জন্য অন্যান্য টেকনিক্যাল, প্রফেশনাল বা বিষয়ভিত্তিক ক্যাডার সার্ভিস থেকে প্রশাসন ক্যাডারকে আলাদা করে এন্ট্রি পদ সহকারী কমিশনার বা সহকারী সচিব থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত পদগুলোতে (নন-ক্যাডার পদ ছাড়া) বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যায্যভাবে বাদ দেওয়া উপসচিবের ২৫ শতাংশ পদ আবার এই সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। উপসচিব থেকে শুরু করে সরকারের পদগুলোতে কীভাবে কর্মকর্তাদের পদায়ন হবে, এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের কপিও জনপ্রশাসন সচিবকে দেয় অ্যাসোসিয়েশন।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার উল্লাহ বলেন, ‘আমরা কোনো ক্যাডারকে আন্ডারমাইন্ড করছি না। যার যার অবস্থান বা পদ থেকে ওপরে ওঠার যে সুযোগ রয়েছে, সেটা অবারিত আছে। সেখানে আমরা কখনো কারও বিরুদ্ধাচরণ করছি না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কমিশনের সঙ্গে আরও একবার বসার সুযোগ চাই।’
উপসচিব পুলে কোটা এল যেভাবে
১৯৯২ সালে সচিবালয় ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করে সচিবালয় ক্যাডারের সব পদ প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নীতিমালা জারি করে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে ২৫ শতাংশ পদ অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে আনুপাতিকভাবে বণ্টন করে কোটাপদ্ধতি চালু করে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সেবার উন্নতি, দুর্নীতি, হয়রানি ও রাজনীতিকীকরণ বন্ধ, জনসেবার মানোন্নয়ন, সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার মতো মূল কাজের বাইরে গিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। কোন ক্যাডারকে কী দেবে না দেবে, সেটি তো কমিশনের বলার কথা নয়। আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর করা কী তাদের কাজ? সব পক্ষেরই দাবিদাওয়া আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসনে আলাদা কমিটি করা যেতে পারে। এখন যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, এটা সহজে মিটবে না। এক পক্ষকে যখন সুবিধা দেবে, করপোরেশনসহ অন্যরাও রাস্তায় নেমে গেলে সরকারের কী হবে?
অবশেষে ডোপ টেস্টের (শরীরে মাদকের উপস্থিতি শনাক্তকরণ পরীক্ষা) খসড়া বিধিমালা তৈরি হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এটি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সেখান থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গেজেট জারি করবে।
৬ ঘণ্টা আগেকক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত পাঁচ বছরে দুই শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের ৫৬ দশমিক ৪৩ শতাংশই হয়েছে মিয়ানমারের নিষিদ্ধ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হাতে। গত ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা কর্তৃক ১১৪টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বাহিনীর আর্মড...
৭ ঘণ্টা আগেকেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লিয়ন মোল্লা নীরব নামের যে যুবক, তিনি সৌদিপ্রবাসী এক নারীর স্বামী। স্ত্রীর পাঠানো রেমিট্যান্স তোলার কথা বলে নীরব ও তাঁর সহযোগীরা ব্যাংকটিতে ঢোকেন।
৭ ঘণ্টা আগেরাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদে বদলি করা হয়েছে। আজ রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ-১ শাখার উপসচিব জামিল শবনম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
১১ ঘণ্টা আগে